অতঃপর গল্পটা তোমার আমার পর্ব-০৯

0
701

#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-০৯
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)

আজ বেশ বেলা করেই ঘুম ভাঙলো সানাতের। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসতেই চোখ গেলো দেয়াল ঘড়ির দিকে। ঘড়ির কাঁটায় সাড়ে নয়টা। সানাত ধরফরিয়ে উঠলো এতক্ষণ অব্দি সে পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছে। তবে আচমকাই খেয়াল হলো অন্যান্য দিনের মতো আজ সে সোফাতে নয় বেডে আবিস্কার করেছে নিজেকে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব এটা তো যার তার বেড নয় এটা তো অন্তিম আহসানের বেড। সে কি করে এলো এই বেডে? কাল রাতে তো সে বাইকে উঠেছিলো। অন্তিম বাইক চালাচ্ছিল, সে অন্তিমের পেছনে বসে ছিলো কিন্তু এরপর তো কিছু মনে নেই। সানাতের ভাবনার মাঝেই ওহী দুই মগ কফি নিয়ে হাজির হয়ে বললো,

কিরে সানাইততা উঠে গেছিস!

ওহীর এমন কথায় সানাত ক্ষেপে গিয়ে বললো,

সকাল হতে না হতেই তোর বাঁদরামি শুরু হয়ে গেছে তাইনা? ফাজিল মেয়ে।

সানাতের কথায় ওহী দাঁত কেলিয়ে হাসলো। তারপর বললো,

আহা ক্ষেপো কেনো সানাত বেবি। কুল থাকো। কালকে রাতে তোমরা যে সিনেমা দেখিয়েছো তাতে আমি পুরাই শকড।

সানাত ওহীর কথার মানে বুঝতে না পেরে ভ্রু কুঁচকে বললো,

মানে? কিসের সিনেমা?

এহহ একদম ঢং করবিনা ফাজিল মেয়ে। যখন আমি বলেছিলাম একটু সময় দে সম্পর্কটাকে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাইয়া আর তোর সম্পর্কটা ঠিক আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হবে তখন তো খুব বলেছিলি না কখনই হবেনা, মিথ্যে আশা দিস না তোর ভাই আমায় সহ্য করতে পারেনা, ইত্যাদি ব্লা ব্লা আরো কতো কি। অথচ কাল রাতে জড়িয়ে ধরে বাইকে করে এসে আবার আমার ভাইয়ের কোলে চড়ে ঘরে ঢুকেছিস ফাজিল।

সানাত যেনো আকাশ থেকে পড়ল। আচমকা চিল্লিয়ে উঠে বললো,

কি বলছিস তুই? কোলে চড়ে মানে?

হ্যাঁ কোলে চড়ে। আমি তো কালকে রাতে তোর টেনশনে মরে যাই যাই অবস্থা তারপরে বারান্দা থেকে যখন তোদের রঙ্গলীলা দেখি আমি পুরা থ। মানে কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিলো আমার চোখ আমার সাথে বেইমানি করতেছে। কিন্তু নাহ বেইমানি তো তুই করছিস। তলে তলে এতদূর টেম্পু চালিয়ে গেলি অথচ আমি কিচ্ছু টের পেলাম না। আমি জানতাম তোদের মধ্যে দ্বন্দ্বটা কেটে যাবে কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি এটা আশা করিনি। তোরা তো আমার থেকেও এক কাঠি ওপরে রে!

থামবি তুই। ছি ছি কাল রাতে এসব হয়ে গেছে ? আল্লাহ!

এহহ এখন আবার ছি ছি করে! শুধু কি কোলে নিয়েছে বাকি কথা শুনলে তো তুই হার্টফেল করবি!

সানাত ঢোক গিলে বললো,

মানে? আর কি হয়েছে?

ওহী মনে মনে নিজের বানানো জম্পেশ বুদ্ধিটা সাজিয়ে মনে মনে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে। তারপর খুব সিরিয়াস হওয়ার ভান ধরে বললো,

আসলে সানাত একটা ঘটনা ঘটে গেছে। তুই প্লিজ হাইপার হোস না।

কি ঘটেছে? উত্তেজিত হয়ে বললো সানাত।

আমার বলতে শরম লাগতেছে দোস্ত।

কিসব বলছিস তুই? প্লিজ বল ওহী।

আমি বলতে পারবো না তুই একবার নিজের শরীরের দিকে তাকা।

সানাত তৎক্ষণাৎ নিজের শরীরের দিকে তাকালো। তারপর বলে উঠলো,

একি আমার গায়ে সালওয়ার কামিজ কি করে এলো?আমি তো কাল শাড়ি পড়া ছিলাম।

বৃষ্টিতে তো ভিজে গেছিলো শাড়ি তাই চেঞ্জ করেছে।

কে করেছে তুই?

না।

নাহ্ মানে? তুই করিসনি তো কে করেছে? ফাইজলামি করিস আমার সাথে?

ফাইজলামি কেন করবো আমি তোর সাথে। সত্যি বলছি আমি করাইনি। আমি কি করে করাবো আমার গায়ে অত শক্তি আছে নাকি যে তোর মত মুটি মেয়েকে টানবো!

সানাত ভয়ার্ত কন্ঠে বললো,

তাহলে কে করিয়েছে?

ভাইয়ে মানে.. ভাইইয়া করিয়েছে।

সানাত লাফিয়ে উঠলো। তারপর চিৎকার দিয়ে উঠে বললো,

কিইইই!

সানাতের হাল দেখে ওহীর পেট ফেটে হাসি বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু অনেক কষ্টে হাসি চেপে রেখে বললো,

তুই প্লিজ শান্ত হ সানাত। আর তাতে কি এমন হয়েছে যদি ভাইয়া তোর কাপড় চেঞ্জ করেছে?

এসব তুই কি বলছিস ওহী?

ঠিকই তো বলছি। ভাইয়াই তো অন্য কেউ তো আর নয়। দেখ সানাত তুই ভুলে যাসনা আমার ভাই এখন তোর হাসবেন্ড। বিয়ে হয়েছে তোদের। তাই ভাইয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে তোর ওপর।

থাম তুই ওহী। এসব তুই কি বলছিস? তুই তো এমন নোস।

সানাতের অবস্থা এমন যে সে এখনি কেঁদে ফেলবে। ওহী কিছু বলবে তার আগেই সানাত সত্যি সত্যিই কেঁদে ফেললো। সঙ্গে সঙ্গে ওহী ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। ওহীর হঠাৎ হাসি দেখে সানাত কান্না থামিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। ওহী হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। হাসতে হাসতেই বললো,

সানাত তুই মানেই পুরো বিনোদন। আল্লাহ আমারে বাঁচাও। বলেই আবারও হাসতে লাগলো। আর এদিকে সানাত ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠলো,

তারমানে তুই এতক্ষণ ধরে আমাকে….
বাকি টুকু বলার আগেই সানাত ওহীর দিকে বালিশ ছুঁড়তে লাগলো। ওহী বলতে লাগলো,

আআআ… থাম। সানাত ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ এবারের মতো ছেড়ে দে।

চুপ কর। শয়তান। তোকে আজ আমি মজা দেখিয়েই ছাড়বো। কুত্তা। অসভ্য। বলেই আরো একটা বালিশ ছুড়লো। তবে এবারের বালিশটা ভুলবশত ওহীর ওপর না পরে পড়লো অন্য কারো ওপর। অন্তিম সবেমাত্র ঘরে পা রেখেছিল তবে আচমকাই মুখের ওপর বালিশ পড়ায় সে হতভম্ব। তার থেকেও বেশি হতভম্ব যখন সে দেখেছে বালিশ ছুঁড়ে মারা ব্যক্তিটি আর কেউ নয় বরং সানাত। এদিকে সানাত ভয়ে জমে আছে। এই মুহূর্তে তার একটা প্রবাদ খুব মনে পড়ছে আর সেটা হলো যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। অন্তিম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

কি ব্যাপার কি হচ্ছে এখানে এসব? এসব বালিশ ছুড়াছুড়ি আর কিসব গালাগাল শুরু করেছিস তোরা?

ভাইয়া আমি কি করলাম? সানাতই তো…

সঙ্গে সঙ্গে সানাত চোখ গরম করে তাকালো। ওহী আমতা আমতা করে বললো,

ভাইয়া আমি এখন আসি।
বলেই কেটে পড়লো ওহী। আর এদিকে সানাত লজ্জায় কোথায় পালাবে খুঁজতে খুঁজতে আচমকাই দৌঁড় লাগালো ওয়াশরুমে। তবে এখানেই বাঁধলো আরেক বিপত্তি। ওয়াশরুমে দৌঁড় দিতে গিয়েই ধুম করে বারি খেলো দেয়ালের সাথে। সঙ্গে সঙ্গে কপাল চেপে ককিয়ে উঠলো সানাত। পুরো ঘটনায় অন্তিম কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এই মেয়ের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সে। কোনোমতে নিজেকে সামলে ছুটে গেলো সানাতের কাছে। সানাতকে ধরে নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে মাথায় পানি ঢালতে লাগলো। তারপর রেগে গিয়ে বলতে লাগলো,

তুমি কি পাগল? নাকি মাথার তার ছেরা? আমাকে দেখে ওভাবে পালাচ্ছিলে কেনো? আমি বাঘ না ভাল্লুক? আজব!

সানাত চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা বলছেনা।

🌻
বিছানার এক কোণায় বসে সানাতের কপালে বরফ ছুঁইয়ে দিচ্ছে ওহী। পাশেই দাড়িয়ে আছে অন্তিম। সানাত কোনো কথা বলছেনা। অন্তিম বলে উঠলো,

ওহী তোর বান্ধবীর যে মাথায় সমস্যা সেটা আগে বলবিনা? ডাক্তার দেখাতে হবে মাথার।

হ্যাঁ ভাইয়া পুরো মাথাতেই সমস্যা ওর। দেখলেনা একটু আগে আমার উপর কিভাবে আক্রমণ করেছিল আর কিসব গালাগাল! ছি ছি!

সানাত ক্ষেপে গিয়ে বললো,

একদম ফালতু কথা বলবিনা ওহী। আমি এমনি এমনি তোকে মারছিলাম তখন? তুই কি বলেছিস মনে নেই?

কি এমন বলেছিলাম আমি যে তুই আমাকে ওভাবে নির্দয়ের মতো মারবি? আমি শুধু বলেছিলাম যে কাল রাতে ভাইয়া তোর শা…

ওহীর বাচ্চাআআআ….

ওমাগো পাগল ক্ষেপছে…
বলেই দৌঁড় লাগালো ওহী। আর তার পেছন পেছন খাট থেকে লাফ দিয়ে নেমে দৌঁড় লাগালো সানাতও। আর এদিকে অন্তিম অবাকের শেষ পর্যায় পৌঁছে গেছে আজকের এই একটার পর একটা অদ্ভুত কান্ড কারখানা দেখে। তার মাথার ওপর দিয়ে গেছে সব। সে মনে মনে ভাবছে, এই মেয়ে না একটু আগেও ব্যাথায় কাতরাচ্ছিল আর এখন কিনা এভাবে দৌড়াচ্ছে! এই মেয়েকে দেখে কে বলবে এই মেয়ে এতো শান্ত-শিষ্ট অথচ এর মধ্যে তো চঞ্চলতার শেষ নেই! যতো দিন যাচ্ছে এই মেয়ের নতুন নতুন রূপের সাথে পরিচিত হচ্ছে অন্তিম।
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে