অতঃপর গল্পটা তোমার আমার পর্ব-২২

0
708

#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-২২
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)

ড্রয়িং রুমে বসে নিজের খুব পছন্দের একটা সিরিয়াল দেখছিল কাজল আর তার পাশে বসে আছে রাবেয়া বেগম। এমন সময় হঠাৎ কলিং বেল বেজে ওঠায় কাজল বেশ বিরক্ত হলো। বিরক্তি নিয়েই দরজা খুলতে চলে গেলো। কিন্তু দরজা খুলতেই সে সামনে দাড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে চরম অবাক। সামনে অন্তিম দাড়িয়ে আছে। আজ হঠাৎ এই সময় অন্তিমের আগমন বেশ অবাককরা একটা বিষয়। ভেতর থেকে রাবেয়া বেগম বলে উঠলেন,

কিরে কাজল, কে এসেছে?

খালাম্মা ভাইজান আইছে।

কে?

আর কিছু বলার আগেই অন্তিম ঢুকে পড়লো। তারপর সোজা ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়ালো। রাবেয়া বেগম এই সময় হঠাৎ অন্তিমকে দেখে বেশ চমকে উঠলেন। এই মুহূর্তে সে অন্তিমকে দুঃস্বপ্নেও এখানে আশা করেননি। তবে তারসাথে বেশ আনন্দও হচ্ছে তাঁর এই ভেবে যে যাক সানাত তারমানে অন্তিমকে মানিয়ে নিয়েছে ছোঁয়াকে বিয়ে করার জন্য। তাই অন্তিম এসেছে। রাবেয়া বেগম নিজের ভাবনা ফেলে অন্তিমের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,

একি অন্তিম তুমি হঠাৎ এই সময়ে? কোনো দরকার ছিলো?

জ্বি, একটা অত্যন্ত দরকারি কাজেই এসেছি।

ওহ্। তা দাড়িয়ে আছো কেনো বসো।

আমি বসতে আসিনি। আঙ্কেল বাসায় আছেন?

হ্যাঁ। আছেন। ঘরে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে।

ওহ্। একটু ডেকে দিন ওনাকে। কিছু জরুরী কথা আছে।

হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ডাকছি। আর ছোঁয়াকেও ডেকে দিচ্ছি তুমি বসো। কতদিন পর এলে! এই কাজল অন্তিমের জন্য নাস্তা নিয়ে আয়।

না না এসবের কোনো প্রয়োজন নেই। আমি এখানে খেতে আসিনি।

তা বললে হয় নাকি? তুমি কতদিন পর এলে আমাদের বাসায়। তুমি বসো আমি ডেকে আনছি। বলেই তিনি চলে গেলেন।
.
.

ড্রয়িং রুমে সোফায় মুখোমুখি হয়ে বসে আছে অন্তিম, আরহাম মির্জা, রাবেয়া বেগম আর ছোঁয়া। পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে আছে কাজল। তার মন বলছে আজ একটা কোনো বড়সড় ধামাকা হবে। আর সে ধামাকা মিস করার পাত্রী নয়। আরহাম মির্জা বলে উঠলেন,

একি অন্তিম তুমি কিছু খাচ্ছো না যে! নেও।

আমি তো বললাম আমি এখানে নাস্তা পানি খেতে আসিনি। কিছু জরুরী জরুরী কথা ছিল।

আহা ডিভোর্সের কথা পরেও বলা যাবে তুমি আগে কিছু মুখে তোলো।

ডিভোর্সের কথা মানে?

হ্যাঁ, তুমি তোমার আর সানাতের ডিভোর্সের কথা বলতেই তো এসেছো সে আমি জানি। আমি শুধু বলবো যতো দ্রুত সম্ভব ডিভোর্সের ঝামেলাটা সেরে ফেলো। যতদ্রুত এই ঝামেলা মিটবে ততো তাড়াতাড়ি তোমার আর ছোঁয়ার বিয়ের কাজটাও সেরে ফেলতে পারবো।

পর্দার আড়াল থেকে কাজল আস্তে করে সানাতের নম্বরে কল করলো। তারপর সানাতকে পুরো কাহিনী বলে হোল্ডে রেখে বাকি কাহিনী দেখায় মনোযোগ দিলো। অন্তিম তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো,

সানাত আর আমার ডিভোর্স মানে? আমি সানাত আর আমার ডিভোর্সের কথা বলতে এখানে এসেছি এটা আপনাকে কে বললো? আর আমি আপনার মেয়েকে কেনো বিয়ে করতে যাবো?

মানে তুমি তোমাদের ডিভোর্সের ব্যাপারে কথা বলতে আসনি! তাহলে কেনো এসেছো তুমি?

এসেছি আপনার সাথে কিছু বোঝাপড়া করতে আরহাম মির্জা।

ছোঁয়ার বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। তারপর বলে উঠলেন,

এসব কোন ধরনের বেয়াদবি করছো তুমি?

বেয়াদবি তো এখনও শুরুই করিনি তার আগেই বেয়াদব বলছেন! আমি বেয়াদবি শুরু করলে কিন্তু বেয়াদবির শেষ সীমা পর্যন্ত নিয়ে যাবো আপনাকে।

আমার বাসায় এসে তুমি আমাকে শ্বাসাচ্ছ! এতো বড়ো স্পর্ধা!

আপনার ভাগ্য ভালো এটা আপনার বাসা তা নাহলে এতক্ষণে ঠিক কি করতাম আপনার কোনো ধারণাও নেই। সোজা পুঁতে ফেলতাম আরহাম মির্জা!

আরহাম মির্জা মুহূর্তেই গর্জে উঠে বললেন,

অন্তিম! মুখ সামলে কথা বলো।

গলার আওয়াজ নিচে। আমার সাথে একদম গলাবাজি করবেন না। আর আমি এতক্ষণ ধরে নিজেকে সামলিয়েই এসেছি। তবে আর পারছিনা। আপনার আর আপনার স্ত্রীর সাহস কি করে হয় সানাতকে ডেকে এনে যা নয় তাই বলার? এতো সাহস আপনাদের কে দিয়েছে বলুন? আমার স্ত্রীকে বাড়ি বয়ে ডেকে এনে তাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে তাকে ডিভোর্স চাইতে বলেন!আর আমি ভাবতে পারছিনা আমি সানাতকে ডিভোর্স দেবো কি দেবো না সেটা বলার আপনারা কারা? আপনাদের কথায় আমি আমার বউ ছাড়বো! আর সাহস তো কম না আপনাদের আবার নিজেদের চরিত্রহীন, বেহায়া মেয়েকে আবার আমার ঘাড়ে চাপাতে চান!

মুখ সামলে কথা বলো অন্তিম। আমার মেয়ের নামে একটাও বাজে কথা বলবেনা বলে দিলাম।

খুব গায়ে লাগলো নাকি। আসলে সত্যি কথা একটু বেশিই গায়ে লাগে। আর একটাও বাজে কথা বলিনি আমি আপনার মেয়ের নামে। আপনার মেয়ে ঠিক যা তাই বলেছি। যে মেয়ে সাড়ে তিন বছর প্রেম করে তারপর বিয়ের দিন হবু স্বামীকে ছেড়ে পুরাতন প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায় শুধুমাত্র টাকার লোভে তাকে চরিত্রহীন ছাড়া আর কি বলে! আর আমার হাসি পায় ভাবতেই যে আপনারা সানাতকে সরিয়ে আমাকে আপনার বেহায়া মেয়েকে বিয়ে করতে বলছেন। মানে মাথা গেছে আপনাদের? আমার বিয়ে করা বউকে ডিভোর্স দিয়ে আপনার এই চরিত্রহীন, ঠকবাজ মেয়েকে আমি বিয়ে করবো ঠিক কি কারণে আমাকে একটু বলুন তো! আপনার মেয়ে একটা লম্পট ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে লিভ ইন রিলেশনশিপে ছিলো তারপর যখন সেই ছেলের চাহিদা মিটে গেছে আপনার মেয়েকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আর অমনি আপনার মেয়ে তার ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ছুটে এসেছে। আর আপনারাও কেমন বাবা মা? কোথায় মেয়েকে শাসন করবেন তা না উল্টে আরো মেয়েকে লেলিয়ে দিচ্ছেন।

চুপ করো অন্তিম। লেলিয়ে দিচ্ছি মানে? ছোঁয়া আর তুমি ভালো থাকবে তাই বলছি।

জাস্ট শাট আপ। আমার ভালো আপনাদের ভাবতে হবেনা। আমার ভালো আমি নিজেই ভাবতে পারি। আর আপনার এই অসভ্য মেয়েকে আমার থেকে দূরে থাকতে বলবেন। ওর ছায়াতেও আমার ঘেন্না পায়! আর আপনারাও শুধরে যান। আমার জীবনে যদি আপনাদের কারণে কোনো প্রবলেম তৈরি হয় তাহলে আমি এর শেষ দেখে ছাড়বো বলে দিলাম। অবশ্য দোষটা ঠিক আপনাদের একার নয়। আমার বলদ বউয়েরও দোষ আছে। ওই গাধা আপনাদের কানপট্টিতে তাল মিলিয়ে চলে। নিজের ব্রেইন না খাটিয়ে গাধার মত ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে কেটে চলে গেছে। কোথায় আপনার অসভ্য মেয়েটার গালে দু চারটে চর লাগাবে তা না উল্টে নিজের স্বামীকে এই অসভ্য মেয়ের সাথে গছিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। অনেক সহ্য করে নিয়েছি কিন্তু এখন আপনারা যা ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন তাতে আমার গাধা বউকে আর একা ছাড়া যাবেনা। এবার সংসারে বাঁধতে হবে তবে যদি ঐ গাধার আক্কেল হয়। আমি আজকে গিয়েই ফ্যামিলি প্ল্যানিং শুরু করবো। আর বউ নিয়ে রিস্ক নেওয়া যাবেনা। আর আপনি আপনার মেয়েকে সামলে রাখুন। নাহলে দ্বিতীয়বার যদি আপনার মেয়েকে আমি আমার জীবনে রিএন্ট্রি করতে দেখেছি তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা। আর আপনারাও এসব মূর্খ চিন্তা ভাবনা বাদ দিন। এক জনের স্বামী আবার অন্যজনকে দেয় কি করে? আমি কি কোনো খেলনা জিনিস নাকি?

অন্তিম তুমি আজ বড্ডো বাড়াবাড়ি করলে! তোমাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম! পাশ থেকে বললেন রাবেয়া বেগম। অন্তিম ওনার দিকে তাকিয়ে বললো,

আপনাকেও আমি অনেক ভালো মহিলা ভেবেছিলাম এক্স আন্টি। কিন্তু আপনি যা রূপ দেখিয়েছেন তাতে বাংলা সিরিয়ালের তথাকথিত সৎ মায়েদেরও হার মানিয়েছেন। আচ্ছা আপনি না সানাতের খালা! খালার এমন হয়! ছিঃ! খালার মায়ের আরেক প্রতিচ্ছবি হয়। কিন্তু আপনি কি করেছেন। আপনি তো পুরো খালাজাতিকে অপমান করেছেন। লজ্জা হওয়া উচিত আপনার! যাই হোক আমি শুধু এইটুকুই বলতে এসেছি আমার আর সানাতের জীবন থেকে দূরে থাকুন। আর নিজের মেয়েকে সামলে নিন কারণ আমি যদি একবার কোনো স্টেপ নেই তাহলে কিন্তু খুব ভয়ংকর কিছু হবে। বলেই অন্তিম বেরিয়ে গেলো। আর ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে থাকা ছোঁয়ার বাবা, মা, ছোঁয়া সকলেই স্তন্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ছোঁয়া ভাবতে অব্দি পারছেনা অন্তিম তাকে আজ এতো বড়ো অপমান করে চলে গেল! এটা কি সেই অন্তিম যে একটা সময় তার পেছনে পাগলা কুকুরের মতো ঘুরতো! এতোটা অচেনা হয়ে গেল!
আর এদিকে ফোনের ওপাশে লাইনে থাকা সানাত এতক্ষণ অন্তিমের সব কথা শুনে সেও চরম বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। ভাবতে অব্দি পারছেনা অন্তিম তার হয়ে কথা বলেছে। মনটা আনন্দে নেচে উঠলো মুহুর্তেই। তার পরের মুহূর্তেই অন্তিমের বলা ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর কথা মনে পড়তেই লজ্জায় নুইয়ে গেলো সানাত।
.
.

অন্তিম বাড়ি ফিরেছে সবেমাত্র। তার হাতে আইসবক্স । ঘরে ঢুকেই দেখলো সানাত চুপচাপ বিছানায় বসে আছে। অন্তিম কোনো কথা না বললে সানাতের মুখোমুখি বসে সানাতের গালে যেখানে পাঁচ আঙ্গুলের স্পষ্ট ছাপ ভেসে আছে সেখানে এক টুকরো বরফ ছুঁইয়ে দিয়ে আলতো করে হাত রাখলো। তারপর আচমকাই টুপ করে একটা চুমু খেয়ে বসলো সানাতের গালে। সানাত কিছু বুঝে উঠবে তার আগেই তার মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরলো অন্তিম। তারপর বলে উঠলো,

সরি। রাগের মাথায় খুব জোরে মেরে ফেলেছি। আর কক্ষনো করবো না। প্রমিস।

সানাত কাপাকাপা হাতটা নিয়ে অন্তিমের পিঠে রাখলো। তারপর বলে উঠলো,

আমি কিছুই মনে করিনি। কারণ ভুল আমার ছিলো। অন্যায় আমি করেছিলাম। কিন্তু আপনি ওই বাড়ি কি করেছেন?

তোমার খালা খালু আর অসভ্য খালাতো বোনকে ডিটারজেন্ট ছাড়া ধুয়ে এসেছি।
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে