#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-২১
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)
ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। সানাত বাড়ি ফিরেছে কিছুক্ষণ হলো। সে সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে এরই মধ্যে ঘরে অন্তিম প্রবেশ করলো। সানাত অন্তিমের দিকে এক পলক তাকিয়ে তারপর দৃষ্টি সরিয়ে খাটে উপরে একটা বই নিয়ে বসলো। অন্তিম চোয়াল শক্ত করে সানাতের কার্যকলাপ দেখছে। সে গিয়ে সোজা সানাতের সামনে দাঁড়ালো। কিন্তু সানাতের কোনো ভাবান্তর দেখা গেলোনা। যেনো সে দেখেও না দেখান ভান করলো। অন্তিম এবার ডাক দিলো,
সানাত!
আমি এখন একটু ব্যস্ত আছি।
ব্যস্ততা আমাকে দেখাবে না। আমার তোমার সাথে কথা আছে।
আমি তো বললাম আমি এখন ব্যস্ত আছি।
অন্তিম আর নিজের মেজাজ কন্ট্রোল করতে পারলো না। সঙ্গে সঙ্গে সানাতের হাত থেকে এক থাবায় বইটা কেড়ে নিলো। সানাত বিরক্ত হয়ে বলে উঠলো,
আপনার সমস্যা কি? বইটা নিলেন কেনো?
আগে আমার প্রশ্নের জবাব দেও। সারাদিন কোথায় ছিলে?
বাইরে ছিলাম।
আমাকে বা বাড়ির কাউকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করোনি যে তুমি কোথায় আছো কেমন আছো। আর প্রয়োজন না হয় বোধ করনি কিন্তু এটলিস্ট ফোনটা তো অন রাখতে পারতে। তোমার কোনো আইডিয়া আছে আমি ক্লাস বাদ দিয়ে তোমার চিন্তায় মরেছি। পাগলের মতো খোঁজাখুঁজি করেছি। অথচ তুমি কতোটা ইরেস্পন্সিবল!
কেনো খুঁজেছেন আমায়? আমি তো বলিনি আমাকে নিয়ে চিন্তা করুন। তো কেনো করছেন?
মুহুর্তেই অন্তিম চেঁচিয়ে উঠলো। তারপর সানাতের বাহু শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো,
একদম চুপ। একে তো অন্যায় করেছো তারওপর আবার রাগ দেখাচ্ছ। আমি থানা অব্দি যাবো ভেবেছিলাম এর মধ্যেই মা ফোন করে জানালো তুমি বাসায় পৌঁছেছ। কোথায় ছিলে সারাদিন?
আমার লাগছে!
লাগুক। লাগাটা উচিত। আগে আমার প্রশ্নের জবাব দেও।
কেনো করছেন এমন ছাড়ুন।
ছাড়বোনা। যতক্ষণ অব্দি না আমার প্রশ্নের জবাব পাবো আমি ছাড়বোনা।
কিসের জবাব! কোথাও যাইনি আমি।
মিথ্যে বলবেনা সানাত। বলো কোথায় গিয়েছিলে?
ছাড়ুন আমাকে। আমার ওপর একদম জোর খাটাতে আসবেন না অন্তিম আহসান। কি ভেবেছেন আপনি আপনার হাতের পুতুল আমি যেভাবে খুশি সেভাবে আমাকে নাচাবেন! কিসের এতো অধিকারবোধ আপনার? কে হই আমি আপনার? আপনি তো বাধ্য হয়ে প্রতিশোধ নিতে বিয়েটা করেছেন। এই বিয়েটা তো একটা বোঝা আপনার কাছে। তাহলে কেনো এই বোঝা শুধু শুধু বয়ে বেড়াচ্ছেন? প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন আপনি নিয়েছেন তো! এবার ছেড়ে দিন আমাকে। মুক্তি দিয়ে দিন আমাকে। ডিভোর্স চাই আমি।
অন্তিম আজ এমন একটা কাজ করে ফেললো যা যে কোনোদিন আজ অব্দি করেনি। সে মুহূর্তেই সানাতের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পর মারলো। সানাত কিংকর্তব্যবিমূঢ়! অন্তিম সানাতের হাত শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে বললো,
কি বললি তুই মুক্তি চাস? ডিভোর্স চাস তুই? বেশি আস্কারা দিয়ে ফেলেছি তাইনা? তোর সাহস কি করে হলো তুই ডিভোর্স চাস? পুরাতন প্রেমিককে আবার মনে ধরেছে তোর? তাই তুই আমার থেকে ডিভোর্স চাইছিস তাইনা? খুব পয়সাওয়ালা বুঝি তোর পুরাতন প্রেমিক?
অন্তিম! একটাও নোংরা কথা বলবেন না।
খুব গায়ে লাগছে বুঝি। কই আমাকে নিয়ে তো মোটেও গায়ে লাগেনা অথচ প্রেমিককে নিয়ে বলেছি বলে একদম ফোস্কা পড়ে যাচ্ছে। এতো প্রেম! আজকে কান খুলে শুনে রাখো আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোমার কোনো মুক্তি নেই পাখি। তুমি চাও আর না চাও সংসার আমার সাথেই করতে হবে তোমাকে কলিজা। তাই মুক্তির চিন্তা দুঃস্বপ্নেও করো না। আর যদি কখনো ডিভোর্সের নামও মুখে এনেছ তাহলে কসম খুন করে ফেলবো জান।
সানাত কেঁদে ফেললো। তারপর বলে উঠলো,
কেনো থাকবো আমি আপনার সাথে? আমি তো কারো প্রয়োজন হতে চাইনি আমি তো প্রিয়জন হতে চেয়েছি। কিন্তু আমি পারিনি। আমি তো আপনার ভালোবাসা না। আমি তো শুধুমাত্র একটা দায়িত্ব। যেখানে ভালোবাসাই নেই সেখানে আমি থেকে কি করবো?
সানাত থামলো। তারপর অশ্রুসিক্ত চোখে অন্তিমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
আমাকে কেনো একটু ভালোবাসলেন না অন্তিম? কেনো বাসলেন না? আমি কি খুব বেশি কুৎসিত? একটুখানি ভালোবাসা কি আমাকে দেওয়া যেতনা?
অন্তিম একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানাতের দিকে। তারপর সানাতের গালে দুই হাত রেখে বলে উঠলো,
আমি কি ভালোবাসিনি সানাত? তুমি কি অনুভব করো নি আমার ভালোবাসা সানাত?
কই আপনি তো কখনো বলেননি আপনি ভালোবাসেন?
সবসময় কি মুখে বলাটা খুব জরুরী সানাত?
আমি এখন আর ভালোবাসায় ঠিক বিশ্বাস করিনা সানাত। কারণ ভালোবাসায় বিচ্ছেদ থাকে। আর আমি তোমার সাথে আমার বিচ্ছেদ চাইনা। কোনো মতেই চাইনা। আমি শুধু জানি আমার তোমাকে প্রয়োজন, ভীষন ভাবে প্রয়োজন। আমার অভ্যাস হয়ে গেছো তুমি সানাত। আর কিছু অভ্যাস কখনো ছাড়া যায়না যেমন তুমি। তোমাকে ছাড়ার সাধ্য আমার নেই। কারণ তোমাকে ছাড়লে আমি নিজেই নিঃস্ব হয়ে যাবো। একবার ভালোবাসায় ধাক্কা খেয়ে আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি সানাত কিন্তু তোমার বেলায় আমি আর সামলে উঠতে পারবনা। সেই সাহস আমার নেই। আর তুমি বললে না সানাত তুমি প্রিয়জন হতে চাও। প্রিয়জনতো সেই হয় সানাত যে প্রয়োজনীয়, যার প্রয়োজন থাকে জীবনে। আর আমার তোমাকে প্রয়োজন। ভালোভাবে বাঁচতে আমার তোমাকে প্রয়োজন। তুমি এখন আমার কাছে অক্সিজেনের মত হয়ে দাঁড়িয়েছো। তোমাকে ছাড়া নিঃশ্বাস নেওয়াও অসম্ভব। এরপরও কি বলতে হবে ভালোবাসি?
সানাত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অন্তিমের দিকে। তার ভেতরে বোধয় এতো ভালোলাগা কখনোই কাজ করেনি যতোটা আজ হচ্ছে অন্তিম তাকে ভালোবাসে শুনে। সানাত বলে উঠলো,
কিন্তু ছোঁয়া?
ছোঁয়ার কথা বলে কি লাভ? আমি তো আর সেখানেই আটকে নেই সানাত আমি এগিয়ে এসেছি। ছোঁয়ার প্রতি আমার যেই অনুভূতিটা ছিলো সেটা কেটে গেছে। তাই এখন ও ফিরলো কি ফিরলো না তাতে কিছুই আসে যায়না আমার। আর যে একবার ঠকাতে পারে সে বারবার ঠকাতে পারে। তাই ছোঁয়ার কথা আমি আর ভাবতেও চাইনা। ওর কথা ভাবা মানে তোমাকে অসম্মান করা, তোমার সাথে অন্যায় করা যেটা আমি কখনোই করতে পারবনা। আর ছোঁয়া নিজের ইচ্ছায় অন্য ছেলের সাথে চলে গেছিলো আর এখন আবার ফিরে এসেছে। জীবনটা কোনো ছেলেখেলা নয় যে যখন যা খুশি তাই হবে।
আমি সবটা বুঝতে পেরেছি।
এবার তুমি বলোতো কোথায় গেছিলে?
আসলে আমি মামণির বাড়িতে গেছিলাম।
কিইই? ছোঁয়াদের বাড়িতে কেনো গেছিলে?
মামণি কল করেছিলো। কল করে আসতে বলেছিল কিন্তু ওখানে…
সানাত কিন্তু ফিন্তু শুনতে চাইনা পুরো ঘটনা খুলে বলো। কিচ্ছু স্কিপ করবেনা এ টু জেড বলো।
সানাত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুরো ঘটনা খুলে বলতে শুরু করলো। পুরো ঘটনা শোনার পর অন্তিম নিজেকে সর্বোচ্চ দিয়ে কন্ট্রোল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সানাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
সানাত তুমি বসো। আমি একটু আসছি। গালে অনেক জোরে লেগেছে তাইনা আসলে প্রচুর রেগে গেছিলাম। রাগের মাথায় খেয়াল ছিলোনা। আমি এসে মলম লাগিয়ে দেবো। বলেই উঠে দাঁড়ালো অন্তিম। সানাত বলে উঠলো,
আপনি এখন এই সময় কোথায় যাবেন?
অন্তিম সানাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
এক্সের বাড়ি যাবো।
কিইই? কিন্তু কেনো?
এক্সের বাবা মায়ের সাথে অনেক বোঝাপড়া আছে। আজ জনমের শিক্ষা দিয়ে আসবো। বলেই বেড়িয়ে গেলো অন্তিম। আর সানাত হা হয়ে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে