অতঃপর গল্পটা তোমার আমার পর্ব-১৯

0
666

#অতঃপর_গল্পটা_তোমার_আমার
#পর্ব-১৯
#হুমায়রা_আঞ্জুম (লেখনীতে)

সানাত দরজাটা খোল প্লীজ। সানাত প্লীজ এভাবে দরজা বন্ধ করে রাখিস না।

ভেতর থেকে সানাত বলে উঠলো,

আমি একটু একা থাকতে চাই ওহী। তুই প্লীজ এখান থেকে যা।

সানাত পাগলামি করিসনা। দরজা খোল বলছি।

কেনো বিরক্ত করছিস। চলে যা।

সানাত এমন করিসনা। কেউ না বুঝলেও তোর অবস্থাটা আমি বুঝতে পারছি। তাই বলছি প্লীজ দরজাটা খোল।

আমি ঠিক আছি। কিচ্ছু হয়নি আমার। তুই এখন যা। আমি একটু একা থাকতে চাই। আমাকে একটু একা থাকতে দে। প্লীজ।

বেশ আমি যাচ্ছি। কিন্তু প্লিজ তুই উল্টোপালটা কিচ্ছু করিসনা।

তুই যা ওহী।

যাচ্ছি। বলেই ওহী চলে গেলো। আর সানাত সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। আর তারপর মুহূর্তেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। ভেতরের কঠিন যন্ত্রণাগুলো কান্না হয়ে উপচে পড়লো। তারপর চিৎকার করে বলে উঠলো,

কেন? কেনো সবসময় আমার সাথে? আমিই কেন? কেন আমায় একটু ভালোবাসলে না অন্তিম? আমি তো তোমায় ভালোবাসতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি তবুও তো ভালোবাসায় কমতি রাখিনি। বন্ধ করিনি তোমায় ভালোবাসা। তাহলে তুমি কেনো পারলে না আমাকে একটু ভালোবাসা ভিক্ষা দিতে? আমি কি এতটাই অযোগ্য তোমার ভালোবাসা পাওয়ার? যদিই ভালোই না বাসো তবে এতদিন কেনো কাছে এসেছিলে, যত্ন দেখিয়েছিলে, কেনো এমন অনুভব করিয়েছিলে যেন তুমিও ভালোবাসো আমায়? কেনো করলে? আর আজ সব ভুলে গিয়ে আমাকে ফেলে কি করে ছোঁয়ার কাছে ফিরে গেলে? আমার এতো কেনো কষ্ট হচ্ছে? কেনো পারছিনা মানতে? তবে কি আমি বড্ডো স্বার্থপর হয়ে গেলাম অন্তিম আহসান? হয়তো। আমার লোভ জন্মে গেছে তোমার প্রতি, তোমার সান্নিধ্যের প্রতি, এই সংসারটার প্রতি। আমি পারবোনা আমার সুখের সাম্রাজ্যটা ছাড়তে। পারবো না। বলতে বলতেই অঝোরে কাঁদতে লাগলো সানাত।
.
.

🌻
একটা ক্যাফেতে সামনাসামনি বসে আছে অন্তিম ছোঁয়া। নীরবতা ভেঙ্গে অন্তিমই প্রথম বললো,

তোমার যা বলার তাড়াতাড়ি বলো। আমার তাড়া আছে।

তুমি আমাকে আজ তাড়া দেখাচ্ছ অন্তিম! কই এর আগে তো কখনোই আমাকে সময় দিতে গিয়ে তুমি তাড়া দেখাওনি। তাহলে আজ কেনো দেখাচ্ছ?

অন্তিমের সোজাসাপ্টা জবাব,

তখন আর এখনকার মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। আর তোমাকে এখন সময় দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসেনা। কারণ সেই সময়টা আমার স্ত্রীর। শুধুমাত্র সানাতের।

অন্তিমের মুখে এমন কথা শুনতেই অবাক হয়ে গেলো ছোঁয়া। তৎক্ষণাৎ সে বলে উঠলো,

আমার সময়টা তুমি সানাতকে দেবে? এইটুকু সময়ের মধ্যে এতো আপন হয়ে গেলো সানাত!

তোমার সময় তো অনেক দূর তোমার কোনো ভ্যালুই আমার লাইফে নেই। আমার কাছে এখন তুমি জাস্ট একটা পাস্ট, একটা মিস্টেক। আমার প্রেজেন্ট, ফিউচার সবটা এখন শুধুমাত্র একজনই আর সে হলো সানাত। এখানে তোমার কোনো জায়গা নেই।

আজি জাস্ট ভাবতে পারছিনা অন্তিম, সানাত তোমার ব্রেইন এভাবে ওয়াশ করে ফেলেছে! কি এমন জাদু করেছে সানাত তোমাকে যে তুমি ওই সানাতের জন্য আমার সাথে এরকম বিহেভ করছো! হাও পসিবল? এই ক’দিনের মধ্যে তুমি আমাকে, আমার প্রতি সব ফিলিংস, আমাদের সাড়ে তিন বছরের ভালোবাসা সব ভুলে গিয়ে সানাতকে নিজের প্রেজেন্ট, ফিউচার করে নিয়েছো? এই তোমার ভালোবাসা অন্তিম!

ছোঁয়ার কথায় কি হলো ঠিক বোঝা গেলোনা তার আগেই অন্তিম হো হো করে হেসে উঠলো। ছোঁয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে অন্তিমের দিকে। অন্তিম যেনো গড়াগড়ি খাচ্ছে। যেনো মনে হচ্ছে ছোঁয়া খুব বাজে একটা জোকস বলেছে। তারপর কোনো রকমে হাসি থামিয়ে তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো,

এসব কথা আর যাই হোক তোমার মুখে একদম শোভা পায় না ছোঁয়া। তোমার মুখে এসব কথা শুনলে জাস্ট হাসি পায় তাছাড়া আর কিছুইনা। আর কি যেনো বললে তুমি ভালোবাসা? সাড়ে তিন বছরের ভালোবাসা আমি কি করে ভুলে গেলাম? তাহলে আমাকে একটু বলো তো আমি না হয় ভালোবাসতে পারিনি কিন্তু তুমি কি করলে? সাড়ে তিন বছরের ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে নিজের বড়লোক এক্স বয়ফ্রেন্ডের সাথে চলে গেলে! তখন কোথায় ছিলো তোমার এই সো কল্ড ভালোবাসা? বলো কোথায় ছিলো? তখন একবারও আমার কথা, আমার ফ্যামিলির মান-সম্মানের কথা ভেবেছিলে তুমি? অবশ্য ভাববে কি করে তুমি তোমার মত মেয়েরা তো শুধু নিজেদের নিয়ে ভাবে। স্বার্থপর,বেঈমান! তোমার প্রতি আমার একসময় প্রচুর ফিলিংস কাজ করতো কিন্তু এখন তোমার প্রতি জাস্ট ঘেন্না হয়। আর তারসাথে আফসোসও হয় যে আমি কতোটা ভুল মানুষের প্রতি নিজের ফিলিংস অপচয় করেছিলাম! আর হ্যাঁ সানাতকে নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবেনা। নিজের সাথে তো ওর তুলনা একদম দেবেনা। কারণ তোমার সাথে ওর তুলনা তো দূর তুমি ওর তালিকার কতারেও পড়ো না। সানাত আর যাই হোক তোমার মতন স্বার্থপর নয়।ওর ভেতরটা তোমার মতন নোংরা নয় ও পবিত্র। ওর সাথে আমার জীবনটা না জড়ালে হয়তো আমি কোনো দিনও মানুষের ভেতরের সৌন্দর্য্যটা চিনতেই পারতামনা। আমি উপরওয়ালার কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো যে উনি আমার জীবনে সানাতকে পাঠিয়েছে।

ছোঁয়া বিস্ময় নিয়ে বললো,

তুমি বলছো এসব অন্তিম! আমি মানছি আমি একটা বড়ো ভুল করেছি। আমি ক্ষমাও চাচ্ছি তার জন্য। আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায়না?

তুমি ভুল করছো। তুমি কিসের সুযোগ চাইছো? ফিরে আসার? কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয় কারণ আমি আর সেখানেই আটকে নেই। আমি সানাতকে ঘিরে নিয়ে এগিয়ে গেছি।

অন্তিম!!

তুমি প্লিজ আমার আর সানাতের থেকে দূরে থাকো ছোঁয়া। তোমার জন্য সানাতকে অনেক কিছু ফেইস করতে হয়েছে। তাই আমি চাইনা তোমার জন্য আবার সানাত কোনো নতুন সমস্যার সম্মুখীন হোক। তাই প্লিজ দূরে থাকো। সানাতের এক তিল পরিমাণ ক্ষতি আমি সহ্য করবো না। আমি সানাতকে নিয়ে ভালো আছি। তুমিও নিজের মতো থাকো।বলেই উঠে দাঁড়ালো অন্তিম।

ছোঁয়া বলে উঠলো,

এতো যে বড় বড় কথা বলছো তুমি জানো সানাত বিয়ের আগে অন্য কাউকে ভালোবাসতো হয়তো এখনো বাসে।

অন্তিম ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

আগে কি ছিলো না ছিলো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায় না। সানাতের বর্তমান ভবিষ্যৎ সবটাই এখন শুধুমাত্র অন্তিম আহসান। এইটুকু বলেই আর কোনো কথা না বলে সোজা বেরিয়ে গেলো অন্তিম। আর এদিকে ছোঁয়া অন্তিমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভাবতে অব্দি পারছেনা এই কথাগুলো অন্তিম বলেছে তাকে। অন্তিমের এতোটা পরিবর্তন সে কল্পনাতেও আশা করেনি। সে ভাবতে অব্দি পারছেনা তার পেছনে পাগল হয়ে পড়ে থাকা ছেলেটা আজ শুধুমাত্র সানাতের জন্য তাকে এতগুলো কথা শুনিয়ে গেলো। ভেতরের চাপা রাগ, হিংসাটা মুহূর্তেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। সে কিছুতেই এতো সহজে ছাড়বেনা। এর শেষ সে দেখেই ছাড়বে।
.
.
🌻
অন্তিমের বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেছে। বাড়িতে ঢুকেই ড্রয়িং রুমে চোখ বুলাতেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে চোখে পড়লো না। তারপর নিজের রুমের দরজা খুলে ঢুকতেই ঘর অন্ধকার দেখেই ভ্রু কুঁচকে গেল অন্তিমের। তারপর হাতড়ে লাইট জ্বালাতেই চোখ গেলো বিছানায়। বিছনার এক কিনারে সানাত কম্ফর্টার গায়ে টেনে ঘুমিয়ে আছে। অন্তিম বেশ অবাক হলো সানতকে এই সময়ে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে। কারণ সচরাচর সানাত কখনোই এইসময় ঘুমায়না। অন্তিম পকেট থেকে মোবাইল আর ওয়ালেট বের করে সাইড টেবিলের ওপর রেখে সানাতের কাছে গিয়ে বসলো। তারপর ডেকে উঠলো,

সানাত!

সানাতের কোনো সাড়া পাওয়া গেলোনা। অন্তিম আস্তে করে সানাতের শরীরে হাত রাখতেই শিউরে উঠলো। সানাতের সারা শরীর আগুনের মতো গরম। বোঝাই যাচ্ছে জ্বর ভালো মতোই কাবু করে ফেলেছে। অন্তিমের নজর আচমকা সানাতের চোখের দিকে গেলো। সানাতের চোখের কোনায় পানি। চোখের পাপড়িও ভেজা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কেঁদেছে। মুহূর্তেই অন্তিমের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো আর মনে মনে বলে উঠলো,

একি আমার শ্যামবতী কেঁদেছে নাকি?

অন্তিম সাথে সাথে সানাতের মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে নিজেও লাইট অফ করে গায়ে কম্ফর্টার টেনে সানাতকে বুকে আগলে নিয়ে শুয়ে পড়লো। তারপর ঘুমন্ত সানাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে উঠলো,

পাগলী দেখো আমি তোমার কাছেই আছি।কোথাও যাইনি। দিনশেষে তোমার কাছেই ফিরে এসেছি। এই সামান্য বিষয় নিয়ে এভাবে কেঁদে একাকার করা লাগে?
বলেই ঘুমন্ত সানাতের সুযোগ নিয়ে তার কপালে একটা উষ্ণ পরশ এঁকে দিলো।
অথচ জ্বরের ঘোরে থাকা বোকা, ঘুমন্ত সানাত জানতেই পারলোনা সে এই মুহূর্তে ঠিক কতটা যত্নশীল পুরুষের বুকে লেপ্টে আছে। আর কতোটা মায়ার সাথে তাকে আগলে রেখেছে তার সেই যত্নশীল পুরুষটি।
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে