অজানা অনূভুতি পর্ব-০২

0
1816

#অজানা_অনূভুতি
#সায়ন্তিকা_আহমেদ_শুভ্রা
#পর্ব_২

~নামাজ শেষ করে ঘুমালাম আমি আবার,স্বপ্ন দেখলাম যে আমি আর আমার ক্রাশ হিরো আলোম ঘুরতে গেছি কক্সবাজার। তখন ই একটা বজ্জাত মাইয়া এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে হাসতেছে।

~খাটের থেকে নিচে পড়ে হুস আসলো আমার।তাকিয়ে দেখি আমাকে দেখে মাইসু হাসছে।

~কি রে তুই এমন নিচে শুয়ে আছোস কেন?খাট এ কি হইছে?

~এই একদম হাসবি না তুই।আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আমার এতো সুন্দর স্বপ্ন ভেংগে দিলি তুই(রাগ করে)

~আমার কথা শুনে সে তো আরো জোরে হাসা শুরু করলো।

~দারা আগে আমি হেসে নেই,আল্লাহ তোর অই ক্রাশ মানে তো হিরো আলোম।কারো ক্রাশ হিরো আলোম যে হতে পারে তা তোকে না দেখলে জানতেই পারতাম না।

~কেনো হিংসে হয়?আমার মতো হতে চাও?তাহলে গিয়ে হিরো আলোম এর সব গান শুনে আসো।(ভাব নিয়ে)

~তুই থাক তোর হিরো আলোম কে নিয়ে। খাচ্চর মেয়ে ঘুম থেকে উঠে মুখ না ধুয়ে বকর বকর করা শুরু করছে।

~এভাবে আমাকে বললি মাইসা? পড়ে দেখে নিবো তোকে আমি।

~ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি মাইসু আমার আলমারি খুজছে। কিরে আমার ওখানে কি খুঁজোস তু আবার?

~আমি তোর জন্য ড্রেস খুজছি,তোমার জা টেষ্ট তুমি না প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়ে বাহিরে যাও আর ভাইয়ার বকা খাও।

~হুম রে বইম তুই ই একমাত্র আমার কষ্ট বুঝিস। আমার সোনা বোন আচ্ছা তোর অই খাটাস ভাই যখন পয়দা হইছিলো তখন কি আংকেল এর টাকা কন পড়ছিলো?যে হওয়াত পড় মুখে মধু দেয় নাই।

~দোস্ত আসতে বল বাহিরে ভাইয়া বসা।

~এ্যাহ,সে এখানে কেনো?

~আরে ছোট আম্মুই তো আমাদের সবাইকে দাওয়াত দিছে।

~ওহ আম্মু আমার থেকে বেশি ভাইয়াকে ভালো বাসে মনে আমাকে টোকাই আনছে কোথা থেকে। ফারহান ভাইয়া এর সব কথা শুনে আমার না।

~থাক মন খারাপ করিস না যা, এটা পড়ে আয় আজকে নাস্তা সেরে আমি আর তুই হাটতে বের হবো।

~আমি ওকে জানু, সে আমার জন্য লাল রঙের থ্রিপিস বের করছে। আমিও পড়ে আসলাম আর দু জোন নিচে গিয়ে দেখলাম সবাই বসে পড়ছে টেবিল এ শুধু ভাইয়ার পাশে একটা চেয়ার আর ফারহান ভাইয়াত পাশে একটা খালি আছে,তাই আমি বুদ্ধি করে ফারহান ভাইয়াত পাশে বসে পড়লাম আর মাইসু কে ভাইয়ার পাশে বসার সুযোগ করে দিলাম।

~আমি অনেক অবাক হলাম কারণ এই প্রথম আফ্রি আমার পাশে নিজ থেকে বসলো।তাই দুষ্টুমি করে বল্লাম,আফ্রি আমার পাশে বসলি যে হাহ বুঝতেই পারছি আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের পাশে বসার কত্তো ইচ্ছা তোর।

~উনার কথা শুনে আমি আহাম্মক হয়ে গেলাম কি করলাম আর ভাবলো কি।ভাইয়া অয়েল ইউর অন মেশিন।

~আসছে রে ইংরেজি বলতে চুপাচাপ খাওয়া শুরু কর।

~কিছু না বলে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমার ভাইয়া মাইসু কে কিছু বলছে।

(ভাইয়া পেশায় একজন ডক্টর। উনিও ২৯+। ভাইয়ার নাম রাফসান আদিল।তেমন ফর্সা না ভাইয়া শ্যামলা উচ্চতা ৫” ৮ সব ছেলেদের মতো ওতো স্টাইলিস না আমার ভাই সবসমাই নর্মাল থাকে)

~এই মাইসু শোন?

~হ্যাঁ কিছু বলেন আদিল ভাইয়া?

~মন চায় তো এক থাপ্পড় মেরে দাত ফেলে দেই ওর কথায় কথায় ভাইয়া বলে।শোন বিকালে তুই আমি আফ্রুনি আর ফারাবি যাবো বাহিরে রেডি হয়ে থাকিস।

~উনার কথায় আমি অবাক,এই প্রথম উনি আমাকে কোথাও নিয়ে যাওয়ার কথা বললো।

~খাওয়া দাওয়া শেষ করে আদিল ভাই আর ফারাবি ভাই দুই জন কোথায় জানি চলে গেল আমি আর মাইসা আমার রুম এ গেলাম।

~ঘুরতে যে যাবি বললি না কেন.?কোথায় যাবি কিরে?

~ বলি নাই কারণ আমি সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি, আর আমরা বিকে যমুনা ফিউচার পার্কে যাবো।

~ওয়াও দোস্ত অনেকদিন ধরে না আমাদের প্ল্যান ছিলো আমরা ওখানে যাবো।

~হ্যাঁ কিন্তু কাহিনী হলো তোর ভাই ও তো যাবে আমাদের সাথে আর তুই জানোস যে সে আমাকে কতো বকে।

~হুম রে তাই তো আমি ভাবি ভাই কেনো তোকে বকে?

~দোস্ত জানোস নিউ ছেলেটা আছে না ক্লাসে অইযে সিয়াম ওরে না আমার অনেক ভাল্লাগে।(লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করে)

~সত্যি এই প্রথম শুনলাম তোর মুখে যে হিরো আলোম ছাড়াও আর কাউকে ভালো লাগতে পারে।

~মজা নিস না আমার সত্যি ই অনেক ভাল্লাগে কাল স্কুলে গিয়ে বন্ধুত্ব করে নিবো।

~আচ্ছা করিস।এখন চল আমি পায়েস রান্না করবো তোর ভাইর ফেভারিট তো।

~তাই নাকি চল গিয়ে দেখি আম্মু দেয় না কি।এটা বলে এ গেলাম আমি আর মাইসু আম্মুর কাছে। আম্মু শুনো না মাইসু না আজ পায়েস রান্না করবে বলছে আমার জন্য।

~তা তোর পায়েস খেয়ে মন চায় আমাকে না বলবি এ মেয়েটা কে কেনো জালাচ্ছিস। আমি করে দেই যা তোরা।

~ছোট আম্মু আজ আমি করি না প্লিজ। আমার মন চাচ্ছে আজ আফ্রুই কে খাওয়াতে।

~আচ্ছা যা কর,কিন্তু সাবধানে করিস দেখেশুনে।

~আমি আর মাইসা একসাথে বললাম ওকে।

মাইসা রান্না শুরু করলো আর আমি দেখতে থাকি কি সুন্দর করে রান্না করছে অথচ আমি রান্নার র ও পারি না। আর এ মেয়েটা আমার ভাই কে ভালোবেসে কতোই না রান্না করে । ওর রান্না শেষ হয়ে গেছে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ঘেমে নেয়ে একাকার আমি তাই বললাম যা গোসল করে আমার জামাকাপড় পরে আয়।ও চলে গেল আমি আগে বাটিতে পায়েস বেড়ে রাখি আলাদা আর নিজের জন্য নিয়ে খাওয়া শুরু করি।আহা কি যে মজা লাগছে না পায়েস টা উফফ কি টেষ্টি।

~ও মাইসু এসেছিস যা ভাইয়া কে এটা দিয়ে আয় আমি বা কি সবাই কে দিয়ে আসছি।

~আমি যাবো?ভাইয়া যদি কিছু বলে তখন?

~আরব যাতো যা হবে দেখে নিবি একটু আধটু ঝাড়ি খাওয়াই যায় ভাগ।

~আফ্রুর কথা শুনে আমি আদিল ভাইয়ার জন্য পায়েস নিয়ে ভাইয়ার রুম এ গেলাম। গিয়ে দেখি বসে বই পড়ছে।
ভাইয়া ও ভাইয়া শুনেন?

~আবারো ভাইয়া ডাকায় আমি তাকালাম দেখি মাইসু হাতে কি নিয়ে যেনো দাড়িয়ে আছে।ভাইয়া ডাকায় বিরক্ত হয়ে বললাম, কি হইছে?

~আসলে পায়েস এনেছি আপনার জন্য নেন।

~আমি ওর হাত থেকে বাটি নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম কারণ পায়েস আমার খুব প্রিয়। অনেক মজা হইছে পায়েস টা কে রান্না করছে?

~আসলে আমি রান্না করচি ভাইয়া।

~ওহ,আচ্ছা গিয়ে রেডি হয়ে নে তোরা একটু পড়ে বের হবো।আর শোন তুই আর আফ্রু বোরখা আর হিজাব পড়ে বের না হলে নিবো না।

~ওনার কথা শুনে আমি আফ্রুর ঘরে চলে আসলাম।এসে দেখি আফ্রু মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে।আফ্রু?

~কি?

~মন খারাপ কেনো তোর?কি হইছে?

~কিছু না।

~আচ্ছা শোন ভাইয়া বলছে রেডি হতে যাওয়াত জন্য। বোরখা আছে না তোর তুই কালো টা পর আমাকে নীল টা দে।

~আমি আচ্ছা বলে। বোরখা এনে দিলাম আর আমরা রেডি হয়ে নিলাম। আমাদের চোখ ছাড়া কিছু দেখা যাচ্ছে না।

~বাহিরে গিয়ে দেখি ভাইয়া ড্রাইভিং সিটে বসে আছে আর ফারহান ভাইয়া পিছের সিট না চাইতেও আমি তার পাশে বসলাম।

~আফ্রুকে দেখলাম ভাইয়ার পাশে বসতে আর তাই আমিও আদিল ভাইয়ার পাশে বসলাম আমি বসতেই উনি গাড়ি চালানো শুরু করলেন।

~ফারহান ভাইয়াকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে, উনাকে দেখে একটা গান গাওয়া শুরু করলাম,

চুপিচুপি মন প্রেমে পড়েছে

মনেরি কোনে তে সখ জমেছে

বলেই চুপ হয়ে গেলাম আমি আর ভাবছি হঠাৎ এই গান কেনো গাইলাম।

আমরা যমুনা ফিউচার পার্কে পৌছে গেছি আমাদের নামিয়ে দিয়ে ভাইয়া গেলো গাড়ি পার্ক করতে।

~হঠাৎ দেখি একটা বাচ্চা রাস্তার মাঝখানে তাই তারাতাড়ি গিয়ে বাচ্চাকে কিনারের দিকে সরাতেই একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মারে আমাকে।অসহ্য যন্ত্রনায় চোখ বুজে আসছে আমার শুধু এটুকু কানে আসছে যে আফ্রু এর চিৎকার

~মাইসার দিকে তাকিয়ে দেখি ও নাই সামনে তাকাতেই দেখলাম একটা গাড়ি মাইসা কে ধাক্কা মারলো। তাই চিৎকার দিয়ে উঠলাম মাইসায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া

….চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে