#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৯
মাইশা নিজের মতো করে বকবক করেই যাচ্ছে হঠাৎ আদ্রর দিকে চোখ পড়তেই ও চুপসে গেল। কথা অফ করে একটা মেকি হাসি দিল।
“উঠছো কেন খাবে না?”
“না।”
“না মানে সবাই খেতে এলাম এখন না খেয়ে চলে যাবে।”
“আমি কি সবাইকে চলে যেতে বলছি তোরা খা। আশিক আমার সাথে আয় তো।”
“কোথায় যাবে?”
“দরকার আছে। আদ্র কাউকে কৈইফত দিতে পছন্দ করে না নেক্সট টাইম যেন এই ভুল তোর মাঝে না দেখি।”
বলেই আদ্র বেরিয়ে গেল ওর পেছনে আশিক ও গেল।
এদিকে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাগে ফুঁসছে মাইশা।
“দেখলি আজও তোকে কেমন ইগনোর করে চলে গেল।”
“কি বলতে চাইছিস তুই রাইসা?”
“যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদ্রকে মনের কথা জানিয়ে দে। কবে জানি আবার তোকে ছেড়ে অন্য কাউকে ধরে বসে।”
“অসম্ভব। আদ্র আমাকেই লাইক করে দেখিস না অন্য কোন মেয়ের সাথে কেউ কথা বলে না। আর কাউকে তো ওর সহ্য করতে পারে না। আর ভার্সিটির সবচেয়ে সুন্দরী, স্মার্ট মেয়ে হলাম আমি আমাকে রেখে অন্য কাউকেও লাইক করবে ইম্পসিবল।ও আমাকে লাইক করে দেখিস রাগটা আর ওর অ্যাটিটিউড একটু বেশী এজন্য বুঝতে দেয় না। আর এই অ্যাটিটিউড হ্যান্ডসাম লূকের জন্য তো ওকে আমি এত ভালবাসি।”
“কি জানি ? জানি না বাবা”
রাইসা মনে মনে ভাবতে থাকে,,,
“তোকে যে আদ্র একটু সহ্য করতে পারে না সেটা আমার থেকে আর কেউ ভালো জানে না। আর তুই ভেবে বসে আছিস যে ও তোকে লাইক করে হাধারাম একটা।”
“তা জানবি কেন তুই কোন কামের না।”
বলে মুখ বেঁকিয়ে ফোন টিপতে লাগলো।
রাইস একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো, মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির মেয়ে রাইসা। ভার্সিটিতে এসে আদ্রর ও তার সব ফ্রেন্ডের সাথে ওর বন্ধুত্ব হয়। মাইশা একটু অহংকারী কিন্তু মনটা ভালো। ওদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ টা খুব কাকতালীয়ভাবে হয় রাইসাকে আদ্র সাহায্য করেছিল এখানে পড়াশোনায় । মধ্যবিত্ত হলেও ভাই-বোনের সংখ্যাঅনেক জানার জন্য টাকার অভাব পড়ে পরীক্ষার ফিস দিতে না পারায় এক্সাম দিতে দেয় না তখন আদ্র ওকে সাহায্য করে। তখন থেকেই ওর সাথে আদ্রর ফ্রেন্ডশিপ। তখন থেকে আদ্রর,আশিক, মাইশা, আয়রা, রাহাত, নাদিম, অনিক, আবির, রাফি আরো কিছু আছে সবাই একটা গ্রুপ হয়। এই গ্রুপে আগে দুইটা মেয়ে ছিল মাইশা আর আয়না। আয়রা আর মাইশা দুজন চাচাতো বোন। আয়রা আদ্রর ফুপাতো বোন আর সেই সুবাদে আয়রার সাথে আদ্রর এত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।আর আয়নার চাচাতো বোন মাইশা সেজন্য দুজন গ্রুপে মেয়ে ছিল পরে আবার আমাকে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রথম প্রথম মাইশা আমাকে দেখতে পারত না। কিন্তু থাকতে থাকতে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ভালো হয়েছে। তবে জানতে পারি মাইশা আদ্র লাইক করে প্লাস ভালোবাসে। মাইশা অনেকগুলো রিলেশনও করেছে কিন্তু ও সবার সাথে টাইম পাস।
ও মনে করে আদ্রর ওকে লাইক পরে কিন্তু আমার তো মনে হয় না।
কিন্তু সামনা সামনি বললে আমার মাথা ফাটিয়ে দিবে এজন্য চেপে গেলাম।
আয়রা বেড়াতে গেছে এজন্য ভার্সিটিতে আসতে পারতেছে না। কালকে ফিরে আসার কথা।
.
আদ্র আর আশিক স্নেহা দের ক্লাসে এলো। আশিক আর আদ্র ক্লাসের ঢুকতেই সবাই উঠে দাঁড়ালো।
যেন ক্লাসে স্যার এসেছে। আদ্র ক্লাসে চোখ বুলিয়ে কাউকে খুজল, সবাই দাঁড়ানো দেখে স্নেহাকে চোখে পড়েনি আদ্রর স্নেহা সবার লাস্ট বেঞ্চে বসে গল্প করছে অন্তরার সাথে এজন্য ও আর অন্তরা বাদে সবাই দাঁড়িয়ে রয়েছে।
আদ্রর এটা দেখে রেগে উঠলো,
আদ্র স্নেহা আর অন্তরার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
স্নেহা আর অন্তরা গল্প করতে এতটাই মগ্ন ছিল যে আদ্র কি খেয়ালই করেনি। আদ্রর রাগ মাথায় উঠে গেল।
ও রাগে বেঞ্চে একটা বারি মারলো,, ক্লাসের সবাই বারি পেছনে তাকালো,
স্নেহা আর অন্তরা আচমকা শব্দে ভয় পেয়ে উঠে দাঁড়ালো, স্নেহা কিনারে বাসা ছিল আর অন্তরা সাইডে আদ্র স্নেহার মুখোমুখি মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহা দাঁড়াতে আদ্রর মাথার সাথে বারি খেয়ে আবার সাথে সাথে বসে মাথায় হাত বুলাতে লাগল।
আদ্র ওইভাবেই ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে স্নেহা তার চোখের দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠল,
কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,, আ আ প নি ,,
“এত কিসের গল্প হচ্ছে যে সবাই আমাদের খেয়াল করলো আর তোমরা ফিরে তাকালে না।”
চিৎকার করে কথাটা বললো আদ্রর।
স্নেহা কথা বলতে পারছে না ও আদ্রর দিকে তাকিয়ে কাপাকাপি করছে। আচমকা আদ্রকে দেখে চমকে উঠে তারপর আবার চিৎকার করে বলা কথায় ভয় পেয়ে গেছে।
অন্তরা বলে,,” আসলে ভাইয়া আমরা একটা…
“স্টপ তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি আমি। যাকে জিজ্ঞেস করেছি তাকে বলতে দাও। হ্যালো মিস স্নেহা বলুন কি কথা হচ্ছিল।তোমাকে ঐদিন স্যার ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলতাই না ক্লাশে এসে পড়ালেখা বাদ দিয়ে অন্য দিকে মনোযোগ দেওয়ার গল্প করা ইডিয়েট।”
স্নেহা লজ্জায় অপমানে মাথা নিচু করে আছে আদ্র সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, এক নজর স্নেহার মুখের দিকে তাকিয়ে সোজা সামনে এসে দাঁড়ায়।
তারপর নবীন বরণ অনুষ্ঠানে নিয়ে কথা বলতে লাগে সবাইকে শাড়ি পড়ে আসতে বলে। মেয়েদের লাল শাড়ি আর ছেলেদের সাদা পাঞ্জাবি। আর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে কিনা সেটা জানতে চাই। নাচ গান কবিতা আবৃতি অভিনয় সবকিছুই আছে। দিতে চাইলে ম্যাডাম আর একটা স্যারের নাম বলে। তাদের কাছে গিয়ে নাম দিতে হবে।
মেয়েগুলো তো হা করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিল।
কথা শেষ করে বের হয়ে আসে।
আদ্র বেরিয়ে আসতে আবার আগের মতো গল্পে মেতে ওঠে সবাই স্নেহা আর অন্তরা হতভম্ব হয়ে বসে থাকে। কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছু ওদের মাথায় ঢুকলো না।
“দেখলি কতো অসভ্য এই ছেলেটার মতো বেয়াদব আরে একটা ও আমি দেখি নাই। কি বলছিলি এই ছেলে আমাকে বাঁচিয়েছে বললাম থ্যাংকস বলবো। অসম্ভবে ছেলের জন্যই তো আমি পড়েছিলাম ও যদি আমাকে সিগারেটের ধোঁয়া না দিত তাহলে আমি পড়তাম ই না।”
“আদ্র ভাইয়াকে কিন্তু আমার সেই লাগে! হ্যাঁ একটু রাগী বটে কিন্তু দেখতে কিন্তু হেব্বি।”
“দেখলে সুন্দর হলে হয়না মনটাও সুন্দর হতে হয় ছেলে যতটা দেখতে সুন্দর ততটাই মনটা খারাপ। প্রথম দিন থেকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে যাচ্ছে।”
অন্তরা কিছু বলল না,, কথা ঘুরিয়ে অন্য কথা বলল,,
স্নেহা পরশু তো শাড়ি পড়ে আসতে হবে লাল শাড়ি।আমিতো শাড়ি পরতে পারি না আমার তো পার্লারে যেতে হবে তুই কি যাবি তাহলে আমরা দুজনে একসাথে পার্লারে গিয়ে সেজে আসবো।
স্নেহা বড় বিপদে লাল শাড়ি পড়ে আসার কথা শুনে। না আছে শাড়ি একটা শাড়ি আছে সেটাও লাল না নীল এর মধ্যে সাদা শাড়ি। মার বিয়ের শাড়ি লাল ছিলো সে শাড়িটা ভাবি নিয়ে গেছে আর একটা ছিল। মাকে আব্বু পরে কিনে দিয়েছিল।নীল এর মধ্যে শাড়িটা সুন্দর অতো কাজ নয় পারটা সাদা ভেতরে হালকা কাজ আছে।
সেটা পরলে তো হবেনা। কি মুশকিলে পড়লাম এখন লাল শাড়ি কোথায় পাব। স্নেহাকে এত ভাবতে দেখে অন্তরা ওকে ধাক্কা দিয়ে ধ্যান ভাঙালো,,
“কিরে শাড়ি পরে আসবে না।”
“না।”
“হোয়াট কি বলল শুনলি না শাড়ি পড়ে আসতে হবে এটা তো বাধ্যতামূলক।”
“কি পরে আসবো এটা আবার বাধ্যতামূলক হবে কেন আমার যা আছে আমি তাই পরে আসবো।”
“দেখলি না সবাইকে পরে আসতে বলল।”
“এখন এসব বাদ দে ক্লাস কর।”
বলে আর স্নেহ কথা বাড়ালো না। ক্লাসে মনোযোগ দেয় স্যার ও এর মাঝে চলে আসে।
ক্লাস শেষে স্নেহা সোজা বাসায় চলে এলো।
অন্তরার সাথে তেমন কথা বলল না।
চলবে♥️
#অচেনা_শহর 💖
#লেখিকা:—তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:—-১০
ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। স্নেহা চোখ বন্ধ করে উপভোগ করছে। আর কিছু দিন পর মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী। মায়ের কথা ভেবে স্নেহার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
চোখের কোনে পানি চলে এলো। দেখতে দেখতে তিন বছর হয়ে গেল। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কাঁদছে না স্নেহা।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কান্না আটকালো স্নেহা। চোখের পানি গড়িয়ে পরতে থামানো গেলো না তা গাল বেয়ে পড়লো। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে স্নেহা পানি মুছে নিলো।
সামনে অন্ধকার রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। নতুন একটা জায়গা এখানে গ্ৰামের কোন পরিবেশ নাই। ঘরিতে দশটার উপরে বাজে অথচ বাইরে কতো মানুষের আনাগোনা। আর গ্ৰামে এই সময়ে সবাই ঘুমিয়ে পরে সব কিছু নিস্তব্ধ সময়ে নানা কথা ভাবছিলো হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো,,
স্কিনে তাকিয়ে দেখি অন্তরার ফোন।
“হ্যালো।”
“কতো গুলো কল দিয়েছি। এখন তোর রিসিভ করার সময় হলো।”
“কই কতো গুলো। ফোন বাজতেই তো ধরলাম।”
” ফোন বাজতেই ধরলি ভালো করে দেখ কতোবার দিয়েছি।”
ওর জন্য ফোন কানে থেকে নামিয়ে দেখলাম সত্যি তো তিনটা মিসকল। কিন্তু আমি তো শুনিই নাই। ভাবনায় বেশি মুশগুল ছিলাম এ জন্য টের পাইনি।
“ওই হ্যালো তুই আছিস নাকি স্নেহা।”
“হ্যাঁ বল। কি জন্য ফোন দিছিলি।”
” দেখছিস কতো বার দিয়েছি। তোকূ কখনো একবারে পাওয়া যায় না,অসহ্য। শুন মে জন্য ফোন দিছিলাম। প্লিজ স্নেহা, শাড়ি পড়ে যাওয়ার জন্য রাজি হয়ে যা না । আমি একা শাড়ি পরলে কেমন খারাপ লাগবে। ”
“আমি যাবই না।”
“কিহ যাবি না কেন?”
“এমনি।”
“তুই না গেলে আমার ও যেয়ে একটু ও ভালো লাগবে না। তুই আর সুজাতা ছাড়া আমি কারো সাথে কথা বলি না জানিস তো। আর সুজাতা আসবে না তুই জানিস ই আবার এখন তুই ও যদি না যাস । প্লিজ আমার জন্য চল।”
অন্তরা এক নাগাড়ে কথা বলে স্নেহাকে রাজি করা নোর জন্য স্নেহা না করেই যাচ্ছে অবশেষে স্নেহা বলে দিলো ওর শাড়ি নেই।
” উফ এই জন্য তুই যাবি না বলছিলি। আমি আছি না আমার দুইটা শাড়ি আছে একটা তোকে দেবো নি সেটাই পরিস। পেটিকোট, ব্লাউজ আছে তো।
” না। আমি আগে কখনো পরি নাই শাড়ি।”
” আচ্ছা সমস্যা নাই। তুমি আর আমি তো একরকম ই একটু ডিফারেন্স হালকা টাইট হতে পারে তোর।”
” তুই আমার থেকে চিকন। তোরটা আমার হবে না। আমি যাবই না ঝামেলা করতে জাইস না।”
” চুপ আমি আগে তোর মতোই ছিলাম। এখন একটু বেশি শুকিয়ে গেছি আমার আগের ব্লাউজ তোর হবে দেখিস কাল ভার্সিটিতে নিয়ে আসবো নি।”
“কিন্তু।”
অন্তরা স্নেহার কোন কথা না শুনে ফোন রেখে দিল। স্নেহা ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। মেতে চাইছে না কিন্তু অন্তরার জন্য না ও করতে পারলো না। না করলাম শুনলো না ওর কথা ফেলতে ও খারাপ লাগছে অন্তরা একমাএ সঙ্গি আমার ভার্সিটির প্রথম দিন থেকে আমার সাথে আছে। আমার জন্য আর কারো সাথে মিশে না ও ওর কথা ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। অনেক বুঝিয়ে মনকে রাজি করালাম নিজের জন্য না হলেও অন্তরার জন্য যেতে হবে।
পরদিন…….!
ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি অন্তরা আগেই এসেছে সাথে সুজাতা ও আছে আমি ওদের কাছে গেলাম। ক্লাসের বেশি সময় নেই। কিন্তু ওরা ক্লাসে যাচ্ছে না। আজকে নাকি ক্লাস হবে না। আশেপাশে তাকিয়ে স্টেজ সাজানোর জায়গা দেখছে। আদ্রকে দেখলাম কাজ করছে মনোযোগ দিয়ে। একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম লোকটা দেখতে ইচ্ছে করে না।
তবুও আরেকবার চোখ গেল সাথে সাথে আমার ভ্রু কুঁচকে উঠলো আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে পাশের ছেলের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলতে লাগলো।
“আজকে ক্লাস হবে না আমাকে কাল ফোনে বললি না কেন? তাহলে আর কষ্ট করে আজকে আসতো হতো না।”
“ইচ্ছে করেই বলি নাই। বললে তো আসতি না।”
“অসভ্য মেয়ে।”
“তোর শাড়ি ও নিয়ে এসেছি। তুই কি বাসায় ফিরবি নাকি আমার সাথে পার্লারে রাবি।”
“না না এসব জায়গায় যাব না। আমি বাসার ই পারবো ।”
“আচ্ছা। চল ঐদিকটাই যাই। ওনাদের কাজ দেখে আসি।”
“না আমি এদিকে যাব।”
অন্তরা আদ্রদের কাছে যাওয়ার কথা বলছে। আদ্ররা স্টেজ সাজাচ্ছে সব স্টুডেন্ট রা সেখানেই আছে। আমার যাওয়ার ইচ্ছা নেই কিন্তু ওরা আমার কথা নি শুনেই টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
“ওরা কেমন তুই তো জানিস। তাও ওদের কাছে যাচ্ছি।”
“ওরা আমাদের সাথে খারাপ বিহেভ করেছে কিন্তু সেটা ভেবে বসে থাকলে তো হবে না। সবার সাথে মিলে মিশে থাকতে হবে তাদের জন্য ভয় পেয়ে আমরা কেন আনন্দ করা থেকে পিছিয়ে থাকবো। সবাই আছে আমরা ও মাই প্লিজ।”
আর কিছু বললাম না। চুপচাপ ওদের সাথে খেলাম।
ওরা সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছে আমি একটু সবার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছি। আদ্রর সামনে যাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে করে না সেদিন পর তো আর ও না।
ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে স্টেজ। আমি তার সাইটে দাঁড়িয়ে আছি। সেখানে আটকে রাখা ফুলের দিকে তাকিয়ে আছি এগুলো লাগানো হয়েছে। খুব সুন্দর আমি হাত বাড়িয়ে ফুল টা টাচ করবো এমন সময় মনে হলো কেউ আমার উরনা টেনে ধরেছে । চমকে পেছনে তাকিয়ে থমকে গেলাম।
—আপনি….
আদ্র নিজের মত করে আমার উরনার একপাশ দিয়ে নিজের মুখ মুছে নিচ্ছে। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। কতো বড় সর্পধা আমার উরনা নিয়েছে নিজের ঘাম মুছার জন্য এটাকি গামছা নাকি রেগে টান মেরে উরনা নিয়ে নিলাম ।
“আপনার তো সাহস কম না। আপনি আমার ওরনা দিয়ে মুখ মুচ্ছেন।”
“আমার সাহস সম্পর্কে আপনার ধারণা নাই ম্যাডাম। কিন্তু এভাবে কেউ …”
“দেখুন আপনি বাড়াবাড়ি করছেন।”
“ওরনা টা দাও আমার কাজ শেষ হয় নাই।”
হতবাক হয়ে আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। এমন ভাবে চাইছে যেন এটা ওনার নিজেস্ব সম্পদ ।
“কি হলো হাঁ করে তাকিয়ে আছো কেন? দাও আমার কাজ আছে এখানে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করতে পারবো না।”
” আপনি পাগল আমি কি আপনাকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে বলছি। ”
“বড্ড বেশি কথা বলো।”
বলে আদ্র স্নেহার দিকে এগুতে লাগলো।ভয় পেয়ে স্নেহা পিছিয়ে গিয়ে বলে,,
“কি হলো গুচ্ছেন কেন? দেখুন আপনি কিন্তু…
আদ্র ততক্ষণে স্নেহার কাছে চলে এসেছে। ওরনা দিয়ে মুখ মুছে পিছিয়ে যায়।
আদ্র পিছন ঘুরে চলে যেতে থাকে আমি করে তার যাওয়া দেখছি। কি থেকে কি হলো সব আমার মাথার উপর দিয়ে গেল।
আমি এক ধ্যানে আদ্রর যাওয়া দেখছি কিছু দূর গিয়ে হঠাৎ পেছনে তাকায় দেখে স্নেহা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। স্নেহা আদ্রর দিকেই তাকিয়ে ছিল। আদ্রর পিছনে ঘুরেই চোখ মারে। স্নেহা এটা দেখেই স্তব্ধ হয়ে যায় ওর চোখ দুটো মার্বেলের মতো গোল হয়ে গেছে ।
আদ্র স্নেহার এমন ভীতু মুখ দেখে বাঁকা হাসে । হাত দিয়ে চুল গুলো নারতে নারতে চলে যায়।
স্নেহা স্টেজের বাম কোনায় দাঁড়িয়ে আছে এই পাশে কেউ নেই ফাঁকা স্থানটা। এজন্য কেউ ওদের দেখে নি।
অন্তরা স্নেহাকে খুঁজতে খুঁজতে বাম পাশে এসে স্নেহাকে পায় স্নেহা হা করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
“ওই কি হয়েছে তোর এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কতো সময় ধরে তোকে খুঁজছি জানিস।”
স্নেহার সারা নেই।
অন্তরা ওকে ধাক্কা দিতেই ধ্যান ভাঙলো। চমকে ধাক্কা দেওয়া মানুষ টার দিকে তাকিয়ে স্তস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
“হ্যাঁ বল।”
“কিরে কি হয়েছে তোর । এমন স্টাটুর মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন।”
“না মানে।”
কি বলবে বুঝতে পারছে না। ও নিজেই হতবাক আদ্রর কাছে।
“আবার ভাবনায় পরলি।”
“না কিছু না চল তো।”
অন্তরার কথা শেষ করতে দিলো না ও হাঁটতে লাগলো। মাথা ঘুরছে আদ্র এমন করলো কেন? আচ্ছা এসব কি সত্যি ঘটেছে নাকি মিথ্যা। আকাশ পাতাল ভেবে হাঁটছে।
পেছনে থেকে অন্তরা ডেকে ও থামাতে পারলো না বাধ্য হয়ে দৌড়ে গিয়ে ওর সাথে হাঁটতে লাগলো।
চলবে♥️
#অচেনা শহর💖
#লেখিকা:—তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–১১
বাসায় আশার পর থেকে একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেটা আদ্র আজ এমন করল কেন? কিছু তো বুঝতে পারলাম না সেদিন ওনার জন্য আমার এতো বড় ক্ষতি হতে যাচ্ছিল সেটা নিয়ে কোন ভ্রক্ষেপ ও দেখলাম না উল্টা আমাকে অবাক করলো।
টান মেরে ওরনা খাটে ছুরে মারলাম ,, আদ্রর ছোঁয়া আছে এতে, ছিঃ!
নাক মুখে বিরক্তি এনে ওরনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার যদি অনেক গুলো ওরনা থাকতো তাহলে এইটা এখনি ফেলে দিতাম।
অসভ্য ছেলে একটা। কিন্তু ফেলে দেওয়া যাবে না। এটা ফেলে দিলে একটা ওরনা থাকবে তাতে দিয়ে চলা যাবে না। গোসল করে আরেক টা কোথায় পাবো । একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওরনা হাতে নিলাম তারপর আদ্ররকে ইচ্ছে মতো বকতে লাগলাম।
ওরনা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলাম। তারপর পানিতে ভিজিয়ে রেখে এলাম।
এটা ধুয়ে দেবো। ছিঃ নিজের ঘাম আমার ওরনা দিয়ে মুছেছে।
সকালে
বিছানার উপরে বসে আছি। হাতে অন্তরার দেওয়া শাড়ি ব্লাউজ । শাড়িটা টকটকে লাল রঙের হালকা ডিজাইন আছে ক্রিম কালারের। লাল ব্লাউজ, লাল পেটিকোট সব কিছু দিয়েছে। নিজের অনিচ্ছায় শর্তে ও অন্তরার জন্য রাজি হয়েছিলাম কিন্তু এখন সেটা ও রাখতে পারবো না মনে হয়।
চিন্তিত হয়ে ব্লাউজটার দিকে তাকিয়ে আছি। একটু আগে এটা পরতে গেছিলাম লাগে কিনা দেখার জন্য। এটা আমার একটু ও হলো না এটা পরা অসম্ভব।
অন্তরা আর আমার সাইজ একদম আলাদা। আগেই বলেছিলাম শুনলো না।জোর করে দিলো ঘরিতে দশটা বাজে নয়টা থেকে এভাবেই বসে আছি।
অন্তরাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়। ফোন হাতে নিলাম কিন্তু ভাগ্য খারাপ আমার ফোনে ব্যালেন্স নাই। অফিস থেকে ও আনা যাবে না আগেই সে টাকা এনে শেষ করে ফেলেছি।
মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি অন্তরাকে এখন জানাবো কিভাবে?
ও তো আমার উপর রাগ করবে। নিজের শাড়ি সব কিছু দিয়ে গেল বাসায় ও এসে নিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু পার্লারে সাজবে আর এখানে আসতে গেলে ঘুরে আসতে হবে সময় বেশি লাগবে তাই না করেছি। আর ও বারবার করে বলছিল যেন যাইই।
এখন আমি যাবো কি করে?
.
এদিকে
অন্তরা খুব সুন্দর করে সেজেছে আজ। পার্লার থেকে সেজে এগারোটা দিকে ভার্সিটিতে আসে। চুল গুলো খোঁপা করে মাথায় গাজরা ফুল দিয়েছে। লাল জর্জেট শাড়ী পরছে কানে বড় ঝুমকা, গলায় ছোট হার, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, চোখে গাড় কালো কাজল। হাত ভর্তি চুড়ি এক হাতে কুচি ধরে অটো থেকে নেমে দাড়ালো অন্তরা। অন্তরাকে আজ কোন পরীর থেকে কম লাগছে না। ভাড়া মিটিয়ে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে চারপাশে দেখতে লাগে কি সুন্দর করে সাজিয়েছে গেট থেকে শুরু করে।
আশেপাশে তাকিয়ে লজ্জা পায় হালকা সবাই কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। ওর দেখে সবাইকেই সুন্দর লাগছে সবাইই অনেক সেজে এসেছে সবার সাথে অন্তরা ও । তবুও ওর দিকে কেমন করে যেন তাকিয়েছে এজন্য একটু লজ্জাও পেল।
সবাইকে অগায্য করে অন্তরা ভেতরে ঢুকে গেল স্নেহকে খুজতে। পুরো মাঠে চোখ বুলিয়ে নিলো একবার অন্তরা না স্নেহা নাই। সবাই সবার মতো আড্ডা দিচ্ছে। সবাই শাড়ি পড়ে আসে নাই যারা পরে এসেছে সবাই ফাস্ট ইয়ারের।
“হাই!”
চারপাশে স্নেহাকে খুঁজে হয়রান হয়ে অন্তরা একপাশে দাঁড়িয়েছিল। চোখ দিয়ে একজনকে খুঁজে যাচ্ছে হঠাৎ কারো আওয়াজে চমকে পেছনে ঘুরে দেখে একটা ছেলে ওর দিকে হেঁসে তাকিয়ে আছে। ও তাকাতেই মিষ্টি করে হাসে খুব সুন্দর তার হাসি।
পরনে নীল শার্ট। গায়ের রং শ্যামলা, চোখে চশমা, ছেলেটা হাত বাড়িয়ে আছে। আমি তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছি একে চিনি কিনা। কিন্তু না তিনি না কখনো দেখেছি বলে ও মনে হচ্ছে না।
“এই যে মিস!”
আবার ও তার কন্ঠস্বরে পেয়ে হুশ ফিরলো …
“জি জি বলুন।”
“কি এতো ভাবছিলেন?”
“কে আপনি?”
” হৃদয় আমার নাম, আপনার?”
বলেই হৃদয় হাত গুটিয়ে নিলো। কারন অন্তরা হাত মিলায় নি সে হৃদয় কে মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্কান করছে চিনে কিনা।
” এভাবে দেখার কিছু নাই আপনি আমাকে চিনবেন না?”
হৃদয়ের কথা শুনে অন্তরা স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
“কে আপনি?”
“কেবল না নাম বললাম। আপনার নাম তো বললেন না।”
“আমার নাম দিয়ে কি করবেন? আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না আগে কখনো দেখেছি আপনাকে!”
“আপনি কি ফাস্ট ইয়ারে।”
“জি কেন?”
“এমনি নাম টা কিন্তু বললেন না।”
“বলবো না।”
“আচ্ছা না বললেন। আপনাকে একটা কথা বলতে এসেছিলাম।”
“কি কথা?”
অন্তরা চোখ ছোট ছোট করে জিগ্যেস করলো,,
“আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”
আচমকা কথায় অন্তরার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। বড় বড় চোখ করে হৃদয়ের দিকে তাকালো।
“মানে।”
“বাংলায়ই তো বললাম বুঝেন নাই। বলেছি আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে শাড়িতে। আর আপনার চোখটা অনেক সুন্দর তাকালেই ঘোর লেগে যায়। আর…
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ হৃদয় বলে ডেকে উঠল…
কথা থামিয়ে ছেলেটা পিছনে তাকিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে,,
“আচ্ছা পরে কথা বলি।”
বলেই দৌড়ে চলে গেল। অন্তরা যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইল।
ছেলেটা কথা গুলো শুনে হতভম্ব হয়ে গেছে। ছেলেটা ওকে সুন্দর লাগছে বলার জন্য এসেছিলো। ভাবতেই আলাদা একটা ভালো লাগা কাজ করলো অন্তরার মাঝে সাথে লজ্জা এসে ঘিরে ধরলো।
কথাগুলো শুনার সময় লজ্জা লাগেনি তখন তো আমি বিষ্ময় হতদম্ব হয়ে গেছিলাম এখন লজ্জা লাগছে। কি বলে গেল আমার চোখ সুন্দর। নিজের চোখে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে সত্যি কি তাই। কিন্তু দেখা
হলো না এখন এখানে আয়না নাই আর ফোনটাও তো নাই। ভুলে রেখে এসেছি এজন্য স্নেহাকে ও কল করতে পারছিনা।
লাজ লজ্জা ভুলে স্টেজের সামনে পিছনে গিয়ে বসলাম পা ব্যাথা করছে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে অনেক ক্ষন স্নেহাকি আসবে না ও তো বলেছিলো আসবে তাহলে আসতাছেনা কেন?
অনুষ্ঠান দেখছি আর একটু পর পর আশেপাশে কাউকে খুজতে থাকি।
হঠাৎ আদ্র দের দিকে চোখ যায় ওরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বুঝতে চাইছি আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন? কারণ বুঝতে পারলাম না তাই সামনে তাকিয়ে রইলাম। আমার পাশে একটা ওর সাথে একটু কথা বললাম আমাদের ক্লাস এরই।
আচমকা হৃদয়ের কথা মনে পরলো কেন জানি খুঁজতে মন চাইলো চোখ ঘুরিয়ে খুঁজলাম কেন এমন ইচ্ছে হলো তাও জানিনা কিন্তু একটু দেখতে মন চাইলো। তাঁকে ও দেখলাম না তখন দৌড়ে কোথায় গেল।
ধূর আমি তার কথা ভাবছি কেন মন থেকে ঝেড়ে ফেলে অনুষ্ঠানে মনোযোগ দিলাম সাথে স্নেহার উপর রাগলাম অনেক এতো বলার পর ও আসলো না।
“হে ম্যাম কাউকে খুঁজছেন নাকি।”
সেই কন্ঠস্বর শুনে চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম।
“একি ভয় পেলেন নাকি।”
আসলেই ভয় পেয়ে গেছি কিন্তু সেটা বলা যাবে না। মুখে রাগী ভাব এনে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
“আপনি আবার… এখানে কি করছেন? আমার পিছনে পরেছেন কেন?”
“আমি আপনার পেছনে কোথায় সামনে দাঁড়িয়ে আছি দেখেন।”
অন্তরার সামনে হৃদয় দাঁড়িয়ে কথা বলছে ।
অন্তরা কটমট করে তাকিয়ে আছে হৃদয়ের দিকে…
“আপনাকে কিন্তু রাগলেও সুন্দর লাগে।”
রাগ নিমিষেই ওধাও হয়ে লজ্জা পরিণত হলো অন্তরার।
হঠাৎ বলা অদ্ভুত কথায় অন্তরা লজ্জা পাচ্ছে নিজেই নিজেকে নিয়ে বিরক্ত হলো।
“আপনি এমন করছেন কেন? কি চান আমার কাছে?”
“যদি বলি আপনাকে চাই।”
“হোয়াটটটট?”
“কিছু না।”
“আপনার ফোন টা একটু দেওয়া যাবে।”
অন্তরার স্নেহাকে ফোন দিতে ফোন টা চেয়েছে চেয়ে নিজেই অবাক হচ্ছে ছেলেটা এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন।
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
“আপনি তো দেখা যায় আমার থেকে ও চালু। সরাসরি ফোন নাম্বারে চলে গেছেন।”
“মানে।’
“ফোনে কথা বলার জন্য নাম্বার চাইছেন এটা..”
অন্তরার চোখ কপালে উঠে গেল, ও বলে কি আর এ ছেলে বুঝে কি? অসহ্য মার্কা ছেলে।
চলবে♥️