অচেনা শহর পর্ব-৪২+৪৩+৪৪

0
3402

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৪২

ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে মাথা উঁচু করে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালাম।
চাচি দাঁড়িয়ে আছে।
” এই ভর সন্ধ্যায় এখানে কি করিস? চল বাঁড়া চল আজ তোর সাথে আমি থাকবো।”

নরলাম না শক্ত হয়ে বসে র‌ইলাম। চাচির পাশে তিশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। ও এসে আমাকে টেনে তুলতে চাইলো আর বলল,

” তুই এখানে কিভাবে বসে আছিস রে স্নেহা। তুই না কি ভীতু ছিলি আর এখন ভর সন্ধ্যায় কবরের পাশে বসে আছিস।”

টিটকারি মেরে বলল তিশা আমাকে জীবনে ও পছন্দ করে না আমরা সম বয়সী ও আর আমি এক সাথে লেখা পরা করেছি কিন্তু কখনো ও আমার সাথে মেশে নি। এই যেমন স্কুলে যাওয়া আসা আলাদা ভাবে হয়েছে।স্কুলে গিয়ে ও আমাকে চিনতো না এমন করতো আমি প্রথম এ মিশতে চাইলেও ও আমাকে ইগনোর করতে দেখে আর কাছে যাই নি একাই চলেছি।

চাচি মানে তিশার মা আমাকে একটু দেখতে পারে খুব না কিন্তু তবুও এখানকার মাঝে সেই।
এই এখন খোঁজ নিতে এসেছে।
চাচি আর তিশা মিলে আমাকে ধরে উঠালো উঠার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নাই বাবাকে এখানে রেখে কি করে আমি বাড়ি যাব কি করে চোখ বেয়ে জল পরতে লাগলো।
আমি নরছি না এক প্রকার টেনে নিয়ে যেতে লাগলো বাড়িতে। তারপর আমাদের রুমে নিয়ে এলো।
চাচি একটা খাবারের প্লেট এনে আমাকে দিলো আর বললো,
” সারাদিন কিছু খাচ্ছ নি এখন কিছু খা। না হলে তো না খেয়ে মরবি।”

“মরলেই তো বেঁচে যাই চাচি খাবার কেন এনেছো মরতে দাও না খেয়ে। আত্মহত্যা তো করতে পারবো না তাই এভাবে মরলে…

“চুপ করবি তুই চুপচাপ খা।”
একটু কড়া গলায় বলল চাচি।

মেঝের দিকে তাকিয়ে আছি। চাচি আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে রেখে নিজেই জোর করে এক লুকমা খাবার মুখে ঢুকিয়ে দিলো।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি চাচির দিকে চিবাচ্চিনা।

“এমন হা করে না থেকে খাবার গিল।”

ওইভাবেই র‌ইলাম পারবো না গিলতে কিন্তু খাবার ফেলে ও দিতে পারবো না। কি করবো আমি আমার চাপা মে ব্যাথা হয়ে আছে এই খাবার চিবানোর শক্তি ও নাই তাই নিরুপায় হয়ে না চিবিয়ে গিললাম আর হলো বিপদ খাবার গলায় আটকে গেল আমি খটখট শব্দ করে কেশে উঠলাম,,

সিলবরের গ্লাসে পানি ছিলো তা নিয়ে খেতে লাগলাম নাক মুখ দিয়ে পানি পরছে কষ্টে চাচি হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আর জোর করে নি খাওয়াতে অনেক ক্ষন কেশে ঠিক হয়ে বিছানায় শুয়ে পরলাম নিস্তেজ হয়ে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর আমি নিরব হয়ে মাথার উপর জালি ফ্যান দেখছি এটা আমার রুম। ঘুম আসছে না চাচি চলে গেছে একটু পর আসবে বলল,

ঘুম ভাঙল খারাপ সপ্ন দেখে চিৎকার করে ওঠে বসেছি আমি। তাকিয়ে দেখি আমি নিজের রুমে শুয়ে আছি পাশে চাচি শুয়ে ঘুমে বিভোর।‌
সপ্নে দেখেছি আদ্রকে নিয়ে তাঁর অবস্থা খারাপ হয়ে আসছে বাবার মতো আদ্রকে হারিয়ে যাবে।
বাবা মা আদ্র যারা আমাকে ভালোবাসে সবাই আমাকে ছেড়ে নিষ্শ করে চলে যায় কেন?
বাবা আমাকে এইভাবে ছেড়ে চলে গেল একবার ও ভাবলো না এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে একা আমি কি করে বাঁচবো।
আদ্র যে আমাকে ভালোবাসতো কতো বুঝাতে চেয়েছে আমি বুঝে ও না বুঝার ভান করে থেকেছি।
আজ সেও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে কালকে কতো ক্রিটিক্যাল অবস্থা দেখেছি সারাদিন চলে গেছে আচ্ছা সে কি বেঁচে আছে নাকি বলেই ডুকরে কেঁদে উঠলাম।
সবাই আমাকে একা করে চলে যাচ্ছে কেউ নেই আমার কেউ না। কেউ ভালোবেসে না কার জন্য বেঁচে থাকবো আমি অনেক তো চেষ্টা করলাম আর বেঁচে থাকার মানেই হয়না‌।

সাথে সাথে চরম একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। মনটা মৃত্যু চাইতে লাগলো এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সমস্ত ইচ্ছা নষ্ট হয়ে গেল।
এখন আমার পিছু টান নাই মরতে পারলেই বাঁচি।
মৃত্যুর আমাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দেবে।
আত্মহত্যা মহাপাপ এই জিনিস টা আমার মাথায় ই এলো না এখন আমি ক্ষেপে গেছি মৃত্যু ছাড়া আর কিছু মাথায় আসছে না।
বাঁচা মতো কোনো কারনেই নাই আর তাই মরতে বাঁধা নাই নিশঃব্দে আমি খাট থেকে নেমে বেরিয়ে পরলাম পাশে একটা গভীর পুকুর আছে আমি সাঁতার জানি না তাই সেখানে।
ভেবেই হাঁটতে লাগলাম।

.
গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি ফজরের আজানের শব্দ কানে আসছে। আমার সামনে চাচি দাঁড়িয়ে আছে কঠিন চোখ মুখ করে।
পুকুরের সামনে আমি ও আমার মুখোমুখি চাচি দাঁড়িয়ে। তার মুখে রাগ স্পস্ট।
একটু আগেই আমি এই পুকুরে এসে নিজের জীবন শেষ করে দিতে চাইছিলাম চোখ বন্ধ করে একবার করতেই আপন জনের মুখ ভেসে উঠলো মনে সাথে আদ্রর কথাও।
যখন ঝাঁপিয়ে পড়তে যাব পেছনে থেকে চাচি আটকে ধরে আমাকে চাচিকে দেখে চরম অবাক হয়‌।

“তুই এখানে কি করছিস স্নেহা।” ককর্শ গলায় বলল চাচি।

“আমি বাঁচতে চাই না আর তাই মুক্তি পেতে এসেছি কেন আটকালে আমাকে।”
কান্না গলায় বললাম।

“মরতে চাস আচ্ছা মরবি যেহেতু মর কিন্তু আমি যে তোর ঘরে ছিলাম তুই আমাকে রেখে চলে এলি মরতে তোর মৃত্যর পর এই দোষ আমার ঘড়ে পরুক তুই কি এটাই চাইছিলি।”

“কি বলছো আমি এমন কেন চাইবো। এমনটা চাইনি শুধু শান্তি চাইছিলাম।”

“আত্মহত্যা করে শান্তি চাইছিলি হাসালি আমাকে। আত্মহত্যা মহাপাপ সেটা কি তুই ভুলে গেছিস। বাবা মা সবার সারাজীবন থাকে না একদিন না একদিন তারা আমাদের ছেড়ে চলে যায় ই। তাই দুঃখে কাতর হয়ে এতো বড় সিদ্ধান্ত নিবি এটা তুই ঠিক করিস নি স্নেহা।”

চাচি আমাকে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে এলো।
ভোর হলো ওইভাবেই বসে থেকে।
চাচি আমার পাশে বসে কঠিন মুখ করে তাকিয়ে ছিলো।
পরদিন সকালে খিদের জ্বালাটা বুঝতে পারলাম। একদিন না খাওয়া শেষ খেয়েছিলাম অন্তরার সাথে যাওয়ার আগে। গলা শুকিয়ে আসছে একটু পানি মুখে দিলাম সাথে সাথে তিতা হয়ে এলো মুখ।
শীত ও লাগছে অনেক ক্ষন ধরে জ্বর এলো নাকি‌।

হ্যা সত্যি জ্বর এলো খাবার আর পেটে দিতে পারলাম না তিতা মুখে পেটে খিদে কিন্তু খেতে পারছি না। এতো কষ্ট লাগছে মনে হয় মরে যাব এই জ্বর এই।
মনে হমনে এইটাই চাইছি এই জ্বর‌ই যেন আমার মৃত্যুর কারণ হয় এতে আমার আত্মহত্যা ও করতে হবে না আর আমি অভিসপ্ত জীবন থেকে বেঁচে যাব।

কিন্তু চাইলেই কি এতো সহজে মুক্তি পাওয়া যায় যায় না। মুক্তি পাওয়া এতো সহজ না।
আমার ও তাই হলো চাচির সেবায় সুস্থ হলাম সাথে আরেক বিপদ মাথায় এসে পরলো।
জীবন কি আমাকে বিপদ থেকে ছারবে না। তিন দিন পর।

একটু সুস্থ হয়েই আমগাছের তলায় মুখ ভার করে বসে ছিলাম। এমন সময় একজন কে দেখে আমি চমকে উঠলাম,

“স্নেহা তুই চ‌ইলা আইছিস। যাক এবার তাইলে বিয়েটা করতে পারুম। কতো দিন পর তোরে দেখলাম। তিশা না ক‌ইলে তো জানতেই পারতাম না তোর বাপ ব‌ইলে ম‌ইরে গেছে কষ্ট পাস না আমি তোরে বিয়া করুম আজকেই বাপজানরে কমু তোরে আমার বাড়ি রাখুম।”

আমার পাশে বসতে বসতে বলল। ওর নাম রহিত। আমাদের গ্ৰামের চেয়ারম্যানের ছেলে। লেখাপড়া একটুও করে নাই। এমন কোন খারাপ কাজ নাই করে না। গ্ৰামে থাকা কাল থেকে আমার পেছনে পরেছে ঢাকা গিয়ে এর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল আবার এর সামনে পরলাম কি বললো তিশা বলেছে। ইচ্ছে করেই করেছে এটা ভয়ে কাঁপতে লাগলাম আমি রহিত এগিয়ে আসতে লাগল ফট করে আমার হাত ধরে নিলো আমি হাত ছারাতে চাইলাম।
রহিত বিচ্ছরি হাসি দিয়ে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। সামনে মহা বিপদের আবাস পাচ্ছি।
চলবে♥️

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৪৩

চেয়ারম্যান বাড়িতে সকাল থেকে বিয়ের তোরজোর চলছে। বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা। ছেলে মুক্তার আলী খুব‌ই ভালো বাসেন যা চায় সেটা যেভাবেই হোক তাকে এনে দেন। তিন মেয়ের পর এই ছেলে তার অতি আদরের এজন্য তো ছেলে তার খারাপ হয়ে গেছে এই নিয়ে চিন্তিত ও থাকেন ছেলে তার একটু ও লেখা পড়া করে নি করবে কি করে স্কুলে গিয়েই তো স্যারের সাথে মারপিট করেছি।

তার পরে আর ভর্তি করে নি ছেলে ও পরতে চায়নি। তারপর থেকে ইচ্ছে মতো থেকে খারাপ সঙ্গে প্রথমে ধমক দিলেও ছেলেও মলিন মুখ দেখে ক্ষমা করে দিতেন এটাই তার বড় ভুল এখন যে ছেলে হাতের বাইরে চলে গেছে মদ, গাঁজা খেয়ে এলাকায় মস্তানি করে বেরায় তার কথা ভুলেও শুনে না।
এই ছেলের জন্য তার নাম খারাপ হয়েছে বিশেষ করে কিছু দিন আগে মারপিট করে জেলে পযন্ত গিয়েছিলো। চেয়ারম্যান এর ছেলে ছেলে এটা নিশ্চয় ভালো কথা না এলাকা বদনাম ছুটে গিয়েছিল। সেই থেকে ছেলের উপর তার খুব রাগ কথা বলে না। ফাস্ট টাইম ছেলের গায়ে হাত ও তুলেছিল তারপর একদিন ছেলে এসে বলে সে বিয়ে করতে চায় তাও কাকে আমাদের এলাকা সামান্য একটা স্কুল মাস্টার এর মেয়ে।

সাবসাফ না করে দেয় ওই গরীব ঘরের মেয়ে কে কিছুতে ই আমি বাড়ির ব‌উ করবো না। কিন্তু ছেলে খাওয়া দাওয়া অফ করে দেয় তার এক কথা বিয়ে সে করবেই তাও রাজি হলাম না তখন ছেলে বলে আত্মহত্যা করবে ভয় পেয়ে যায় কারন শত হলেও ছেলে আমার একটাই কিছু হয়ে গেলে আমি রাজি হয়ে কিন্তু সাইফুল ইসলাম ( স্নেহার বাবা।)রাজি হয় না। তার মেয়ে কম বয়স এ্যান ত্যান মেয়ে আমার ছেলের মতো খারাপ ছেলের কাছে নাকি বিয়ে দেবে না শত বলেও রাজি করাতে ব্যর্থ হয়। তিনি কিছু তেই আমার ছেলের কাছে বিয়ে দেবে না। তারপর ছেলেকে একটা মিথ্যা বলি আমি কারন এটা জানলে ছেলে আমার পাগল হয়ে যাবে। বলি স্নেহা আর একটু বড় হলে বিয়ে দেবে।

তারপর এই বলে ছেলে মানিয়ে রাজি।
এদিকে স্নেহাদের এই করুন অবস্থা মন থেকে ওই মেয়ে কে কখন সহ্য হতো না সুযোগ বুঝে শহড় পাঠায় রাতে ছেলের মাথায় ভুত যায় কিন্তু ক‌ই গেল তো না সেই আবার তাকে বিয়ে করতে পাগল করেছে দুইদিন থেকে এবার তার কথা স্নেহার সাথে বিয়ে দিলে খারাপ সব কাজ থেকে সরে আসবে ভালো কাজ করবে তার শুধু স্নেহাকে চাই।
মেয়েটাকে পছন্দ না হলেও ছেলে এই মেয়ের জন্য ভালো হতে চাইছে এটা শুনে মন স্থির করি এই মেয়ের সাথে বিয়ে দেব।আর রাজি হয়ে যায় মেয়ে যেহেতু কেউ নেই ভাই ছিলো সে তো লাপাত্তা তাই চাচির কাছেই যায় চাচা রাজি হলো ও চাচি হয় না কিন্তু এবার বিয়ে আমি দেবোই যেভাবেই হোক বিয়েটা হলে ছেলে ভালো হবে বলেছে।
ওর চাচিকে তোয়াক্কা না করে ওর চাচাকে টাকার লোভ দেখিয়ে বিয়ের আয়োজন করেছি। গ্ৰামের মানুষ ভাবছে চেয়ারম্যান কতো দয়ালু এতিম মেয়েকে ছেলের ব‌উ করছে। এতে আমার রেপূটেশন ও ভালো হচ্ছে।মেয়ে তো রাজি না একটু ও কিন্তু আমি তো একে ছারছি না তাই নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছি তাতে পালাতে না পারে।

জোর করে আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে রহিত এর বড় বোন। রাগে দুঃখে সব কিছু ধ্বংস করে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ওইদিন মরতে পারলেই বলে বেঁচে যেতাম কিন্তু মরতে পারলাম না।
এমন ভাবে সবাই জেকে ধরছে পালানোর ও সুযোগ ও নাই এই বাড়ির কেউ আমাকে একটু সাহায্য করবে না সবাই খারাপ।
রহিতকে আমার খুন করতে ইচ্ছে করছে ওকে কিনা আমি বিয়ে করবো অসম্ভব মরে গেলেও এই কাজ আমি করতে পারবো না।

“এই মেয়ে এতো কাঁদছিস কেন সাজাতে পারছি না ভালো মতো।”

“আমি সাজাবো না সরুন তো একটা মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন লজ্জা করে না।”

“কি দেমাক বাবা গো এতো দেমাক কেন রে তোর। এই ঘরের ব‌উ হবি এইটা তোর ভাগ্য রহিত তোর জন্য পাগল না হ‌ইলে জীবনে তোর মতো ছোটলোক ঘরের এতিম মাইয়া আমার ভাইয়ের ব‌উ করতাম না। কি দেইখা যে তোর জন্য পাগল হ‌ইল এমনিতে সুন্দর তুই কিন্তু তাই কি কতো সুন্দর ধনী ঘরের মাইয়া দেখাইলাম তার পছন্দ ই হলো না।”
আফসোস করে বলল।

আকুতি মিনতি করে বললাম,,,”আমি আপনার ভাইয়ের ব‌উ হতে চাইনা প্লিজ আমাকে সাহায্য করেন এখান থেকে পালাতে আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।”

আমার কথায় ফুঁসে উঠলো,, ” কি বললি আমি তোকে সাহায্য করবো পাগল নাকি আমি। পালানোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে আজকে তোর বিয়ে আমার ভাইয়ের সাথেই হবে ন্যাকা কান্না অফ কর।”

শক্ত মুখ করে বলল। আমি নিরাশ হয়ে চুপ করে র‌ইলাম। কি করবো কিভাবে এখানে থেকে পালাবো কাল থেকে এই বাসায় এক ঘরে বন্দি আছি দুজন মানুষ ছাড়া কেউ আমার কাছে আসে নি এই রোহিতের বড় বোন সাবিনা আর রোহিতের মা।
তাকে আমার খারাপ লেগেছে খুব কঠিন মুখ করে তাকিয়েছে আমাকে তার একদম পছন্দ জানি।
এই পরিবারে শুধু মুক্তা একটু ভালো কিন্তু অদ্ভুত ওকেই আমি দেখি নি ওর সাথে আগে আমার একটু সাক্ষাৎ ছিলো ওর সাথে দেখা হলেৎএকটা ব্যবস্থা করতে পারতাম।
মুক্তা রোহিতের ছোট বোন আমার এক বছর সিনিয়র।
এমন সময় দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলো রহিত।
দাঁত বের করে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসছে
তাকে দেখেই সাবিনা চলে গেল।

রোহিত আমার কাছাকাছি আসতে লাগলো হাসতে হাসতে। সে যে খুব খুশি তার হাবভাব‌ই বলে দিচ্ছে আমি ঘৃণার চোখে তাকিয়ে আছি। তারপর সাহস করে বললাম,

” দেখুন আপনি আমাকে ছেড়ে দিন আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।”

কিছু বলল না ওইভাবেই অসভ্যের মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে রাগে শরীর কাঁপছে আমার মাথাটা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।

“তোমারে খুব সুন্দর লাগতাছে সেই রকম।”
বলেই আমার দিকে এগিয়ে এলো তারপর একটু দূরত্ব বজায় রেখে আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত স্কান করলো তারপর বললো,

” বিয়ে করতেই হবে তোমার হয় ইচ্ছে তে নাহলে জোর করে।”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল।
কাউকে বলে লাভ নাই কেউ আমার কথা শুনবে না কেউ সাহায্য করবে না তা করার আমাকেই করতে হবে

রুমে বসে আছি সন্ধ্যায় দিকে চাচি এলো কোথা থেকে এসেই আমাকে জরিয়ে কেঁদে দিলো এই একটা মানুষ ছাড়া আর কেউ আমার এই নিয়ে অসম্মতি প্রকাশ করে নি।

“চাচি আমাকে এইখানে থেকে মুক্ত করো প্লিজ এটাকে আমি করতে পারবো না।”

কান্না গলায় বললাম।
চাচি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তারপর বললো,,,,” আমি কি করবো স্নেহা কেউ আমার কথা শুনছে না। আর এখন পালাতে ও পারবি না তোর জন্য লোক ও রাখা আছে যারা বিয়ের আগ পর্যন্ত নজরে রাখবে। পালানোর পথ নেই।”

“এই বিয়ে মরে গেলেও করবো না আমি। একটা ফোন এনে দিতে পারবা।”

“ফোন দিয়ে কি করবি?”

“একজনকে কল করতাম তার খোজ নেওয়া হয়না অনেক দিন। ছয়দিন হয়ে গেছে তাকে মৃত্যুর মুখে রেখে এসেছি আল্লাহ জানে সে এখন কেমন আছে? চাচি দোয়া করো সে যেন সুস্থ থাকে।”

চাচি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে বলল,,, ” কে সে?”

“আছে ফোন দিতে পারবা।”

“দাঁড়া দেখি তোর চাচাকে দেখী দেয় কিনা।”

“আমার কথা বলো না।”

মাথা নেড়ে চলে গেল। দুদিন ধরে আদ্রকে খুব মিস করছি ওর কি অবস্থা এখন জানার জন্য হাঁসফাঁস করছি। কিন্তু নিজের ফোন যে হারিয়ে ফেলেছি ঢাকা থেকে আসার সময় বাবার চিন্তায় কিছু আনতে পারানি‌। একটা ব্যাগে কিছু জিনিস এনেছে কিছু জামা কাপড় কেউ ভয়ে দিয়েছিল মনে হয়।

একটু পর চাচি এলো হাতে ফোন নিয়ে তা দেখেই খুশি লাগল অনেক।
তারাতাড়ি হোন হাতে নিলাম আমার হাত কাঁপছে অদ্ভুত ভাবে। কাঁপা কাঁপা হাতে আদ্রর নাম্বার উঠালাম এই নাম্বারটা আমার মূখস্ত হয়ে আছে এতো কল দিতো আদ্র মুখস্থ না হয়ে পারেই নি।

আল্লাহকে ডাকছি ফোনটা যেন আদ্র ধরে আর সে যেন সুস্থ থাকে। রিং হ‌ওয়ার শব্দ হচ্ছে সাথে আমার হাটর্বিট বেড়ে গেছে মনটা কেমন করছে কি হবে ভাবছি?
রিং হতে হতে কেটে গেল কেউ ধরলো না। ফোন কানে থেকে নামিয়ে সামনে মুখ কালো করে আছি।
চাচি আমার দিকে প্রশ্ন ত্তোক চোখে তাকিয়ে আছে।

“কি হলো ধরলো না?”

আমি মাথা নেড়ে না বললাম।

“মন খারাপ করছিস কেন হয়তো ফোনের কাছে নেই আর একবার দে।”

“আমার ভয় করছে খারাপ কিছু শুনবো না তো।”

“ভয় পাচ্ছ না আল্লাহ কে ডাক সব ভালো হবে।”

“কিছু ই তো ভালো হলো না আমার সাথে।”

“তারাতাড়ি কর কেউ চলে আসবে।”

চাচির কথায় আমি আবার নাম্বার বায়ার করলাম কিন্তু এবার কপাল খারাপ সাবিনা চলে এলো তাকে দেখেই চাচি ফোন কেড়ে নিয়ে লুকিয়ে ফেলল,,,

“কি ব্যাপার এতো কি কথা দুজনের?”

চাচি হাসি মুখ করে বলল, ” এমনি তেমনি কিছু না।”

সাবিনা গম্ভীর মুখে বলল, “চল স্নেহা এখন বিয়ে পরাবে।”

চাচি সাথে সাথে বলল,, “এখন‌ই।’

আমি চমকে উঠলাম। সব কিছু কি হাতের বাইরে চলে গেল। এই রোহিতকে কিনা শেষে বিয়ে করতে হবে।
কান্না করে দিলাম মুখে শব্দ নেই চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছি চাচির দিকে।

বাইরে যাবার জন্য আমার হাত ধরে টেনে নিলো সাবিনা আমি নরছি না শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি একটু নরবো না প্রতিঙ্গা করেছি।

” এই মেয়ে চলো। কি হলো নরছো না কেন?”

“আমি যাব না।”

“কি যাবে না মানে কি?”

“যাব না মানে যাব না। এই বিয়ে আমি করবো না।”

“করবে চলো।”

“করবো না বললাম তো ছারুন হাত। ”

ঝামটা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিলাম।
সাবিনা আগুন হয়ে গেল আমার কথায় ও রাগ দেখে। রেগে গিয়ে তাকালো আমার দিকে তারপর কি মনে করে গটগট করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

তার ঠিক পাঁচ মিনিট পর চেঁচামেচি শব্দ এলো কানে। তা শুনে চাচি চলে গেল আর কিছু ক্ষন পর এসে বলল রোহিতকে নাকি পুলিশে ধরতে এসেছে। কয়েকদিন আগে রোহিত মারামারি করেছে সেখানের একটা ছেলে মারা গেছে তাই তারা ডাইরি করেছে রোহিতকে এখন থানায় নেওয়া হবে।

আমি এটা শুনে কতোক্ষন র্তদ্ধা খেয়ে গেলাম। হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি সাথে খুশি ও লাগছে রোহিত কে পুলিশে নিয়ে গেলে বিয়েটা আটকে যাবে।

“চাচি দেখো নিয়ে গেছে কিন্তু শয়তান টাকে।

“নিয়ে গেলে বেঁচে যাবি বিয়ে হবে না।”

“হ্যা।”
খুশিতে আমার চোখ চিকচিক করছে।
আজকে বিয়ে আটকে গেলে আমাকে এই নরক থেকে পালাতে হবে। যে করেই হোক।

চলবে♥️

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৪৪

যেখানে বাড়িতে বিয়ে হবে বলে সবাই মাতামাতি করছিল এখন তারাই থ হয়ে জিম মেরে বসে আছে।
বাসার সবাই এতে কষ্টে কাতর হলেও আমার খুশির সীমা নাই‌।
বাইরে থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে।
আমি রুমে থেকে শুনতে পাচ্ছি সেগুলো। আমার আশেপাশে কেউ নেই একা বসে আছি রুমে চোখ বুলিয়ে নিলাম সং হয়ে বসে থেকে কি হবে পালাতে হবে এই সুযোগ এখন সবাই রোহিতের চিন্তায় মক্ত আছে সেই নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করছে। এখন আমি যদি পালাই কেউ খেয়াল করবে না কিন্তু এই রাতে যাবো কোথায় ? খুব রাত হয়নি আটটার মতো বাজবে কিন্তু বাইরে তো অন্ধকার যাব কোথায়?

একটা কানা কড়ি ও নাই হাতে যাব‌ই কি করে। হঠাৎ চাচি দৌড়ে এলো আমার কাছে আর বলল চল।

কোথায় যাবো?
অবাক হয়ে বললাম।

আমার সাথে চল এবারের মতো বেঁচে গেলি রে স্নেহা।
বলেই চাচি আমার হাত শক্ত করে ধরলো।‌চাচি আমার খারাপ চায় না জানি তাকে বিশ্বাস করি আমি তাই চাচির সাথে বেরিয়ে এলাম।

এই বাড়ির পেছনে দিয়ে দরজা আছে আমি জানতামই না চাচি আমাকে সেখানে দিয়ে বের করে নিয়ে এলো।
এপাশে কেউ নেই অন্ধকার।

চাচি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো।

চল তোকে বাচাচ্ছি। এইখানে থাকলে ওই রোহিতকে বিয়ে করতেই হবে কাল সকাল হতেই ছেলেকে ছাড়িয়ে আনবে। তারপর বিয়ের এখন সবাই রোহিতকে নিয়ে চিন্তিত তোর কথা মাথায় নেই এখন পালানোর মুখখোম সু্যোগ।

কিন্তু এই রাতে আমি কোথায় যাবো।
অসহায় মুখ করে বললাম।

চাচি আমার কথার উত্তর এ কিছু বলল না টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
কিছুটা আসতেই রাস্তায় উঠলাম আর চোখ পরলো একটা গাড়ি ও একজন লোকের উপর।
লোকটাকে দেখে চরম বিষ্ময় হলাম একবার চাচি ও একবার তার দিকে তাকাচ্ছি।
সে ফোন টিপছিল এজন্য তার মুখ আরো পরেছিল আমার চিনতে অসুবিধা হয় নি।

এই যে সেই পুলিশ টা উনি এখানে কি করছে? আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে চাচির দিকে তাকালাম।

“এসব কি চাচি উনি এখানে কি করছে আর তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলে।”
বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

“উনার সাথে তুই ঢাকা চলে তা তাহলে এই রোহিতের থেকে রক্ষা পাবি।”

চাচির কথা অবাক হলাম এমন অচেনা অজানা ছেলের সাথে আমাকে যেতে বলছে। আর এটা ঠিক যে উনি আমার সেদিন উপকার করেছে তাই বলে তো উনার সাথে রাত বিরাতে চলা যায় না। উনি এখানেই বা কি করছে?

তাই বলে উনার সাথে যাব। আর উনি এখানে কি করছে?

“তোর জন্য ই এসেছে।”

আমি অবাক হলাম আমার জন্য এসেছে মানে,, ” আমার জন্য মানে কি?”

চাচির‌ আগে লোকটা আমার দিকে এগিয়ে এলো আর বলল,,,

“এই ধরেন কথা বলুন।”

লোকটা আমার দিকে তার ফোন এগিয়ে দিলো। আমি ভ্রু কুঁচকে তার ফোন দিকে একবার তো তার মুখের দিকে তাকাচ্ছি।
উনি আমার দিকে ফোন ধরে আছে। আমি তো অবাক ফোন দিচ্ছে কেন ফোন দিয়ে কি করবো আমি?

কি হলো নেন কথা বলুন?
বিরক্ত হয়ে বলল।

কার সাথে কথা বলবো আর আপনি আমাকে ফোন দিচ্ছেন কেন?
বিষ্ময় ভরা চাহনি দিয়ে বললাম।

কথা বলে দেখুন।

কথা বলবো মানে কি? অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে পারবো না আর আপনি এখানে কেন এসেছেন? আর আমাকে নিয়ে বা যাবেন কেন আপনার মতলব কি বলুন তো।

রেগে বললাম কথা শেষ করে উনার দিকে তাকালাম উনি আমার কথা শুনে চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে সে যে রেগে আছে মুখ দেখেই বুঝা যায়।
কিন্তু আমি উনার সাথে যাব না কেন যাব রাতের বেলা একটা ছেলেকে বিশ্বাস করা যায় না। যদি কোন খারাপ মতলব থেকে থাকে তাহলে।

নানান খারাপ চিন্তা মাথায় আসছে। মনে মনে ডিসাইড করলাম উনার সাথে কোথাও যাব না এখন আমি চাচির সাথে নিজের বাড়ি যাব ভোরের দিকে আমাকে পালাতে হবে।

“চাচি চলো এই লোকের সাথে আমি কোথাও যাবো না।”

চাচির হাত ধরে বলল চাচি আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলবে তার আগেই উনি আবার ফোনটা আমার কাছে এনে লাউডস্পিকার দিলো এবার আমি ওপাশের কথা শুনতে পেলাম ওপাশ থেকে অন্তরার কন্ঠ আসছে।

“হ্যালো স্নেহা বোন আমার প্লীজ নিশাতের সাথে চলে আয়।”

অন্তরার কন্ঠ শুনে তো আমি হতদম্ব সাথে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি‌। চমকে উনার দিকে তাকিয়ে ফোনটা কানে নিলাম।

“হ্যালো”

থ্যান্কস আল্লাহ অবশেষে ফোন ধরলি।

তুই উনাকে কিভাবে চিনিস।

সেসব পরে হবে। আগে বল তুই কেমন আছিস?

ভালো না আব্বু…
বলেই কান্না করে দিলাম।

আমি সব শুনেছি কাদিস না প্লীজ। আর এখন নিশাত ভাইয়ের সাথে চলে আয় আমি তাকে পাঠিয়ে দিন তোকে আনতে।

উনি কে বললি না তো আর তুই উনাকে কি করে চিনিস।

পরে বলবো। এখন তারাতাড়ি আয়।

হুম অন্তরা আদ্র কেমন আছে। ও ঠিক আছে তো।

আদ্রর কথা বলতেই অন্তরা চুপ হয়ে গেল।
ও কথা বলছে না দেখে আমি উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,

“কিরে কথা বলছিস না কেন? বল আদ্রর কি অবস্থা।”

“আগে আয় তারপর সব বলবো।”

“আমি এখন ও শুনতে চাই।”

আর কথা এলো না অন্তরা লাইন কেটে দিলো। আমি ফোন কানে থেকে সামনে এনে তাকিয়ে আছি। আদ্রর খবর দিলো না কেন অন্তরা মনটা কু ডাকছে কেন দিলো না।
আদ্র ঠিক আছে তো অজানা ভয়ে বুক ঢিপঢিপ করতে লাগল।

“এই যে ম্যাডাম এবার আমার সাথে যাবেন তো নাকি আমি চলে যাবো।”

নিশাত লোকটার নাম অন্তরা তো তাই বলল। লোকটাকে যেহেতু অন্তরা চিনে তাহলে বিশ্বাস করা যায়।
আদ্রকে নিয়ে ভয় করছে এই ভয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো যত তারাতাড়ি অন্তরার কাছে যেতে পারবো।

লোকটার দিকে একবার তাকিয়ে চাচির দিকে তাকালাম। চাচি পাশেই না থাকলে হয়তো বের হতে পারতাম না চাচি কে জরিয়ে ধরে কেদে উঠলাম তারপর চাচির থেকে বিদায় নিয়ে লোকটার গাড়িতে উঠে বসলাম।

চাচি দাঁড়িয়ে র‌ইলো গাড়ি ছাড়া অবধি। আমি গাড়ির পেছনে জরোসরো হয়ে বসে আছি আর উনি সামনে বসে ড্রাইভিং করছে।
আমি মনটা নিশমিশ করছে এই নিশাত অন্তরার কে হয় জানার জন্য। থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম,,

“আপনি অন্তরা কে কি করে চিনেন?”

প্রশ্নটা করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি উনার পেছনটা দেখা যাচ্ছে। উনার গায়ে আজকে পুলিশ ড্রেস নেই নীল শার্ট পরে আছে। উনি কিছুই বলল না। এক মনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে কথা বলছে না যেন আমার কথায় শুনে নি।

উনি যে আমার সাথে কথা বলতে চায় না বুঝলাম‌ তাই আর কিছু বললাম না চুপ করে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি।
আদ্রর জন্য খুব টেনশন হচ্ছে অন্তরা কেন আদ্র কেমন আছে বলল না। আদ্র সুস্থ আছে তো নাকি না চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
আল্লাহ আদ্র যেন ঠিক থাকে ওকে সুস্থ রাখো।

শাড়ি পরেই এসেছি ওই বাড়ির শাড়িটা নিয়ে এসেছি। গয়না খুলে ফেলেছিলাম না হলে ওই গুলো ও চলে আসতো অন্যের জিনিস নিতে চাই না।
হঠাৎ পেটে ব্যাথা অনুভব করলাম পেট চেপে ধরলাম ব্যাথার কারন বুঝতে দেরি হলো না সারাদিন রাগছ দুঃখে না খেয়েছিলাম।এখন সেই খিদে জানান দিচ্ছে।

গ্ৰাম পেরিয়ে মেইন রাস্তায় এসে গেছে গাড়ি‌।

খিদের জ্বালা সহ্য করতে পারছি না। লাজ লজ্জা ভুলে সামনের লোকটাকে বলে বসলাম। অনেক দোকান পাট দেখা যাচ্ছে কিছু খাওয়া দরকার না হলে থাকতে পারবো না।

এই যে শুনছেন গাড়ি থামান।

কিছু হলো না শুনেও শুনলো না মনে হয়।আমার রাগ উঠে গেল। চিৎকার করে উঠলাম,,

সাথে সাথে গাড়ি থেমে গেল। আর উনি রেগে ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকালো।

হোয়াই আর ইউ ম্যাড, এই ভাবে কেউ চিৎকার করে আর একটু হলে এক্সিডেন্ট হয়ে যেত। আপনার কোন কমন সেন্স নাই।
রেগে বলল।

আমিও রাগ দেখিয়ে বললাম,, আপনি আমাকে বকছেন কেন দরকার ছাড়া তো আর আপনাকে ডাকি নাই। কিন্তু আপনি তো আমার কথা কানেই নিচ্ছেন না।

কি দরকার আপনার যে চিৎকার করে ঢাকতে হচ্ছে।

আমার খিদে পেয়েছে সকাল থেকে আমি না খাওয়া। প্লিজ এক প্যাকেট বিস্কুট কিনে দিন আমার কাছে টাকা আছে।

বিরক্ত মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে রেগে তারপর উঠে চলে গেল। আমি পেছনে থেকে ঢেকে উঠলাম।

আরে টাকা নিয়ে যান তো।

শুনলো না চলে গেল।

আমার কাছে টাকা ছিলো না কিন্তু চাচি আবার সময় একশ টাকা দিয়ে দিয়েছে যদি দরকার পরে এজন্য।

গাড়ি যেখানে পাক করেছে তার থেকে একটু দূরে মুদি দোকান দেখা যায় সেখানে গিয়ে নিশাত কেক পানি বিস্কুট নিয়ে এসেছে।

আপনি টাকা না নিয়ে চলে গেলেন কেন?

এখন টাকা দিন।

কতো হয়েছে।

লাগবে না।

লাগবে না মানে কি আমি অন্যের টাকায় খায় না।

৭০ টাকা দিন।
গম্ভীর হয়ে বলল।

কেক এনেছেন কেন শুধু বিস্কুট আনলেই হতো।

মনে মনে বলছি কেক না আনলে চল্লিশ টাকায় হতো। এখন আমার কাছে ত্রিশ টাকা থাকবে।

তাহলে কেক দিয়ে দিন।

না থাক। এই ধরেন টাকা।

একশ টাকার নোট দিলাম। উনি টাকা নিয়ে গাড়ি চালাতে লাগলো একি টাকা ফেরত দিচ্ছে না কেন? দিবে না নাকি এই ত্রিশটাকা আমার সম্বল।

এই যে টাকা দিচ্ছেন না কেন? ত্রিশ টাকা দিন।
রেগে বললাম।

আবার ফেরত ও দিতে হবে।

টাকা বেশি নিবেন কেন?

এই ধরুন লাগবে না আপনার টাকা আমার কাছে ভাংতি নাই।

ভাংতি নাই আচ্ছা ভাংতি করে দিবেন ত্রিশ টাকা পায় আপনার কাছে। এটাই আমার শেষ সম্বল।

নাক মুখ কুঁচকে বিরক্ত হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিশাত গাড়ি চালাতে লাগলো।

আমি ও আর কিছু বললাম না খেয়ে চুপ করে মাথা সিটে হেলান দিয়ে বসে র‌ইলাম খুব ক্লান্ত লাগছে।

চলবে♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে