#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৩৮
আয়না সামনে ধরে আছি।
নিজের মুখটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। কতো পরিবর্তন এসেছে নিজের মাঝে। আচমকা কান্না পেয়ে গেল আমার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছি না আয়না রেখে থ মেরে বসে রইলাম আমার চোখ বাঁধা মানছে না পানি পরছে টপটপ করে। আমার দৃষ্টি বিছানায় রাখা আদ্রর জিনিস গুলোর দিকে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাত উঠিয়ে চোখের পানি মুছলাম। ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকালাম।
হাত বারিয়ে শাড়িটা হাতে নিলাম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি শাড়ির দিকে এখন আমার একটা ইচ্ছে জাগছে আর সেটা হলো আজকে খুব সাজতে ইচ্ছে করছে যেমন টা তিনবছর আগে চাইতো।
তিনবছর আগে
কতো সুন্দর একটা পরিবার ছিলাম আমরা বাবা মা ভাই আর আমি। ভাইয়া যখন সে চাকরি পেল আমি ভাইয়ার কাছে সাজের জিনিস চেয়েছিলাম। ভাইয়া এনে দিয়েছিল খুশি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আমার ফ্রেন্ড ছিলো মিলা ওকে বলতে লাফিয়ে এসেছিল ও আমাকে সাজিয়ে দিয়েছিল আমি হাজ পারতাম না। ওর থেকে শিখে ছিলাম। মার একটা শাড়ি ও পরেছিলাম তারপর বেড়াতে গিয়েছিলাম আমার ব্লাউজ ছিলো না মিলার টা পরেছিলাম। ব্লাউজ শাড়ি নেই এটা ভাইয়া শুনে বলেছিলো পরে কিনে দেবে। কিন্তু সেই সময় আর আসেনি হারিয়ে গেছে সব আনন্দ সুখ ভাই সব হারিয়ে গেছে।
শাড়িটা ধরে কেঁদে উঠলাম। আজ কেউ আমায় শাড়ি দিয়েছে সেও আমাকে ভালোবাসে।
আর কিছু না ভেবে শাড়ি পরতে লাগলাম। নিজেকে সাজাতে ইচ্ছে করছে। দুনিয়ার সমস্ত চিন্তাভাবনা এক পাশে ফেলে রেখে শাড়ি পড়তে উঠে দাঁড়ালাম। শাড়ি আমি পড়তে পারি না তবুও কোন রকম পেচিয়ে ওই ভাবে যে কোন রকম পড়লাম। বড় একটা আয়না থাকলে দেখতে পারতাম কেমন হয়েছে। আদ্র যেভাবে বলেছে ওইভাবে সাজতে লাগলাম। আয়না মুখের সামনে ধরে চোখে কাজল দিলাম, ঠোঁটে লিপস্টিক, হাতের চুরি, কানের দুল সম্পন্ন সাজলাম চুল গুলো ছেড়েই রাখলাম। খারাপ লাগছে না।
ওইভাবে কিছুক্ষণ বসে রইলাম কারণ এই শাড়ি পড়ে তো আদ্রর সামনে যাওয়া হবে না। তাই এখানেই পড়ে বসে আছে।
হঠাৎ মনে হল কেউ বারান্দায় থেকে সরে গেল। আমি তাড়াতাড়ি উঠে বারান্দায় দিকে গেলাম কিন্তু কেউ নেই। বারান্দায় দাড়িয়ে একবার নিচে তাকিয়ে রুমে ঢুকে গেলাম।
আমি স্পর্শ দেখেছিলাম কেউ আছে ধরে গেল কিন্তু।
ফোন বেজে উঠল,,
আদ্রর নাম্বার রিসিভ না করলে চলে আসে যদি সেই ভয়ে তারাতাড়ি রিসিভ করলাম।
“হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুম আসসলাম। কেমন আছো?”
“ভালো।”
” শাড়ি পছন্দ হয়েছে।”
“আপনি এসব কেন দিয়েছেন। ”
” আমি কেন কি করবো সেটা কাউকে বলতে পছন্দ করি না।”
“ভালো। কিন্তু আমাকে আর কখনো কিছু দিবেন না আর এসব কালকেই নিয়ে যাবেন।”
“নো এটা পরে তুমি আসবে আমার সামনে। মন মতো সেজে এখন যেভাবে সেজেছো ঠিক এই ভাবে।” আনমনে বলে উঠলো,, বলেই জ্বিভ কাটলো
আর আমি চোখ বড় করে আশেপাশে তাকালাম।
আদ্র এখানে আছে।তার মানে তখন আমি ভুল দেখেনি ওইখানে কেউ ছিলো। কিন্তু আমি গিয়ে কাউকে পেলাম না কেন। ফোন কানে থেকে নামিয়ে রেখে ছিলাম এবার ফোন কানে ধরে বিষ্ময় হয়ে বললাম ,,
“আপনি কোথায় আছেন সত্যি করে বলেন তো?”
“এত খুঁজে লাভ নাই পাইবেনা।”
অবাক হয়ে বললাম,,”মানে সত্যি আপনি এসেছিলেন আমায় কি অবস্থায় দেখে ফেলেছে।”
“সে তো দেখেছি তোমাকে। আর আমি না দেখলে দেখবে কে এজন্যই তো গিয়েছিলাম কিন্তু আমি ভাবি নি তুমি এত তাড়াতাড়ি জিনিস গুলো পড়ে ফেলবে।”
রাগে আমার নিজের চুল নিজে খেতে ইচ্ছে করছে,, এভাবে আমাকে আদ্রর দেখে ফেলল, লজ্জায় আমি কথা বলতে পারছি না সত্যি কেন যে পরলাম। নিজের কাছে নিজেই লজ্জায় পড়তে হচ্ছে।কে জানতো আর্দ্র এখানে এসে বসে থাকবে আর আমাকে এভাবে দেখে ফেলবে।
“কি হল কথা বলছো না কেনো এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন আমি তো এগুলো তোমাকে দিয়েছি। তাই এগুলো পড়ার জন্য প্লিজ লজ্জা পেওনা। আরেকটা কথা তোমাকে এভাবে দেখে কিন্তু আমি সত্যি অনেক খুশি হয়েছি। যেটা দুদিন পর দেখতে চেয়েছিলাম সেটা দুদিন আগেই দেখতে পেলাম আমি কতটা খুশি হয়েছে তুমি জানো খুশি এখন তোমাকে ধরে একটা চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।”
“ছি আপনি এত খারাপ আমি আগে থেকে জানতাম আপনি খারাপ তাই এতোটা। এই সব বলতে আপনার লজ্জা করছে না। ফোনটা কানুন যতসব।”
বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকে বললাম।
“উফফ স্নেহা রেগ না রাখলে তোমাকে এত কিউট লাগে মন চায়..
“চুপ প্লীজ বাজে কথা বলবেন না।”
“ওকে তাহলে একবার বারান্দায় এসো।”
“কেন আপনি কোথায়?”
“আসো আসলে দেখতে পাবা আমি কোথায়?আর তুমি ইদানিং খুব চালাক হয়ে যাচ্ছে স্নেহা আমাকে কিভাবে ধরে ফেললে! কোনরকম পালিয়ে আসলাম।”
“তারমানে আপনি বারান্দায়তে এসেছিলেন?”
“তোমার কি মনে হয়?”
“আপনি সত্যিই খুব খারাপ এইভাবে একটা মেয়ের রুমে উকি দিতে আপনার লজ্জা করল না।”
“দেখো আমাকে খারাপ বলবে না। আমি তোমার কিছু দেখি নি শুধু তোমাকে শাড়ি পরা অবস্থায় কেমন লাগে দেখেছি।”
“এইটাই দেখবেন কেন একটা মেয়ের রুমে আপনি উকি মরবেন কেন এইসব অসভতামি কাজ না করলে হয়না। নিজে কতটা খারাপ সেটা বারবার প্রমাণ করতে চাইছেন।”
“শোনো আমি খারাপ আমি অসভ্য যা খুশি বল এখন ঝগড়া করবো না চুপচাপ বারান্দায় আসো। আর যদি না আসো আমি তোমার রুমে আসতে বাধ্য হব। এখন তুমি বলো কি করবে আসবে নাকি আমি আসবো।”
“সব সময় থ্রেট না দিলে হয় না তাই না।”
“না হয় না তুমি তো আবার ভালো কথা শুনতে পছন্দ করো না। এজন্যই তো আমাকে থ্রেট দিতে হয়।যদি প্রথম বার ভালই ভালই চলে আসতে তাহলে কি আমার এতগুলা কথা বলতে হতো।”
রাগে গজগজ করতে করতে আমি বারান্দায় গিয়ে উপস্থিত হলাম। নিচে অন্ধকার আমার কিছুই চোখে পড়ছে না। আমি তাকাতাকি করে আদ্র কে খুঁজছি।
“আমাকে খুজছো?”
আচমকা আমাকে খুজছো শুনে ভয় পেয়ে যায় আমার মনে হলেই আমার কাছ থেকে কথাটা বলছে আমার মনে নাই ফোনটা আমার কানে।
বুকে এক হাত চেপে বারান্দায় খুঁজছি আদ্রকে।
“বারান্দায় আমাকে পাবে না আমিতো বারান্দায় নাই। এই যে আমি দেখো মুখে লাইট ধরেছি।”
এবার বুঝলাম যে ফোন থেকে কথাগুলো আসছে। নিজের কাছে নিজে বোকা বনে গেলাম।
“ফোনের কথা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে। আচ্ছা তুমি কি চাইছো আমি বারান্দায় আসি।”
সামনে তাকিয়ে দেখি রাস্তায় বাইকের উপর বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আদ্র। ঠোঁটে তার হাসি আমি বোকা হয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। আজকে কি হয়েছে আমার সবকিছুই উল্টাপাল্টা করছি কেন?
বিরক্ত হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম আদ্র চলে যাওয়ার পর রুমে চলে এলাম।
দুইদিন খুব তাড়াতাড়ি চলে গেল। ভার্সিটি টিউশনি করে। কিন্তু টিউশনি ভালো লাগে না ওই লোকটার একদম ঠিক লাগছে না। ইদানীং উনাকে বাসায় দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমি যে দুই মাস ধরে পরাচ্ছি দুই মাসের কক্ষনো বাসায় দেখি নাই। কিন্তু তিন দিন যাবত সে বাসায় আছে।কোনরকম পরিয়ে বাসা থেকে বের হতে পারলে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।
যথারীতি অন্তরা দুইটা নাগাদ বাসায় এসে হাজির। আজ ওদের সাথে বেড়াতে যাওয়ার কথা। আবার আজকেই আদ্রর সাথে দেখা হওয়ার কথা। অদ্ভুত কোন জায়গার ঠিকানা দেয়নি আদ্র আমাকে এটা ঠিক যে আমি ওর সাথে দেখা করতে যাবো না। কিন্তু যদি আমি যেতাম তাহলে কোথায় যেতাম। আচ্ছা উনি কি আমাকে নিতে আসবে। জোর করে নিয়ে যেতে চাইবে।অন্তরার সামনে যদি চলে আসে আর তার সাথে যাওয়ার জন্য জোর করে তাহলে কি হবে? তাহলে অন্তরা জেনে যাবে আমার বাসায় আসে আর এরকম জোর করে। অন্তরাকে আমি বলেছি আদ্র এখন আমাকে ফোন দেয় কিন্তু বাসায় সেটা বলিনি।
“এই কি চিন্তা করছিস? তারাতারি রেডি হ।”
“আমি না গেলে হয় না প্লিজ তোরা যা।”
“তুই কিন্তু পরে রাজি হয়ে ছিলি। আর এখন উল্টা কথা বলছিস।”
“হ্যাঁ সেটা তো তোর রাগ এর জন্য।”
“তো রাগের জন্য যেতে রাজি হয়েছিল তাহলে এখন যেতে মানা কোথায়।”
“আমার না ভাল লাগছে না মাথা ব্যথা করছে।”
“কোন এক্সকিউজ এ কাজ হবে না। তোর মাথা ব্যথা করছে আমি তোকে মাথা ব্যথার ওষুধ দেবো। তবুও তোকে যেতেই হবে।”
অসহায়ের মত করে অন্তরা দিকে তাকিয়ে আছি। আজ আমার কোন কথা শুনবে না সেটা আমি খুব ভাল করেই জানি। এমনিতেই অন্তরার খুব জেদ ও আমাকে নিয়ে যাবে।
আদ্র কে শাড়ী দেওয়ার কোনো পরিস্থিতি খুজে পাইনি আসলেই দুইদিন আদ্র আমি চোখের সামনেই পাইনি। না আমার সামনে এসেছে আর না আমাকে ফোন দিয়েছে। তাই এগুলো ফিরত দিতে পারি নাই বিছানা একপাশে রেখে দিয়েছিলাম। আর এটা আমার কাল হয়ে দাঁড়ালো।অন্তরা দেখে ফেলল আর বায়না ধরল এই শাড়ি পড়ে যেতেই হবে কে দিয়েছি সে সব জিজ্ঞেস করল না অদ্ভুত আমি সন্দেহ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“কিরে ভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
“কিছু না আমার কেন জানি না তোকে খুব সন্দেহ হচ্ছে।”
“আমার কথা অন্তরা কিছুটা থতমত খেয়ে গেল।”
“মানে আমাকে তোর সন্দেহ হচ্ছে কেন?”
”
জানি না সত্যি করে বলতো কিছু লুকাচ্ছিস কি?”
পাগল নাকি আমি আবার কি লুকাতে যাব তাড়াতাড়ি শাড়িটা পর আর না হলে দে আমি পরিয়ে দেয়।
আমিও তো শাড়ী পোরেছি দুজনে শাড়ী পড়ে যাব খুব মজা হবে।
চিন্তাভাবনা এক পাশে ফেলে শাড়িটা পড়লাম অন্তরা জেদের কাছে হার মেনে।
অন্তরায় আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিলো সাজিয়ে ওদিল অদ্ভুত একদম আদ্র আমাকে যেভাবে সাজতে বলেছিল ওই ভাবে সাজিয়ে দিয়েছে অন্তর।
“এভাবে সাজিয়ে দিল কেন? আর চুল খোলা রাখলি কেন আমি চুল বাধবো।”
“না প্লিজ স্নেহা চুলটা খোলা রাখ দেখ তোকে চুল খোলাই খুব সুন্দর লাগছে।”
“না আমার চুল খোলা রাখতে অস্বস্তি হয় আমি এভাবে যেতে পারবো না।”
“প্লিজ ইয়ার এই কথা রাখ।”
“সবকিছু তো তোর কথাই হলো এবার আমার কথা একটু রাগ।”
“রেগে যাচ্ছিস কেন প্লিজ।”
“আচ্ছা চল।”
নিচে এসে দেখলাম হৃদয় আমাদের জন্য দাঁড়িয়ে আছে একটা অটো আছে একটু কথা বললাম হৃদয়ের সাথে তারপর অটোতে উঠে বসলাম। অন্তরা আর আমি পেছনে আমরা দুজন। আর সামনে ডাইভারের সাথে হৃদয় বসলো।
সকাল থেকে রুমের ভেতর আদ্র একটার পর একটা ড্রেস পরছে আর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবার খুলে ফেলছে। পুরো বিছানা এলোমেলো হয়ে আছে।সেদিকে তার খেয়াল নেই চিন্তিত আজকে কি পড়ে যাবে স্নেহার সাথে দেখা করতে।
আগেও অনেকবার এগিয়েছে কখনোই এই নিয়ে চিন্তিত ছিল না কিন্তু আজকে স্নেহা ওর মনের মত সেজে আসবে। সো ওকে ও তো স্নেহার পছন্দমত যেতে হবে যাতে স্নেহা হা করে ওর দিকে তাকিয়ে।
ইচ্ছে করে এই দুইদিন স্নেহার সামনের যায় নাই। আজকে যাবে কিভাবে সেই নিয়ে দুই দিন ধরে ভাবছে সব পরিকল্পনা করছে কিভাবে স্নেহাকে মনের কথা জানাবে। সে নিয়ে পরিকল্পনা করতে করতেই স্নেহা সামনে যাওয়া হয় নাই।
অবশেষে আদ্র রেডি হল সাদা কালারের এর পাঞ্জাবি পরে স্নেহা যেহেতু শাড়ি পরবে আমার পাঞ্জাবি পরা বেস্ট হবে। রেডি হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিছুবাদ আছে কিনা সব ঠিক আছে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সময় হয়ে এসেছে এতক্ষণে পৌঁছে গেছে হয়তো ওরা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরল । বাসার সবাই আদর এভাবেপাঞ্জাবি পড়ে রেডি হয়ে বের হয়ে যেতে দেখে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে ছিল। কার মাথায় ঢোকছে না আদ্র এভাবে কোথায় যাচ্ছে।
আজকে আর বাইক নিল না আজকে গাড়ি নিয়ে বের হল।অনেকদিন পর গাড়িতে উঠেছে আজকে স্নেহাকে নিয়ে লং ড্রাইভে যাবে। সবকিছু ঠিক আছে আধা ঘন্টার ভিতরে গন্তব্য স্থানে এসে পৌছালো আদ্র।
এসে ওর চোখ আটকে গেল একটা লাল পরীর উপর।তার ঘন কালো চুল বাতাসে উড়ছে শাড়ির আঁচল বাতাসে হেলেদুলে নাচছে। একদম আমার পছন্দ মত সেজে এসেছে স্নেহা স্নেহাকে মুগ্ধ নয়নে দেখছি আমি।
চলবে♥️
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৩৯
“কি এতো ভাবছো?”
অন্তরালে মুখের দিকে তাকিয়ে বলল হৃদয়।
“আদ্র ভাইয়ার সাথে প্লান করে তো স্নেহাকে রেখে এলাম এখন কি হবে সেটাই ভাবছি।”
চিন্তিত হয়ে বললো অন্তরা।
” এতো চিন্তা করো না। আদ্র ভাইয়া তো সত্যি ভালোবাসে স্নেহাকে তুমি সেটা ভালোই জানো।”
“হ্যা, কিন্তু স্নেহাকে দেখে কিন্তু একটু ও মনে হয় না ও আদ্রকে ভালোবাসে। এটাই আমার টেনশন যদি ও আদ্রকে ভালো না বাসে তাহলে আজকের পর ওর সাথে আমার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ ওকে না জানিয়ে ওর অনেক ইনফরমেশন আদ্রকে দিয়েছি আবার আজকেও আমি ওকে এখানে নিয়ে এসেছি।”
গভীর ভাবে বলল অন্তরা ও খুব চিন্তিত। স্নেহাকে রেখে ওরা কিছুটা দূরে এসেছে ওদের একা টাইম দেওয়ার জন্য। হৃদয় এগিয়ে অন্তরার সামনে দাঁড়িয়ে পরল।
“কি এভাবে সামনে দাঁড়িয়ে পরলে কেন?”
“তুমি মন খারাপ করছো কেন?”
“করছি না ভয় পাচ্ছি।”
“ওফ ভয় পেয় না তো আর ওসব চিন্তা বাদ দাও।”
“বললেই কি বাদ দেওয়া যায়।”
“যাবেনা কেন অবশ্যই যাবে।আর আজকে কি সেটা কি ভুলে গেছ। এতো ভালো একটা দিনে তুমি এমন বাংলার পাঁচের মতো মুখ করে না থেকে ভালোবাসা বাসি তো করতে পারো।”
“মানে,
“এই যে আমি তোমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।আর তুমি কি একবার ও আমার দিকে তাকিয়ে দেখেছো। খালি আজেবাজে চিন্তা করে সুন্দর মুহূর্তটা নষ্ট করছো।”
“কি আমি আজেবাজে চিন্তা করছি? বলবেই তো তোমার তো একটু ও চিন্তা হচ্ছে না।”
“চিন্তা হবে কেন? এখানে চিন্তার কি আছে আমি জানি আদ্র ব্রো সব ঠিক করে নেবে।স্নেহাকে তো মানিয়েই পারবে দেখো।”
“তাই যেন হয়।”
“হবে। শুন না।”
“কি ?” ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,,
” তোমাকে না আজকেই বিয়ে করে ফেলতে ইচ্ছে করছে।”
“কেন?”
“তোমাকে একদম বউ বউ লাগছে। মিষ্টি বউ চলো বিয়ে করে ফেলি।”
” পাগল নাকি অসম্ভব। তুমি আমাকে বিয়ে করে খাওয়াবে কি আগে লেখাপড়া শেষ করো তারপর চাকরি তাঁরপর আমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবে তারপর সেনা বিয়ে।”
“ওরে আল্লাহ এতো দিন।”
“হ্যা।”
“কিন্তু আমার তো তোর সইছে না। ”
“সইতে হবে পরিবার ছাড়া আমি বিয়ে করতে পারবো না।”
“আচ্ছা আচ্ছা মন খারাপ করো না। আমি তো মজা করছিলাম এখন আমার বাসা থেকে ও মানবে না।”
হৃদয় অন্তরার গালে হাত দিয়ে বলল,,
“হুম।”
হৃদয় কে জরিয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে।
.
বিরক্ত নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি। একটু পর পর চারপাশে তাকিয়ে অন্তরাকে খুঁজছি। দেখছি ও আসছে কিনা এখানে নেমে আমাকে দাঁড়া করিয়ে রেখে কোথায় যে চলে গেল দুজন। বিরক্তের সাথে এখন রাগ লাগছে এইভাবে যখন আমাকে রেখে ওরা চলেই যাবে নিয়ে কেন এলো।
আজকে দুজনে একা টাইম স্পে করবে এজন্য তো আমি আসতে চাই নাই কিন্তু জোর করে নিয়ে এলো আর হাওয়া হয়ে গেল।
আর এমন জায়গায় কেন রেখে গেল জায়গা সাজানো মনে হচ্ছে কেউ তার ভালোবাসার মানুষটির জন্য খুব যত্ন করে সাজিয়েছে।
জায়গা পছন্দ হয়েছে খুব আমার কিন্তু কার না কার জন্য আরেন্জ করা হয়েছে সেখানে আমি এসে দাঁড়িয়ে আছি। এটাই আমার অসহ্য লাগছে। আর অন্তরার রা আমাকে এখানে কেন রেখে গেল আর গেল যে গেল আর এলো না।
.
এদিকে আদ্র গাড়িতে হেলান দিয়ে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। এগিয়ে না গিয়ে ভাবছে স্নেহা ওকে দেখলে কিভাবে রিয়াক্ট করবে? কিভাবে মনের কথা ওকে জানাবো প্রচুর নাভার্স লাগছে উফফ আদ্র এতো নাভার্স হচ্ছিস কেন এর আগেও তো অনেক বার স্নেহার সামনে গিয়েছিস কই তখন তো এমন করিস নি তাহলে আজকে এতো নাভার্স হচ্ছিস কেন?
আরেকবার গাড়ির আয়নার নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিলো আদ্র চুল নারিয়ে ঠিক করতে লাগলো তারপর সানগ্লাস বের করে পরে এ্যাটিডিউট লুক নিয়ে এক এগিয়ে আবার পিছিয়ে গেল। উফফ হচ্ছে না ভয় পাচ্ছি আবার ঘেমে গেছি আমি এতো ভীতু কবে হয়ে গেলাম।
সানগ্লাস খুলে কপালে হাত রেখে চিন্তা করতে লাগলাম। হঠাৎ হাতটা বুকে চলে গেল ও গড আমার হাটর্বিট এতো লাফাচ্ছে কেন? বুক হাত দিয়ে দাঁড়ালো উফ হাটর্বিট এতো লাফাচ্ছে কেন আমি কি ঠিক মতো স্নেহার সামনে যেতে পারবোনা।
ভয় হচ্ছে কেন মনে হচ্ছে স্নেহাকে কিছু বলতে পারবো না হারিয়ে ফেলবো।
এসব কি ভাবছি ওই তো স্নেহা ওর কাছে যেতে আমার মাত্র দুই মিনিট লাগবে তাহলে কেন মনে হচ্ছে স্নেহা আমার খুব দূরে আছে ওকে আমি হারিয়ে ফেলবো।
আদ্রর মনে একটা অজানা ভয় কাজ করছে সানগ্লাস হাতে রেখেই এগুতে লাগলো।
এদিকে আদ্রর বাবার বিপক্ষ দলের লোক এদিকেই ছিলো তারা হঠাৎ আদ্রকে দেখে আদ্র একা ওর সাথে কোন গার্ডস নেই। আশেপাশে লোকজন নেই কিছু টা দূরে শুধু মাত্র একটা মেয়ে আছে।
তাদের মুখে রহস্যময় হাসি ফুটে উঠে।
অনেকদিন ধরেই স্যার আমাদের একে ক্ষতম করতে বলেছিলো এনী নাকি ইলেকসনে স্যারের গায়ে হাত তুলেছিলো ওর বাবাকে একটা বকা দিয়েছিলো বলে।
সে জন্য স্যার এই আদ্রর উপর খুব ক্ষেপে আছে আজকে যদি একে মেরে দিতে পারি তাহলে স্যার খুব খুশি হবে।
সব গুলো মুখে শয়তানি হাসি দিয়ে এগিয়ে এলো অশ্র হাতে।
স্নেহা রাগে গজগজ করতেছে।অন্তরা সামনে পেলে খুন করে ফেলতো। শাড়ির আঁচল দিয়ে হাতের মুঠোয় ধরে আছে বিরক্ত হয়ে চুলে হাত দিয়ে খোপা করে নিয়েছে।
হঠাৎ মনে হল কেউ আমার পেছনে আছে আসলে হাঁটার আওয়াজ আসছে খচখচ আওয়াজ। অন্তরা নিশ্চয়ই এসেছে এটা ভেবে স্নেহা কিছুটা খুশি হলো সাথে এক গাদা বকা ভেবে নিলো তাকিয়ে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বকতে লাগবে।
কিন্তু আমি পেছন ফিরে থমকে গেলাম আদ্রকে দেখে সে এখানে কি করছে।আদ্র আমার তাকানো দেখে ঠোট কামড়ে ধরে হেসে উঠলো,,,,
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। আদ্রকে আজকে একদম অন্যরকম লাগছে দেখতে। ওকে ফাস্ট পাঞ্জাবিতে দেখলাম একটু পর পর চুল ঠিক করছে পাঞ্জাবির কলার টানছে আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। একটু পলক ফেলছে না।
আমার মাথায় হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।অন্তরা গেল কোথায় আর আদ্র এলো কোথা থেকে ও জানালো কিভাবে আমি এখানে আছি। এর উওর আদ্রর দিতে পারবে।
এখানে আদ্রর সাথে অন্তরার কোন না কোন কানেকশন তো আছেই আমি সিউর।
আমি একটু দূরে ছিলাম আদ্রর থেকে ওখানে থেকে আদ্রকে দেখে নিজের ফোন হাতে নিলাম অন্তরারকে কল করতে কিন্তু ফোনে টাকা নাই কি আর ফোন নামিয়ে রাখতেই একটা বিকট আওয়াজ হলো।
আওয়াজ শুনে আমি চমকে উঠলাম তারাতাড়ি পেছনে ফিরেই থমকে গেলাম।
আদ্র মাটিতে পড়ে আছে পেছনে তিনটা মুখোস ধারী লোক দাঁড়িয়ে তাদের হাতে বন্দুক। বন্দুক দেখেই আমার বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো।
বিষ্ময়ে হতদম্ব হয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি সামনে।
লোক গুলো এগিয়ে এসে আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে দেখলো জেগে আছে কিনা তারপর বন্দুক লুকিয়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল আর আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি নরার শক্তিটুকু পাচ্ছিনা।
মনে হচ্ছে আমার শরীর একটু নরার শক্তি নাই। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে পা দুটো অসাড় হয়ে গেছে নরছে না। দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি আদ্রর সাদা পাঞ্জাবি লাল টকটকে হয়ে গেছে।
এমন কিছু চোখের সামনে দেখবো আমি কল্পনাতেও ভাবি নি। পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছি নরছি না। কিন্তু এখন আমার নড়া উচিত আদ্রর কাছে যাওয়া উচিত কিন্তু পারছিনা।
হঠাৎ একটা জিনিস থেকে আমার সমস্ত শক্তি মনে হয় ফিরে পেলাম আদ্র ওইভাবেই আদোআদো তাকিয়েছে চোখ আমাতে আবদ্ধ বাম হাতটা একটু নারিয়ে আমার দিকে ধরলো আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না প্রানপনে ছুটে আসতে লাগলাম আদ্রর কাছে কিন্তু এই একটু পথ যেন শেষ হচ্ছে না।
আমি আদ্রর কাছে আসার আগেই আদ্রর হাত নেমে গেল।
আমি দ্রুত ওর পাশে গিয়ে বসলাম। সারা শরীর কাঁপছে আমার চোখ দিয়ে গলগল করে পানি পরছে আদ্রর নিথর দেহটা আমার সামনে পরে আছে।
হাত বাড়িয়ে আদ্রকে স্পর্শ করতে পারছি না আমার হাত থরথর করে কাঁপছে।
এমন দৃশ্য দেখতে হবে ভাবতে পারছি না। স্তদ্ধ হয়ে আদ্রর শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। আমার চোখ পানি আদ্রর হাতে পরছে ওর সাদা পাঞ্জাবি লাল রক্তে লাল হয়ে আছে যেদিকে তাকিয়ে আমি কেঁপে উঠি দুহাত উঠিয়ে চোখে হাত দিয়ে সাপিয়ে ধরি এসব দেখতে পারছি না আমি কষ্টে আমার বুক টা
ফেটে যাচ্ছে। আদ্রর এমন অবস্থা আমি সহ্য করতে পারছি না কান্না দলা পাকিয়ে গলায় আটকে আছে।
হঠাৎ আদ্রকে জরিয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠলাম।
কান্না বাধা মানছে না চিৎকার করে কাঁদছি কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই সাহায্য করার মতো।
উঠে আদ্রর মুখটা দুহাতে ধরে চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম,,
“আদ্র চোখ খোলেন প্লিজ। আপনার কিছু হতে পারেনা। প্লিজ চোখ খুলুন ওরা কারা ছিলো আপনাকে কেন গুলি করলো বলুন না।”
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে আমার বুকটা খালি খালি লাগছে খুব আপন কাউকে হারিয়ে ফেলেছি মনে হয়। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার কি করবো কাকে ডাকবো স্নেহার সারা শরীরে আদ্রর রক্ত লেগেছে গালে লাল শাড়ি আদ্রর রক্তে রাঙানো হয়েছে যেন।
চলবে♥️