#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:—-তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:—১২
অন্তরা রেগে আগুন হয়ে বসে আছে। ওর পাশে হৃদয় ও বসে আছে অন্তরা উঠতে চাইছিলো ছেলেটা জোর করে বসিয়ে রেখেছে।
উঠতে গেলেই হাত শক্ত করে টেনে আবার বসিয়ে দেয়। এজন্য উঠতে ও পারছে না।
একটু আগে ওনার ফোন নিয়ে স্নেহাকে কল করেছিলাম স্নেহা ফোন রিসিভ করে নি। তিন বার কল করেছি তারপর থেকে এখানেই বসে আছি। আর উঠতেও পারছি না পেছনে একটা ম্যাম বসে আছি। তাই কিছু বলতে পারি না।
ওনার দিকে রেগে তাকালে দাঁত বের করে হাসে সেই হাসি প্রথম ভালো লাগলেও এখন আমার গাঁ জ্বলে যাচ্ছে এই হাসি দেখে। হনুমান একটা, কেমন পেছনে পরে আছে।
“অন্তরা”
হঠাৎ কারো মুখে নিজের নামে ডাক শুনে ঘার ঘুরিয়ে সেদিকে তাকালো….
তাকিয়ে দেখি রাহাত ভাইয়া আমার দিকে আসছে। সামনে এসে দাড়িয়ে হেসে উঠলো আমি একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“হাই ভাইয়া কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তুমি কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
“অন্তরা তোমাকে একা দেখছি স্নেহা আসে নাই। ওকে দেখছি না!”
“ও তো আসে নাই। কতো করে বললাম তবুও এলো না। কাল এতো করে রাজি করিয়েছি আর এখন দেখেন আসেই নাই। ফোন দিচ্ছি রিসিভ ও করছে না।”
মনটা খারাপ করে বলল …
“কিন্তু ভাইয়া আপনাকে দেখলাম না তো কালকে ভার্সিটিতে। আসছিলেন না নাকি।”
“কাল একটু বিজি ছিলাম এজন্য আসি নাই।”
“ওহ আচ্ছা। আপনি কি কোন দরকারে স্নেহাকে খুঁজছেন?”
কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো….
“না না তেমন না আসলে তোমাকে দেখলাম ওকে দেখলাম না তাই। আচ্ছা আসি।”
“ভাইয়া একটা কথা ছিলো।”
“হ্যাঁ বলো।”
অন্তরা আদ্রর পাশে দাঁড়ানোর একটা মেয়ে কে দেখিয়ে বলল,,
“ওই মেয়েটা কে ? আসলে আগে আপনাদের সাথে দেখি নাই তো তাই।”
“আয়রা আমাদের ফ্রেন্ড। কিছু দিন ভার্সিটিতে আসে নাই এজন্য দেখো নি। আচ্ছা আসি ভালো থেকো।”
অন্তরা কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাহাত চলে গেল।
“কিরে কোথায় গেছিলি?”
মাইশা কথাটা বলল রাহাতকে,,,,
“এইখানেই।”
“তোকে দেখলাম ওই স্টুপিট মেয়ে ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিস। কি কথা বললি?”
“হোয়াট, স্টুপিট মেয়েটা আবার কে?”
“কে আবার ওই যে কি যেন নাম ,, কিছু ক্ষন ভেবে,
স্নেহা ইয়েস স্নেহা ওই মেয়েটা কে তো দেখলাম না আসে নাই।”
“নাহ। কিন্তু তুই কি সব বলছিস ওকে। ”
“বেশ করেছি ওই মেয়েটাকে আমার একদম সহ্য হয় না। ভালোই হয়েছে আসে নাই।”
মুখ বেঁকিয়ে বেঁকিয়ে কথা বলতে লাগলো সাথে সবাই শুধু চুপ করে আছে আয়রা ও কিছু বুঝতে পারছেনা। আর রাহাত চুপ করে আছে ও বলে ও এদের থামাতে পারবে না তার থেকে চুপ থাকাটাই বেটার। রাহাতের চোখ যায় আদ্রর দিকে আদ্র চলে যাচ্ছে।
রাহাত ওর পেছনে যেতে যাবে পেছনে থেকে কেউ ওর হাত ধরে নিয়েছে।
তীক্ষ্ণ চোখে পেছনে তাকায়…
“কোথায় যাসছিস?”
“হাত ছার আয়রা। এসব কিন্তু আমি পছন্দ করি না।”.
“আচ্ছা ছারছি। এতো হাইপার হচ্ছিস কেন? আমার দিকে তো তাকাচ্ছসই না দেখ আমি শাড়ি পরছি কেমন লাগছে আমাকে বলতো।”
রাহাত কিছু বলল না।
“ওই কিছু বলিস না কেন? আমাকে কি দেখতে খারাপ লাগছে। ”
বলেই মুখ কালো করে ফেলল….
“জানিনা।”
আর দাঁড়ালো না দ্রুত পায়ে চলে গেল।
আয়রা ওর দিকে তাকিয়ে আছে ওর চোখ ছলছল করছে। গাল বেয়ে পরার অপেক্ষা।
তুই আমাকে কখনো বুঝলি না রাহাত। একটু ও কি ভালোবাসা যায় না আমাকে।
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো। মাইশাদের পাশে দাঁড়িয়ে রইল।
আয়রা রাহাত কে ভালোবাসে তিন বছর ধরে কিন্তু রাহাত সেটা বুঝতে চায় না। সব সময় ইগনোর করে।
.
রান্না শেষ করে ঘেমে গেছে স্নেহা বাবাকে খাবার দিয়ে গোসল করতে চলে যায়।
গোসল করার সময় ফোনের রিংটোন বেজে উঠে কিন্তু এখন রিসিভ করা সম্ভব না। তারাতারি করে গোসল শেষ করে এসে ও শেষ রক্ষা করা গেল না। কল কেটে গেছে তিনবার মিস কল আননোন নাম্বার।
আবার আসে কিনা তার জন্য ফোন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম কিন্তু আর আসলো না খিদে লেগেছে খেতে হবে এখন আলু ভাজা দিয়ে ভাত খেলাম। আব্বু কে ডিম ভেজে দিছিলাম। ঘরে বাজার ও নাই কাল ভার্সিটি থেকে আসার সময় কিছু কিনতে হবে।
দুটো বাজে অন্তরা নিশ্চয়ই আমার উপর খুব রেগে আছে কিন্তু আমি কি করবো যেতে পারলে তো যেতাম ই।
কাল ই তো এক তারিখ কাল থেকে টিউশনি তে যেতে হবে।
সন্ধ্যায় অন্তরার ফোন এলো। ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলাম ঔপরপাশ থেকে ঝাঁজালো কন্ঠস্বরে কানে এলো অন্তরা বটেই যাচ্ছে। চোখ বন্ধ করে বকা হজম করলাম।
নিজে নিজে বকে ঠান্ডা হয়ে গেল এবার আমি কিছু বলবো তার আগেই খট করে ফোনটা কেটে গেল। আমি কিছু বলার সুযোগ ই পেলাম না।
ফোনের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রচন্ড খেপেছে আমার উপর। এটি স্বাভাবিক কিন্তু এখন কিছু করতে পারবোনা কাল গিয়ে তা করার করতে হবে। সব খুলে বলতে হবে।
.
পরদিন
ভার্সিটিতে আসতেই মুখোমুখি হয় আদ্রর সাথে সে আমার দিকে একটা কেমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একবার আড়চোখে তাকিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলাম।
ক্লাসে ঢুকে দেখি অন্তরা আগেই এসেছে আমি মুখে হাসি ফুটিয়ে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। কিন্তু ও একবার আমার দিকে তাকিয়ে ইগনোর করে মুখ ঘুরিয়ে ফোন টিপতে লাগলো।
“সরি রাগ করিস না প্লিজ।”
অন্তরা ফিরে ও তাকালো না । আমি ওর কাঁধে হাত রেখে আমার দিকে ঘুরিয়ে আবার সরি বললাম…
“সরি তো আমি ইচ্ছে করে আসি না এমন না আস্তে চাইছিলাম। কিন্তু তোর ব্লাউজ আমার হয় নাই আর ফোনে টাকা ও নাই তাই ফোন দিতে পারি নি।”
মুখ গোমড়া করে বললাম। অন্তরা এবার আমার দিকে তাকালো।
” তাই কি শাড়ি না পরতি অন্য ড্রেস পরে আসতি।”
“আসলে সবাইকে শাড়ি পরতে বলেছিল আমি একা অন্য ড্রেস পরলে যদি কেউ কিছু বলে তাই।
“তুই জানিস কাল কি হয়েছে ?”
“না বললে জানবো কিভাবে?”
অন্তরা হৃদয়ের ব্যাপারে সব বলল..
স্নেহা সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ। আর অন্তরা রেগে রেগে কথা গুলো বলছে।
স্যার রুমে আসতেই সবাই দাঁড়িয়ে পরলো।
স্যার একটা না সাথে আদ্র ও তার দুজন ফ্রেড আছে। এরা এখন এখানে কি করছে? কথা গুলো ভাবতে ভাবতে বসে পরলাম কিন্তু বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলাম না।
চট করে আবার উঠে দাঁড়াতে হলো ভয়ে আমার আত্মা কাঁপছে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। আমি একা কিনা দেখার জন্য একবার মাথা উঁচু করে ক্লাসে চোখ বুলিয়ে নিলাম না একা না আমি বাদেও আর ও চার জন আছে দুইটা মেয়ে একটা ছেলে ।
আমাদের দাঁড়ানোর কারণ কাল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি নি তাই।
আদ্রর দাঁড়িয়ে স্যারের সাথে কথা বলে বেরিয়ে গেল যাওয়ার আগে আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে ছিলো।
“তোমরা কাল অনুষ্ঠানে আসো নি এজন্য তোমাদের জন্য শাস্তি আছে। এখন সেটাই পাবে ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্টেরা তোমাদের জন্য কষ্ট করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কিন্তু তোমরা না এসে তাদের অপমান করেছো।সবার আসা টা বাধ্যতা মূলক ছিলো এবার তোমরা যাও আজ ক্লাস করতে হবে না।”
স্যার বলেই যেতে বলল আমি ভয়ে কাঁপতে লাগলাম এ কোন মসিবত রে বাবা এখন কি হবে?
এই সব কিছু ওই অসভ্য ছেলে টা করেছে আমি সিউর। স্যারকে কি যেন বুঝিয়ে গেল অসভ্য এখন তো যেতেই হবে কিছু করার নাই স্যার বলেছে।
“এভাবে তাকিয়ে না থেকে কাজে লেগে পরুন ম্যাডাম। ”
বলেই আদ্র চেয়ারে উপর বসে পরলো হাতে ফোন সেটা চাপছে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।
স্নেহা তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রর দিকে।
“আপনি ইচ্ছে করে এসব করাচ্ছেন তাইনা।”
“তুমি এখন ও এখানে দাঁড়িয়ে আছো সবাই কাজ করছে দেখতে পারছো না ।যাও কাজ করো।”
স্নেহাদের কালকের অনুষ্ঠানের জন্য যে স্টেজ সাজানোর হয়েছিল সেগুলো খুলতে বলা হয়েছে স্নেহাকে দিয়েছে ফুল বিভিন্ন দিয়ে যে সাজানো সেসব পর্দা খুলতে।
এসব ডেকোরেটরে লোকরাই করে কিন্তু ওদের শাস্তি দেওয়ার জন্য এসব করা হয়েছে। কিছু ক্ষন রেগে আদ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে কাজে লেগে পরে স্নেহা আদ্রর বলছে কাজ ঠিক মতো না করলে অন্য কিছু ভাবতে হবে এজন্য ঠিক মতোই করতে হবে।
কাজ করছে আর রেগে আদ্রর দিকে একটু পর পর তাকাচ্ছি। খাটাশ একটা এভাবে কেউ কাজ করায়। নিজে কেমন লাখসাহেবের মতো বসে আছে মন চাইছে মাথা ফাটিয়ে দেয়।
মনে মনে ইচ্ছে মতো বকছে আদ্রকে কিন্তু সেটা একমাত্র
স্নেহা জানে আর কেউ না।
স্যার না বললে কখনো এই খচ্চরটার কথা শুনতাম না।
“আমাকে না বকে কাজ শেষ করুন ম্যাডাম এভাবে দাড়িয়ে থাকলে আমার অন্য কিছু ভাবতে হবে। সেটা কিন্তু আর ও কঠিন কিছু হবে।”
আচমকা কানের কাছে আদ্রর কন্ঠস্বর আসতেই থমকে গেলাম। একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালাম আসলেই আমি দাঁড়িয়ে আড়চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করছিলাম কিন্তু আদ্র শুনলো কি ভাবে আদ্র দূরে বসা ছিলো।
“আপনি এখানে কেন? আর আমি আপনাকে বকতে যাব কেন?
কিছু টা তোতলাতে তোতলাতে বললো,
“তুমি আমাকে বকছিলানা বলছো। ওকে গুড গার্ল। আর আমি কি করছিলাম তোমাকে বলতে বাধ্য না নিজের কাজ করো।”
বলেই আবার নিজের জায়গায় চলে গেল। রেগে তার দিকে তাকিয়ে কাজে মন দিলাম।
রেগে কাজ করছি আড় চোখে বার কয়েক না চাইতেও তাকিয়েছি। তারপর কাজে মনোযোগ দিয়েছি ভালো করে।
এখন শীতের সময় তবুও আমার গরম লাগছে কাজ করলে তো গরমই লাগবে।
চলবে♥️
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ১৩
নিজের কাজ শেষ করে স্টেজের উপরে উঠে দাঁড়িয়ে লাফালাফি করতে হচ্ছে এখন স্নেহা কে। কারণ ওপরেও নাগাল পাচ্ছে না। বার কয়েক লাফালাফি করে যখন কাজ হলো তখন দাঁড়িয়ে সে হাঁফাতে লাগলো।লাফালাফি করে কাজ নাই আমি ত আর তালগাছ না যে আমার হাত এত উঁচু তে যাবে এর জন্য অন্য ব্যবস্থা করতে হবে।
কিন্তু কি ব্যবস্থা?
গালে হাত দিয়ে ভাবছি কিভাবে আমিওই উঁচুতে পৌঁছাব। হঠাৎই আমার মাথায় আসে কিভাবে আমার হাতে এখানে পৌঁছাবে চোখ সরিয়ে মাঠে দৃষ্টি রাখে স্নেহা।
এখন একটা চেয়ার দরকার চেয়ারে দাড়িয়ে কাজ শেষ করতে পারব। কিন্তু হায় কপাল আমার মাঠে তো একটা চেয়ার ও নাই এখন কি হবে হন্যে হয়ে চারপাশে চেয়ার খুঁজে যাচ্ছি। চোখ রাখা মালপত্রের গাড়িতে ডেকোরেটরের লোক গুলো চেয়ার নিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে রেখেছে সব। এখন আমি কি করব?
কাজ শেষ না হলে তো আমাকে যেতে দেবে না যে রাক্ষস আমার পেছনে পড়েছে।
রাগে এখন হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে স্নেহার।
ভাবনার বিভোর হয়ে আছে স্নেহা হঠাৎ ওর নজর পড়ে আদ্রর দিকে আজও বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে হাতে ফোন। অনবরত টিপে যাচ্ছে ভুল করে ও মাথা উঁচু করছে না। কি এত করে ফোনে আল্লাই জানে?
হঠাৎ স্নেহা টনক নড়ে বসে আছে কিসে চেয়ারে বলতেই স্নেহার চোখ চিকচিক করে উঠে। লাফিয়ে ওঠে এইতো পেয়ে গেছি এটা আগে আমার চোখে পড়লো না কেন?
আমি এত বোকা না চোখের সামনে একজন চেয়ার পেতে বসে আছে। আর আমি ছাড়া দুনিয়া খুঁজে বেড়াচ্ছি। দৌড়ে আদ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় স্নেহা।
স্নেহা আদ্রর সামনে দাঁড়াতেই মাথা উঁচু করে স্নেহা দিকে তাকায় আদ্র। ওর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ব্রু কুচকায়,,
“তুমি এখানে কি করছ? কাজ কি শেষ?”
আদ্রর কথায় স্নেহা একটা বিরাট বড় হাসির আদ্র হাসি দেখে প্রশ্ন তোক চোখে তাকায় ও হাসির কারণ কি বুঝার চেষ্টা করছে। হঠাৎ ওর মাথার আসা স্নেহা কি কাজ শেষ? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ২৫ মিনিট হয়েছে কেবল এত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ! ইম্পসিবল মিনিমাম এক ঘন্টা লাগবে কাজ সেইসাথে তাহলে স্নেহা,
ওর ভাবনার মাঝে স্নেহা ডাক পড়ে।
“নানা কাজ এখনো শেষ হয় নাই কিন্তু শেষ করার জন্য আপনার এখানে আসা।”
“হোয়াট কাজ শেষ করতে এখানে আসা মানে কি? তোমার কাছ তো ওইখানে তুমি এখানে এসে আবার কিভাবে কাজ শেষ করবে?”
অবাক হয়ে কথাগুলো বলছে আদ্র ওর মাথায় কিছুই ঢুকছেনা স্নেহার কথাবার্তা।
“সেসব আপনার ভাবতে হবেনা আপনি একটু দাঁড়ান তো।”
কথা নেই বার্তা নেই আচমকা স্নেহা ওকে দাঁড়াতে বলাতে আদ্র হা হয়ে যায়।
“হোয়াট, আর ইউ ম্যাড।
আমি দাঁড়াবো কেন?”
“আরে দাঁড়ান না একটু আপনি না দাঁড়ালে তো আমার কাজ শেষ হবে না।”
“আমার দাড়ানোর সাথে তোমার কাজের কী সম্পর্ক? যাও নিজের কাজ করো নাকি আমাকে দিয়ে আবার কিছু করাতে চাইছে। ভুলেও সেসব ভেবে না। আমি তোমাকে বিন্দুমাত্র হেল্প করব না।”
“অফ এত কথা বলেন কেন আপনি আসলে একটা বাঁচাল!আমি কি আপনাকে একবারও বলেছি আপনি আমাকে হেল্প করুন। সেটা তো বলি নাই তাহলে অযথা এত কথা বলছেন কেন? যা বলছি তাই একটু করেন না। একটু দাঁড়ালে তো আপনার পা ক্ষয় পড়ে যাবে না।”
উত্তেজনা স্নেহা কি বলছে নিজেও জানেনা।নিজের মত কথা বলে যাচ্ছে এদিকে আদ্র স্নেহার কথা শুনে রাগে ফায়ার হয়ে গেছে। রাগে ওর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে রক্ত লাল চোখ দিয়ে স্নেহার কথাগুলো গিলছে দাঁতে দাঁত চেপে। আর মন চাইছে এখন স্নেহাকে এক আছাড় দিতে।
“তুমি আমাকে বাঁচাল বললে, তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। এত সাহস তুমি…
কথা শেষ করতে পারল না স্নেহা বলে ওঠে,
“পরে আমাকে বইকেন। কিন্তু এখন আমার কাজ শেষ করতে দেন। আর যদি বেশি বাড়াবাড়ি করেন না তাহলে কিন্তু কাজ না করে চলে যাব।”
স্নেহার কথায় শকের উপর শক খাচ্ছে আদ্র কিছুক্ষণ আগেও তো ভয়ে কাপা কাপি করছিল হঠাৎ এত সাহস বেড়ে গেল কিভাবে। আদ্র রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায় স্নেহাকে কিছু বলার জন্য…
এদিকে স্নেহা আদ্রকে চেয়ার ছেড়ে উঠে দেখেই খুশি হয়ে যায়। আদ্র ওঠে কয় পা এগোতে স্নেহা দৌড়ে চেয়ার নিয়ে হাটা শুরু করে। আর পিছন দিকে একজন হা করে ওর জাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। কি হলো সবার মাথার উপর দিয়ে গেল?
আদ্র স্নেহার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।স্নেহা সোজা স্টেজের উপরে উঠে চেয়ার নিয়ে রেখে। চেয়ারে উঠে পরে তারপর কাজ করতে লাগে।আদ্র সে দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণে বুঝলো স্নেহা কেন দাঁড়াতে বলেছিল।
কিছু বলার জন্য এগিয়ে যেতে চাইছিল কিন্তু কেন জানি যেতে পারল না। দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্নেহার কাজ দেখতে লাগলো…
স্নেহা নিজের শান্তি মত কাজ করছে।কাজ শেষ করে এখন কিনারে পর্দাগুলো আর ফুল দিয়ে মালার মত কেটে কেটে লাগানো হয়েছে তার মাঝে ফুল দেওয়া হয়েছে। সেগুলো নামাতে হবে।
স্নেহা চেয়ার নিয়ে স্টেজের কিনারে নিয়ে রাখে।
তারপর আস্তে আস্তে সেটার উপরে উঠে দাঁড়ায় হাত দিয়ে উপরের ধরে পর্দা খুলতে লাগে।
সেখান থেকে একটা সূর্যমুখী ফুল পায় হলুদ সূর্যমুখী ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। কিন্তু আগে যে গানটা ফুল গোলাপ বেশি ছিল সূর্যমুখী ফুল ছিল না এইটা কোথায় থেকে আসলো। যেখান থেকে আসুক ফুলটা একদম তাজা রয়েছে।
খুলতে গিয়ে সব ফুল ছিঁড়ে ফেলেছে কিন্তু এই ফুলটা ছিরলো না খুব সাবধানে খুলতে লাগলো।
অবশেষে সাবধানে খুলতে পারল। ফুলটা খুলতে পেরে একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিল স্নেহা।
নিজের ড্রেসের সাথে ফুলটা মিলে গেছে। স্নেহা আজকে হলুদ রঙের ড্রেস পরেছে।
ফুলটা নিচে ছুড়ে মারল স্টেজ এর মাঝে পড়ল ফুলটা। এই সবে কাজ শেষ করে নেমে ঐটা নিয়া যাবে।তারপর কাজ করতে লাগল পর্দা খুলতে গিয়ে পড়ল বিপদে গিট্টু পড়েছে কঠিনভাবে খোলাই যাচ্ছে না। এদিকে স্নেহা খুলতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। আর নড়ছে এমনিতেই একদম কর্নারে চেয়ার রেখে দাঁড়িয়ে কাজ করছিল সে চেয়ারটা আস্তে আস্তে নিচে পড়ে যেতে নেই। পরে যদি নিলে স্নেহার নড়ে ওঠে ভয়ে আর আত্মা কেঁপে ওঠে।
যে পাশে হাত দিয়ে পর্দা খুলে সেই বাঁশ দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। নিচে চেয়ারটা এক পা দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করছে। কিন্তু চেয়ার পড়ে যাবে যাবে। পড়ে গেলে আমি নিচে নামাবো কিভাবে?
অজানা ভয়ে স্নেহা কাঁপতে থাকে।
দুই হাত ব্যথা হয়ে গেছে শক্ত করে ধরে রাখতে রাখতে এদিকে চেয়ারটাও পড়ে গেছে। নিচে তাকিয়ে ভয়ে আঁতকে ওঠে,,,
কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছে অসহায় ভাবে আবার চোখ বন্ধ করে নিয়েছে ভয়ে।
আদ্র স্নেহার এই অবস্থা দেখে ও নিজেও ভয় পেয়ে যায়। কি করবে বুঝতে পারছে না হা করে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই ছুটতে লাগে ছুটে সিড়ি বেয়ে স্টেজে উঠে দাঁড়ায়।স্নেহার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওকে ধরবে । তার আগে কেউ একজন চেয়ার নিচে থেকে ওঠিয়ে ধরে।
স্নেহা ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে হঠাৎ কারও কথায় চোখ মেলে তাকায়,
“স্নেহা তাড়াতাড়ি চেয়ারে পা রাখো।”
কথাটা শুনে স্নেহা নিচে দেখে রাহাত। তাকে দেখে স্নেহা একটু ভয় মুক্তা হয়। রাহাত চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছে। স্নেহাকে চেয়ারে পা দিয়ে নামতে বলছে।
স্নেহা নিজেকে স্বাভাবিক করতে থাকে ভয়ে চেয়ারে পা দিতে পারছে না।
“কি হলো তাড়াতাড়ি কর?”
“আমার ভয় করছে খুব।”
“মনে হচ্ছে পড়ে যাব নিচে।”
“পড়বে না। আমি তোমার চেয়ার ধরে রেখেছি। তুমি চেয়ারে পা দিয়ে নিচে আস।”
“আচ্ছা চোখ বন্ধ করে নিচে আসো। আমিও উপরে আসছি তোমাকে ধরে নামাই।”
স্নেহ ওইভাবেই ঝুলে থাকে সাথে চোখ বন্ধ করে সত্যি ওর খুব ভয় করছে।
রাহাত চেয়ার ওইখানে রেখে উপরে আসতে নেয়।
আদ্র ওদের কথোপকথন সবি শুনেছে। ও কি যেন ভেবে স্নেহার কাছে যায়। স্নেহা চোখ বন্ধ করে আছে। কিছু না ভেবেই স্নেহা কোমর ধরে ওকে নিচে নামায়। স্নেহা তখনও চোখ করেই ছিলো। স্নেহা হঠাৎ কোমরে কারো ছোঁয়া পেয়ে অবাক এর চরম সীমায় পৌছে যায়।
এ ভাবে ওকে নামাবে ও কল্পনা করে নাই। নিচে পা রাখতেই ভয় কমে আসে।
আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় স্নেহা।
রাহাত তাড়াতাড়ি করে উপরে এসে দেখে স্নেহা নিচে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ এখনো বন্ধ ও স্নেহার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেও নামলো কিভাবে?
এগিয়ে আসতেই স্নেহা চোখ মেলে তাকায়।
“থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া। আপনি আমাকে এত বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচালেন। আপনি না থাকলে আমার কি হত?”
“আমি কখন তোমাকে বাঁচালাম তুমি তো নিজেই নেমে এলে।”
“আমি নেমে এলাম মানে আপনি তো আমাকে নামালেন।”
“আমি কিন্তু কখন আমি তো এইমাত্র উপরে উঠে দেখলাম তুমি নেমে গেছো।”
“আপনি আমাকে না আমার নাই।”
“না তো আমি নামালে কি আমি তোমায় বলতাম তুমি একাই নামছো।”
“তাহলে আমাকে নামালো কে?”
বিরবির করে কথাটা বলল…
এখানে তো আর কেউ নাই। মাঠে দিকে তাকাল আদ্র সেই আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। হাতে ফোন কানে ইয়ারফোন। সে তো আর আমাকে নামাবে না তাহলে কে আমাকে হেল্প করলো।
.
প্রথম ক্লাস করে অন্তরা স্নেহার খোঁজে ক্লাস থেকে বের হয়। ক্লাসের জন্য বেরোতে পারেনি তখন। ক্লাস থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে।
হঠাৎ সামনে অসভ্য হৃদয়ের সাথে দেখা হয়ে যায় অন্তরার। সে অন্তরাকে দেখেই সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর একটা পর একটা হাসির দেয়।
“আরে আপনি যে। সকাল থেকে আপনাকে খুঁজছি জানেন। অবশেষে পেয়ে গেলাম।তা কেমন আছেন ম্যাডাম”
“আপনি এখানে? আর আমাকে খুঁজছেনই বা কেন?”
“সেতো অনেক কারণ এই খুঁজছি। তা বললে না তো কেমন আছো?”
“আপনি আমাকে তুমি করে বলছেন কেন?”
“আসলে আপনিটা না কেমন জানি পরপর লাগে তাই ভাবলাম এখন থেকে তোমাকে তুমি করে বলবো।”
“পরপর আপন কি সব বলছেন? দেখুন আপনি আমাকে আর একটু ডিস্টার্ব করবেন না আর আজকে না শুধু কোনদিন করবে না। কালকে অনেক জ্বালিয়েছেন আমাকে।”
“কি বললে আমি তোমাকে জালিয়েছি কত সুন্দর একটা সময় গেল কাল। আর তুমি বলছ আমি তোমাকে জালিয়েছি।”
বলে মুখ কালো কারলো,
আমি তার কথা বলার ধরণ দেখে হতবাক এমনভাবে বলছে যেন আমরা কত জনমের পরিচিত।
“অসভ্যের মত কথা বলবেন না। আপনাকে আমার কি করতে মন চাইছে জানেন।”
“না তো কি করতে মন চাইছে?”
“আপনাকে আমার…
কথার মাঝে একটা মাঝে থামিয়ে দেয় হৃদয়।
“ওয়েট তোমার আবার ওই সব কিছু করতে মন চাইতেছে না তো। আমার কিন্তু লজ্জা লাগছে।”
বলেই লজ্জা পাওয়ার ভান করল।
“মানে কি সব করতে মন চাইবো। লজ্জায় বা কেন পাবেন? বুঝতে পারছি সবার সামনে একটা মেয়ের কাছে থেকে…..
“বলোনা তো আমার লজ্জা করে। তুমি সবার সামনে কেন আড়ালেও তো তো করতে পারো। সবার সামনে চুমু খাবে।”
চুমু খাওয়ার কথা শুনে অন্তরার চোখ মার্বেলের মতো বড় বড় হয়ে গেছে। কত বড় লুচ্চা হলে এই কথাটা বলতে পারে।
আরে এদিকে হৃদয় লাজুক মুখ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
“লুইচ্চা ছেলে একটা। তুই জীবনে আমার সামনে আসবে না। আসিস তো তোর গাল লাল করে দেব থাপড়াইয়া শয়তান একটা।”
বলে রাগে গজগজ করতে করতে হৃদয় কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায়।
অন্তরা বিড়বিড় করে হৃদয়কে বকতে বকতে স্নেহাকে খুঁজতে লাগে। হাঁটতে হাঁটতে কারো সাথে ধাক্কা খায়। এমনিতে রেগেছিল তারপর ধাক্কা খেয়ে আরো রেগে যায়।
“অসভ্য ইতর হনুমান বাঁদর ছেলে দেখে চলতে পারিস না। মেয়েদের দেখলেই ধাক্কা দিতে মন চায় তাই না। লুচ্চা ছেলে একটা।”
একদোমেই কথাগুলো বলে অন্তরা ভয় পেয়ে যায়। কারণ ওর দিকে আগুন চোখে তাকিয়ে আছে আশিক। চোখ দিয়ে মনে হয় ভষ্স করে দেবে।
অন্তরা তাকে দেখে একটা বড় ঢোক গিলে।
একটা শুকনা হাসি এনে মুখে। দ্রুত পায়ে চলে যায় সেখান থেকে। আশিক অর দিকে রেগে তাকিয়ে আছে। অন্তরা আশিক কে খুব ভয় পায় সেই দিন এই আশিক শয়তান তাকে দিয়ে রেগিং করা ছিল। সেই থেকে মনে মনে ভেবে রেখেছে এইটা কে কখনো সুযোগ পেলে ইচ্ছামত প্রতিশোধ নেবে।
চলবে♥️
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ১৪
“কিরে এখনই ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছিস কেন এখনো শেষ হয় নাই। আর একটা ক্লাস আছে।”
“আজকের আমি ক্লাস করবো না আর।”
“মানে ক্লাস করবে না কেন ? প্রথম দুইটা ক্লাসটাও তো করতে পারলি না একটা ক্লাস করলি। আর একটা গ্লাসে আছে এটাও করবি না?”
“না সময় নাই অলরেডি 2 টা বাজে। সবগুলো ক্লাস করতে করতে তিনটা বেজে যাবে।”
“তো সেটা কি তুই ও জানিস। আমিও জানি। আজকে নতুন না কি। বাসায় কোনো সমস্যা হয়েছে আঙ্কেল ঠিক আছে তো।”
“তেমন কিছু না তোকে বলছিলাম না একটা টিউশনি যোগাড় করেছি আজকে সেখানে যেতে হবে।”
“তো তাহলে কি প্রতিদিন এক ক্লাস বাদ দিয়ে চলে যাবি।”
“ধুর না।ক্লাস করেই সেখানে যাব। কিন্তু আজকে তো প্রথম বাসায় গিয়ে রুনা আপুর সাথে নিতে হবে।প্রথম দিন কিছু চিনি না তো। তাই আমার সাথে আজকে যাবে আপু। আর কাল থেকে ক্লাস সবগুলো করেই ভার্সিটিতে থেকেই সেখানে চলে যাব।”
“ও আচ্ছা তাহলে চল। আমি চলে যাই আমার একা ভালো লাগেনা।”
“না তোর যাওয়া হবেনা কি পড়ায় নোটিশ করে রাখিস। কাল তাহলে আমি নিয়ে নেব দুজনে চলে গেলে তো পড়ার ক্ষতি হবে।”
“কিন্তু আমার থেকে ভালো লাগেনা।”
“ভালো লাগবে এক ক্লাসই ত করে আয় আমি চলে যাই। আমার দেরি হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা যা।”
মন খারাপ করে কথাটা বলল অন্তরা স্নেহা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে থেকে বেরিয়ে এলো।
স্নেহার হাতে সেই হলুদ সূর্যমুখী ফুল টা। সেইটা হাতে করে সিড়ি দিয়ে নামছে দ্রুত পায়ে।
ফুলটা দেখতে দেখতে সিড়ি দিয়ে নামছে। হঠাৎ কি মনে করে যেন ফলটা কানের কাছে নিয়ে গুজলো। অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠল। নিজেকে একবার আয়নায় দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু এখানে আয়না কোথায় পাবো। ব্যর্থ হয়ে আয়না দেখার কথা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি যেতে লাগলো। ওড়না দিয়ে ভালো করে মাথা পেচিয়ে কান ঢেকে নিলো যাতে কেউ কানে ফুল আছে দেখতে না পারে।
শেষে সিড়ি করে নিচে নামতে একজনের তীক্ষ্ম দৃষ্টি চোখে পড়লো। তাকে দেখে খানিকটা চমকালাম। আধাঘন্টা আগে আমি এভাবে রেখে গিয়েছিলাম তাকে সে আর কেউ নয় আদ্র।কাজ শেষ করে উপরে যাওয়ার সময় তখনো সে এই সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়েছিল কানে ইয়ারফোন হাতে ফোন নিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এখনো সেই ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।
আমি আর নিচে সিড়িতে নামতে পারলাম না সেখানে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকালাম। এনাকে দেখলে বুকের ভেতরটা কেমন জানি করে ওঠে।তাও সাহস করে চোখ নামিয়ে চলে যেতে নিলাম কিন্তু যেতে পারলাম না মনে আমাকে টেনে ধরে রেখেছে।
পেছনে তাকিয়ে দেখি আদ্র আমার হাত ধরে আছে। আমি তাকাতেই হাত ছেড়ে দিল।
“তোমার সাথে কিছু কথা আছে।আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে কোথাও যাবেনা।”
অবাক চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। অনেকটা শান্ত ভাবে কথা বলছে আর এর আগে কখনো এমন শান্তভাবে কথা বলতে দেখনি। সব সময় রেগে গিয়ে কথা বলেছে আমার সাথে । আজকে চোখে-মুখে এর রাগেও দেখছি না। কি বলবে ভাবছি? আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি। যা বলবে শুনে চুপচাপ চলে যাব।মাঝে মাঝে এই আদ্রর মাথা ফাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে সব সময় আমাকে ঝামেলায় ফেলে। কিন্তু আমি কিছু করতে পারবোনা আমি খুব ভালো করে জানি তাই চুপচাপ থাকো।
চুপ করে তার কথা শোনার জন্য আছি।
“কালকের অনুষ্ঠান আসো নাই কেন?”
মাথা নিচু করে ছিলাম আদ্রর কথায় মাথা উচু করে তার মুখের দিকে তাকালাম। অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে এ কথা জিজ্ঞেস করার জন্য। কিছু বলছি না চুপ করে আছি কিছুক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর আদ্র আবার বলে উঠলো,
“তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে বলি নাই।”
এমন ভাবে কথা বলছে মনে হয়নি আমার গার্জেন। কথা বলার ধরন দেখেই আমার রাগ উঠে গেল। চোখমুখ শক্ত করে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“আমার ইচ্ছায় হয় নাম আমি আসি নাই। সে কৈফিয়ত আপনাকে দিতে বাধ্য নই।”
কিছুটা রেগে কথাটা বলল স্নেহা।
স্নেহের কথার ধরন দেখে আরো ফুস করে উঠলো,
“তুমি আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছো ইউ নো হোয়াট আমি কি করতে পারি তোমার ধারণা আছে?”
“দেখুন সব সময় ভয় দেখাবেন না। আপনি সেই প্রথম দিন থেকে আমার পেছনে পড়ে আছেন অনেক জ্বালিয়েছেন আমাকে। এবার দয়া করে ছাড়ুন আমি কেন আসি নাই সেই কথা আমাকে কেন বলব বলুন তো। আমি যা বলার তা স্যার কে বলেছি তার বিনিময় আপনারা আমাকে শাস্তি দিয়েছেন আর এখন সেসব নিয়ে মাথা ঘামানো তাই ভালো।”
“তুমি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছ স্নেহা আমি তোমাকে ভালো কথা কথা জিজ্ঞেস করছি।”
“সেটাইতো বুঝতে পারতাছিনা হঠাৎ এত ভাল করে কথা বলছেন।”
“আমার ইচ্ছে হয়েছে আমি ভালো করে বলছি। তোমার কোন সমস্যা আছে।”
“না সমস্যা নেই আপনার মুখে ভাল কথা আসবে সেটা আমি কখনো ভাবি নাই। আচ্ছা আমি আসছি।”
বলে স্নেহা এগিয়ে যায় পেছন থেকে আদ্র আবার বলে ওঠে,
“কোথায় যাচ্ছ ক্লাস এখনো শেষ হয় নাই।”
“জানি শেষ হয় নাই।”
“জানা যেহেতু তাহলে যাচ্ছো কোথায়?”
“সেই কৈফিয়ত ও কি আপনাকে দিতে হবে।”
বলার আর এক মুহূর্ত ও দাঁড়াল না স্নেহা সোজা হেঁটে গেল মাঠ দিয়ে।
আদ্রর ওর যাওয়া দিকে চোখ মুখ শক্ত করে তাকিয়ে আছে।
.
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আমার সাথে দেখা করে এলাম হালকা কিছু খাবার খেয়ে। রুনা আপু সাথে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।কলেজের সামনে যেতে হলো আমি কলেজ থেকে বাম দিকে আছে কিন্তু টিউশনি ডানদিকে।ভালোই হলো কলেজ থেকে আসে তাহলে কলেজ থেকে আধা ঘন্টার মত লাগলো সেই বাসায় যেতে।আপু গিয়ে কলিং বেল চাপ দিয়ে দুই মিনিট পর একটা মহিলা হাসি মুখ করে দরজা খুলে দিল। আপুর সমবয়সী হবে দেখতে খুব সুন্দর মহিলাটা। আপুকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো। তারপর আমি আর আপু ভেতরে গিয়ে সোফায় বসলাম। আপু তার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। তার সাথে পরিচয় জানতে পেলাম এই হল আমার স্টুডেন্টের মা। সে আমাদের বসিয়ে রেখে রান্নাঘর থেকে ছোট লাগালো খাবার-দাবার নিয়ে এলো। হালকা খাবার এনে সামনে দিল।তারপরে পরানের বিষয় নিয়ে কথাবার্তা চললো কিন্তু দুঃখের বিষয় তার ছেলে রা নানুবাড়ি গিয়েছে’ যার জন্য আজকের পড়ানো হবে না কাল থেকে পড়াতে বলল। কিছুক্ষণ তার সাথে কথা বললে মহিলাটিকে ভালই লাগলো।হাসিখুশি একটা মহিলা রায়া আমার কোলে ছিল দুই বান্ধবী মিলে অনেক গল্প করল এক ঘন্টার মতো সেখানে বসে রইলাম তারপর তাদের থেকে বিদায় নিয়ে আমি আর আপু। আপু বাইরে এসে বল তার নাকি একটু মার্কেটে যাওয়া দরকার।
কাছে নাকি একটা মার্কেট আছে সেখানেই যাবে।
আপুকে না করার সাহস আমার নায় তাই আর কিছু বললাম না মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।
আবার আমি পাঁচ মিনিট একটু হেঁটে সামনে একটা বিশাল বড় মার্কেট দেখতে পেলাম বাইরে যেতে দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে আমি হা করে মার্কেটের দিকে তাকিয়ে আছি অনেক বড় মার্কেট।এ ফর প্রেসেরভেশন মার্কেটের ভিতরে ঢুকলাম মানুষের আনাগোনা অনেক। যে যার মত জিনিস কেনাকাটা করছে। আমি শুধু অবাক হয়ে দেখছি। কিছু মহিলা কসমেটিকের দোকানে বসে বসে সাজছে। কেউ মুখে মেকআপ দিচ্ছে আবার কেউ ঠোঁটে লিপস্টিক বা কেউ চুল বাঁধছে। রাখার মত সবকিছু।কেউ কারো দিকে ফিরে ও তাকাচ্ছে না। সবার সামনে এভাবে সাজছে লজ্জা করছে না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আপু সাথে হাটতে লাগলাম। এখানে আসার পর থেকেই শুধু ভার্সিটিতেই গিয়েছে আজকে ফার্স্ট শপিংমল এলাম।আপু কসমেটিকের দোকান পেরিয়ে উপরে উঠলো না শেষে দোকানে গেল সেখানে মনে হয় ছোটোদের জামা দেখা যাচ্ছে তার মানে রায়ার জন্য কিছু কিনবে।
আমি শুধু চারপাশে দেখছি আপু দোকানে গিয়ে রায়ার জন্য শীতের জামা দেখতে লাগলো।
রায়াকে আপু নিজের কোলে নিয়ে পরিয়ে দিচ্ছে ঠিকঠাক লাগেনা। আমি আপুকে রেখেই দোকান ছেড়ে বেরিয়ে পাশের দোকান গুলো দেখতে লাগলাম। কেন জানি খুব দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে আর কখন আসতে পারবে কিনা। দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।
পরপর তিনটা দোকান পেরিয়ে গেছি আমি।আমার তো সেদিকে খেয়াল নেই আমি আমার মতো এগিয়ে যাচ্ছি।
প্রতিটা দোকান দেখছি। হঠাৎ আমার খেয়াল হল আমি ভুল করে ফেলেছি। কত দূর চলে এসেছি কে জানে আমি এখন একটা জুতার দোকানের সামনে। ভেতরে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের জুতা অসংখ্য। কিছু লোক আছে তারা আছে আমি তার পাশে থাকা সেখানে তো সেই দোকান টা রুনা আপু কোথায়।
চারপাশে তাকিয়ে খুঁজছি পাচ্ছি না। এসেছিলাম দক্ষিণ দিকে গেলাম আমি উত্তর দিকে আমার সব তালগোল পাকিয়ে গেছে। কি মুশকিল কি ঝামেলায় পড়লাম?
এখন আপুকে কোথায় খুজে পাব উল্টা দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর আপুকে খুঁজছি। সবার মাঝে আমি এক অচেনা সবাই আমার অপরিচিত। আমার ঘোরাফেরা তাকানোর চালচলন দেখে মনে সবাই বুঝতে পেরেছে যে আমি হারিয়ে গেছি এমন। সবাই কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে যে যার কাছে নিযুক্ত হচ্ছে। বড়সড় একটা ঢোক গিললাম এখন কি হবে?
আপুকে কোথায় খুজে পাব কেন যে তখন পাগলামো করে বেরিয়ে আসতে গেলাম।
এখন আপুকে কোথায় খুজে পাব।
ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে সবাইকে স্ক্যান করছি। একবার আপুকে দেখলেই দৌড়ে চলে যাব।
চোখ বন্ধ করে একটা বড় শ্বাস ফেলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।হঠাৎ একটা মুখে দেখে হাসি ফুটে উঠল জানিনা কেন লোকটা কেন অসম্ভব ঘৃণা করি তবুও তার মুখটা দেখে আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল।
দৌড়ে এলাম এই লোকটার সামনে দাঁড়াতেই। আমাকে দেখে অসম্ভব পরিমানে শক খেলো লোকটা। এখানে আমাকে কল্পনা করেনি হয়তো।
কিন্তু আমি একটু হলে ভয় মুক্ত হলাম কেন জানিনা। তাকে দেখে সাহস পেলাম হারিয়ে যাওয়ার হাত থেকে তো বেচেছি। এই অনেক তাকে অসহ্য লাগে আমার কিন্তু তবুও সে আমার পরিচিত আর কেউ এখানে পরিচিত নয়। তার কাছ থেকে হেল্প নিতে হবে। সে কি আমায় হেল্প করবে। আকাশ-পাতাল ভাবনা ভাবতে থাক সামনে দাঁড়িয়ে।
আদ্র স্নেহাকে দেখি বড় স্বর শক খেয়েছে। ভাবি নাই এখানে আবার স্নেহা কে দেখবে। তারমানে মার্কেটে আসবে বলে স্নেহা তখন ক্লাস সবগুলো না করে চলে এসেছে কিন্তু এভাবে দৌড়ে আসলে ?
“তুমি এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন?”
“আপনাকে আমার সহ্য না হলেও। আজকে আপনাকে দেখে কতটা খুশি হয়েছে জানেন। অফ আর একটু হলে ভয় হার্ট অ্যাটাক করতাম।”
বলে বুকে হাত দিয়ে বড় একটা শ্বাস ফেলল স্নেহা।
আদ্র স্নেহের কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। কিন্তু ওকে সহ্য হয় না এ কথাটা শুনে ওর চোখ মুখ লাল হয়ে গেল।
“কি বললে তুমি আমাকে তুমি সহ্য করতে পারো না। সেই কথাটা আবার তুমি বড় গলায় বলছো তোমার সাহস দেখে আমি হতবাক।”
“দেখুন আমার সাথে ঝগড়া কইরেন না এখন। আমি সত্যি খুব বিপদে পড়ে আপনার কাছে এসেছি।”
“বিপদ আর বিপদ এর কি হয়েছে?”
কপালে ভাঁজ ফেলে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করল কথাটা।
“আমি হারিয়ে গেছি আমাকে একটু সাহায্য করুন আমি কিছুই চিনতে পারছিনা। রুনা আপুকে খুঁজে পাচ্ছিনা কোথায় চলে এলাম।”
স্নেহা এমন কথা শুনে আদ্রর পাশে দাঁড়ানোর ফ্রেন্ডরাও বড় বড় চোখ করে স্নেহার দিকে তাকিয়ে আছে। সেম আদ্র ও এত বড় মেয়ে কিনা হারিয়ে গেছে।এ ই মেয়ে কি পাগল হলো নাকি।
“হোয়াট হারিয়ে গেছে মানে কি পাগল হলে নাকি হারাবে কেন?”
“সত্যি আমি হারিয়ে গেছি। রুনা আপু একটা বাচ্চাদের দোকানে গেছিল আমাকে নিয়ে। আমি মার্কেটে ঘুরে দেখার জন্য তাকে রেখে চলে এসেছি। এখনো তাকে খুঁজে পাচ্ছিনা।”
কাঁদো কাঁদো মুখ করে কথাটা বলল স্নেহা।আর্দ্র সহ ওর সাথে সবাই আমার কথা শুনে হা হা করে হেসে উঠলো। আমি চোখ ছোট করে তাদের হাসি দিকে তাকিয়ে আছি।
“আর ইউ সিরিয়াস তুমি হারিয়ে গেছ এত বড় মেয়ে কিনা হারিয়ে গেছে।”
কথাটা বলে আবার হেসে উঠলো।
স্নেহা ওদের এভাবে হাসার কারণ এ রেগে উঠে । তবুও অনেক কষ্টে রাগ সংযত করে বলে,
“আপনারা হাসছেন কেন? আমার কথা কি আপনাদের বিশ্বাস হচ্ছে না।”
কেউ কিছু বললো না হেসে চলছে।
এবার স্নেহা নিজের রাগ ধরে রাখতে পারেনা।
“আপনারা আসলেই অসভ্য। এই যে ( আদ্রকে দেখিয়ে) আপনাকে আমার পরিচিত মনে হয়েছিল বলে আপনার কাছে এসেছিলাম সাহায্যের জন্য।আপনি যে সাহায্য করার মত লোক না সেইটা আমি ভুলে গিয়েছিলাম। আপনাদের সাহায্য আমার লাগবে না।”
বলে হাঁটতে লাগলো নিজের চুল নিজেরই টেনে ছিড়ে ফেলতাম ইচ্ছে হচ্ছে। কেন যে অসভ্য লোক তার কাছে গেলাম। আমার তো আগেই বোঝা উচিত ছিল উনি আমাকে হেল্প করবে না। উল্টো সবার সামনে আমাকে হাসির পাত্র বানিয়ে দেবে।
নিজের মত বকবক করতে করতে হাটতে লাগল স্নেহা।
“আরে তুই কোথায় যাচ্ছিস?”
“তোরা যা আমি একটু পরে আসছি।”
আদ্র স্নেহার পেছনে যেতে লাগলো। আদ্র স্নেহার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটছে। স্নেহা বকবক করতে করতে হাঁটছে। নিজেকেই নিজে থাপ্পর মারতে ইচ্ছা হচ্ছে। কেন গেলাম কেন গেলাম করতে করতে হঠাৎ রুনা আপুকে পেয়ে গেলাম।
আদ্র স্নেহার কাছাকাছি চলে এসেছে যেই স্নেহা বলে ডাকবে। আমি স্নেহা রুনাকে গিয়ে জাপটে ধরে। আদ্র দুর থেকে সেটা দেখে থেমে যায়। সামনে আর যায়না।
চলবে♥️