#অচেনা_মানুষের_মাঝে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৫
হঠাৎ করেই কলিংবেল বেজে উঠলো। তিথি একটা সার্ভেন্টকে দরজা খুলতে বলল। সামান্তা এক মনে টেবিলে কি জানি আঁকাআঁকি করছে আর কি যেন ভাবছে। তিথির কন্ঠে সামান্তার ভাবনায় ছেদ ঘটলো। তিথি সামান্তাকে উদ্দেশ্য করে বলল “যাহ গোসল করে আয় আর একটু পরেই সব কাজ শেষে খেতে দিবো। সামান্তাও বাধ্য মেয়ের মতো চলে গেল নিজের রুমের দিকে। সিড়ি দিয়ে আনমনেই উঠছিল সে। তার কেন যেন মনে হলো কেউ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সামান্তা চারপাশ পর্যবেক্ষণ করলো। কিন্তু নাহ কাউকে সে দেখতে পেল না। সে আর ঘাটিয়ে চলে গেল রুমের দিকে। লম্বা একটা শাওয়ার নিবে। জ্বরটা একদম কেটে গিয়েছে।
———————–
আয়ান এসে দাড়ালো তিথির সামনে। তিথি মুচকি হেসে বলল “কিরে হাসপাতাল থেকে এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে!”
আয়ান মুখ ফুলিয়ে বলল “কেন ছোট আম্মু আমি এসেছি বলে তুমি খুশি হওনি।”
তিথি বলল “ধুর পাগল ছেলে। তা কেন হবে। কিন্তু সাধারণত তো তুই এত আগে আসিস না।”
আয়ান আলতো হাসলো। আর বলল “সকালে একটা সিরিয়াস অপারেশন ছিল। একটানা অনেকক্ষণ অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম। তাই আজকে ছুটি নিয়েছি। রেস্ট নেওয়ার জন্য। ভালো করছিনা বলো।”
তিথি হেসে আয়ানের গাল টেনে বলল “হুম একদম ঠিক করেছে। তা সেই উনি কখন আসবেন কিছু বলেছেন।”
আয়ান দুষ্টুমি করে বলল “কেন ছোট আম্মু তুমি কি উনিটাকে মিস করছো!”
তিথি মিথ্যা রাগ দেখিয়ে বলল “মার খাবি কিন্তু। এখন যাহ ফ্রেশ হয়ে নে। একটু পর খেতে দিবো।”
আয়ান আচ্ছা বলে চলে গেল। তিথি হাসলো। তখনি কেউ বলে উঠলো “সত্যিই কি মিস করছিলি আমাকে বললে না তো।”
তিথি পিছন ঘুরে বলল “কেন বলবো? বলবোনা।”
রাশেদ বাঁকা হেসে তিথিকে ঘুরিয়ে তিথির মাথায় বেলি ফুলের মালা গুজে দিয়ে বলল “বলতে হবেনা কিছু। যাইহোক ভাইয়ার বন্ধু ও তার ছেলে এসেছে। ওরা আজ কিন্তু এখানেই খাবে।”
তিথি হাসলো আর ছোট করে বলল “আচ্ছা”
রাশেদ ও চলে গেল। তিথি সবাইকে আরো তাড়া দিতে লাগলো।
————–
দুপুরে খাবার টেবিলে মাথা নিচু করে খাবার খাচ্ছে সামান্তা। খাবার টেবিলে আয়ানের বাবা মা, আয়ান, আয়ানের ছোট ভাই আরাফ, রাশেদ আর তিথি বসে আছে।
আজিজ সাহেব মানে আয়ানের বাবার বন্ধু আর তার ছেলে খাবার খেয়ে চলে গেছেন। তিথি রেদওয়ানকে খাইয়ে দিয়েছে।
আজিজ সাহেব সামান্তাকে উদ্দেশ্য করে বলল “সামান্তা আম্মু তুমি কোন ক্লাসে পড়ছিলে।”
সামান্তা মাথা নিচু রেখেই বলল “আঙ্কেল আমি ক্লাস নাইনে উঠেছি এবার।”
আজিজ সাহেব বললেন “এখন থেকে আমাকে বড় আব্বু বলবে ঠিক আছে।”
সামান্তা মুচকি হেসে বলল “ঠিক আছে বড় আব্বু।”
আজিজ সাহেব এবার আয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলল “আয়ান তুমি গিয়ে কালকের মধ্যেই সামান্তাকে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করিয়ে আসবে।”
আয়ান শান্ত কন্ঠে বলল “আচ্ছা আব্বু”
——————–
ধোঁয়া উঠা কফির মগ নিয়ে বারান্দায় বসে আছে আয়ান। বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। সেইদিকেই তার দৃষ্টি আটকে রয়েছে। আরাফ রেদওয়ানকে কোলে নিয়ে হাজির হলো আয়ানের রুমে। রুমে আয়ানকে দেখতে না পেয়ে সে ডাকতে থাকলো আয়ানকে।
আয়ান বারান্দা থেকেই আরাফকে ডাক দিলো। আরাফও হাসিমুখে এগিয়ে গেল। রেদওয়ানকে আয়ানের কোলে দিয়ে আরাফ বলল “ভাইয়া এই ছোট বেবিটা অনেক কিউট তাইনা।”
আয়ান উত্তরে ছোট করে বলল “হুম”
আরাফ বলল “এই বাবুটাকে কিন্তু আমি আমার কাছে রেখে দিবো।
আয়ান বলল “আচ্ছা ঠিক আছে রেখে দিস।”
আরাফ খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। লাফাতে লাফাতে চলে গেল। রেদওয়ান বাচ্চাটা চুপচাপ। চুপ করে বসে আছে আয়ানের কোলে।
———————–
সামান্তা অনেকক্ষণ যাবত খুজতেছে রেদওয়ানকে কিন্তু পাচ্ছে। অস্থির হয়ে পড়েছে সে। আরাফকে এইদিকেই লাফাতে লাফাতে আসতে দেখে সামান্তা আরাফকে ডাক দিলো। আরাফও হাসিমুখে হাজির হলো সামান্তার সামনে। সামান্তা অস্থির কন্ঠে জিঙ্গাসা করলো “বাবু তুমি কি আমার ভাইকে দেখেছ?”
আরাফ বলল “হুম তো আমি তো ওকে ভাইয়ার কাছে দিয়ে এসেছি।”
এমন সময় আরাফের ডাক পড়লো। আরাফকে ডাকছে ওর মা। ও ছুটে গেলে সেইদিকে। সামান্তা আর কিছু বলার সুযোগ পেল না। আশেপাশে তিথি কেও দেখতে পাচ্ছেনা যে একটু বলবে রেদওয়ানকে এনে দিতে। আরাফটাও চলে গেল। সামান্তা উপায় না পেয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো আয়ানের রুমের দিকে। দরজার কাছে এসে দাড়িয়ে রইলো। সেই সময় একটা গম্ভীর কন্ঠ ভেসে এলো সামান্তার পিছন থেকে। সামান্তা পিছন ঘুরতেই আয়ানের মুখটা দেখতে পেল সে। আয়ান কপালে ভাঁজ ফেলে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
সামান্তা মিনমিনিয়ে বলল “আসলে আমি আমার ভাইকে নিতে এসেছিলাম।”
আয়ান গম্ভীর কন্ঠেই বলল “ওহ ওকে আমি কেবলি ছোট আম্মুর কাছে দিয়ে আসলাম।”
সামান্তা “ওহ আচ্ছা” বলেই ছুট লাগাল। সামান্তার এমন কাজে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো আয়ান।
সামান্তা এক ছুটে পৌছাল তার রুমে। বুকে থুতু দিয়ে হাঁপাতে লাগল। কেন যেন লোকটার গম্ভীর কন্ঠে সে ভয় পেয়েছিল। সে বিরবির করতে লাগলো। কিছুক্ষণ বিরবির শেষে রওনা হলো তিথির রুমের দিকে। তখনি তার সামনাসামনি হলো আয়ানের মা আয়েশা বেগম। তার হঠাৎ এমন আগমনে থতমত খেয়ে গেল সামান্তা।
আয়েশা বেগম চোখ ছোট ছোট করে তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। আয়েশা বেগম কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। এতে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো সামান্তা। সামান্তা চলে এলো তিথির রুমে রেদওয়ান খেলছে। তিথি চুল ঠিক করছিল। সামান্তা বলল
“মামুণি আমি তোমার চুল বেঁধে দেই।”
তিথি মুচকি হেসে বসে পরল। সামান্তা খুব যত্ন সহকারে তিথির চুল বেঁধে দিতে থাকলো। আর তিথি বিভিন্ন কথা বলতে লাগলো।
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)