#অচেনা_মানুষের_মাঝে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ৩
সামান্তা একবার হাতের দিকে তাকালো। লোকটি মুচকি হেসে ওকে সামনে নিয়ে যেতে লাগলো। দরজার কাছে যেতেই লোকটি পরপর দুইবার কলিংবেল বাজালেন। কলিংবেল বাজাতে দরজা খুলে গেল আর একটা মহিলার কন্ঠ ভেসে এলো। সামান্তা এবার গোল গোল চোখে সামনের দিকে তাকালো।
দরজার সামনে একটা মহিলা দাড়িয়ে আছে পরনে তার দামি জামাকাপড়। হাতে গলায় ডায়মন্ডের গহনা দেখা যাচ্ছে। মহিলাটি ওই লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলল “রাশেদ তুমি আমার জন্য কি নিয়ে এসেছ!”
সামান্তা এতক্ষণে জানতে পারলো তার সঙ্গে থাকা ভদ্রলোকটির নাম রাশেদ।
রাশেদ মুচকি হেসে সামান্তাকে দেখিয়ে বলল “তিথি তুমি না খুব শখ করেছিলে একটা মেয়ের। এই নেও এখন থেকে সামান্তা তোমার মেয়ে আর রেদওয়ান তোমার ছোট ছেলে।”
সামান্তা কিছু বুঝতে পারছে না শুধু গোল গোল চোখে একবার রাশেদের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার তিথির দিকে তাকাচ্ছে। তিথি এগিয়ে এলো সামান্তার দিকে। সামান্তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুচকি হেসে বলল “মিষ্টি মেয়ে” বলেই হাত ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যেতে লাগলেন। রাশেদ ও রেদওয়ানকে নিয়ে ওদের পিছু পিছু বাড়ির ভেতরে আসতে লাগলো।
সামান্তা এবার সামানের দিকে তাকিয়ে আশপাশটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। বাড়িটা অনেক সাজানোগোছানো ও সুন্দর। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক যত্নে কেউ সাজিয়ে রেখেছে।
তিথি নামক মহিলাটি সামান্তাকে ধরে সোফায় বসিয়ে দিলো। সেও পাশে বসলো। সামান্তা কিছুটা ইতস্ততবোধ করছে। দুইহাত কচলাচ্ছে। তিথি বিষয়টি বুঝতে পেরে সামান্তার ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল “আরে পাগলী মেয়ে এতো ইতস্তত করার কি আছে। ভেবেই নে না আমি তোর আরেক মা।”
তিথির কথায় সামান্তার চোখের কোণায় পানি এসে জমা হলো। তিথি তা খেয়াল করে বলল “আমি কি তোকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম রে মামণি।”
সামান্তা হুট করে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো তিথিকে। আর হুহু করে কেঁদে উঠলো। তিথি পরম স্নেহে সামান্তাকে আগলে নিলো। খানিকক্ষণ পর সামান্তাকে নিজের বুক থেকে তুলে চোখের পানি মুছিয়ে দিলো তারপর বলল “আর কান্না করবি না এটাই শেষ। এখন চল তো হয়ে নিবি। বিকেল হতে চলল দুপুরের খাবার খাবিনা চল ফ্রেশ হয়ে কাপড় পাল্টে নে।”
সামান্তা বলল “কিন্তু আমার তো জামাকাপড় নেই।”
তখনই রাশেদ বলে উঠলো “আমি কিনে নিয়ে এসেছি ওগুলো আছে না। এখন যা তো ওর সঙ্গে খুব ক্ষুধা লেগেছে। একসঙ্গে খাবো।”
সামান্তাও বাধ্য মেয়ের মতো তিথির দেখানো রুমে চলে গেল। রুমটা বেশ বড়। রুমের সঙ্গে লাগানো বারান্দা আছে। সেখান থেকে দক্ষিণের বাতাস এসে ছুয়ে দিচ্ছে বারান্দার পর্দার গুলোকে। দুটো জানালাও আছে। রুমটা পুরোটাই সাদারঙের মধ্যে সাজানো পর্দা থেকে শুরু করে বালিশের কভার অব্দি সাদা। রুমটা বেশ স্নিগ্ধ আর শান্তিপূর্ণ। সামান্তা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছিল তখনই চোখ পরলো বেডের দিকে বেডের মাঝ বরাবর জামাকাপড় রাখা। সামান্তা আর দেড়ি না করে ওয়াশরুমে চলে গেল।
———————–
তিথি রেদওয়ানকে খাওয়াচ্ছিল। তখনই রাশেদ তিথিকে উদ্দেশ্য করে বলল “মেয়ে আর ছেলেকে পছন্দ হয়েছে।”
তিথি মুচকি হাসি দিয়ে বলল “হুম অনেক। আর ওদের দত্তক নেওয়ার সব ব্যবস্থা করেছ। আমি ওদের নিয়ে কোনো কিছু শুনতে চাই না।”
রাশেদ ও ফুস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলল “হুম সব ব্যবস্থা শেষ। তোমার কোনো টেনশন নেই। এখন থেকে ওরা আমাদের সন্তান।”
——————-
সামান্তা গোসল করে সেই জামাটা পড়ে নিলো। তার মোটা ঘন চুলগুলো কোনোমতে মুছে আবার রওনা হলো নিচের সোফার রুমে কারণ ওখানেই রাশেদ তিথি আর রেদওয়ান আছে। সামান্তার রুমটা উপরের তালায়। সামান্তা উপর থেকে নামতে নামতে খেয়াল করলো তিথি খুব যত্ন সহকারে রেদওয়ানকে খাইয়ে দিচ্ছে। এটা দেখে চোখ ভরে এলো তার।
তখনই রাশেদ তাকে বলল “ওহ তুই এসে গিয়েছিস আয় আয় একসঙ্গে খাবো বলে অপেক্ষায় আছি।”
সামান্তা এসে দাড়াতেই রেদওয়ান তিথির কোল থেকে নেমে সামান্তার কাছে চলে গেল।
—————————
খাবার টেবিলে গুটিসুটি মেরে বসে আছে সামান্তা। সামনে নানারকমের খাবার। সামান্তাকে বসে থাকতে দেখে রাশেদ সামান্তার প্লেটটা নিয়ে নিলো। এক লোকমা খাবার তুলে ধরলো। সামান্তা ছলছল নয়নে তাকিয়ে রইলো রাশেদের দিকে। রাশেদ নিজের হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো সামান্তাকে।
———————
রাশেদ কিছু কাজে বাহিরে গেছে। তিথি আর সামান্তা গল্প করছে বাগানের ছাউনির দোলনায় বসে। রেদওয়ান খেলা করছে।
বাগানে সুন্দর সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো। সামান্তা তাকিয়ে আছে খোলা আকাশের দিকে। আকাশের কালোমেঘ ছুটে যাচ্ছে। হালকা মৃদু বাতাস। বর্ষার শুরুর দিককার স্নিগ্ধ বাতাস খারাপ লাগছে না।
একটা সর্ভেন্ট এসে দুই মগ কফি দিয়ে গেল। তিথি একটা মগ তুলে দিলো সামান্তার হাতে। নিজেও অন্য মগটা তুলে নিলো। এই আবহওয়ার সঙ্গে কফি মন্দ না। সামান্তা ঠোঁটে ছোঁয়ালো কফির মগে। চোখ বন্ধ করে তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো। বেলি ফুলের এক মিষ্টি সুগন্ধ ভেসে আসছে সামান্তার নাকে। ইতিমধ্যে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া বৃষ্টির পানির সুগন্ধ উপভোগে ব্যস্ত সামান্তা।
তিথির ফোন বেজে উঠায় সে বসা থেকে উঠে একটু দূরে দাড়িয়ে কথা বলতে থাকলো। সামান্তা খেয়াল করলো সামনের কাঠগোলাপ গাছ থেকে কয়েকটা কাঠগোলাপ গাছের নিচে ছড়িয়ে আছে। বৃষ্টির ছোট ছোট বিন্দু তাতে পড়ায় খুব সুন্দর লাগছে। সামান্তার খুব ইচ্ছে হলো ছুটে গিয়ে একটা কাঠগোলাপ কানের পিঠে গুজে নিতে।
সামান্তা তার সেই ইচ্ছাটা দমাতে পারলো না। ছুটে গেল কাঠগোলাপ গাছে নিচে। হাতে তুলে নিলো সাদারঙের একটা কাঠগোলাপ। হাসিমুখে কানের পিঠে গুজে দিলো। বৃষ্টির ফোঁটা আলতো হাতে স্পর্শ করতে লাগলো তাকে।
সামান্তা তার দুই হাত মেলে ধরলো। চোখ বন্ধ করে মুখ রাখলো আকাশের দিকে। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো তার মুখে মুক্তার ন্যায় চিকচিক করতে লাগলো। সামান্তা প্রাণ ভরে পরপর কয়েকটা নিশ্বাস নিলো। এই নিশ্বাসে নেই কোথায় দীর্ঘশ্বাস। সবটা এখন সে তার সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিয়েছে। যা হবে দেখা যাবে। এখন যে দিনটা পাচ্ছে সেটা তো আর ফিরে পাবে না। এইটুকু না হয় উপভোগ করলো ক্ষতি কি তাতে। বরং লাভই সে একটা সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে পারছে। পাশের বেলি ফুলের সুগন্ধ বার বার নাকে ঠেকছে। সময় নষ্ট না করে সে বেলি ফুলের গাছের কাছে গিয়ে কিছু সময় অতিবাহিত করলো। বেশ ভালোই লাগছে। মনের চাপা পাথর অনেকটাই কমে গিয়েছে মনের ভাবটা রাশেদ আর তিথিকে প্রকাশ করে। এক অজানা শান্তি লাগছে।
সারা বাগান ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো সে। বেশ ভালো লাগা জন্মালো বাগানটার প্রতি। প্রকৃতির এক ভিন্নরূপ দেখা যায় বৃষ্টির সময়। আলতো হাতে স্পর্শ করতে লাগলো গাছের পাতাগুলো। বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির পানি যখন স্পর্শ করছে মনটা ভরে উঠছে। অনেকে বলে বৃষ্টি নাকি মন খারাপ নিয়ে আসে। কিন্তু সামান্তার কাছে তা মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে তার মন ভালো করার জন্যই এই বৃষ্টির আগমন। বৃষ্টির সময়ই দেখা হয়েছিল রাশেদের সঙ্গে তাই তো সে এই জায়গায়।
#চলবে
( আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)