অঙ্গীকার (১২তম পর্ব)
লেখা – শারমিন মিশু
আফিয়া মারা গেছে আজ প্রায় এক মাস হতে চললো। ও মারা যাবার পর থেকে শাফী প্রায় রোবট হয়ে গেছে। কাজের পর বাকী সময়টা রুমে থাকে। না কারো সাথে ঠিক করে কথা বলে না খাওয়া দাওয়ার ঠিক আছে।
বুশরাকে সেদিন ওর নানা নানু এসে নিয়ে গেছে। সালেহা দিতে চায়নি এটা ভেবে যে ওকে নিয়ে গেলে শাফীটা বড্ড একা হয়ে যাবে। অন্তত বুশরার মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও ও ভালো থাকার চেষ্টা করবে।
কিন্তু উনার আপত্তিতে শাফী বাঁধ সাধলো।
বললো যে,,, না মা,,, আমার ভালো থাকার জন্য আমি বুশরাকে আমার কাছে ধরে রাখতে পারিনা। ওখানে গেলে ওর পরিপূর্ণ আদর যত্ন পাবে। ওর ভালো থাকাটাই আমার বড্ড বেশি দরকার। আমার কি হবে আমি ঠিক আছি আর বুশরা ভালো থাকলেই আমার ভালো থাকা।
অবশ্য আটমাসের একটা বাচ্ছা কিই বা বুঝবে মা হারানোর যন্ত্রনা।
আফিয়া মারা যাওয়ার পরে বেশ কয়দিন প্রচন্ড জ্বালাতো সারাদিন কান্নাকাটি করতো খেতে চাইতোনা। এখন ঠিক হয়ে গেছে। ওকে এখন যে যেদিকে টানবে সেদিকেই যাবে। আফিয়া থাকতেই ওকে গরুর দুধ,, ভাতসহ অন্যান্য খাবার একটু একটু করে খাওয়ার অভ্যেস করে ফেলেছিলো। আফিয়া সবসময় বলতো আমি চলে গেলে ওকে তো এসবই খেতে হবে আমি থাকতেই অভ্যেসটা করে দিয়ে গেলে ভালো হবে। সেই জন্য বুশরার খাবার নিয়েও কাউকে অযথা টেনশন করতে হয়না কাউকে।
সবকিছু ভেবেই শাফী বুশরাকে সেদিন ওই বাড়ীতে দিয়ে দিয়েছে।
বুশরাকে নিয়ে যাওয়ার কয়দিন পর থেকে সালেহা ছেলেকে রাদিয়াকে বিয়ে করে নিয়ে আসার জন্য বেশ চাপ দিতে লাগলো।
শাফীর এককথা ও এখন এসবে জড়াতে পারবেনা। যতই আফিয়াকে কথা দিক না এটা যে অনেক কঠিন। আফিয়ার জায়গায় অন্য কাউকে কি করে আনবে ও।
তারপর ও সালেহা শাফী যতক্ষণ বাসায় থাকবে ততক্ষণ এক কথা বলতে থাকে। মেয়েটা বেঁচে থাকাকালে আমাকে কত করে বলে গেছে,, আম্মা আপনারা উনার সাথে রাদিয়ার বিয়েটা দিয়েন। বুশরার জন্য এখন একজন মায়ের দরকার। যে করেই হোক আপনারা উনাকে রাজি করাইয়েন।
আর তুই আমাদের কথা তো শুনছিস না মারা যাওয়া মানুষটার কাছে করা অঙ্গীকারটা পূরণ করছিস না এটা কি ঠিক করছিস শাফী?
কথার জবাবে শাফী বলে মা বিরক্ত করোনা আমার ভালো লাগেনা এসব। আমাকে কিছুদিন একটু নিজের মতো থাকতে দাও। আমি পরে তোমাদের আমার কথা জানিয়ে দিবো।
সালেহা ও চুপচাপ বেরিয়ে যায়।
এদিকে বুশরার নানাবাড়ীতে দিন কাটছে বেশ হেসে খেলে। সবার মনে আফিয়াকে হারানোর কষ্ট থাকলেও আফিয়ার রেখে যাওয়া স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বুশরাকে সবাই হাসিখুশি ভাবেই পালন করছেন।
রাদিয়া সবসময় ওকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকে। বুশরার খাওয়া, গোসল করানো সব ওই করে। এমনকি রাতের বেলাও ওকে নিজের কাছে রাখে। বুশরার জন্য রাদিয়া টিউশনি গুলো ও ছেড়ে দিয়েছে।
সেদিন রাদিয়ার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব আসে জাওয়াদ সাহেব এ কথা মুনিরাকে জানাতেই উনি নিষেধ করে দেয়। যে ওর বিয়ে আমি ঠিক করে রেখেছি।
জাওয়াদ সাহেব জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই যখন মুনিরা শাফীর কথা বলে তখন উনি চিন্তিত মুখে বলেন,,, রাদি কি রাজি হবে?
-কেন হবেনা? নিজের বোনের সাজানো গোছানো সংসার। শাফীর মতো একজন স্বামী পাওয়া আজকালের দুনিয়ায় অনেক কঠিন। এরকম ভদ্র সভ্য ছেলে আর দুজন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর বুশরাটা তো আছেই । মা ছাড়া এত ছোট বাচ্ছাটা কি করে বেড়ে উঠবে। আজ না হোক কাল শাফী তো বিয়ে করবেই। বাহিরে থেকে একটা মেয়ে আসলে সে কি বুশরার তেমন যত্ন নিবে। সেই দিক থেকে রাদি হলে খারাপ কি। ও তো বুশরাকে অনেক ভালোবাসে আর যত্ন ও করে। আর আফিয়াটাও খুব করে চাইতো রাদি যেনো ওর ফেলে যাওয়া সংসারের হাল ধরেছিলেন । আমি রাদিকে বুঝাবো ও ঠিক রাজি হবে মৃত বোনের চাওয়াটা পূরন করতে।
-জাওয়াদ সাহেব বললেন ওদের বাড়িতে রাজী হবেতো?
-হুম আফিয়া সবাইকে বলে গেছে। উনারা সবাই রাজী আছে শাফী ছাড়া। ওর মতিগতি কেউ বুঝতে পারছেনা। ওর কাছ থেকে সম্মতি পেলেই উনারা আসবে।
-তুমি কি বলছো আমার মাথায় যাচ্ছেনা। আমার মনে হয়না রাদি রাজি হবে।
-দেখিনা চেষ্টা করে। ও রাজি না হলে তো জোর করা যাবেনা।
-হুম দেখো এ বলে জাওয়াদ সাহেব বেরিয়ে গেলেন।
একদিন দুপুরের পরে রাদিয়া বুশরাকে কাঁধে নিয়ে বারান্দায় হেটে হেটে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছিলো। মুনিরা এসে বললো,,,, ঘুমিয়েছে??
-আস্তে কথা বলো মা।
-আচ্ছা ওকে শুইয়ে দিয়ে একটু এদিকে আয়।
-কিছু বলবে??
-হুম
-রাদিয়া বুশরাকে শুইয়ে দিয়ে নারিকেল তেলের বোতল আর চিরুনী নিয়ে এসে বললো,, মা একটু তেল লাগিয়ে দাওনা!!
-মুনিরা বিরস মুখে বললো,,,আয় আমার সামনে বস।
মাথায় তেল লাগাতে লাগাতে বললো,,, তোকে কিছু কথা বলার ছিলো?
-হুম বলোনা।
-আসলে তুই কি ভেবে কথাটা নিবি তাই বলতে সংকোচ হচ্ছে। আর তুই মেনেই বা নিবি কিনা?
-আহা মা!! আগে কথাটা তো বলবে। না বললে মেনে নেয়া না নেয়ার কথাটা কিভাবে বলি।
-হুম। আসলে বুশরাকে নিয়েই কথাটা।
-বুশরাকে নিয়ে আবার কিসের কথা?
-দেখ বুশরা এখন হয়তো কয়দিনের জন্য আমাদের কাছে আছে। এরপর ওদের মেয়ে ওরা নিয়ে যাবে।
-নিয়ে যাবে মানে কি মা ? বুশরা শুধু ওদের সন্তান কিভাবে হয়? ও আমার বোনের রেখে যাওয়া একমাত্র স্মৃতিচিহ্ন। শুধু ওদের অধিকার কেনো আমাদের অধিকার কেন থাকবেনা।
-আফিয়া মারা গেছে। কিন্তু শাফী এখনো আছে। অধিকারটা এখন আমাদের থেকে ওরই বেশি। যদি আমাদের অধিকারটা আদায় করতে হয় তাহলে ভিন্ন পথ দেখতে হবে।
-কি বলছো মা?
-আফিয়া খুব করে চাইতো তুই বুশরাকে মায়ের স্নেহে বড় করে তুলবি।
-মা আমি তাইতো করছি। বুশরার ব্যাপারে তো এতটুকু অবহেলা করছিনা।
-আসলে এভাবে কয়দিন। আজ না হয় কাল শাফী হয়তো আবার বিয়ে করবে। তখন তো আর তুই বুশরাকে এভাবে রাখতে পারবিনা।
-মা তুমি আসলে কি বলতে চাইছো??
-শুধু আমি না সবাই চাইছে তুই যদি শাফীকে বিয়ে করিস তো তাহলে…
-রাদিয়ার মাথায় যেনো বাজ পড়লো,,, মা তুমি কি বলছো কি?? মাথা ঠিক আছে তো??
-আমি সব ভেবে বলছি। শাফীর মতো ছেলো আর দুটো হয়না।
-তা আমি জানি মা। কিন্তু এটা কখনোই সম্ভব না।
-এটা আমার কথা নয় আফিয়ার কথা। ও আমাকে সবসময় বলতো,, মা,, রাদিটাকে বলবে আমার সন্তান এবং সংসারটার দায়িত্বটা নিতে। ও খুব পারবে এসব সামলাতে।
-মা এ যাবত যাকে নিজের বড় ভাইয়ের মতো জেনে এসেছি আজ তার সাথে বিয়ে কি করে??
-বড় ভাইয়ের মতো ছিলো কিন্তু বড় ভাইতো না!!!!
-রাদিয়া অর্ধেক আঁচড়ানো মাথাটা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো,, সম্ভব না মা কোনভাবেই সম্ভব না বলে বারান্দা ছেড়ে চলে গেলো।
মুনিরা ওদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে উঠে গেলো। ঘরে গিয়ে ঘুমন্ত বুশরাকে কতক্ষণ জড়িয়ে ধরে শুয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিলো।
রাদিয়া আফিয়ার রুমে গিয়ে দরজা আটকে বিছানায় ধম মেরে বসে রইলো। এ ঘরটাতে আসলে ওর বড়াপুর গায়ের গন্ধ পাওয়া যায় ঘরের প্রতিটা জিনিস ওর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
রাদিয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো,, আপুরে,, এটা কিভাবে সম্ভব বলতো??
তোর সাজানো গুছানো সংসারে আমি কি করে পা রাখবো?
আমি যে পারবোনারে কিছুতেই না?
কেন তুই এভাবে চলে গেলি?
তোর জায়গা আমি কি করে নিবো??
ক্ষমা করে দিস পারবোনা তোর চাওয়া পূরণ করতে।
এরপরের দিনগুলোতে রাদিয়া আগের মতো আর বুশরার প্রতি যত্ন নেয়নি। ও চায়না আর এই মিথ্যা বন্ধনের মায়ায় জড়াতে। যে চলে যাবে তার প্রতি মায়া বাড়িয়ে লাভ কি?
মুনিরা রাদিয়ার এই অবহেলা গুলো দেখে নিরবে চোখের পানি ঝরায়। এই তো গতকাল যখন রাদিয়া ভার্সিটিতে যাচ্ছিলো বুশরা পিছন থেকে ওর বোরখা টেনে ধরে রেখেছিলো,, একবার কোলে নেওয়ার জন্য। মেয়েটা চিৎকার দিয়ে দিয়ে কাঁদছিলো। রাদিয়া পিছন থেকে হাত দিয়ে ওকে সরিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেছিলো। প্রায় এক ঘন্টার মতো কেঁদে কেঁদে ছোট্ট বুশরা ওর নানুর কোলে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুমিয়ে মধ্যেও কিছুক্ষণ পর কেঁদে উঠছিলো।
জাওয়াদ সাহেব মুনিরার পাশে এসে বললো,, কি দরকার ছিলো এসব বলে ওর মন নষ্ট করার জন্য?
-আমি ভেবেছি বুশরার কথা ভেবে হলেও ও রাজি হবে। কিন্তু আমারি ভুল হয়েছে।
একদিন বিকালে রাদিয়া ঘুমিয়ে ছিলো। কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর দরজায় শব্দ হচ্ছে। বুশরা মনে হয় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে বাড়ি দিচ্ছে। বুশরা এখন একটু একটু হাটা শিখেছে। রাদিয়া অনেকক্ষণ পর্যন্ত সহ্য করেছে। এরপরও শব্দ হচ্ছে। রাদিয়া উঠে দরজা খুলে ওকে জোরে ধমক দিলো। কিন্তু বুশরা ধমকের পরোয়া না করে হাত বাড়িয়ে রাদিয়ার কোলে উঠার চেষ্টা করলো৷ রাদিয়া অনেকক্ষণ বৃথা চেষ্টা করে ওকে সরাতে চাইছিলো। কিন্তু না পেরে দুই তিনটা থাপ্পড় দিয়ে সরিয়ে দিতেই বুশরা শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
শাফী ড্রয়িংরুমে বসা ছিলো। ও বুশরাকে দেখতে এসেছিলো আজ। এখন ওর কান্না শুনে দৌড়ে আসলো। এসেই রাদিয়ার এমন ব্যবহার দেখে ও অবাক হয়ে গেলো। মেয়েকে এখানে রেখেছিলো যাতে মেয়েটা ভালো থাকে কোন অযত্ন না হয় কিন্তু…
রাদিয়া শাফীকে দেখেই অনেকটা অবাক হয়ে গেলো। ভাইয়া কখন এলো???
উনার সামনে উনার মেয়েকে আমি….ও স্ট্যাচু হয়ে নিচের দিকে দাড়িয়ে আছে।
শাফী দৃষ্টি নিচের দিকে রেখে এসে কাঁদতে থাকা বুশরাকে কোলে নিয়ে চলে গেলো।
রাদিয়া রুমের দিকে চলে গেলো। মনে মনে বলে,,, দেখেছে ভালোই হয়েছে। নিয়ে যাক ওদের মেয়েকে। ও যতই থাকবে ততই মায়া বাড়বে। শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে লাভ কি? দুদিন পর এমনিতেই তারা নিয়ে যাবে তাদের মেয়েকে।
শাফী মুনিরাকে ডেকে বললো,,, আম্মা আমি বুশরাকে নিয়ে যাচ্ছি।
-নিয়ে যাচ্ছি মানে কি বাবা?? এভাবে হুট করে???
-আসলে আমি ভেবেছিলাম ও এখানে থাকলে ভালো থাকবে কিন্তু আজ নিজের চোখে যা দেখলাম তারপর আর এখানে রাখার প্রশ্নই আসেনা।
-বাবা আসলে…
-থাক আম্মা আমি রাগ করিনি। আপনাদের যদি ওকে দেখার ইচ্ছে হয় গিয়ে দেখে আসবেন না হয় আমাকে ফোন করবেন আমি এসে দেখিয়ে নিয়ে যাবো।
-বাবা এভাবে ওকে নিয়ে যেওনা। আমাদের অনেক কষ্ট হবে। রাদি আসলে কয়দিন থেকে একটু মানসিক যন্ত্রনায় আছে না হলে তো ওই বুশরার দেখাশুনা করে। রাগের মাথায় একটা কাজ করেছে দেখে তুমি রাগ করে ওকে নিয়ে যাবে।
– রাগ নয় আম্মা। আসলে আমি আজ ওকে নিতেই এসেছি। আমার মা বারবার ওকে দেখার কথা বলছে তাই এসেছি আমি। আপনি একটু কষ্ট করে ওর কাপড়চোপড় গুলো রেডি করে দিন বলে শাফী আফিয়ার রুমের দিকে গেলো।
মুনিরা সামিহাকে নিয়ে এসে বুশরার সব গুছাচ্ছিলো রাদিয়া চুপচাপ খাটে বসে দেখছিলো। চোখমুখ ফুলে আছে মনে হয় কাঁদছিলো। মুনিরা মেয়ের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বললো,,, রাদি তুই বললে শাফী বুশরাকে রেখে যাবে। যা না মা আমার ওকে যেতে দিসনা। তুই বললে হয়তো আর নিবেনা।
-থাকনা মা নিয়ে যাক তারা তাদের মেয়েকে। কি দরকার আটকাবার । ওদের মেয়ে ওরা নিয়ে যাবে আমি আটকাবো কেনো। নিয়ে গেলে আমি বেঁচে যাই।
সবার থেকে বলে শাফী বুশরাকে নিয়ে চলে যাবার আগে মুনিরা নাতনিকে বুকে জড়িয়ে অনেকক্ষণ কেঁদেছিলো। জাওয়াদ সাহেবের চোখ দিয়েও পানি পড়ছিলো। রাদিয়া আর রুম থেকে বের হয়নি দরজা আটকে রুমে বসে আছে। বুশরাটার মুখোমুখি হলে ও নিজেকে সামলাতে পারবেনা। চলে যাক যাদের সন্তান তাদের বাড়ি। মিথ্যা অধিকার ফলানোর কোন দরকার নেই কোন দরকার নেই!! আমার মুক্তি হয়ে গেছে আজ থেকে। এসব বাচ্ছাকাচ্ছা সামলানো আমার দ্বারা সম্ভব না………
চলবে……..
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.