হ্যাকারের_লুকোচুরি . সিজন_৩ . পর্ব ৮

0
738

হ্যাকারের_লুকোচুরি
.
সিজন_৩
.
পর্ব ৮
.
.- This is your team leader.
সম্পূর্ণ আলোয় ফুটে ওঠা চেহারা দেখে রাফি কোনভাবেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারে না, এ কিভাবে সম্ভব।
রাফি – (মনে মনে) রুহী!!!!!!
বিস্ময়ে চোখ ফেটে আসার মত অবস্থা রাফির। কোনভাবেই হিসাব মেলাতে পারে না রাফি। রুহীকে এখানে দেখতে পাওয়াটা অসম্ভবের কাছাকাছি, তার উপর মাফিয়া গার্ল এর ঘনিষ্ঠ সহচর। পিকাচু বেছে বেছে কিভাবে রুহীকে এই মিশনের টিম লিডার করলো এটাই মাথায় আসছে না রাফির।
রাফির বিষ্ফোরিত চোখ নজর এড়ায় না রুহীর। তারপরও স্বাভাবিক চেহারা ধরে রেখে সবার সাথে পরিচিত হয় সে। রাফির সাথে হাত মেলানোর সময় একেবারে অপরিচিতর মতনই হাত মেলালো সে।
রুহী – (পরিচয় ও কর্মর্দন শেষে) আমরা এখনো ইন্টারন্যাশনাল বর্ডারে রয়েছি। বর্ডার ক্রস করার পর রাডারে ধরা পরার সম্ভাবনা আছে, তাই যে কোন ডিজিটাল ডিভাইস যদি থাকে তাহলে বন্ধ করে ওই সেফ এর ভেতর রেখে দিতে হবে।
রুহী হাতের ইশারায় একটা সিন্ধুক দেখিয়ে দিলো সবাইকে। রাফি খেয়াল করলো পিকাচু অনেকক্ষণ ধরে কোন রেস্পন্স করছে না। রাফি তার ল্যাপটপ ওপেন করতে চাইলে রুহী হাত দিয়ে বাধা দেয় এবং কান থেকে ইয়ারপিস ও খুলে ফেলতে ইশারা করে। রাফির কাছে পুরো ব্যপারটা ধোঁয়াশার মত লাগছে ।
রুহী ছিল মাফিয়া গার্লকে খোঁজার মিশনের প্রথম স্টেপ, মাফিয়া গার্লের ফিল্ড জবগুলো রুহী ই করে যা রাফি এর আগেও দেখেছে। পিকাচুর ও ত জানার কথা যে রুহী মাফিয়া গার্লের সহচর। তাহলে পিকাচু কেন রুহীকে টিমে নিলো?
রুহী – (হাতের ইশারায়) কেবিন এইদিকে। ২০ মিনিট পর টিম মিটিং। সবাই ফ্রেশ হয়ে এখানে চলে আসুন। (রাফির দিকে তাকিয়ে) আপনি আমার সাথে আসুন।
যে যার মত কেবিনে চলে গেল আর রাফি রুহীকে অনুসরণ করতে লাগলো।
রুহী – (চলতে চলতে) পিকাচু অনলাইনে আসতে ৫ মিনিট সময় লাগবে। কন্ট্রোলরুমে চলুন। জরুরী কথা আছে।
রাফি – তার আগে আমাকে বলেন আপনি এখানে কি করছেন?
রুহী – এসব প্রশ্ন করার সময় এখন নয়। অনেক বড় বিপদ এর মুখোমুখি হতে চলেছেন আপনি।
রাফির কপাল কুঁচকে গেল। ততক্ষণে রাফি এবং রুহী কন্ট্রোলরুমে পৌছে গেল। একদম সাদামাটা কন্ট্রোলরুম। সবকিছুই এনালগ বলা যায়। রাফি যেমনটা ভেবেছিল তেমনটা একেবারেই নয়।
রাফি – বিপদ ত মাথায় নিয়েই ঘুরছি, যে বিপদ সামনে ঘুরছে তা থেকে পরিত্রাণ পাই আগে।
রুহী – বিপদটা পৃথিবীর নয়, আপনার। মফিয়া গার্ল আসলে………
রাফি – মানে! আসলে কি?
ততক্ষণে পিকাচু কানেক্ট করলো ক্রুজারের মেইনফ্রেমে। পিকাচু কানেক্ট হওয়ায় চুপ হয়ে যায় রুহী। রাফি কিছু বলতে যাবে তখন রুহী হাত না নড়িয়ে আংগুলের ইশারায় রাফিকে চুপ হতে বলে। রাফি কিছু না বুঝতে পেরে চুপচাপ বসে থাকে। তবে রাফির কৌতুহল বেড়ে যায় বহুগুণে। রুহী কি বলতে গিয়েও থেমে গেল!
পিকাচু – পিকা পিকা। টিম লিডার (রুহী), বোট এর পজিশন পরিবর্তন করো।
এমনটা ইন্টারকমে বলে জিপিএস লোকেশন দেখিয়ে দিল। রুহী লোকেশন মেইনটেইন করে বোটের দিক ঠিক রাখলো।
রাফি ল্যাপটপ ওপেন করলে পিকাচু ল্যাপটপে কানেক্ট হয়। রাফি ততক্ষন রুহীর দিকে তাঁকিয়ে থাকে। রুহীর স্বাভাবিকের মাঝে অস্বাভাবিক ব্যবহার রাফির চোখে কাঁটা দিতে লাগে।
“কি বোঝাতে চাইলো রুহী!” চোখ বন্ধ করে রুহীর চেহারাটা আবারো সামনে নিয়ে আসে, “রুহী – বিপদটা পৃথিবীর নয়, আপনার। মফিয়া গার্ল আসলে……”। কথাগুলো বলার সময় রুহীর চেহারায় আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায় ভরে ছিলো। কিন্তু পিকাচু কানেক্ট হবার সাথে সাথে রুহীর সেই অস্বাভাবিক চেহারা একদম স্বাভাবিক হয়ে গেল যা এখনও সেভাবেই আছে। কি এমন বিপদ? এত উৎকন্ঠাই বা কেন? তাহলে কি মাফিয়া গার্ল কোন ফাঁদ পেতেছে! রুহী এর আগেও রাফিকে মাফিয়া গার্লের হাত থেকে উদ্ধার করতে চেয়েছিলো কিন্তু রাফির কাছে রুহীর কর্মকান্ড সবসময়ই ধোঁয়াশার ভেতরই ছিল।
পিকাচু – বোট এখন ডেষ্টিনেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কোষ্টগার্ড আর নেভীর চোখকে ফাঁকি দিতে পারলে আর কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।
হঠাৎ একটা সিগন্যাল সাইরেন বেজে ওঠে।
রুহী – বিপদ, এন্টি রাডার সিস্টেম ডিজেবল হয়ে গেছে। রেন্জের ভেতর সব রাডারে এখন আমাদের দেখা যাচ্ছে।
রাফি – পিকাচু, কিছু একটা করো।
পিকাচু – এতগুলো রাডার সিস্টেম একসাথে ডিজেবল করা সম্ভব নয় আর ডিজেবল করে দিলেও সেটা একটা মিলিটারি হামলার থেকে কম কিছু না।
এর ভেতর বোটে থাকা অন্যান্য সদস্যরাও কন্ট্রোলরুমে চলে আসে। রেডিও কমিউনিকেশনে নেভীর সতর্কবার্তা ভেসে আসতে থাকে। অর্থাৎ তাদের রাডারে ধরা পড়ে গেছে রুহীর বোট।
রুহী – ধরা পড়লে সব শেষ। (বলেই রাফির সামনে এসে দাড়ায়)।
রাফি রুহীর চোখের দিকে তাঁকায়। রুহী রাফিকে ইশারায় কন্ট্রোলরুম থেকে বের হতে বলে। রাফি বুঝতে পারে না তার কি করা উচিত।
পিকাচু – আমি সাহায্য করতে পারি তবে একসাথে অনেক কাজের কমান্ড দিতে হবে। পিকাচু যদি অটোনমাস কন্ট্রোল পায় তাহলে কয়েক সেকেন্ড লাগবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার হতে।
রাফি অটোনমাস কন্ট্রোল দেয়ার জন্য কীবোর্ডে হাত দেবে ঠিক তখন রুহী রাফির হাত চেপে ধরে।
রাফি – (অবাক হয়ে) কি করছেন! হাত ছাড়েন! এভাবে ধরা পড়া যাবে না। পিকাচু কে কন্ট্রোল দিলে পিকাচু সব কিছু ঠিক করে দেবে।
রুহী – অপেক্ষা করুন। এখনো অনেক সময় আছে। এন্টি রাডার সিস্টেম এক্টিভেট হয়ে যাবে কিছুক্ষণের ভেতর। পিকাচু কে এখনই ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।
রাফি রুহীর চোখের দিকে তাকায়। চোখটাতে একটা অতিপরিচিত একটা ছায়া আছে। রাফির মনে ছোট্ট একটা বিশ্বাস তৈরী হয় রুহীকে বিশ্বাস করার। রাফি কীবোর্ড থেকে হাত সরিয়ে নেয়। আর রুহীকে এন্টি রাডার এক্টিভ করার জন্য ইশারা করে। রুহী দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে যায়। কিছুদূর গিয়ে আবারো ফিরে আসে।
রুহী – Rafi, I need you to fix it, come with me.
রাফি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে দরজার দিকে রওনা হয়।
ক্রুজার বোটের ডেক এ নেমে আসে রুহী আর রাফি। ইন্জিনের পাশাপাশি আরো অনেক ইনস্ট্রুমেন্ট দিয়ে ডেকটা ভর্তি। রুহী রাফির দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে একটা সুইচ বের করে চেপে ধরে। ডেক এর লাইইটগুলো জ্বলা নেভা করা শুরু করে, রাফি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে সেগুলো দেখতে চাইলে রুহী হাত ধরে বসে, রাফির চোখ আর বড় হওয়ার কায়দা নেই।
রুহী – সময় কম, যা ই ঘটে যাক না কেন ভুলেও পিকাচুকে অটোনমাস কন্ট্রোল দিবেন না। আপনি অনেক বড় বিপদে ফাঁসছেন। কাউকে বিশ্বাস করবেন না, এমনকি পিকাচুকে ও না।
ঝড়ের গতিতে কথাগুলো শেষ করে হাত ঠোঁটের কাছে নিয়ে চুপ থাকার ইশারা করে রুহী, এরপর সুইচটা ছেড়ে দিয়ে পকেটে রেখে দেয়। ডেক এর ভৌতিক জ্বলা নেভা আলোগুলো ঠিকঠাক জ্বলতে লাগলো। রাফি চোখ ঘুরিয়ে রুহীর দিকে তাকালো, রুহী মেঝের কাছে বসে কাজ করছে। বেশ কিছুক্ষণ পর গম গম করে একটা মেশিন চালু হয়ে যায়। বসা থেকে উঠে দাড়ায় রুহী।
রুহী – এন্টি রাডার সিস্টেম চালু হয়ে গেছে। চলুন উপরে যাওয়া যাক।
রাফি কিছু বলতে চাইলো কিন্তু রুহী চোখের ইশারায় চুপ করিয়ে দিলো। দুইজনেই ফিরে আসে কন্ট্রোল রুমে। টিম ব্রিফিং শেষে যে যার রুমে চলে যায়। রুহী আর রাফি দুইজনে কন্ট্রোলরুমে থেকে যায়। বোটের মেইনফ্রেমে পিকাচু কানেক্ট থাকায় বোট চালানো থেকে শুরু করে বাকী কাজ পিকাচু ই করে দিচ্ছে।
রুহী মাঝে মাঝে নেভিগেশন চেক করতেছে। কিন্তু রাফি চুপচাপ বসেই আছে। সকাল হতে আর অল্প সময় বাকী।
পিকাচু – বোট গন্তব্যে পৌছাতে আর ১৫ মিনিট লাগবে।
রুহী দূর দিগন্তে আলোর রশ্মি দেখতে পায়। রাফিকে তৈরী হতে বলে রুহী।
১৫ মিনিট পর ক্রুজার বোটটি জনশুন্য এক উপকূলে এসে ভিড়লো। সবাই বোট থেকে নেমে পড়লে পিকাচু সেফহাউজে যাওয়ার ইনস্ট্রাকশন দেয়। সবাই পায়ে হেটে সাগরপাড় ছেড়ে উঠতে লাগলো
কিছুদূর আসার পর হঠাৎ রুহী রাফিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বালির উপর, বাকিরা তাকিয়ে দেখে রুহীর কান্ড।
RQ – এখন নয় এখন নয়
চ্যাচাতে চ্যাচাতে বলে ওঠে রিদওয়ানস্কি। রাফি কিছু বুঝে ওঠার আগে রুহী তার কোমর থেকে পিস্তল বের করে রাফির দিকে তাক করে। রাফি অবাক হয়ে রুহীর কান্ড কারখানা দেখতে থাকে। টিমের বাকীরা তখনও রুহীর দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে
রুহী – This game ends here.
রাফি চোখ বন্ধ করে ফেলে। অনেক বড় ভুল হয়ে গেল তার।
গর্জে উঠলো রুহীর পিস্তল।
.
বি. দ্র. শত ঝামেলার মাঝেও গল্প দেয়ার চেষ্টা করছি। ধৈর্য ধারন করার অনুরোধ রইলো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে