হিয়া আমার হৃদয়

0
1139

অামার বউ কে অাবার বিয়ে দেয়া হবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সাহেব দেখে।শ্বশুর অাব্বা তার মেয়ে কে নিতে এসেছেন।
বউ টা চুপ চাপ রেডি হয়ে চলে গেলো,এ ফোঁটা চোখের পানি বা প্রতিবাদ করলো না।
যদিও অাব্বা গুলো অামার জীবন কে অাতংক ছাড়া কিছু দিতে পারেনি।

নিজের অাব্বার কথা একটু প্রথম থেকে বলি-

“নায়ক অালমগীর গলায় মাফলার, পায়ে জুতা নিয়ে টালমাটাল হয়ে টানটান করে পেতেরাখা বিছানায় ধিরিম করে পরে ঘুমিয়ে গেছে।”

শুক্রবার বিকেলে প্রাইভেট ফাঁকি দিয়ে পাশের বাসার জানলা দিয়ে দেখা ছবির এই দৃশ্য টা মনে গেঁথে গেছে।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো এমন করে জুতা সহ ঠাস করে বিছানায় পরেই লম্বা ঘুম দেই।এমন কপাল অামার ছিলো না। অাম্মা রাগী মানুষ চিরুনি, খুন্তি, ভাতের চামোচ রান্না ঘারের এমন কোন তৈজসপত্র ছিলো না যে অামাকে স্পর্শ করেনি।

অবশ্য অমি বন্ধুমহলে নিজেকে নায়ক অালমগীর বলে জাহির করতে চাইতাম।

কথায় কথায় “ইয়া ডিসিয়া,ইয়া ডিসিয়া অাজ তোর এক দিন কি অামার একদিন বলে ফাইটিং শুরু করতাম।”
যদিও প্রতিপক্ষ বরাবরই ফাইটিংয়ে বিশাল নারাজ তাই এক পাশে চুপ করে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো অার ফিসফিস করে পাশের জনকে বলো “হালারে পাগলে ধরছে।”

একবার এমন দৃশ্য দেখে অাব্বা পিছন থেকে কানে ধরে ঠাস করে চড় মেরে মুখে বিকট শব্দে বললেন “ইয়া ডিসিয়া।”

বড় হবার পর থেকে অারেক অাব্বার অত্যাচার শুরু হয়েছে।
শ্বশুর অাব্বা লেখাপড়া না জানা বিশাল বড়লোক মানুষ,তার সাধ লেখাপড়া জানা বিশাল বড়লোকের কাছে মেয়ে বিয়ে দেবেন।মানুষ তার নির্ধারিত পথে সবসময় এগিয়ে যেতে পারেনা।তিনি ও পারেন নি।

অামি একবারে বিসিএস পাশ করতে না পারায় শ্বশুর অাব্বা অামার ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখতে লাগলেন।

পান চিবুতে চিবুতে বলছিলেন-

মামু না কামাইতে পারলে পুরুষের কোন দাম নাই,দাম ছাড়া পুরুষের বউ হবারও তোমার কোন কাম নাই।

শ্বশুর অাব্বার কাছে টাকার অন্য নাম মামু।অামার মায়ের কোন ভাই নাই,পকেটে ও পর্যাপ্ত মামু নাই।

তার রাগের অারেক টা প্রধান কারন।
অামাকে বেশ কয়েকবার তার ব্যাবসা দেখার জন্য বলেছেন।
অামি এই বিষয়ে নারাজ।অামি সোজা ডুব দেবো, মাথা একটুও নিচু করবো না।

হিয়া চলে যাবার পর থেকে ঘরটা একদম ফাঁকা,অামার কাছে মনে হচ্ছে পৃথিবী টাই শূণ্য হয়ে গেছে।

অামার সাথে বিয়ে হবার পর থেকে হিয়ার ছোট বড় কোন চাহিদা ছিলোনা,প্রয়োজনীয় কিছুও চাইতো না। ম্যানেজ করে নেওয়ার কৌশল তার অস্বাভাবিক রকমের।

বেতন পেয়ে একটা অাটপৌড় ড্রেস কিনে দিলাম।দেখলাম তার অতটা পছন্দ হয়নি তবে বেশ খুশিতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। হাতের ডিজাইন কেমন হবে,গলায় কি কলার দিবে কি না পিছনে গোল সেইপ হবে অামার কাছে জানতে চাইছে।
অামি তার মনের ভাষা বুঝতে চাইছিলাম,সে কি খুব খুশি না কি অামাকে খুশি করার চেষ্টা করছে।

যে মেয়ে সপ্তাহে শপিং করতো নিজেই ড্রেসের ডিজাইন করতো।দর্জি এই মেয়ের কাপড় রাখতে গেলে ভয়ে ভয়ে থাকতো।তার জন্য সামান্য কিছু এতো খুশি কিভাবে অানতে পারে বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

বললাম, হিয়া তোমাকে তো তেমন কিছু দিতে পারিনা।
অল্প কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো দেখবে তোমার ঘর ভর্তি কত কি থাকবে।

হিয়া বললো প্রতিদিনই তো দিচ্ছ।

অামি অবাক হয়ে বললাম কি দিচ্ছি?

অাফিস থেকে সুস্থ ভাবে বাসায় ফিরছো,দিন শেষে এর চেয়ে বড় গিফট কি হতে পারে?

অামি অনেকদিন খেয়াল করেছি, অামি অফিসে চলে যাবার সময়ে ওর চোখেমুখে বিষাদের ছায়া,অামার ফিরে অাসায় তার প্রশান্তি।

হিয়া অর্ধেক টা ডিম ভুনা অামার পাতে দিয়ে বলতে লাগলো –

-যখন হবে তখন হবে।এখন যা নেই তা অাশা না করে যা অাছে তা নিয়ে মানিয়ে চলতেই অামার ভালোলাগে।তাই কখনো নিজেকে সেই না পাওয়া বস্তুর অভাবে অভাবী মনেহয় না জনাব।

-তুমি ডিম টা ও খাওনি হিয়া,অর্ধেক টা ইতো ছিলো।

হিয়া নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে বললো –

-অামি ডিম এতো পছন্দ করিনা।তুমি ডিম একটুকরো দিয়ে পেট ভরে ভাত খাও এইটা দেখলেই নিজেকে বেশ তৃপ্তলাগে।

সবসময় ই খেয়াল করতাম সে অামার উন্নত জীবনের জন্য মরিয়া ছিলো না বরং বর্তমানে যা অাছে তাতে নিজেকে মানিয়ে নেবার অাপ্রাণ চেষ্টা করতো।

যদিও তার শরীর তার সমর্থনে ছিলো না,কারন বড়লোক বাবার মেয়ে কাম কাজের কাছে কখনো যেতে হয়নি ।পানি বেশি ধরলে ঠান্ডা-জ্বর চলে অাসতো তাই অামি নিয়ম করে,কাপড়-চোপড় ধুয়ে দিতাম।

বর্তমানে বুয়াদের এক কাজের রেট পাঁচশত টাকা।এক কাজের টাকা দেবার ক্ষমতা অামার অাছে কিন্তু টাকা টা হিয়া রেখে দিতো। কারন টা ছিলো অামাদের বাবু হলে তখন একটা কাজের মানুষের প্রয়োজন হবে।

অামি খাটের এক পাশে চিত হয়ে শুয়ে থাকি হিয়া অামাকে টেনেটুনে তার কাছে এনে অামার বুকে ঘুমায় বউকে কত বুঝাই অামি একটু ফ্রী হয়ে ঘুমাতে পছন্দ করি বউ বুঝতে নারজ।

কে জানে এখন বাবার বাড়িতে কি ভাবে ঘুমুচ্ছে। অাজ পুরো টা খাট খালি হিয়ার জন্য অামার ঘুম অাসছে না।

মেয়েদের বুঝা কঠিন কবি সাহিত্যকরা তো অার এমনি এমনি বলেননি।অামিও হিয়া কে কখনোই বুঝে উঠতে পারিনি কিংবা সম্ভব হয়নি।তবে কেনো যেনো মেয়েটার উপর রাগ করার মতো কিছু খুঁজে পাই না।

অাজ নায়ক অালমগীর মতো খাটে জুতা নিয়ে ঘুমাবো অবশ্য একটু নেশাপানি করলে ব্যাপার টা হুবহু মিলে যেতো।
কাল হালকা নেশা করবো তারপর শ্বশুর অাব্বার দেওয়া ফ্রিজ টা ফেরত দেবার অজুহাতে হিয়া কে একবার দেখে অাসবো।
শ্বশুর বাড়ি থেকে কিছু অানতে চাইনি শ্বশুর এক প্রকার জোর করে তার মেয়ে কে দিয়ে গেছেন।

তবে অামার শর্ত ছিলো, অার কখনো কিছু দিতে পারবে না।

দরজা জনালা বন্ধ করার মতো মহামূল্যবান সম্পদ অামার তেমন কিছু নেই।একটাই ছিলো এখন তা অার নেই স্বেচ্ছায় চলে গেছে।

সকাল হয়ে গেছে ফ্রেশ হবো,তারপর শ্বশুর বাড়ি যাবার যোগাড়যন্ত্র করবো।
একটা পাতার বিড়ি ধরাবো খুব অায়েশ করে সুখ টান দিবো তারপর ভুসভুস করে হিয়ার বাবার মুখের সামনে ধোঁয়া ছাড়বো।দারোয়ানের কাছ থেকে এক প্যাকেট পাতার বিড়ি এনে রেখেছি।

রান্নাঘরে পাশে অাসতেই দেখছি হিয়া কে।নেশা করার অাগেই এই অবস্থা, নেশার পর কি হবে কে জানে?

হিয়া অামার দিকে তাকিয়ে হাসছে।

হোক এটা অামার মতিভ্রমের লক্ষ্যণ। অামি হিয়া কে জড়িয়ে ধরবো,যেই চিন্তা সেি কাজ এক লাফে জড়িয়ে ধরে বললাম-

-হিয়া অামার হৃদয়।

হিয়া অামাকে ছাড়িয়ে নিলো তার পর বলতে লাগলো-

-বাবা যা এক রোখা মানুষ, তখন চলে না গেলে কি না কি করতেন।অার তুমি ও বোকা কিসিমে’র মানুষ। এই দুই ধরনের মানুষ কে নিয়ে চলা খুবই যন্ত্রণার।তাছাড়া বাড়ি যেতেও ক’দিন ধরে মনটানছিলো।নাস্তা করবে যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।

রুটি বানাবার খাট বেলানের অামাদের কখনো প্রয়োজন হয়নি।ইচ্ছে হলে হোটেল থেকে খেয়ে নিয়েছি রুটি বা পরোটা।এই মেয়ে রুটি বানালো কি দিয়ে।নিশ্চই শ্বশুর অাব্বার বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে, এক্ষুনি এসব বেলান টেলান জানলা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবো।বলে দৌড়ে রান্না ঘরে গেলাম,হিয়াও অামার পিছু পিছু ছুটে অাসলো।
পাটায় একটা লম্বা মতোন ফ্লাওয়ার ভাস রাখা তাতে অাটা গুঁড়ো লেপ্টে অাছে।তার মানে বউটা পাটায় ফ্লাওয়ার ভাস দিয়ে রুটি তৈরি করেছে।
অামি হিয়া কে কোলে নিয়ে হাসতে লাগলাম-

“অামি সাথী পাইনি পেয়েছি জীবন সঙ্গী সত্যি অামি ভাগ্যবান।”

হিয়া অামার কাঁধে মুখ গুজে বললো-

-এটা দিয়ে সেটা তৈরির কাজই হচ্ছে হিয়া’র।