স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_২৪

0
3831

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_২৪
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

পুষ্প নামের মানুষিক রোগীটা আমার থেকে আমার মেঘকে বিচ্ছিন্ন করেছে।পুষ্পকে নিয়ে আমার মনের ভিতর যে রাগ ছিল ওর সাথে ঝগড়া করে তা এক এক করে বের করে দিলাম।রাগের মাথায় ওকে অনেক কথা শুনিয়েছি।ও একটা মানুষিক রোগী,ওর মতন মানুষিক রোগী আমার জীবনে এসে আমার সুন্দর গুছানো সংসারটা নষ্ট করে দিয়েছে।ওর কারণে আমি আমার মেঘকে হারিয়েছি।আর এখনো যে আমি মেঘকে ভালবাসি তা ওকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছি।আর এইও বলেছি আমি বাইরে থেকে আসার পর ওকে যাতে আমার বাসায় আর না দেখি।ওর এই বিষভরা মুখটা আমি আর দ্বিতীয়বার দেখতে চাই না।

এইরকম আরো অনেক কথা ওকে শুনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসলাম।বাইরে আসার পরও রাগটা কিছুটা কমাতে পারিনি।পুষ্প মেঘকে হিংসা করে সেটা আমি আজ বুঝতে পারলাম।আর তাইতো ও আমার আর মেঘের জীবনকে এলোমেলো করে দিয়েছে।আমার সংসার থেকে মেঘ চলে যাওয়ার আগে ও আমার হাতে যে চিঠিটা দিয়েছিল সেটা পুষ্প চুরি করে পড়েছিল।আর সেই চিঠিটা পড়েই সে জানতে পেরেছে যে মেঘ প্রেগন্যান্ট। আর এই খবরটা যাতে আমি জানতে না পারি সেজন্য ও সেই চিঠি টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল।এত্ত বিষ এই মেয়েটার মধ্যে।আর আমিই কিনা এইরকম একটা শয়তান মেয়ের রুপের মোহে পড়ে ওর সাথে একটা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম।আর তার ফল এখন ওর গর্ভে।এইসব ভাবতে ভাবতে পুরো পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। সেইদিন আর বাসায় যায় নি।রাস্তায় রাস্তায় হেঁটেছি আর মেঘের সাথে কাটানো দিনগুলো ভেবে কষ্টের আগুনে পুড়ছিলাম।

.
.

সকালে বাসায় এসে দেখি পুরো বাড়িতে মানুষ।এত মানুষ এত সাতসকালে এখানে কি করছে বুঝতে পারছিলাম না।কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর যা দেখলাম তাতে আমার কাছে বিষয়টা পরিষ্কার হল।

কালকে আমাদের মাঝে ঝগড়া হওয়ার পর যখন আমি রাগ করে বাসা থেকে বাইরে চলে আসি ঠিক তার কিছুক্ষণ পর পুষ্প ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে।ওর এই আত্মহত্যা করার পিছনে শুধুমাত্র আমিই দায়ি ছিলাম।পুষ্পকে যে এত কথা শুনিয়েছিলাম তাতে ও বুঝে গিয়েছিল ওর জন্য আমার মনে কোন ভালোবাসা নেই।আর তা ও মেনে নিতে না পারায় এত বড় পাপ কাজটা করে ফেলেছিল।

আমি আবারো সেই একি ভুল করলাম।যে বাচ্চার জন্য আমি পুষ্পকে আমার জীবনে এনে মেঘকে সরিয়ে দিয়েছিলাম সেই বাচ্চাটাই দুনিয়ায় আসার আগে দুনিয়া ছেড়ে বিদায় নিল।আমি আবারো সব হারালাম।পুরো নিঃস্ব হয়ে গেলাম।মনের ডিপ্রেশনটা আগের থেকে আরো অনেকগুণ বেড়ে গেল।
.
.

এর কিছুদিন পর মেঘকে খুঁজার অনেক চেষ্টা করি।কিন্তু ওর কোন খোঁজ পাইনি।তারপরও ওকে খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা আমি দিনের পর দিন চালাতে লাগলাম।আর শেষ পর্যন্ত আমার লোকের দ্বারা ওর খোঁজ পেয়েও গেলাম। কয়েকটা বছর পর ওকে খোঁজে পাওয়ার খুশিতে আর আমার মেয়েটাকে দেখার জন্য চট্টগ্রামে রওনা দিলাম।আমার মেয়েটার বয়স তখন মাত্র ছয় বছরে পড়েছে।কিন্তু মেঘ আর আমার মেয়েটার কাছে যাওয়ার সাহসটুকুও আমি পেলাম না।কিভাবে আমি ওদের চোখের নজরে গিয়ে দাঁড়াব সেই দুশ্চিন্তা থেকে ওদের কাছে যেতে গিয়েও আর যেতে পারলাম না।ওদের কাছে যেতে না পারলেও আমি সবসময় ওদের খোঁজ রাখতাম।ভুল যেহেতু করেছি ভুলের মাশুলও আমাকে দিতে হবে।আর এতটা বছর ধরে আমি সেই ভুলের মাশুল দিয়ে আসছি।

.
.

বিয়ের আগে আর পরে মেঘের জন্য আমার অনুভূত ভালোবাসা,আমাদের ভালোবাসার কাহিনী এই ডাইরিতে লিখে তার স্মৃতিটুকু আমি টাটকা রেখেছি।এরপর জীবন সংসারের প্রতিকূলতায় পা রাখার পর অনুতপ্তের আগুনে পুড়ে আমার আর ডাইরি লিখার সময় হয়ে উঠে নি।কি লিখতাম ডাইরিতে!আমি মেঘের সাথে যে বাজে কাজগুলো করেছি সেগুলো লিখতাম!সেগুলো লিখার সাহসটা আমার মন থেকে আসেনি।

কেন জানি না বুঝতে পেরেছিলাম মেঘকে আর কখনো সামনে থেকে দেখতে পাব না, ওর কাছে আমি আমার ভুল করা কাজের জন্য ক্ষমাও চেতে পারব না।কিন্তু মনে মনে এই বিশ্বাস ছিল তোকে একদিন না একদিন আমি সামনে থেকে দেখতে পারব আর তোর সাথে আমি যে ভুল কাজগুলো করেছি তার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নিতে পারব। আর তার জন্য আমাদের ব্যাপারে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা তোর জানা দরকার।তাই এই ডাইরিতে আবারো কলমের কালি দিয়ে লিখা শুরু করলাম।কিন্তু এইবারে ডাইরিতে আমাদের ভালোবাসার কাহিনী না বরং আমাদের জীবনের দুঃখ আর কষ্টের কাহিনী লিখলাম।আর এখন আমার জীবনে সব কাহিনী শুনে তুই এটা বুঝতে পেরেছিস সব দোষ আমারি ছিল। আমারি কারণে আজ এতকিছু ঘটেছে।আমি নিজের সব ভুল, দোষ স্বীকার করছি।আর এই ভুল স্বীকার করে আমি তোর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।পারলে এই বুড়ো বাপটাকে মাফ করে দিস।সাথে তোর মাকেও বলিস যাতে সে আমাকে ক্ষমা করে দেয়।

.
.

তমা- ডাইরিটা অফ করে নিজের এক হাতের আঙ্গুলের নখ দিয়ে আরেক হাতকে খামচি দিচ্ছি।খুব কষ্ট হচ্ছিল।বন্ধ রুমে চুপচাপ কান্না করছি।এই লোকটাকে আমি সবসময় খারাপ ভেবে এসেছি।কিন্তু এখন জানলাম আর বুঝলাম উনি মোটেও খারাপ নয়, অনেক ভালো মানুষ।কিন্তু উনার….. আমার বাবার এই একটা ভুল আমাদেরকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে আসছে।এই ভুলটা না হলে হয়ত আজ এই পরিস্থিতিতে আমাদের কাউকে পড়তে হত না।বাবাকে মাফ করে দেওয়াটা এত সহজ না কিন্তু মাফ না করেও থাকতে পারছি না।বাবার এই অসুস্থতা দেখে উনাকে আর মাফ না করে পারলাম না।উনার সব অপরাধ মাফ করে দিলাম।
.
.
অনেকক্ষণ ধরেই কান্না করে চলেছি।কান্না থামার কোন নামই নেই।তারপরও অনেক কষ্টে নিজের কান্নাগুলোকে লুকিয়ে বাবার কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম।একটাবার বাবাকে দেখে আসি।এই রুমে আসছি অনেকক্ষণ হয়।এতক্ষণে একবারের জন্য বাবাকে দেখা হয়ে উঠে নাই।বাবার কাছে গিয়ে বাবাকে বলব উনি যাতে আর চিন্তা না করে।বাবাকে আমি মন থেকে মাফ করে দিয়েছি এই কথাটা শুনলে বাবা মনে স্বস্থি ফিরে পাবে।যাই তাড়াতাড়ি বাবার কাছে গিয়ে কথাটা তাকে জানিয়ে আসি।

.
.

দরজা খুলে বাইরে আসলাম।হঠাৎ করে বাবার রুম থেকে অনেক জোরে চিল্লানোর আওয়াজ আসলো। কি এমন হল যে হঠাৎ করে এত জোরে চিল্লানোর আওয়াজ শুনলাম।চিল্লানোর সাথেসাথে কান্নার আওয়াজও শুনা যাচ্ছে।এইরকম কান্নার আওয়াজ শুনে মনে মনে এই দুয়া করতে লাগলাম সব যাতে ঠিক থাকে।আবার যাতে কোন খারাপ খবর আমাকে শুনতে না হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে