স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৮

0
2611

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৮
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

তানভীর- “সরি,”

তমা- “সরি বলে তো আর কাজ হবে না।বৃষ্টির দিনে গাড়ি পাওয়া এমনেতেই অনেক মুশকিল।আজকেই কি এই গুরুত্বপূর্ণ কথা না বললে হত না।অন্য আরেকদিন বলতা।এখন কি হবে?”

তানভীর- “কিচ্ছু হবে না।আমি তোমাকে সেইফলি বাসায় পৌছায় দিবো।কি ব্যাপার মুড অফ নাকি।”

তমা- “তো কি করবো।তোমার জন্য পুরা ভিজে গেছি।তুমি বেশ ভালোইই করেই জানো আমি বৃষ্টি একদমই পছন্দ করি না।তার উপর বৃষ্টিতে ভেজা একেবারে অসহ্যকর।”

তানভীর – “এই তুমি আমার জ্যাকেটের ভিতরে আসো।”

তমা- “না, থাক লাগবে না।”

তানভীর- “আরে লাগবে,বেশ লাগবে।সরি সত্যিই আমার খেয়াল ছিল না যে তুমি বৃষ্টিতে ভিজে গেছ।সরি। ”

তমা- “সরি মাফ হবে না।”

তানভীর – “আচ্ছা সেটা পরে দেখা যাবে।আগে চল ওই গাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়াই”

তমা- “ওকে। ”

তানভীর – “এই তুমি এখানে একটু দাঁড়াও।আমি এই যাচ্ছি আর আসছি।”

তমা- “আরে….কোথাই যাচ্ছ। আজিব একটা।”

অনেক্ষণ পর ও এল।হাতে কিছু কদম ফুল।

তমা- “কদম ফুল!!ইশ,তুমি কিভাবে জানো আমি কদম ফুল পছন্দ করি।যাই হোক ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে আমাকে দাও ” এই বলে ওর হাত থেকে কদম ফুল নিতে গেলে…।

তানভীর -“আরে আরে করছটা কি।হাত থেকে এইভাবে ফুলগুলো কেন নিচ্ছ?আমি তোমাকে নিজ থেকে ফুল দিছি?”

তমা- “ও আচ্ছা।ঠিকাছে। লাগবে না।”

এরপর হাটুগেড়ে কদম ফুল দিয়ে ও আমাকে প্রপোজ করে।আমি রীতিমতন অবাক হয়ে যায়।এইরকম দিনে তাও আবার যদি কারোর প্রিয় ফুল নিয়ে এক আবেগময় কণ্ঠে কোন ছেলে প্রপোজ করে তাহলে একটা মেয়ের গলতে বেশি সময় লাগে না।তাছাড়া ও আমার অনেক ভালো বন্ধু।অনেক ভালোও লাগে ওকে।তাই কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করার পর ওর প্রপোজাল একসেপ্ট করে ফেলি।
সাথে সাথে ও আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দেয়।জানি না কি ছিল এই পরশে।এক অদ্ভুত অজানা ভাললাগা তখন মনের গহীনে কাজ করছিলো।

তানভীর -“আমি জানতাম তিলোত্তমা তুমি আমাকে না করতেই পারবে না।I love u, I love u so much dear.”

মাঝেমাঝে ও আমাকে তিলোত্তমা বলেই ডাকত।জানি না কি মনে করে আমাকে এই নামে ডাকত।যদিউ মাঝেমাঝে জানতে ইচ্ছে করতো কিন্তু কিছু কিছু জিনিস না জানার মাঝেও এক ধরণের ভালালাগা কাজ করে। তাই আর এই নাম ধরে ডাকার কারণ ওকে আর আমি জিজ্ঞাস করে নি।ভালোই লাগত ওর কাছ থেকে এই তিলোত্তমা নামটা শুনে।ফারিদ স্যারও মাঝেমাঝে আমাকে তিলোত্তমা বলে ডাকে।কিন্তু এই তিলোত্তমা নামটা তানভীরের কাছ থেকে শুনতে আমার বেশ লাগত।

তানভীর -“এই তিলোত্তমা আমার সরি একসেপ্ট করছ।”

তমা- “কিসের?”

তানভীর – “এই যে আমার কারণে তোমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে হল।”

তমা- “উম,না।এখনো করি নি।”

তানভীর – “এরজন্য কি করতে হবে শুনি।”

তমা- “বেশি কিছু করতে হবে না।আমাকে আরো অনেকগুলো কদম ফুল গাছ থেকে পেড়ে দিতে হবে।তাহলে তোমার সরি মাফ করে দিবো। ”

তানভীর – “ওরে আমার কদম ফুল পাগলী রে। আচ্ছা এনে দিবো।”

.
.
ফারিদ- “এই তমা, তমা এইভাবে ভিজছো কেন?ঠাণ্ডা লেগে যাবেতো।”

এই মেয়ে কতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পারছো না।হায় আল্লাহ কোন ভাবনার দেশে পড়ে আছে।এতক্ষণ পিছন থেকে ওকে ডাকলাম কিন্তু ওর কানে মনে হয় কোন আওয়াজ ঢুকছে না।তাই ওর সামনে আসলাম।সামনে এসে ওর ভিজা চুলগুলো দেখে মনে হল আমার সামনে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর মায়াবতী মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে।ভেজা চুলে কি রুপটায় না ওর ফুটে উঠেছে।

জানি না আমার কি হয়ে গেল।আমার মাঝে আমি ছিলাম না।একটা ঘোরের মধ্যে আটকা পড়ে গেলাম।এরপর আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।ওর হাত ধরে একেবারে আমার কাছে এনে কপাল থেকে ওর চুলগুলো সরিয়ে কানের পিছনে নিয়ে গেলাম।এরপর একহাতে ওর কোমড় ধরে আরেকহাতটা ওর গালে ধরে অজান্তেই ওকে কিস করে ফেললাম।

কিস করার কিছুক্ষণ পর একটু হালকা হয়ে আসলেই তমা আমাকে এক ধাক্কা দিয়ে ওর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিল।ও যে এইরকমভাবে আমাকে ধাক্কা দিবে আমি জাস্ট কল্পনা করতে পারি নি।
.
.
“কি করছেনটা কি আপনি?পাগল হয়ে গেছেন নাকি?”
“তমা সরি আমি আসলে বুঝতে পারি নি। নিজেকে কন্ট্রোল করতে কষ্ট হচ্ছিল তাই কি করে ফেলেছি আমি নিজেও জানি না।প্লিজ কেঁদো না তুমি।এই মেয়ে তাকাও আমার দিকে।”

দুহাত দিয়ে মুখটা ঢেকে রাখছি।কিছুতেই কান্না থামাতে পারছি না।উনি এইটা কিভাবে করতে পারলেন।এতদিন উনার পাগলামি অনেক সহ্য করেছি আর না।আজকেই মামণিকে গিয়ে বলব উনার সাথে আমার বিয়ে যাতে না দেয়।কিন্তু মামণির শরীরের অবস্থা খুব খারাপ এই কথা কিভাবে বলব।

“এই মেয়ে মুখ থেকে হাতটা সরাও বলছি।আমি বললামতো,, ইচ্ছে করে আমি এই কাজটা করতে চাই নি।প্লিজ তিলোত্তমা আমাকে বুঝার ট্রাই কর।”

“আমাকে একদম ছুঁবেন না।আপনার মনে এতদিন এই ছিল।আর আজ তা প্রকাশ পেল।আপনি একটা নোংরা মনের মানুষ।”

এই কথা শুনে ফারিদের মাথায় রাগটা চটে উঠল।

“এই কি বললে তুমি?আমি নোংরা মনের মানুষ। তমার হাতটা শক্ত করে ধরে,,,আরে আমি যদি এতটাই নোংরা হই তাহলে এই ২ টা বছর বিয়ের জন্য অপেক্ষা করতাম না।যদি তোমার ক্ষতি করার ইচ্ছাই থাকত তাহলে আমি এতদিনে তা করে ফেলতাম। কি পারতাম না আমি ! সে সুযোগ আমার অনেক এসেছিল। কিন্তু আমি তা কাজে লাগাই নি।বলো আজ পর্যন্ত আমি তোমার সাথে কোন খারাপ আচরণ করেছি।”
“আগে করেন নি।কিন্তু আজ এইটা কি করলেন।এতদিনে আপনার প্রতি আমার যে শ্রদ্ধা ছিল আজকে এক সেকেন্ডই আপনি নিজে তা শেষ করে দিয়েছেন।”

নিজের চুলগুলো হাত দিয়ে টেনে ফারিদ রাগে কাঁপতে লাগল।এই মেয়েটা কি বলছে এইসব?এইটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট ছিল।ভুলে এই কাজটা ও করে ফেলেছে তাই বলে তমা ওকে এইভাবে কথা শুনাবে।

আরে ও কই?ছাদের চারিদিক চোখ বুলিয়ে দেখি ও নেই।বাসায় চলে গেছে তাহলে।এখন মনে খুব ভয় কাজ করছে এই মেয়েটা আবার কোন তালবাহানা করে না ওদের বিয়েটা বন্ধ করে ফেলে।

তমা- “তাড়াতাড়ি রুমে এসে দরজাটা আটকিয়ে কান্না করতে লাগলাম।আজকেই উনার মাকে গিয়ে বিচার লাগাবো। এরপর উনি নিজেই বিয়েটা ক্যান্সেল করে দিবেন। ”

.
.
জুয়েল- “স্যার এখন কেমন লাগছে?”

তন্ময়- “এখন ভালোই আছি।”

জুয়েল- “স্যার খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন আমাকে।হঠাৎ করে আপনার শরীরটা আবারো খারাপ হতে দেখে মাথা কাজ করছিল না।”

তন্ময় – “আরে আর ভয় পেতে হবে না।আমি এখন অনেকটাই ভালো অনুভব করছি।জুয়েল একটা খাতা আর কলম নিয়ে আসো তো।!

জুয়েল- “জ্বী স্যার”

তন্ময়- “নাও এবার একটা চিঠি লিখ।”

জুয়েল- “স্যার নাম বলেন,,প্রিয় এরপর কি নাম দিবো”

তন্ময়- “আমার মেয়ের নামতো জানোই।”

জুয়েল- “তমাকে নিয়ে আপনি চিঠি লিখবেন।”

তন্ময়- “হ্যা। লিখ প্রিয় মামণি……

জুয়েল- “হঠাৎ চিঠি লিখার কারণটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।”

তন্ময়-“কারণ আর কয়েকদিন পর হয়ত আমি ভালোভাবে কথা বলার মতন অবস্থায় থাকবো না।তাই এখনি চিঠিটা লিখছি।আমার শরীরটা খুব খারাপ হয়ে গেলে এই চিঠিটা ওর কাছ পাঠাবে।আর আরেকটা চিঠি লিখবে সেখানে আমি যা লিখতে বলব তাই লিখবে।সেই চিঠি তুমি আমার স্ত্রীর কাছে পাঠাবে। এখন যা যা লিখতে বলছি ঠিক তাই লিখ।”

জুয়েল- “ওকে স্যার”

অবশেষে দুইটা চিঠি লিখা শেষ হয়।

তন্ময়- “তোমার উপর আমি আরেকটা দায়িত্ব দিলাম।চিঠি সেখানে পৌছানোর পর আমার মেয়ে এখানে আসলে ওকে আমার এই ডাইরিটা পড়তে দিও।”

জুয়েল- “স্যার তমা কি এখানে আসতে চাইবে?যদি সে এইখানে না আসে তাহলে আমি কিভাবে ওকে এই ডাইরিটা দিব?”

তন্ময়- “আমি জানি আমার মেয়ে ঠিকই আসবে।আসতে ওকে হবেই। না হলে আমি ওকে যে কথাগুলো বলতে চাই সেগুলো আর বলা হয়ে উঠবে না।আমি যে কথাগুলো বলতে চাই সব এই ডাইরিতে আছে।এই ডাইরি ও পড়ার পর যখন ডাইরিটা ওর মামণিকে দেখাবে তখন হয়ত সে আমাকে মাফ করেও দিতে পারে।”

(Rj ফারিদ ভাইয়া আপনার পারমিশন ছাড়াই গল্পের নেক্সট পার্ট দিয়ে ফেলছি।কিছু মনে করিয়েন না।?????)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে