স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৩

0
2715

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৩
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

ও আল্লাহ! ভাবলাম একে অপমান করে আমি প্রতিশোধ নিব কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই বিপদ আমার ঘাড়ে এসে চেপে বসবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।

ওর সাথে বাইকে করে মার্কেটে আসলাম।

“তমা এবার তুমি পছন্দ করে আমার কাপড় কিনে দাও।আর হ্যা,, আমারো পছন্দ হওয়া চাই কাপড়গুলো।নাহলে…..কিন্ত,,”
“নাহলে কি!!”
“ভার্সিটির সবার সামনে তোমাকে জড়িয়ে ধরে থাকব।তাও পাক্কা ১ ঘন্টা।তুমি যদি তা চাও তাহলে আমি তা করতে পারি।আমি কিছু মনে করব না।”
“এই না না।আমি ভালো কাপড়ই আপনার জন্য পছন্দ করব। আশা করি আপনার পছন্দ হবে।”
“হুম।তুমি এইদিকটায় শপিং কর আমি ওইদিকটায় যাচ্ছি।”
“আচ্ছা।”
.
.
কিছুক্ষণ পর,,,

“কি হল?”
“হ্যা হয়েছে।এই নিন”
“হুম গুড।আর এই নাও এই পেকেটগুলোতে তোমার কাপড় আছে।আর এই পেকেট টাতে একটা লেহেঙ্গা আছে।শুধু তোমার জন্য।”
“আচ্ছা তাহলেতো দেখতেই হয়।”
“এই এখন না।বাসায় গিয়ে পেকেটটা খুলবে।আর আজ থেকে এই পেকেটে রাখা কাপড়গুলো পড়েই ভার্সিটি আসবে।আর তোমার টপ জিন্স যেগুলো পড় সব কয়টা কাপড় এই কাচি দিয়ে কাটবে।নাও কাচিটা ধর।”
“কিহ!”
“জ্বী….। আর ম্যাডাম কাপড়গুলো কেটে তা আমার জন্য নিয়ে আসবেন।সেগুলো ঘর মুছার কাজে আমি লাগাব।আমার বাসায় ঘর মুছার কাপড়ের অভাব।তোমার টপ জিন্সগুলো ঘর মুছার কাজে লাগাব।”

রাগে ইচ্ছা করছে এর মুখে টেপ মেরে দেই।শালা আমার কাপড়গুলো দিয়ে এ ঘর মুছার কাজে লাগাবে।(মনে মনে)

“তা যে কথা রইল সেটা করে ফেলবেন কেমন।নাহলে তো জানেনই।”
“আচ্ছা আচ্ছা….আর ভয় দেখাতে হবে না।যা বলছেন তাই করব।”
“হুম গুড গার্ল। ”
.
.
এরপরে আর কি তানভীরের কথামত সেদিন সব কাজ করলাম।এরপর থেকেই ওর জন্যই সালোয়ার কামিজ পড়া শুরু করলাম।আসতে যেতে জোকের মতন সবসময় আমার পিছু লেগে থাকে।এইভাবে কোন মেয়ের পিছনে ঘুরলে তার টেককেয়ার করলে যেকোন মেয়েই ছেলেটার প্রেমে হাবুডুবু খাবে।আমিও শেষ পর্যন্ত তানভীরের প্রেমে হাবুডুবু খেতে বাধ্য হলাম।এর কয়েকদিন পর ও আমাকে প্রপোজ করে আর আমিও হ্যা বলে দেই।
ভালোইই যাচ্ছিল সবকিছু।

ওর প্রেমে পড়ে তখন মনে হত সব পুরুষ এক না।এখনো কিছু কিছু পুরুষ ভালো আছে।মামণি সবসময় আমার সামনে বাবার প্রশংসা করত।কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে বুঝতে পারলাম আমার মনে যাতে বাবার বিষয় নিয়ে খারাপ কোন প্রভাব কাজ না করে তাই মামণি বাবার প্রশংসা করত।কিন্তু মামণি হয়ত জানে না আমি সব বুঝতে পারি।বাবা কেন আমাদের সাথে থাকে না তাও বুঝতে পারি।বাবা যে অন্য নারীর প্রতি আসক্ত আর তাকেই বিয়ে করে সংসার করছে তা জানতাম।আমার চারপাশের মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে আমি তা বুঝতে পেরেছি। তা নাহলে আমাদের সাথে বাবার না থাকার কোন প্রশ্নি উঠে না।এরপর থেকে পুরুষদের প্রতি একটা ঘৃণা জন্মাত।নিজেকে মেয়ে হিসেবে ভেবে কখন দুর্বল করতে চাইনি।তাই ছেলেদের মতন চলাফেরা করতাম।কিন্তু তানভীর আমার জীবনে আসার পর আমাকে পুরো চেঞ্জ করে দিয়েছে।আমি যে একটা মেয়ে,,আমারো যে একটা কোমল হৃদয় আছে, কোন পুরুষকে ভালোবাসার জন্য আমারো যে মন আছে তা তানভীরের সাথে থেকে বুঝেছি।ওর কাছেই ভালোবাসার মানে শিখেছি তাই ওর প্রেমে ডাক না দিয়ে পারিনি।
.
.
এরকিছুদিন পর,,ও আমাকে জানালো যে আর কয়েকদিন পরি ওর ফাইনাল পরিক্ষা।এরপরে ভার্সিটি থেকে বিদায় নিবে।তাই এখান থেকে যাওয়ার আগে ওরা কোন জায়গা থেকে ঘুরে আসতে চাই।ওর সব ফ্রেন্ডরা ঠিক করেছে যে ওরা সবাই মিলে কক্সবাজার যাবে। আমাকেও ও ওর সাথে সেখানে নিয়ে যেতে চায়।একা যাওয়াতো আমার পক্ষে সম্ভব না তাই তিথিকে সাথে করে নিয়ে গেলাম।তিথির বাবা মাকে বলে আসলাম পিকনিকে যাচ্ছি।

এরপরের দিন তানভীরের সাথে আমরা কক্সবাজারে রওনা দিলাম।

রাতে,,,

“তমা একটু বাইরে আস।”
“কেন?”
“প্লিজ একটু আস।কাজ আছে।”
“আচ্ছা।”
.
.
“হুম বল,,এত রাতে কেন আসতে বললে?”
“চল বীচ থেকে ঘুরে আসি।”
“কিহ! তানভীর তোমার মাথা খারাপ।এত রাতে বীচে যাব। এখন কোন কাক পক্ষীও পাবে না বীচে।আর তুমি আমাকে নিয়ে বীচ থেকে ঘুরে আসতে চাইছ।আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না।”
“এই তিলোত্তমা,,এই সময়টাই বীচে ঘুরতে অনেক মজা।অনেক নিরিবিলি জায়গা।আর তোমার সাথে আমি ভালো করে রোমান্সও করতে পারি না।এই সুযোগটাকে আমি কাজে লাগাতে চাইছি।প্লিজ চল না।”
“না,,আমি পারব না।”
“এই তুমি কি আমার উপর ভরসা করতে পারছ না।দেখ আমরা জাস্ট বীচে হাঁটব, গল্প করব।প্লিজ ট্রাস্ট মি আমি আমার সীমা অতিক্রম করব না।”
“দেখো,,তানভীর আমি তোমাকে ট্রাস্ট করি।কিন্তু এত রাতে এই সময়ে বাইরে যাওয়াটা আমি ঠিক মনে করছি না।বিপদের তো আর কোন হাত পা নেই।যে কোন সময় যে কোন কিছু হয়ে যেতে পারে।আমি শুধু শুধু স্বেচ্ছায় বিপদে পড়তে চাই না।”
“এই তুমি আমাকে একবার ট্রাস্ট কর।কোন বিপদ হবে না।আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।সব বিপদ থেকে তোমাকে রক্ষা করব।তোমার শরীরে বিপদের আচও লাগতে দিব না।”

ওর এই কথায় মনে একধরণের আত্নবিশ্বাস খুঁজে পেলাম।তাই ওর কথা মেনে নিয়েই এত রাতে ওর সাথে বীচে হাঁটতে বের হলাম।
.
.
এই নিরিবিলি পরিবেশে ওর সাথে হেঁটে গল্প করতে বেশ লাগছে।দুইজন দুইজনার হাত ধরে আমাদের বিয়ের গল্প,ভবিষ্যতের গল্প,, একটা সুন্দর সংসারের গল্প একমনে করেই যাচ্ছিলাম আমরা।

হঠাৎ,,,,
কিছু বখাটে ছেলের খবলে পড়লাম।ওরা একজায়গায় বসে মদ, গাজা খাচ্ছে।আমরা ওদের সামনে পড়তেই ওরা যেন খুব খুশি হল।ওদের পৈশাচিক হাসি দেখেই ভয়ে আমার আত্নাটা কেঁপে উঠল। তানভীরের হাতটা আরো শক্ত করে ধরলাম।বিশ্বাস ছিল ও থাকতে আমার কোন ক্ষতি হবে না।

কিন্তু বখাটেদের কাছ থেকে সেদিন অনেক হুমকি শুনে আর ওদের কাছে ধারালো জিনিস দেখে তানভীর অনেকটা ভয় পেয়ে গেল।শেষে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,,,

“আমি পরিবারের একমাত্র সন্তান।আমি মরে গেলে ওরা আর বাঁচবে না।তাই জেনেশুনে আমি নিজের ঘাড়ে নিশ্চিত মৃত্যু নিতে পারবো না।তাই তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে আমি বাধ্য হচ্ছি।পারলে আমাকে ক্ষমা কর।”

এই কথা বলে সে আমাকে বখাটে ছেলেগুলোর কাছে ফেলে চলে গেল।প্রথম প্রথম আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও যখন ও বুঝতে পারল এতজনের সাথে ও একলা পারবে না ওর বাঁচার সম্ভবনা খুবি কম তখনি আমার হাতটা ছেড়ে চলে গেল।ওকে বেশি বিশ্বাস করার মূল্য সেদিন পেলাম।

সেদিন সকাল হওয়ার আগ পর্যন্ত আমার শরীরের উপর অনেক টর্চার চলল।পুরো শরীর কেটে রক্ত বের হচ্ছিল। হিংস্র হয়ে ওরা সেদিন আমার শরীরটা ক্ষত-বিক্ষত করল।আর সেইসাথে তানভীরো আমার মনটা ক্ষত-বিক্ষত করল।
.
.
সকালে আমাকে না পেয়ে তিথি তাড়াতাড়ি বীচে বের হয়ে গেল।অনেক খুঁজার পর ও আমাকে একটা ঝোপের জায়গা থেকে উদ্ধার করল।ওর কান্না সেদিন কান দিয়ে শুনেছিলাম কিন্তু ওর কান্নায় রেসপন্স করার বা উঠার মতন শক্তি শরীরে ছিল না। তারপরো অনেক কষ্টে আমাকে নিয়ে সে রুমে এল।এই অবস্থায় ও কি করবে তা বুঝতে পারছিল না।কাউকে ডেকে যে হেল্প চাইবে সে সাহসটুকুও ওর ছিল না।হঠাৎ করে সে ওর ফুফিকে কল দিল। উনি পেশায় ডাক্তার।উনিও কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছিলেন।কালকে উনার সাথে বীচে দেখা হয়েছিল।তাই তিথি কালবিলম্ব না করে ওর ফুপিকে কল দিয়ে আমাদের হোটেলে আসতে বলল।

এরপর কয়েকঘন্টার চিকিৎসার পর আমার হুশ এল।সেদিন তিথির হাত দুটো ধরে অনেক কান্না করেছিলাম।অনেক কষ্টে ওকে বলেছিলাম,, এইখানে থেকে আমাকে নিয়ে যেতে।কেউ যাতে কিছু জানতে না পারে এমনভাবে লুকিয়ে নিয়ে যেতে।

ওর ফুপির বাসায় চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে ছিলাম কয়েকদিন।ইচ্ছে করছিল নিজেকে নিজে শেষ করে দিই।কিন্তু তা পারেনি।যেদিন রেপ হয়েছিলাম সেদিন মামণি আর ফারিদ স্যারের অনবরত কল মোবাইলে আসতে লাগল।আর মামণির সে কি কান্না। আমাকে নিয়ে নাকি বাজে স্বপ্ন দেখেছে।তাই আমার সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল।আর ফারিদ স্যার বারবার বলছিল,,তিলোত্তমা তুমি ঠিক আছতো?অনেক কষ্টে সেদিন তাদের কথার জবাবে শুধু হ্যা না এই উত্তর দিয়ে ওদের সাথে কথা বলেছিলাম।

আমাকে যারা ভালোবাসে তাদের টানে আত্মহত্যার ডিসিশনটা পরে দিয়ে আর নিলাম না।কিন্তু মনের দিক দিয়ে পুরোই ভেঙ্গে পড়েছিলাম।আমার লাইফটা পুরো শেষ হয়ে গেল এই কথাটা ভাবে দিন দিন আমার শরীরটা খারাপের দিকে যাচ্ছিল।
.
.
এর দুইমাস পর,,,শরীরটা অনেক দুর্বল হয়ে গেল।কিছু মুখে দিতে পারতাম না।খুব খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল তখন।পরে তিথির জোরাজোরিতে হাসপাতালে গেলাম।গিয়ে যা জানতে পারলাম তাতে মনে হচ্ছিল আমার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে।আমি ২ মাসের প্রেগন্যান্ট। আমি নিজেই এখনো ঠিকভাবে নিজেকে সামলাতে পারি না সেখানে আরেকটা বাচ্চা কিভাবে সামলাবো!এই সমাজে বাচ্চাটাকে নিয়ে কিভাবে বাঁচব।বিয়ে ছাড়াই যে মেয়ে প্রেগন্যান্ট সে মেয়েকে এই সমাজ যে কত ধিক্কার দেয় কত কথা শুনায় তা কিভাবে আমি হজম করব।তার থেকেও বড় কথা মামণির সামনে কিভাবে মুখ দেখাব!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে