স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১১

0
3019

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১১
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

(দুঃখিত গল্পের নায়কের নামটা চেঞ্জ করে নায়কের নামটা ফারিদ রাখছি।)

রাতের বেলায় উনাদের বাড়িতে আসলাম।উনাদের বাড়ির আসার পর দেখি বাড়িতে ইতিমধ্যে মেহমানদের আনাগোনা পড়ে গেছে।উনাদের বাড়ির আশেপাশে উনার চাচাদের বাড়ি থাকায় তাদের পরিবারের সবাই এসে বাড়িটাকে বেশ জমজমাট বানিয়ে ফেলল।এতদিন পর এত মানুষদের সাথে মিশতে পেরে খুব ভালো লাগছে।বিশেষ করে বাড়ির ছোট বাচ্চাদের সাথে আমি ভালো করে মিশতে পারায় এরা সারাক্ষণ আমার আগে পিছে লেগে আছে।যেইখানে যাই সেইখানেই এসে ওরা উপস্থিত। বুঝতে পারলাম এরা আমাকে খুব পছন্দ করেছে তাই কিছুতেই আমার পিছু ছাড়তে চাইছে না।বিয়ের বাড়ির সব কাজ নিজ হাতে নেওয়ার সাথে সাথে এই এত্তগুলো পিচ্চিকে মেহেদি দেওয়া,এদের সাজিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও আমার ঘাড়ে পড়েছে।পিচ্চিদের নিজ হাতে আমি সাজিয়ে না দিলে নাকি এরা আমার সাথে আড়ি করবে আর রাগ করে আমার সাথেও মিশবে না।শুরু হল এক্সট্রা প্যারা। এই এক্সট্রা প্যারা আমার ঘাড়ে পড়লেও এই ধরণের প্যারার মধ্যেও এক ধরণের আনন্দ আছে।আর এদের রাগানো আমার পক্ষে সম্ভব না।কারণ বাচ্চাদের প্রতি আমার একধরণেরর দুর্বলতা আছে।আর সেই দুর্বলতা আরো প্রবল হল যখন আমার গ….।

উফ এত আনন্দের মাঝেও আবার সেই কষ্টকর স্মৃতিটা মনে পড়ে গেল।নিজের জীবনটাতো শেষ হল সাথে আরেকটা জীবন আমি নিজ হাতে শেষ করলাম।খুব কান্না আসছে।কিন্তু এত মানুষের সামনে কান্না করা যাবে না তাই ঘুমানোর অজুহাত দেখিয়ে রুমে চলে গেলাম।
.
.
রাতে মেহেদির অনুষ্ঠানে একটা গোলাপি কালারের লেহেঙ্গা পড়ে হালকা সাজলাম।সাথে নিজ দায়িত্বে এক এক করে সব পিচ্চিদের সাজিয়ে দিতে হল।এরপর সব কয়টা পিচ্চিকে মেহেদিও দেওয়া লাগল।

দিপা আপু- “এই এত দৌড়াদৌড়ি কেন করছিস?আর কিছু করা লাগবে না।এইদিকে আয়।”

তমা- “আপু এখনো অনেক কাজ বাকি আছে।”

দিপা আপু- “রাখ তোর কাজ।আর কিছু করা লাগবে না।সবাই মেহেদি দিচ্ছে তুইও বসে মেহেদি দে।এই যে আপু এইখানে আসুন।আমার এই কিউট বোনটাকে একটু মেহেদি লাগিয়ে দেন তো।”

তমা- “আপু এইসবের কিছু লাগবে না।আমি মেহেদি দেওয়া পছন্দ করি না সেটা তো তুমি জানোই।প্লিজ…”

দিপা আপু- “চুপ কোন কথা হবে না।এই যে আপু আপনি মেহেদি দেন।ওর কোন কথা আপনার শুনা লাগবে না।”

তমা- “…..”

ফারিদ- “দিপা কাউকে দিয়ে ওর হাতে মেহেদি দিতে হবে না।তমা আস আমার সাথে।”

তমা- “কেন?”

ফারিদ- “কথা না বাড়িয়ে আস।”

তমা- “আচ্ছা।”( ভয় পেয়ে)
.
.
ছাদে আসার পর,,

ফারিদ- “এবার হাত দাও দেখি।”

তমা- “কেন?”

ফারিদ- “এত কেন কেন কর কেন বলত?আমি নিজ হাতে তোমার হাতে মেহেদি লাগিয়ে দিব তাই হাত দিতে বলেছি।”

তমা- “এখন আপনিও শুরু করেছেন!”

ফারিদ- “তুমি কাজের থেকে বেশি কথা বল।”

জোর করে আমার হাতটা নিজের কাছে নিয়ে উনি মেহেদি পড়িয়ে দিলেন।

ফারিদ- “দেখতো এখন মেহেদিভরা হাতদুটো কত সুন্দর লাগছে।সব মেয়েরা মেহেদি দেওয়ার জন্য পাগল আর তুমি……!”

তমা- “হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি আসলেই মেহেদিভরা হাতটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে।কিন্তু মেহেদির রংয়ের মতন আমার জীবনটা তো আর রঙ্গিন না।তাই মেহেদি দেওয়াটা আমার মতন মেয়ের শোভা পায় না।”

নিপা- “ভাইয়া তুমি ওইখান থেকে তমা আপুকে এখানে ডেকে এনে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছ!আর আমি তোমাদেরকে খুঁজতে খুঁজতে শেষ।

হঠাৎ তমার মেহেদি হাতের দিকে তাকিয়ে,,ওয়াও তমা আপু তোমার হাতের মেহেদির ডিজাইনটা অনেক সুন্দর হয়ছে।
উফ ভাইয়া ভুলে গেছি আম্মু ডাকছে তোমাকে।নিচে যাও।”

ফারিদ- “আচ্ছা যাচ্ছি। এই শোন,,”

নিপা- “বল,,”

ফারিদ- “ওর দিকে খেয়াল রাখিস একটু।ওকে একা ছেড়ে আবার যাস না কোথাও।”

নিপা- “টেনশন নট ভাইয়া।ভাবির কাছে আছি আমি।”

ফারিদ- “বেশি দুষ্টু হয়ে গেছিস তুই।যা করতে বলছি তাই করবি।”

নিপা- “ওকে ওকে।যাও এবার।”
.
.
তমা- “এইদিকে আয়।রেগে আছিস না এখনো আমার উপর।”

নিপা- “আরে না।কি যে বল।আমি সব ভুলে গেছি।”

তমা- “সেইদিনের খারাপ ব্যবহারের জন্য সরিরে।”

নিপা- “ইটস ওকে।”

তমা- “শোন তোর পছন্দের একটা কানের দুল আমাকে একবার দেখিয়ে ছিলি না। অনেক খুঁজার পর সেটা আমি মার্কেটে পেয়েছি।”

নিপা- “সত্যি!”

তমা- “হ্যা।সত্যি। খাটে রেখে এসেছি। যা রুমে গিয়ে দেখ গিয়ে।”

নিপা- “তমাকে জড়িয়ে,,থ্যাংক ইউ,,থ্যাংক ইউ,, সো মাচ আপু।”

তমা-” পাগলি একটা।যা এবার।”

নিপা- “যাচ্ছি। তবে এখানে আর একা থাকতে পারবে না।তোমাকে রুমে যেতে হবে।অনেক ধরণের মানুষ আছে এইখানে।তাই ভাইয়া বলছে তোমাকে একা একা ছাড়া যাবে না।”

তমা- “ও…..”

নিপা- “আর শোন আপু দিপা আপুর হাসবেন্ডের ফ্রেন্ডের ছোট ভাই আর তার বউ আসবে রাজশাহী থেকে।শুনেছি দুলাভাইয়ের ফ্রেন্ডের ছোট ভাইয়াটা তোমার ভার্সিটিতে পড়ত।নাম জানি কি…… মনে পড়ছে না।ও হ্যা মনে পড়েছে তানভীর। তানভীর ভাইয়া।তানভীর ভাইয়া আর তার ওয়াইফ কালকে আসছে এখানে।উনাদের ভালো করে যত্নআত্তি করতে হবে বুঝলে।স্পেশাল গেস্ট ওরা।আর ওদের দেখার ভার কিন্ত আমার সাথে তোমাকেও নিতে হবে।অনেক কাজ কালকে। লক্ষ্মী মেয়ের মতন এখন রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে কেমন।আমি আসি।”

তমা- “তানভীর নামটা শুনে প্রথমে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।ও এখানে আসবে কেমন করে।তানভীর নামের অনেকেই থাকতেই পারে।শুধু শুধু টেনশন নিয়ে লাভ নেই।যাই রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।”
.
.
আজকে দিপার আপুর বিয়ের দিনে সাদা রংয়ের লেহেঙ্গা পড়লাম।লেহেঙ্গাটা উনি দিয়েছেন।এটা পড়ার ইচ্ছা ছিল না।কিন্তু উনার রাগের ভয়ে শেষ পর্যন্ত পড়তেই হল।

আপুর শুশুড় বাড়ির লোকেরা ইতিমধ্যে এসে গেছে।আমি আর নিপা সেই স্পেশাল গেস্ট কখন আসবে তার জন্য অপেক্ষা করছি।

“এই নিপা ওরা কি এখনো আসে নি।”
“কি জানি আপু।”
“আচ্ছা তুই এখানে একটু দাঁড়া। আমি ওইদিকটা থেকে আসছি মেহমেনরা কি করছে।ওরা আসলে আমি ডাক দিস।আমি চলে আসব।”
“আচ্ছা।”

কিছুক্ষণ পর,,,

“এই কেরে? চোখ কোনখানে থাকে?দেখে চলতে পারেন না।”
“সরি সরি,,,”

গলার কণ্ঠটা পরিচিত মনে হল।তাড়াতাড়ি চোখ উপরে তুললাম।ওকে এখন এই বিয়ে বাড়িতে দেখব তা ভাবতে পারেনি।তানভীর!
.
.
তানভীর – “তমা তুমি এইখানে!”

তমা- “একি প্রশ্ন আমারো। আপনি এইখানে কি করছেন। শেষ পর্যন্ত এইখানেও চলে আসছেন।আমাকে আরো কষ্ট দেওয়ার বাকি আছে নাকি! যে কষ্টটা দিলেন তাতে কি আপনার মন ভরে নি।তাই রাজশাহী থেকে ডাইরেক্ট এইখানে চলে আসছেন।”

তানভীর- “তমা প্রথমত আমি অভি ভাইয়ার বিয়ের দাওয়াতে এসেছি।আমি জানতাম না তুমি এইখানে আছ।আর দ্বিতীয়ত প্লিজ পারলে আমাকে মাফ করে দাও।বিশ্বাস কর তোমাকে আজকে এইখানে দেখে অনেক খুশি হয়েছি।অনেক করে চাইছিলাম তোমার সামনে যেয়ে মাফ চেয়ে নিব কিন্তু সেই সাহস আমার হয়ে উঠেনি।আমার ভুলের জন্য প্লিজ প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।”

নিপা- “আরে তমা আপু তুমি এইখানে।যাক তাহলে পেয়ে গেলাম তোমাকে।আরে তানভীর ভাইয়া তুমিও আছ দেখছি।আপু এই যে উনার কথা বলছিলাম।একটু আগে আসছে উনারা।আর আপু এই হচ্ছে তানভীর ভাইয়ার ওয়াইফ সোমা।উনাদের বিয়ের মাত্র ১ মাস হয়েছে।”

তানভীরের দিকে তাকিয়ে আছি।ও বিয়েও করে ফেলেছে তাহলে।ভালোই দিন কাটাচ্ছে তাহলে স্ত্রীর সাথে!

নিপা- “আচ্ছা তোমরা কথা বল।আমি আসছি।”

তমা- “নিপা আমিও যাব। তুই বরংচ ওদের ভিতরে নিয়ে যা। ওইদিকটা কি হচ্ছে তা আমাকে দেখে আসতে হবে।আর আপনারা নিপার সাথে যান। সবাই ওইখানে আছে।”

তাড়াতাড়ি করে ওদের কাটিয়ে চলে আসলাম।তানভীরকে দেখ কষ্ট আর রাগ দুটোই হচ্ছে।আমার জীবনটা শেষ করে এখন বিয়ে করে সুখে দিন কাটাচ্ছে।না জানি ওর স্ত্রীর কপালে কি আছে।বেচারি এখনো জানে না ও কি রকম মানুষের সাথে সংসার করছে।ওর স্ত্রী হয়ত তানভীরকে অনেক ভালো পুরুষ ভাবে।কিন্তু সেতো আর জানে না তানভীরেরর একটা কাপুরুষ।নিজেকে বাঁচাতে যেইদিন তানভীর আমার মত ওর স্ত্রীকে বিপদের মুখে ঠেলে দিবে সেইদিনি হয়ত ওর স্ত্রী তানভীরের আসল মুখোশটা দেখবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে