স্যার যখন স্বামী পার্ট_২৬

0
3744

স্যার যখন স্বামী
পার্ট_২৬
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

“তাই নাকি?আমি সরি বলবো।”
“হ্যা,”
“জীবনেও না।দোষটা তোমার ছিলো তাই নিজ থেকে সরি বলেছ আমার যেহেতু কোন দোষ নেই তাই সরি বলার প্রশ্নই উঠে না।”
“কিহ!”
“বিশ্বাস করুন যা করেছিলাম আপনার ভালোর জন্যি করেছিলাম।”
“ওয়েট বিয়ে করার আগে তুমি বলেছিলে না তুমি আমাকে ভালবাসো। তাহলে আমাকে আবারও আপনি করে কেন ডাকছ।তুমি করে বলো নাহলে কিন্তু আমি প্রিয়ার কাছে চলে যাব।”
“কিহ!”
“মেরে ফেলবো তোমাকে।বউকে ছেড়ে অন্য আরেকটা মেয়ের দিকে নজর দাও।”
“তাই নাকি।যদি এখন থেকে আপনি করে বলো তাহলে কিন্ত”
“আর বলবো না।তুমি করেই বলবো।”
“হুম। আর আগে জানি কি বলছিলে এই বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন শক্ত করে।”
“তোমার ভালোর জন্য…”
“মেঘ আমার ভালোর জন্য আর কখনো নেগেটিভ ডিসিশন নিবে না।তোমার এই ভুলের জন্য আমি যে কত কষ্ট পেয়েছি সেটাতো দেখো নি।তুমি চলে গেলে আমার কি কষ্ট হবে সেটাতো একবারের জন্যও বোঝার চেষ্টা করোনি।স্বার্থপরের মতো নিজের এই ঢিলা মাথায় যা আসছে তাই করে গেছ।এতদিন হল আমার সাথে ছিলে একাবারের জন্য কি মনে হয় নি তোমার স্বামী অন্যকোন মেয়ের সাথে নিজেকে জড়াতে পারেনা।ভালবাসার জন্য বিশ্বাস জিনিসটা সবচেয়ে বড়।এত ভালবাসো আমাকে আর আমার উপর এই বিশ্বাসটা রাখতে পারলে না।”
“আসলে পরিস্থিতি তখন এমন ছিলো আমার মধ্যে হিতাহিত জ্ঞানটুকুও ছিলোনা।সাগরের সেই ভিডিও আর তোমার ওইদিনের সেই কথা,তুমি বলেছিলে তুমি আমাকে গোপন কিছু কথা বলতে চাও তাই আমি ভেবে নিয়েছিলাম….”
“এই বিষয় নিয়ে একটাবার আমার সাথে কথা বলে দেখতে।ওইদিন এই কথাটা বলতে চেয়েছিলাম যে তুমি আমাকে আর প্রিয়াকে দেখে সন্দেহ করিওনা।প্রিয়ার সাথে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার কারণটা তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।আশা করি প্রিয়া তোমার সব ভুল ধরিয়ে দিয়েছে।আর একমাস পর ওদের বিয়ে হবে।প্রিয়ার কথা ওর বিয়ের কথা সারপ্রাইজ হিসেবে তোমাকে দিতে চেয়েছিলাম আর এইটাও চেয়েছিলাম আমার স্ত্রী ওর নিজ চোখে যা দেখছে সে বিষয় নিয়ে আমার সাথে কথা বলুক।কারণ তোমার মনে কি চলছিলো সেটা বুঝার জন্য,নিজের অধিকারটা আমার সামনে তুলে ধরো সেজন্য, আমাকে তুমি ভালবাসো সেটা আমার সামনে প্রকাশ করো সেইজন্য আমি কিছু বলতে চেয়েও আর বলতে পারেনি।এটাই ছিলো আমার গোপন কথা।”
“সরি বললামতো আর কখনো এরকম ভুল করবোনা।”
“তাই তাহলে কান ধরে সরি বলো।”
“কিহ!”
“আমি কান ধরে তোমাকে সরি বলবো।”
“হুম” (মুচকি হেসে)

ওর বুকের মধ্যে কয়েকটা কিল ঘুষি লাগিয়ে দিলাম।এই নাও কান ধরে সরি বললাম

“এটা কিন্তু ভারী অন্যায় হল। যেটা করতে বলছি সেটা না করে…..। মেঘ আজকে কিন্তু আমাদের ১ম বিবাহ বার্ষিকী।”
“হ্যা জানিতো।”
“তোমাকে যখন প্রথম বিয়ে করি তখন তুমি বিয়েটা মেনে নাওনি।তাই আমাদের বিয়ের কথা কাউকে জানাইনি।চেয়েছিলাম আমাকে যেদিন মন থেকে ভালবাসবে সেদিনি সবাইকে জানিয়ে তোমাকে আবার বিয়ে করব।পরিবারের সবাই,তোমার বন্ধুবান্ধব সবার উপস্থিতিতে আমরা ২য় বার আমাদের প্রথম বিয়ের তারিখে বিয়ে করে ১ম বিবাহবার্ষিকী পালন করলাম। আর এইবার তোমার সাথে আমার ২য় বার হওয়া বিয়েটা মেনে নিয়েছ তো। ”
“হুম (লজ্জা মুখে)।”
“তাহলে তো আমি আমার স্বামীর অধিকারটা ফলাতে পারি কি বলো।আজকে তাহলে তোমার আদর….”
“ওই স্টপ স্টপ আজকে ওইসবের কিছু হবেনা।আজকে সারারাত জেগে অনেক গল্প করবো।এই দিনটা আমি স্মৃতির পাতায় স্মরণীয় করে রাখতে চায়।”
“ওকে।As u wish.(মুচকি হেসে)।By the way এই যে আজকে এই সারপ্রাইজটা দিলাম সেটা কেমন লাগলো।”
“একদিকে ভালো আরেকদিকে খারাপ।”
“কেন?”
“২য় বার আমাদের বিয়ে হয়েছে এইটা ভেবে খুব খুশি লাগছে।কিন্তু তোমাকে ছাড়া এই ৪টা মাস একা একা দিন কাটিয়েছি।খুব দুর্বিষহ কেটেছে আমার সেই দিনগুলো।মনে হচ্ছিল আমার সারা গায়ে কাটা গেঁথে দেওয়া হয়েছে। এই ব্যাথার তীব্র যন্ত্রণায় আমার পুরো শরীর নীল হয়ে গেছে।তাহলে বুঝতেই পারছো আমার দিনগুলো কেমন কেটেছিলো।”
“মেঘ আমিও তোমাকে ছাড়া যে খুব ভালো ছিলাম তা কিন্তু নয়।তোমার মতন আমিও এই ৪টা মাস তোমাকে না দেখে ছিলাম।তোমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজেও অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছি।কিন্তু আমার ভিতরে কি যন্ত্রণা চলছিলো সেটা শুধু আমিই জানি।আজকে এইসব কথা বাদ দাও।আমাদের দুঃখের দিন শেষ।এখন থেকে যা হবে ভালোই হবে। একটা কাজ করো আগে ফ্রেস হয়ে আসো।এই ভারী কাপড় চেঞ্জ করে এই থ্রিপীচটা পরে নাও।”
“ওকে”
“এই চল এখন বারান্দায় যায়।”
“হুম”
.
.
“আজকে তোমাকে আমার জীবনের কিছু গল্প শুনাবো।গল্প শেষ করার আগ পর্যন্ত কোন কথা বলবে না।”
“ওকে। As u wish.”
“তাহলে শুনো।৭ বছর আগের কথা।আমি ঢাকাতে তখন অনার্স পড়ছিলাম।বন্ধুরা মিলে প্রতিবছর মেলাটা গ্রামের বাড়িতে করি।সেইবারও আমি বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যায়। মেলায় হাঁটছিলাম।তখন দেখি একটা ছোট্ট মেয়ে বয়স কত হবে ১৩ কি ১৪। মেয়েটা শাড়ির কুচি লুঙ্গির মতন উঁচু করে ধরে হাঁটছিলো আর এদিক ওদিক আচাড় খেয়ে পড়ে যাওয়ার মতন অবস্থা। শাড়ি পড়া মেয়েটার হাঁটার নমুনা দেখে আমরা বন্ধুরা হাসাহাসি করে শেষ। আর এইদিকে মেয়েটা হেঁটে আমাদের দিকে আসছিলো সেটা আমাদের কারোরই খেয়াল ছিলো না।মেয়েটা শাড়ি পড়ে হাঁটার সময় টাল সামলাতে না পেরে আমার গায়ের উপর দিয়ে পড়ল।”

এতটুকু বলে মেঘের মুখের মুখের দিকে তাকালাম।ওর মুখের এক্সপ্রেশন দেখে আমার হাসি আসছিলো।কিন্তু অনেক কষ্টে সেটা সংযত রাখলাম।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে