স্বপ্ন সারথি পর্ব: ০৬

0
800

#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০

স্বপ্ন সারথি পর্ব: ০৬
টি এ অনন্যা

বাগানে রিয়ানাকে দেখে শাহানাজ ডাকতে শুরু করেন, “এই রিয়ানা, এদিকে আয়।”
বহুদিন পরে রিয়ানা তার খালামনিকে দেখে দৌড়ে কাছে এসে জড়িয়ে ধরে অভিমানী স্বরে জিজ্ঞাসা করলো, “আমাকে তোমার মনে আছে? কী করে চিনলে আমাদের বাড়ি?”
“আরে আমার মা তো কত বড় হয়ে গেছে! এখন আবার অভিমান করতেও শিখে গেছে!”
“ঢাকায় গেলে তোমার তো কখনো মনেই পড়ে না এখানে যে একটা মা আছে তোমার। মাঝেমধ্যে এসে তো একটু দেখতে পারো তাই না?”
“কে বলেছে মনে পড়ে না? এইতো এলাম।”
“তোমাদের আসার কথা ছিল গতকাল আর আসলে আজ। তাও আবার আপুর আকদ উপলক্ষে। নাহয় কী আর তোমাদের পদধূলি পড়তো আমাদের বাড়িতে?”
শাহানাজ অনিক হায়দারকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “দেখেছো মেয়ে আমাদের কত কথা শিখে গেছে!”
কিন্তু পাশে তাকিয়ে দেখেন তিনি নেই। রিয়ানা জিজ্ঞাসা করল, “আংকেল কোথায় খালামনি?”

শাহানাজ এদিক সেদিক তাকিয়ে অনিক হায়দারকে না দেখে বুঝলেন সে হয়তো ভিতরে গাড়ি পার্ক করতে গিয়েছে। রিয়ানাদের বাড়িতে পার্ক করার তেমন ফাঁকা স্থান নেই। তার দাদার আমলের বড় বাড়ি তিন চাচার মধ্যে ভাগ হয়ে যাওয়ার পর সবার ভাগে অল্প অল্প জায়গা পড়েছে। সেইটুকু জায়গাতে বিল্ডিং তোলার পরে আর গ্যারেজ করার মতো জায়গা নেই। অনিক হায়দারের রিয়ানাদের বাড়ির কাছাকাছি পরিচিত এক গ্যারেজে এর আগেও তিনি গাড়ি রেখেছেন। তাই প্রিয়নকে না পাঠিয়ে তিনি শাহানাজ ও প্রিয়নকে নামিয়ে দিয়ে চলে যান গাড়ি রাখতে।
শাহানাজ বললেন, “ও গাড়ি পার্ক করতে গিয়েছে।”

রিয়ানা তার খালামনির সাথে অভিমানের ঝুলি নিয়ে কথা বলতে বলতে খেয়ালই করেনি পাশে প্রিয়ন দাঁড়িয়ে আছে। অনিক হায়দারকে খুঁজতে গিয়েই প্রিয়নকে নজরে পড়ে রিয়ানার। কিন্তু প্রিয়নকে অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে। কারণ তার নজর ছিল বাগানে হাটতে থাকা নীলপরির দিকে। খুব বেশি উজ্জ্বল সুন্দরী না হলেও অন্যরকম স্নিগ্ধতা আর লাবণ্যময়ী রমনীর ঘন লম্বা চুলগুলো পিঠের উপর ছড়ানো। মুখে নেই কোনো কৃত্রিম সাজ। চোখে শুধু কাজল টানা।

রিয়ানা শাহানাজকে ঘরে পাঠিয়ে দিয়ে প্রিয়নের চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল, “এই যে হ্যালো কী এত ভাবছো ভাইয়া? একমনে কী এমন দেখছ শুনি?”
প্রিয়ন অন্যমনস্ক হয়ে অস্ফুটস্বরে বলল, “নীলপরি আমার নীলপরি।”
রিয়ানা প্রিয়নের কথা বুঝতে না পেরে প্রিয়নের হাতে ঝাঁকুনি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “কী হলো? কী বলছ না বলছ? আর ঐদিকে কী দেখো হুম?
প্রিয়ন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, ” আরে কিছু না। অনেক বড় হয়ে গেছিস তো তুই। তা কেমন আছিস ?”
“বড় তো হবোই। কতবছর পর এলে তোমরা সে খেয়াল আছে তোমার! আমি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

প্রিয়ন একদিকে রিয়ানার সাথে কথা বললেও নজর পড়ে আছে নীলপরির দিকে। এতক্ষণে রিয়ানা লক্ষ্য করল প্রিয়ন কী দেখছে বাগানের দিকে। তা দেখে মুচকি হাসে রিয়ানা।
রিয়ানা প্রিয়নকে বলল, “ভাইয়া তুমি দাঁড়াও একটু আমি আসছি। তোমাকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব আজ।”
“আরে কোথায় যাচ্ছিস। চল ভিতরে যাব। খালামনির সাথে দেখা করব তো।”
“তুমি এক মিনিট দাঁড়াও আমি আসতেছি।

রিয়ানা প্রিয়নের নীলপরির কাছে গিয়ে তাকে হাতে ধরে টেনে নিয়ে আসে প্রিয়নের কাছে। নীলপরিকে জড়িয়ে ধরে বলল, ” ভাইয়া এই হলো পূর্ণতা। আমার কলিগ, বন্ধু, বোন সব। আমি আর পূর্ণতা একই ব্যাচে বিসিএস করে একই সময়ে কলেজে জয়েন করি। কিন্তু ভাইয়া জানো পূর্ণতা কিন্তু দারুণ ট্যালেন্ট গার্ল। কেমেস্ট্রীতে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছে। আমার মতো লাড্ডু না।
পূর্ণতা এতক্ষণ প্রিয়নকে লক্ষ্য করেনি। কিন্তু রিয়ানার কথায় প্রিয়নের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠে। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল, “একদম বেশি বলে ফেলছ কিন্তু রিয়ানা। আর তুমি মোটেই লাড্ডু নও। লাড্ডু হলে প্রথম বারেই বিসিএস করতে পারে কেউ?”

পূর্ণতা আবার বলতে শুরু করল, “আমি মোটেও বেশি বলিনি। পূর্ণতা, এই হলো আমার প্রিয়ন ভাইয়া। ঢাকায় থাকে। ভাইয়াদের নিজেদের ব্যবসায় দেখাশোনা করে আংকেলের সাথে। ”
প্রিয়ন পূর্ণতার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, “নাইস টু মিট ইউ।”
পূর্ণতা কিছুটা ইতস্তত বোধ করছে দেখে প্রিয়ন হাত সরিয়ে নিলে পূর্ণতা বলল, “নাইস টু মিট ইউ টু।”
রিয়ানা প্রিয়নকে বলল, “ভাইয়া তুমি যাও আগে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও পরে কথা হবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে থাক তোরা আমি যাচ্ছি।”

প্রিয়ন যেতে নিয়ে আবার পিছু ফিরে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল, “সি ইউ এগেইন মিস পূর্ণতা। কী অবাক হলেন তো? এই গোলাকার পৃথিবীতে ঘুরে ফিরে আবার দেখা হবে। এটাই কী স্বাভাবিক নয়?”
প্রিয়নের কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না রিয়ানা। এমনকি পূর্ণতাও ঘোরলাগা বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে প্রিয়নের যাবার পথে।
কথার মানে বুঝার জন্য রিয়ানা পূর্ণতার হাতে ধরে তার দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “ভাইয়া তোমাকে দেখে নজর ফেরাতে পারছিল না। আর তুমিও ভাইয়াকে দেখে প্রথমে চমকে উঠেছিলে কেন? তাছাড়া এখন হঠাৎ করে এ কথা বলল কেন?”
পূর্ণতা অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল, “কই না-তো। আমি কেন চমকে উঠব! আর আমি কী করে জানব তোমার ভাইয়া কেন এ কথা বলল? আমারও তো একই প্রশ্ন।”
“আচ্ছা ঠিক আছে বাদ দাও। চলো ভিতরে গিয়ে দেখি আপু কী করে? সন্ধ্যার পর কিন্তু ওরা চলে আসবে। আপুকে সাজানোর দায়িত্ব তোমার। ”
“হুম, আচ্ছা চলো।

প্রিয়ন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার পর তার খালামনি শায়লার সাথে দেখা হলে কুশলাদি বিনিময় করে। ইতোমধ্যে অনিক হায়দারও চলে এসেছে। শায়লা তাদের রুম দেখিয়ে ফ্রেশ হতে বলে তিনি নাস্তা আনতে যায়।
রিয়ানাদের বাড়ির সবকিছুই মোটামুটি চেনে প্রিয়ন। তাই ফ্রেশ হয়ে রিয়ানার বড় বোন তিয়াশার রুমের দিকে পা বাড়ায়। কারণ আসার পর থেকে তিয়াশার সাথে দেখা হয়নি। তাই সে কিছুটা অভিমানও করেছে এবং তার কারণ জানার জন্য এখন তিয়াশার সাথে দেখা করবে সে। প্রিয়ন তিন বছরের বড় হলেও তিয়াশার সাথে তার বন্ধুর মতো সম্পর্ক। তিয়াশার ঘরের দরজার সামনে এসে থমকে দাঁড়ায় প্রিয়ন। ঘরের ভেতর তিয়াশার পাশে পূর্ণতা এবং রিয়ানা বসে আড্ডা দিচ্ছিল।

রিয়ানা কথা বলতে বলতে হঠাৎ দরজার দিকে নজর গেলে প্রিয়নকে দেখতে পায়। রিয়ানা উঠে গিয়ে প্রিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ” ভাইয়া, তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? ভেতরে আসো।”
“না, ভেতরে আসব না। তিয়াশার সাথে দেখা হয়নি তাই এসেছিলাম কথা বলতে। তোরা থাক আমি গেলাম। পরে কথা হবে। ”
তিয়াশাও উঠে এসে রিয়ানার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “কথা বলতে এসে কথা না বলেই চলে যাচ্ছিস!”
” কী করব বল এতদিন পর তোদের বাড়ি এলাম। তোর তো কোনো খবরই নাই। বিয়ের কনে হয়ে তো এলিয়েন হয়ে গিয়েছিস। ঘর থেকেই বের হচ্ছিস না। বিয়ের পর তো তোকে খুঁজেই পাবে না কেউ। ”
“আরে ধ্যাৎ তেমন কিছু না। আয় ভিতরে এসে বস।”

সন্ধ্যার পর তিয়াশার আকদের জন্য বর পক্ষের লোক আসে। তার আগেই পূর্ণতা সাজিয়ে দেয় তিয়াশাকে। অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ সময় জুড়ে প্রিয়নের দৃষ্টি আটকে থাকে পূর্ণতার দিকে। পূর্ণতা তা লক্ষ্য করলেও তাতে ভ্রুক্ষেপ করেনি। কিন্তু তৃতীয় এক জোড়া চোখ তা ঠিকই লক্ষ্য করে। পূর্ণতা নিজের মতো করে রিয়ানার সাথে ঘুরেফিরে। রিয়ানা এরই মধ্যে পূর্ণতাকে শাহানাজ এবং অনিক হায়দারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত এগারোটা বেজে যায়। পূর্ণতা চলে যেতে চাইলেও রিয়ানা তাকে আটকে দেয়। প্রিয়নও চেয়েছিল ঠিক এমনটাই হোক। কিন্তু পূর্ণতা তার মায়ের কথা বলে চলে যেতে চাইলে রিয়ানার মা পূর্ণতার বাসায় কল করে রেহানা বেগমকে জানান আজ পূর্ণতা রিয়ানার সাথে থাকবে।
রাত যখন গভীর হয়…….

চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে