স্বপ্নপুরে পর্ব : ৫

0
921

স্বপ্নপুরে পর্ব : ৫
গল্পবিলাসী – নিশি

-“মিস ইশ্যূ! আপনি চাইলে আমি আজকের মধ্যে আপনার ফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে পারি। আপনি চাইলে আমি এটাও করতে পারি সারাজীবন সুখে রাখার দায়িত্ব আমার।তারজন্য যদি আপনি কোনো ডিল করে রাখতে চান তাতেও আমি রাজি। ”
-“হ্যা জানি। আজকালকার প্লেবয় ছেলেদের কাছে বিয়ে মানেই শুধুই শারীরিকভাবে কাউকে কাছে পাওয়া প্রয়োজন শেষ তো সে কে তাকে চিনেও না। ”
-“হ্যা এইটা প্লেবয় দের কাজ আমার নয়। আপনি বরং একটা কাজ করুন। যেহেতু আপনি উপমার ফ্যামিলি মেম্বার। আমি আমার বোনকে কনফারেন্সে রেখে আমাদের বিয়েটা করে নেই। “অবাক হয়ে আছে ইশ্যূ। কি বলছে এই লোক। বিয়ে?
-“কি হলো এতো অবাক হওয়ার কি আছে? “ইশার অবস্থা দেখে
-” আম যাস্ট জোকিং। আমার নিজেরও এভাবে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই। এই দেখুন।মোবাইলটা ইশার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে এটা আমার স্বপ্নপুরের রাণীর পা। যাকে আমি স্বপ্নে ভালোবেসে বসে আছি।শুধু আজ থেকে নয় দীর্ঘ সময় ধরে তা বহমান।তারপর ফাহাদের সাথে হয়ে যাওয়া পুরো স্বপ্নগুলোই সে ধীরে ধীরে ইশাকে খুলে বললো। সব শুনে
-“এটা কি আদৌ সম্ভব?”
-” হুম।সম্ভব।”
-” আল্লাহ চাইলে সবই সম্ভব।”
– “স্বপ্নে ভালোবাসা।”
-” হ্যা।” ইশাকে বিশ্বাস করানোর জন্য ফাহিমাকেও কল দিয়ে তার সাথে কথা বলিয়ে দিয়েছে ফাহাদ। সব শুনে সে নিজেও বিশ্বাস করতে বাধ্যহলো সেই ভালোবাসাতে।
-” তো আপনারা আজ ভোরেই রওনা হচ্ছেন?”
-” হ্যা। আজ ভোর ছয়টায় রওনা হচ্ছি। ওকে ব্রো! তাহলেতো হয়েই গেলো। আমার দিক থেকে যতোটা হেল্প প্রয়োজন হয় আমি আপনাদের করবো। আশাকরি মেজো চাচ্চিও রাজি হয়ে যাবে। আর না হলে রাস্তা ক্লিয়ার করার রিক্সসটা নাহলে আমিই নিলাম।একমাত্র শালিকা বলে কথা কি বলেন? ”
-” একদম। ডিয়ার শালিকা” বলেই হেসে দিলো ফাহাদ। দুজনে মিলে কিছু প্ল্যান করে উঠে পরলো। রুমে গিয়ে দেখে পাগলের মতো ছটফট করছে উপমা।
-” বাবাহ স্বপ্নপুরের রাণীর আবার কি হলো বলতো? এভাবে ছটফট করছিস কেনো?”
-” দেখলি তো আমি ফুপ্পি ঠিকই বলে আমার দ্বারা কোনো কাজই হবেনা।”
-” কি হয়েছে সেটাতো বলবি নাকি?”
-” আমি ওর নাম্বারটাই নিতে ভূলে গেছি।” কথাটা এমন ভাবে বললো যেনো এক্ষনি কান্না করে দিবে।
-“ও। তারজন্য এভাবে গোমড়া হয়ে আছিস? ”
-“আরতো দেখাই হবেনা না? আজ ভোরেই বেরিয়ে পরবো আমরা।”
-“আরে ইতো সিরিয়াস কেনো হচ্ছিস তুই। দেখবি ঠিক ব্যবস্থা হয়ে যাবে। মহব্বতের টানে দেখবি ঠিক চলে আসবে।” কিন্তু না। উপমার ছটফটানি যেনো পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলছে। উপমার এমন ছটফটানি অবস্থা কিছুটা ভিডিও করে ফাহাদকে হোয়াটস্যাপে সেন্ড করে দিলো। শুয়ে শুয়ে প্ল্যানিং করছিলো ফাহাদ।হঠাৎ করেই টুং করে নোটিফিকেশন বেজে উঠাতে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো। ইশার নাম্বার থেকে মেসেজ দেখে সাথে সাথেই সিন করে ফেললো সে। উপমার সাথে দেখা হওয়ার আগে নিজেকে পাগল মনেহতো কিন্তু নিজের থেকেও বেশি পাগল তো উপমা। ভিডিওটা দেখে শুধু মনেহচ্ছে কিভাবে ছিলো এতোগুলো বছর এই পাগলিটা।
-” আচ্ছা শোন তুই ফ্রেশ হয়ে আয়তো। দেখবি ভালোলাগবে।”
-“আরে ধুর। ভাল্লাগছেনা কিছু। ও ইবা এমন বলতো? কেনো? একটাবার কি দেখা করতে পারতোনা এসে? আমিতো রুম নাম্বারও বলে দিয়েছিলাম।” কথার বাহানায় দরজার কাছে গিয়ে খুব সাবধানে দরজাটা খুলে দিলো ইশা। চুলগুলো কাঠি দিয়ে বাধতে বাধতে
-” আচ্ছা তুই তাইলে এমনেই থাক। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।” বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে পরলো। চোখ দিয়ে পানি পরছে। চোখের পানিগুলো মুছে সবাই আমাকে কষ্ট দেয়।কেউ আমাকে বুঝেনা। ফুল ভলিয়মে প্রিয় রবীন্দ্রসংগীত ছেড়ে দিলো।
যখন মন খারাপ থাকে তখন এই কাজটাই সে করে।হেডফোনে বাজছে সেই পুরোনো গান,
যখন পরবে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে,,,,,,,,,,,,,,,
আজ বাবা মাকে বড্ড মিস করছে উপমা।চোখ দিয়ে অধোর ধারায় পানি গড়িয়ে পরছে।বাধা দিচ্ছে না উপমা।আগে যখন রেজাল্ট নিয়ে মন খারাপ হতো সবসময় মায়ের কোলে মাথা রেখে মাকে জড়িয়ে ধরেই শুয়ে থাকতো। মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কতো মোটিভেশনাল কথা বলতো কয়েকমূহুর্তের মধ্যেই মনটা ভালো হয়ে যেতো। আজ খুব ইচ্ছা করছে মায়ের কোলে শুয়ে কষ্টটা হালকা করতে।একটা সময় ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো উপমা। সবাই শুধু নিজের কথাটাই ভাবে আমার কথা কেউ ভাবেনা ভেবেই চোখের পানি ফেলতে লাগলো। হঠাৎ করেই আচমকা হাতে টান অনুভব হলো তার। চোখ ফিরিয়ে ফাহাদকে দেখে যেনো কান্নাটা আরো বেড়ে গেলো।কিন্তু মুখে কোনো শব্দ করলোনা। চোখ থেকে পানি পরছে। বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে একমনে।
-“সরি।” হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আবারো বাহিরের দিকে তাকিয়ে রইলো উপমা।অজানা অভিমানে ভীর জমিয়েছে তার মনে।কেনো কাদঁতে হলো তাকে।কেনো মনে করে নাম্বারটা নিলোনা ফাহাদ? ততোক্ষনে ইশা ওয়াশরুম থেকে চলে এসেছে। হাতটা আবারো টেনে একদম কাছে নিয়ে এলো ফাহাদ।
-“কি হয়েছে মন খারাপ কেনো?”
-” কিছুনা।” বলেই রুমের দিকে পা বাড়ালে হাতটা টেনে হুট করেই কোলে তুলে নিলো। কোনো রিয়েক্টিই দেখালোনা উপমা। রুম থেকে বেরিয়ে তার রুমে এনে দরজাটা লক করতে গেলে বাধাঁ দেয় উপমা। কোল থেকে নেমে বেরিয়ে যেতে চাইলে হাতটা টেনে আবারো রুমে নিয়ে আসে।
-“কি হচ্ছে কি?”
-” যা হচ্ছে হতে দাও।” বলে উপমাকে টেনে বেলকনিতে নিয়ে এলো। এতোটুকুও ভয় করছেনা উপমার। কেনো? অন্যসব ছেলেদের দেখে কেমন যেনো ভয় হতো কিন্তু ফাহাদ? ফাহাদকে কেনো তার ভয় লাগছেনা? একমনে বেলকনির গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে উপমা পেছন থেকে উপমার হাত দুটোতে হাত রেখে,
-” খুব বেশিই ভয় হয়েছিলো বুঝি?” কোনো জবাব দিলোনা উপমা।উপমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে
-“সরি স্বপ্নপুরের মহারানী। “ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো উপমা। বুকের মধ্যে চেপে ধরলো।
-“সরিতো। আমিতো ভেবেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পরেছো তাই আর ডাকিনি।”বুক থেকে মাথা তুলে
-“নাম্বার দাওনি কেনো আমাকে? আমারটাও নাওনি।আবার হারিয়ে যাবে না? সবাই আমাকে একা করে দিয়ে চলে যায়।মা বাবাও চলে গেছে।সামনের মাসে ইশ্যূও চলে যাবে। আর তুমিও তো চলে যাবে।আমি একাই থাকবো।” কথাগুলো কেমন কান্নাময়ী শুনালো।
-“আমিতো কখনোই ছেড়ে যাবোনা মহারানী। “দুজনেই চুপচাপ।কাঠি দিয়ে বেধেঁ রাখা চুলগুলোকে মুক্ত করে চুলে মুখ ডুবিয়ে দেয় ফাহাদ। হঠাৎ করেই কেমন দমকা বাতাস বইতে শুরু করলো।কেমন শীত শীত অনুভব হতে লাগলো উপমার। বাহুডোরে থেকেই ঘুরে ফাহাদকে জড়িয়ে ধরে
-” শীত লাগছে। ”
-“আমার পায়ের ওপর পা রাখো।” ফাহাদের কথামতো তার পা দুটো ফাহাদের পায়ের উপর রাখতেই এভাবে হেটে রুমে নিয়ে এলো ফাহাদ। ফাহাদের মোবাইলের লক বাটনটা চেপে ধরে কয়টা বাজে তা দেখার জন্য। স্ক্রিনে একজোড়া পা দেখেই তার দৃষ্টি স্থির হয়ে যায়।কতোটা নিপুণভাবে একেঁছে পা গুলো। আর নূপুরটা? নূপুরটাও একদম স্পষ্ট ভাবে ফুটে উঠেছে।হঠাৎ করেই কেনো যেনো মনেহলো কেউ তাকে নিখুঁত দৃষ্টিপানে চেয়ে আছে।দৃষ্টি ঘুরিয়ে তাকাতেই তার মুখোমুখি। ঘুমে চোখগুলো কেমন ভারী হয়ে আসছিলো উপমার।তা যেনো তার চাহনিতেই বুঝতে পারলো ফাহাদ।
-“কিছু খেয়েছো? “মাথা নাড়িয়ে না জানালো উপমা। হালকা হেসে কিছুক্ষন আগে রুমে আসার সময় পির্জা নিয়ে এসেছিলো। পির্জাটা সামনে এনে একটা টুকরো মুখের সামনে তুলে ধরে।কিছুক্ষন সে হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে
-” ক্ষিদে নেই আমার।” বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো। কিছুটা জোড় করেই মুখে তুলে দিলো ফাহাদ।মুখে পুরেই বসে রইলো। এই রাতের বেলা খাওয়াটা তারকাছে প্রতিনিয়ত তৃতীয় যুদ্ধ মনেহয়। কিছুক্ষন পর
-” হা করো।” হা করতেই মুখের ভেতর থেকে পির্জার অংশটা দেখা গেলো।
-“খাওয়া কেনো?”
-” আমি আর খাবোনা।”
-” খেতে হবে।”
-“নাহ। আমি আর ওই রুমে যাবোনা। এখানে থাকি? ”
-“এভাবে? এখানে? ”
-“হুম।”
-“ভয় করছেনা”
-” একদম না। ”
-বিয়ে হয়নি কিন্তু উল্টা পাল্টা কিছু হলে! ”
-” ধুর। “বলেই মুখ ফিরিয়ে নেয় উপমা। হালকা হেসে
-” আচ্ছা থেকো। দেখো অনেক রাত হয়ে গেছে তোমাকে আবার ভোরে উঠতে হবে।”
-“আমি আর খাবোনা। ”
-“নাহ খেতে হবে। “বলেই আবারো জোর করেই মুখ তুলে দিলো। এরপর আর একটা টুকরোও তার মুখে তুলে দিতে পারলোনা ফাহাদ।বাকি অংশটা নিজে খেয়ে নিয়ে সোফায় শুয়ে পরলো। আর উপমাকে বেডে শুয়ে পরতে বললো। সারাদিন ক্লান্তিকর ভাবে কাটিয়ে যেনো মূহুর্তেই চোখে ঘুম নেমে এলো। কিছুক্ষন পর বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব হলো ফাহাদের। চোখ খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।উপমা এখানে? একটু নড়েচড়ে উঠতেই চোখ খুলে তাকালো উপমা। হালকা হেসে,
-” এখানে কেনো?”
-” আমি কাউকে জড়িয়ে না ধরে ঘুমোতে পারিনা।বাসায় তো ইশ্যূ থাকে।”
হো হো করে হেসে উঠলো ফাহাদ।
চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে