#গল্পপোকা_ধারাবাহিক_গল্প_প্রতিযোগিতা_২০২০
সানজিদা তাসনীম রিতু
সে পর্ব-৬
মায়ের ঘরেই বসে ছিলাম। রিশাদ চলে যাওয়ার পর কিছুক্ষন ওদিকেই তাকিয়ে থাকলাম। খুব ক্লান্ত লাগছে। মায়ের মুখটা বারবার ভেসে উঠছে। অনেক গুলো অনুভূতির মধ্যে এই মুহূর্তে একাকীত্ব টাই ধরে বসলো তাই বালিশটা বুকে চেপে হু হু করে কেঁদে ফেললাম।
কতক্ষন পর জানিনা দরজায় হালকা টোকা দেওয়ার শব্দে উঠে বসলাম।
-“কে?”
-” আমি তোমার দোতলার আন্টি গো, দরজাডা খোলো মা।”
কাপড় ঠিকঠাক করে দরজা খুললাম। উনার হাতে ঢাকনা দেওয়া মিডিয়াম সাইজের ট্রের দিকে একপলক তাকিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম-“জী আন্টি?”
-” কিছু খাবার আনছিলাম মাগো, একটু খাইয়া নেও। সারাডাদিন যা গেলো, কিছু দাঁতেও কাটো নাইযে।”
-” আন্টি দরকার ছিলো না, আমার ক্ষিদা নেই।”
-” তা কইলে তো হবে না মাগো। আমি খাওয়াই দেই, অল্প করে খাও।”
-“আন্টি প্লিজ, আমি খাবোনা।”
-“বুঝতেছি মা, এই অবস্থায় কারই বা গলা দিয়া ভাত নামে কিন্তু তোমার শরিলডা এমনিতেই ভালো না, এখন না খাইলে যে আরো খারাপ হইবো মাগো।”
-“কিন্তু…”
-“মাগো আমি তো তোমার আম্মার বয়সীই হবো, শুনবা না মা?”
-” আন্টি তাহলে একটু বসেন, গোসল করে আসছি।” আর কথা বাড়ালাম না, ভালো লাগছে না।
-“আচ্ছা মা, আমি তাইলে একটা ডিম ভাইজা আনি, তোমার নাকি খুব পছন্দ।”
-“লাগবেনা আন্টি, যা এনেছেন যথেষ্ঠ। আমি বেশি দেরি করবো না।”
উনি হেসে বললেন “আইচ্ছা।”
গোসল করে এসে বসলাম, উনি খাওয়াতে খাওয়াতে বললেন-” মাগো, আমার মেয়েডারে পাঠাই দেই? আইজকা থাকুক তোমার লগে?”
-” আন্টি ঝামেলা করতে হবেনা, আমি একা থাকতে পারবো।”
-“ঝামেলা কিগো মা! মরা বাড়িতে একা থাকতে নাই। আমি যাই ওরে পাঠাই দিতাছি।” বলতে বলতে উনি চলে গেলেন।
উনি চলে যাওয়ার পর দরজা টা বন্ধ করে দিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলাম নিতার মেসেজ- স্যরি রে, তুহীন তোর ব্যাপার টা মেসেজ করেছিলো। আমি খুবই দুঃখিত যেতে পারলাম না। আব্বু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মেসেজ টা দেখে মোবাইলটা লক করে রেখে দিলাম, আর কল ব্যাক করলাম না।
-“আপু আসবো?”
–“কে?”
-“আপু আমি রিমা, দোতলায় থাকি।”
-” ও হ্যা, আসো আপু।” বলে উঠে গেলাম দরজা খুলতে। এতোটা মাথা ব্যাথা করছে যে কথা বলতে ভালো লাগছে না। রিমাকে বললাম- “আপু তুমি শুয়ে পড়ো, আমার খুব মাথা ব্যাথা করছে, আমি আমার রুম থেকে ঔষধ নিয়েই চলে আসছি।” রিমা ঘাড় কাত করে সম্মতি দিলো।
১১টা বেজে পার হয়ে গেছে, দ্রুত আমার রুমে ঢুকে টেবিলের ড্রয়ার থেকে ঔষধ টা নিয়ে বের হয়ে দরজা অফ করে ঘুরে মায়ের রুমের দিকে যাওয়ার সময় অজানা ফুল গাছটার দিকে চোখ গেলো, মনে হলো ওটা যেনো বাতাসে দুলে দুলে মাথা নেড়ে আমাকে ডাকছে। বেশি না ভেবে মায়ের রুমে চলে গেলাম। রিমা সুন্দর করে মশারি টাঙিয়ে একপাশে শুয়ে পড়েছে। আমি আর দেরি না করে শুয়ে পড়লাম, খুব ক্লান্ত লাগছে।
মৃদু খসখস শব্দে ঘুম হালকা হয়ে আসলো। রিমা উঠেছে ভেবে পাশ ফিরে শুয়ে অনুভব করলাম ও পাশেই শুয়ে আছে আর বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। চট করে ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেলে নিরেট অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখলাম না। বালিশের নিচ থেকে মোবাইলটা বের করে সময় দেখলাম। রাত ২.২৯মিনিট। হঠাৎ শরীর শিউরে উঠলো, খসখস শব্দটা বাড়ছে। ও কিছুনা ভেবে নিজেকে সান্তনা দিলাম যেনো। উঠে বসলাম, ওয়াশরুম হয়ে আসি। কি মনে করে মোবাইলটা হাতে করে নিয়ে গেলাম। মুখে পানি দিতেই কারেন্ট চলে গেলো, মোবাইলের আলো জ্বালাতেই চমকে উঠলাম ওয়াশরুমের দেওয়ালের এককোণে রিশাদ দাঁড়িয়ে। মোবাইলটা পড়ে গেলো হাত থেকে।
-“তু-তুমি রিশাদ না আমি জানি…”এটুকু বলতেই ওটা তড়িৎ গতিতে কাছে এসে মুখ চেপে ধরলো।ইশ! কি বীভৎস গন্ধ! ওটা আমার শরীর শুকতে শুরু করলো। খুব কাছ থেকে একদম সজ্ঞানে দেখতে থাকলাম আমি ওটাকে। রিশাদের মতোই দেখতে অবিকল, কিন্তু নাকের উপর খাড়া একটা কাঁটা দাগ আছে তেমন গভীর না। খুব কাছ থেকে ছাড়া বোঝা যাবেনা হয়তো। রিশাদের নাকে এমন কোনো দাগ তো দেখিনি আমি, তিন বছর ধরে ওকে কতোভাবেই তো দেখেছি।
ওটা হঠাৎ তার নোংরা হাত দিয়ে যখন আমাকে স্পর্শ করতে লাগলো আমি গুঙিয়ে উঠলাম। চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়তেই ওটা আমার দিকে তাকালো, সেই নিষ্প্রাণ শীতল চাহনী কিন্তু চাহনীতে কামনা নিংড়ে বের হচ্ছে। ধপ করে শব্দ হলো কেউ পরে যাওয়ার মতো, তারপরেই গোঙানোর শব্দ। রিমা উঠেছে বোধহয়, ওটা আস্তে করে মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে এক পা পিছিয়ে গেলো, হিসহিসিয়ে বলে উঠলো- “আজ ছেড়ে দিচ্ছি, কিন্তু ‘ও’ তো আর আসবেনা, কোনোদিনও না। আমি আসবো, রোজ আসবো। যাও চুপচাপ শুয়ে পড়ো, আমার কথা কাউকে বলার চেষ্টাও করোনা।” আমি বিমূর্ত হয়ে গেছি, মুখ দিয়ে কোনো শব্দও বের হচ্ছে না। তা দেখে ওটা বাঁকা বিদঘুটে হাসি দিয়ে আবার বললো- “কেউ বিস্বাস করবেনা আর আমি কোথাও যাবোনা।” বলেই হঠাৎ দেয়ালের সাথে মিশে গেলো।
কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে মোবাইলটা তুলে নিয়ে দ্রুত বের হয়ে আসলাম। মোবাইলের আলোতে দেখলাম রিমা বসে পা ডলছে, আমি আলো ফেলতেই বললো- “কিসের যেনো শব্দ শুনলাম আপু, তাড়াতাড়ি নামতে গিয়ে পড়ে গেছি।” “ওয়াশরুমে পানি পড়ছিলো।” বলে ওকে তুলে বসিয়ে দিতেই কারেন্ট চলে আসলো। বাচ্চা মেয়ে, অযথা কিছু বলে ভয় দেখাতে চাচ্ছি না। ওকে বললাম- ” পায়ে পানি দিয়ে আসো ব্যাথা কমবে।” ও উঠে গেলো। আমি দুহাতে মাথা ধরে বসে ভাবতে থাকলাম, কি হচ্ছে এসব, আর কেনো! রিমা আসতে দুজনই শুয়ে পড়লাম। ওকে আমার অবস্থা বুঝতে দিলাম না।
আতঙ্কে জমে আছি পুরো। কি দেখলাম আর কি শুনলাম, বিশ্বাসযোগ্য নাকি কল্পনা দ্বিধায় পরে গেলাম! যদি সত্যি হয় তাহলে কেনো ঘটছে এমন আমার সাথে? আর ওটা কার কথা বললো! কে আর আসবেনা? আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। এখন কি আমাকে ভুতে বিস্বাস করতে হবে এই যুগে এসে পড়াশোনা শেষ করে! আচ্ছা নাহয় মেনে নিলাম ওটা ভুত কিন্তু রিশাদের রূপে কেনো আসে বারবার? ওহ্! আমি হয় পাগল হয়ে গেছি, অথবা হতে যাচ্ছি। কিন্তু যদি সব কল্পনা হতো তাহলে তো আমার এই অবস্থা হতোনা।
নাহ্, আর ভাবতে পারছিনা। পাশ ফিরে শুয়ে বুঝতে পারলাম রিমা ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু আমার তো ঘুম আসছেনা, ছটফট করতে থাকলাম। আবারও মায়ের কথা মনে হতে চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকলো নিঃশব্দে। কখন ঘুমিয়ে গেছিলাম জানিনা।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share