সুখময় বৃষ্টি পর্ব : ৬

0
1109

সুখময় বৃষ্টি পর্ব : ৬
#লেখা : রায়না মনি

ধারা দরজা খুলে দিয়ে এসে বসলো।
অঝোর বাসায় ঢুকে ধারার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললো,
“কেমন আছো তুমি ?”
ধারার হঠাৎ কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে। অঝোরের দিক থেকে চোখ নামিয়ে আনলো। মনে হচ্ছে অঝোরের দিকে আর তাকাতে পারবে না।
নিজের মনে নিজেই বলে উঠলো, আজব তো লজ্জা পাওয়ার কী আছে? লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু ঘটছে নাকি? ধারা আবার অঝোরের দিকে তাকাতে চাইলো, কিন্তু তাকাতে পারলো না। কী আশ্চর্য!
ধারা ফ্লোরের দিকে তাকিয়েই বললো,
“ভালো আছি, আপনি ভালো আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ।”

ধারা খানিক অভিমানী কণ্ঠে বললো,
“সেই যে গেলেন আর আসলেন না, একেবারে নিখোঁজ হয়ে গেলেন! আমি তো ভেবেছিলাম আপনি হয়তো কথা দিয়ে রাখেন না ।”

ধারার কথা গুলো শুনে অঝোরের কেমন যেন মনে হলো। কিন্তু ঠিক কেমন সেটা বুঝতে পারলো না।
“এখন তো আসলাম, এখন কি মনে হচ্ছে কথা রাখি ?”

“হুম। তবে আজকে কিন্তু আমাদের কথা শুনতে হবে, আপনি ইফতারির আগে একদম যেতে পারবেন না। ইফতারি করেই বাসা থেকে বের হতে পারবেন ।”

“আচ্ছা, আচ্ছা সে না হয় বুঝলাম। আন্টি কোথায়?”

“মা কিচেনে রান্না করে । আমি ডেকে আনছি, আপনি বসুন ।”

“ধারা এটা নিয়ে যাও ।”

অঝোরের কথা শুনে ধারা ফিরে তাকালো। দেখলো অঝোরের হাতে একটা ব্যাগ, আগে খেয়াল করেনি।
” কী আছে ব্যাগের ভিতর ?”
” আম্মু কী কী জানি পাঠিয়ে দিয়েছে ।”
ধারা ব্যাগটা নিলো। বেশ ভারি লাগছে। কিচেনে মায়ের কাছে গিয়ে ব্যাগের ভিতর কী আছে সেটা দেখার জন্য বসে গেল।
“অঝোরের কথা শুনলাম, অঝোর আসছে ?”
“হুম, দেখা করে আসো ।”
“যাচ্ছি, তুই খেয়াল রাখিস এই দিকে ।”
ধারা ব্যাগের ভিতর থেকে বক্স গুলো বের করলো। বক্স গুলো খুলে দেখলো ভিতরে বিভিন্ন আইটেমের খাবার।

ধারা আর অঝোর ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করতে ছিল। জামাল হোসেন এক কলিগের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হলেন।
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় দেখতে পেলেন ধারা একটা ছেলের সাথে বসে কথা বলছে। একটু ভালো ভাবে লক্ষ্য করতেই চিনতে পারলো ছেলেটাকে। ধারার নানা বাড়িতে বসে একদিন দেখেছিল, কথাও হয়েছে । রুবিনার চাচাতো বোনের ছেলে।
জামাল হোসেন নিচে এসে অনেক কথা বার্তাই বললো অঝোরের সাথে। তার একজন কলিগ আসবে এখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নিয়ে। তাই বললো,
“ধারা অঝোরকে নিয়ে তোমার রুমে যাও, সেখানে বসে গল্প করো। আমার একজন কলিগ আসবে এখানে, আমাদের একটু কাজ আছে, যাও ।”

ধারা কিছু বললো না উঠে দাঁড়ালো । অঝোরের দিকে তাকালো দেখলো ও এখনও বসে আছে । অঝোরের কাছে ব্যাপারটা হয়তো অন্য রকম লাগছে, তাই অঝোরকে বললো, “চলুন সমস্যা নেই ।”

অঝোর ধারার রুমে ঢুকে দেখলো ঘরটা খুব সুন্দর করে গোছানো । অঝোরের ভালো লাগলো। অঝোরও ওর রুমটা সব সময় গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখে। অগোছানো আউলা জাউলা কিছু ওর দেখতে ভালো লাগে না। অঝোর বললো,
“বাহ তোমার ঘরটাতো খুব সুন্দর করে গুছিয়ে রেখেছো।”

ধারা এতক্ষণ অঝোরের দিকে তাকানো ছিল। অঝোর এদিক ওদিক তাকিয়ে রুমটা দেখছিল, আর ধারা দেখেছে অঝোরকে। অঝোরের দিকে তাকিয়েই বেখেয়ালে বললো,
“হুম, আমার ঘরটা আমি খুব যত্ন করেই রাখি। আমায় যে বিয়ে করবে তার ভাগ্য অনেক ভালো হবে, কারন সে আমার মতো এরকম একটা গোছানো গাছানো বউ পাবে। কী বলেন?”
কথা গুলো বলার পরেই ধারা জিহ্বা কাটলো। এসব কী আবোল তাবোল বকছে ও? তাও আবার এই মানুষটার সামনে! ধারার মাঝে আবার সেই লজ্জা লজ্জা ভাবটা এসে ভর করলো। কী বলতে যে কী বলে ফেলে, মাথাটা মনে হয় গেছে!

অঝোর ধারার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হাসছে।এসব কী বলছে মেয়েটা ?
ধারা এখন নিচের দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করছে। অঝোর বললো,
“হ্যাঁ তোমার বরের ভাগ্যটা অনেক ভালো হবে। তার ওয়াইফ তাকে সব সময় সুন্দর গোছানো, গাছানো পরিপাটি ঘরে রাখবে। সাথে যদি কিছু স্পেশাল রান্না শিখতে পারো তাহলে তো আর কথাই নেই ।”

অঝোরের মুখে বরের কথা শুনতে ধারার একদমই ভালো লাগছে না। নিজেকেই নিজে মনে মনে বলছে, শান্তি হইছে ধারা? আর কখনো বেখেয়ালে কোনো কথা বলবি?

অঝোরের চোখ পড়লো ওয়ালে আঁকা একটা পেইন্টিং এর উপর। খুবই নিখুঁত ভাবে আঁকা হয়েছে।
“ওই পেইন্টিং টা তুমি এঁকেছো ?”
“আমি আর আমার কাজিন অর্ক দুজনে মিলে এঁকেছি।”
ধারা কতক্ষণ অর্কের গল্প করলো, তারপর দিয়ার কথাও বললো। দিয়া যে একটা ছেলের জন্য কুমিল্লা গেছে, সেটাও বললো। ওরা তদন্তে নেমেছে শীঘ্রই ওরা সব কিছু জানতে পারবে সেসব ও বললো।
অঝোরও মন দিয়ে কথা গুলো শুনলো। এও বলেছে যে,
” তোমরা যে মিশনে নেমেছো তাতে যদি সফল না হও, পরে যা করবে আমিও দরকার হলে তোমাদের সাথে থাকবো।”
ধারা মনে মনে বলছে, ‘আপনি দেখতে যেমন কিউট, তেমনই ভালো।’
অর্ক আর ও ছাড়া যে কথা গুলো কেউ জানেনা, সে কথা গুলো আজ নিঃসংকোচে অঝোরের কাছে বলে দিলো। ধারার ইচ্ছা করছে আরো যত যত কথা ওর মাঝে আছে, সব অঝোরের কাছে বলে দিতে।

অঝোর টেবিলের কাছে একটা চেয়ারের উপর বসলো। দেখলো, কয়েকটা ছেড়া কাগজ টেবিলের উপর ছড়িয়ে রাখা। একটা কাগজ তুলে দেখলো, ব্যাঙ আঁকা। একটা বড় ব্যাঙ আর তার সাথে কয়টা ছোট ব্যাঙ। ব্যাঙ গুলো দেখে অঝোর নিঃশব্দে হাসছে।
আর একটা কাগজ তুলে দেখলো কিছু একটা লেখা,

*** বৃষ্টি ভেজা দিনে তুমি এসে হঠাৎ করে,
জায়গা করে নিয়েছো এই মনের ঘরে।
তোমার ঐ বৃষ্টির পানিতে কপালে লেপ্টে থাকা চুল,
ঘায়েল করে আমায় সারাক্ষণ।
এ কোন মায়া করেছো আমায়?
কোন মায়ায় জড়িয়েছো?
এখন বৃষ্টি হলেই মন টিকে না আর ঘরে,
ছুটে চলে যাই ওই ব্যালকনির ধারে।
দু নয়ন শুধু খুঁজে বেড়ায় তোমায়।
কিন্তু নাই তুমি, তুমি নাই!
বৃষ্টির ফোঁটার মাঝে তোমায় দেখি না,
দেখি না ওই ধূসর রঙা আকাশটার মাঝে।
কোথায় উধাও হলে আমার মন কাড়া মানুষটা!
বলো কোথায় গেলে পাবো তোমার দেখা?
এখন আমার এই দুটি আঁখি তোমায় দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায়।
শুধু একটা বার দেখা দাও আমায়। ***

অঝোর লেখাটা পড়ে একটু আশ্চর্য হলো! কেন জানি ওর মনে হচ্ছে এই লেখাটার সাথে ও জড়িত। এই লেখাটা ওকে নিয়েই লেখা। কিন্তু ধারা কেন ওকে নিয়ে লেখতে যাবে?
অঝোর এটা নিয়ে আর না ভেবে ধারাকে জিজ্ঞাস করলো,
“এই লেখাটা কী তুমি লিখেছো ?”
ধারা অন্যদিকে তাকানো ছিল, অঝোরের কথা শুনে ওর দিকে ঘুরে তাকালো। দেখলো অঝোরের হাতে একটা কাগজ। ধারার চোখ কপালে উঠলো। এই লেখাটা অঝোরের হাতে, ইশ! এটা অঝোরকে প্রথম দেখার কয়েক দিন পরে লিখেছিল। যে সময় ও অঝোরকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছিল। কিন্তু এখন এটা অঝোরের হাতে! কী ভাবছে সে এই লেখাটা পড়ে? সে কি কোনো ভাবে বুঝতে পেরেছে তাকে নিয়েই এইসব লিখেছি?
ধারা আমতা আমতা করে বললো,
“না মানে…হুম, এটা আমিই লিখেছি ।”
অঝোর কাগজটার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ওহ, খুব ভালো লেখো তুমি ।”
“ধন্যবাদ ।”
“স্বাগত ।

অঝোর আর ধারা নিচে গিয়ে দেখলো জামাল হোসেন একা ড্রয়িং রুমে বসে আছে। তার কলিগ হয়তো চলে গেছে। অঝোর তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য তার পাশে গিয়ে বসলো। আর ধারা ওর মাকে ইফতারি বানাতে সাহায্য করার জন্য কিচেনে গেল।

ইফতারির পরে অঝোর বাসায় যেতে চাইলো, কিন্তু জামাল হোসেন আর রুবিনা ডিনারের আগে কিছুতেই ছাড়বে না।
রাতে ডিনার করেই অঝোর বাসায় ফিরলো ।

ফোনটা এক নাগাড়ে বেজেই চলছে।
রিংটোনের শব্দ কানে যাচ্ছে কিন্তু চোখ মেলে তাকাতে ইচ্ছা করছে না ধারার। খুব বিরক্ত লাগছে! এত রাতে কে কল দিলো? অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা হাতে নিয়ে চোখ খুললো। দেখলো অর্কর কল। এত রাতে অর্ক কেন কল দিলো? কোনো দিন তো এত রাতে অর্ক কল দেয়নি। তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করলো।
” কী ব্যাপার আপি আমি সেই কখন থেকে ফোন দিয়ে যাচ্ছি ছিলে কোথায় তুমি ?”

“ঘুমিয়ে পড়ছিলাম আমি, এত রাতে ফোন দিয়েছিস সব ঠিকঠাক আছে তো ?”

“এত রাত মানে! এগারো টাও বাজেনি এখনও।”

“কী বলিস! আমি তো ভেবেছিলাম দেড়টা দুইটা বাজছে। ঘুমে ছিলাম তো তাই বুঝতে পারিনি। কী করো তুই ?”

“আমি ছাদে বসে আছি। একটা খবর আছে, শুনলে তুমি অবাক হয়ে যাবে। আমি তো ভাবতেই পারিনি এমন কিছু হবে!”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে