সন্দেহ
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ২৪
.
.
নিলয় – আচ্ছা শানসাইন! যদি কখনো জানতে পারো যে আমার জীবনে অন্য কেউ আছে মেনে নিতে পারবে?
.
.
অনু- আপনি যদি কখনো জানতে পারেন যে আমার শরীর, মন, আত্না তে অন্য কারো অধিকার ছিলো আছে আর থাকবে তাহলে আপনি মেনে নিতে পারবেন? যদি পারেন তো আমিও পারবো।
.
– রাগ করছো কেনো?
– রাগ কই করলাম? আমাদের সমাজ টাই এমন। এখানে স্বামী দুই স্ত্রী রাখতে পারবে কিন্তু স্ত্রী কারো সাথে হেসে কথা বলতে পারে না৷ গরমে দুইবার গোসল করলেও তাকে মাইর খেতে হয়।
– জানি আমাকে মিন করছো।।
– আমি কাউকে মিন করছি না, রাত ১০ টায় কল দিয়ে স্বামীর ফোনকল অন্য কেউ পিক করলে নরমাল অথচ এটা মেয়ের ক্ষেত্রে হলে কথা ডিভোর্স অবধি চলে যেতো।
পুরুষ মানুষ কেনো বুঝে না
সীতার মতো বউ পাইতে হলে আগে তাকে রামের মতো হতে হবে।
.
– মাই গড! শানশাইন, এত রাগ!! রিলাক্স আমি তো মজা করছিলাম।
– কেনো করবেন এই বিষয় নিয়ে মজা? কেউ তোমাকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে বলে তুমি তাকে অন্ধ ভেবে নিও না।
.
– সামান্য কথায় এত রাগ? আমি বুঝলে বলতাম না।
.
অনু এবার কেঁদেই দিলো।
– আমি আপনাকে কিছু বলতে চাচ্ছি, অনেকদিন যাবত। আপনি কেনো শুনছেন না।
– আচ্ছা আচ্ছা কান্না করো না।
– আমি এখানে থাকবো না। প্লিজ বাসায় যাবো, আর আপনি আমার কথা …..
– তার আগে তুমি আমার একটা গল্প শুনো
– না আগে আমার কথা
– আগে গল্প
– শুনবো না
– শুনতেই হবে
– উঁহু ?
– শিক্ষনীয় গল্প
– আচ্ছা বলুন
– আমার একটা ফ্রেন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তো ত্রিপল ই সাবজেক্ট এ।
তো ওদের এক সেমিস্টারে প্রায় ১২৬ পাতার মতো প্র্যাক্টিক্যাল / এসাইনমেন্ট ছিলো।
ওদের গ্রুপে ছিলো ১১ জন। জানো ওরা ১১ জনই ওই সেমিস্টারে ফেইল মেরেছিলো।
– কেনো?
– ওই এসাইনমেন্ট এর জন্য।
– করছিলো না?
– করছিলো।তবে ১১ জন মিলে একটা। এতে জানো কি হয়েছিলো? ১০ জন ভালো ভাবে পার হতে পেরেছিলো কিন্তু ১১ নাম্বার জন গিয়ে ধরা খায়। তারপর পুরো ১১ জন কে ডাকে এসাইনমেন্ট চাইলে দিতে পারে না। দিবে কিভাবে? কারণ ছিলো তো একটা শুধু লাস্টের যে পেইজে ম্যাম সাইন করছিলো ওইটা ছিলো ১১ পিস৷
– তারপর?
-তারপর আর কি? ১১ জনের সেমস্টার ড্রপ, জরিমানা৷
– ভালো হইছে।
– কেনো? ওরা তো শুধু কপি করছিলো।
– হু কপি করছিলো। তাইতো এমন হলো।
– সব তো ঠিক ছিলো শুধু লাস্টের পেইজ টা নতুন করে নিজেদের মতো সাজিয়ে নিয়েছিলো। এইটুক তো করাই যায়।
– হ্যাঁগো! আমি থাকলে বহিষ্কার করে দিতাম।
– তাই না?
– কপি মানেই নকল আর নকল মানেই কি দণ্ডনীয় অপরাধ না? সো অবশ্যই বহিষ্কার।
– শোন পাগলী। যখন তুমি বুঝবে না তোমার চারপাশে কি হচ্ছে, তোমার কি করা উচিৎ! তখন তুমি নিজের দুচোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নিবে, মনে মনে আল্লাহ্ কে বলবে
– হে আল্লাহ্! হে আমার প্রতিপালক। আমি জানি সব তোমার ইচ্ছা, এবং আমি এটাও জানি তুমিই আমাকে এর থেকে বের করে নিবে।
.
– হুম! জানি।
– আর শুনো! তাদের সবাই কে ক্ষমা করে দাও যাদের বিরুদ্ধে মনে ক্ষোভ আছে। যারা তোমার সাথে খারাপ করছে। কারণ সামনে রোজার মাস। আমি চাই তুমি রোজার মাসে মন থেকে সব ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে যাও পবিত্র মন টা নিয়ে।
– সব বুঝলাম কিন্তু আমি এখানে থাকবো না। আমাকে নিয়ে যান।
– আমি এসেই নিয়ে যাবো।
.
– আপনি আমার কথা শুনেন তো
– সামনাসামনি শুনবো তো।
– না এখনি
– উঁহু, এত বেশি বুঝো কেনো?
– বুঝবেন! যেদিন আমি থাকবো না সেদিন আমার লাশের পাশে বসে বুঝবেন।
– একদম এসব বলবা না। মাইর একটাও মাটিতে পড়বো না।
– হুহ্!
– পাগল্লী! ঘুমাও তো
.
.
অনু কেনো থাকতে চাইছে না নিলয় বুঝতে পারছে না। কিন্তু একা বাসায় রাখা সম্ভব না।
পর পর দুদিন এক্সিডেন্ট হতে হতে থেমেছে।
অনু ওয়াশ রুমে যাওয়ার সাথে সাথেই ওয়াশরুমের বাল্ব ফেটে গিয়েছিলো। ভাগ্যিস সেদিন টাওয়াল দেওয়ার জন্য নিলয় ওখানেই ছিলো। আবার একদিন ফ্লোরে সাবান পানি পড়েছিলো।
অনু যাওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে কাজের লোক যায়।
বেচারি পড়ে গিয়ে তিন দিন বিছানা থেকে উঠতে পারে নি।
.
সীমন্তিনীর কাছে ভালো থাকবে। অন্তত যে কয়েকটা দিন নিলয় ফিরে না আসে।
এই জন্য বারবার না করছে আর সে জেদ ধরে বসে আছে।
.
এসব ভাবতে ভাবতেই কফির কাপে চুমুক দিলো নিলয়।
সামনে বসে আছে বদরুল ভাই।
.
বদরুল নাম শুনে মনে হয় সে দেখতে পেট মোটা,কালো, চান্দিছুলা লোক। কিন্তু বাস্তবে যথেষ্ট হ্যান্ডসাম বলা যায়।
.
– নিলয় সাহেব!
– জ্বী
– বউ কে খুব ভালো বাসেন?.
– ভাই জানেন তো ওর মা নেই। অনাথের মতোই বড় হয়েছে। তাই পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি।
– জানেন তো মেয়ে মানুষ বড্ড অদ্ভুত
এদের কে বুঝতে পারার জন্য মন দিয়ে চিন্তা করতে হয়।
যখন এরা কষ্ট পাবে তখন মুচকি হাসবে । যখন কান্না করতে ইচ্ছে করবে তখন এরা গান গাইবে আবার যখন দেখবেন খুব খুশি বা সুখের মুহুর্ত তখন কেঁদেই দিবে।
– জানি ভাই! তাই তো আগলে রাখতে চাচ্ছি। ভালোবেসে।
.
.
অনু নিজেকে রুমের ভিতরে ইদানীং আগলে রেখেছে।
খুব প্রয়োজনে বের হচ্ছে তাছাড়া সাম্য যখন তখন যেনো না আসতে পারে এ জন্য রুম লক করেই রাখছে।
সাম্য শুধুই অতীত, নিলয় সাম্যর জায়গা অনেক আগেই নিয়েছে যা পৃথিবীর তিন ভাগ মরুভূমি হয়ে গেলেও আর পাল্টে যাবে না।
সাম্য বেশ বুঝে। সেও চায় অনু সুখী হোক। এর থেকে বেশি চাওয়া তার নেই।
সেই সুখ টা যদি নিলয়ের সাথে হয় তাহলেই তাই হবে।
সে শুধু দূর থেকে ভালোবাসবে কিন্তু অধিকার ফোলাবে না।
নিলয় যদি অনুর একটু অসুবিধা করে তাহলে নিলয় কে ছাড়বে না।
.
.
ইরা বসে বসে নীলের আকদের ছবি দেখছিলো।
হঠাৎ তার চোখ দুটো চকচক করে উঠলো।
খুশিতে চোখে পানি এসে গেছে।
হ্যাঁ! এমন কিছুই চাইছিলো সে।
সাম্যর এই এক্সট্রা কেয়ার করা ছবি গুলোই নিলয়ের মনে সন্দেহ জাগিয়ে দিবে।
সত্যি সবুরের ফল মিঠা হয়৷ আজ সে বুঝতে পারলো।
.
.
সাম্যর ব্যবহার আশাকে কষ্ট দিচ্ছে।খুব ভালোবেসে ফেলেছে সে।
কিন্তু মানুষ টা কেনো বুঝে না৷ একটু সময় দিলে কি এমন হয়?
রাত বিরেতে তার কমতি আশা খুব করে অনুভব করছে।
.
বার বার কল রিং হচ্ছে কিন্তু আশা দেখছেই না। বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলো সাম্যর কল।
ঈশ্! তাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে তার কল ইগ্নোর করছে?
– আজব মানুষ তো আপনি? কোথায়? তাড়াতাড়ি আসুন। আমার অনুর অবস্থা ঠিক লাগছে না। হসপিটালে নিতে চাচ্ছি। পারলে একটু জলদি আসুন।
.
.
চলবে