শ্বাশুড়ি পর্বঃ৬

0
1253

শ্বাশুড়ি
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৬
.
.
রাহেলা বেগম তার ভাই বোন দের সাথে বিলাপ করছে। বিষয় সবার জানা। আলো কে নিয়েই হচ্ছে। বাবা ছাড়া অয়ন কে কত আগলে রাখতো সে! কারো কি তা অজানা? কিন্তু দুই দিনের এক মেয়ে এসে কি না কি করে দিলো। নিশ্চিত কালাজাদু করছে। ভাগ্য কইরা মেয়ের জামাই পাইছে কিন্তু কপাল পুড়াইয়া পোলার বউ ভাগ্যে আসছে।
তার কত্তত আশা, শখ ছিলো অয়নের বিয়া নিয়া, কত কিছু ভাবছিলো আর কি হতে কি হলো।
অয়ন রে নিশ্চিত কিছু করছে। নইলে এত বউ বউ করতো না।
সবই তার কপাল।
.
.
আলো চা দিতে এসে এসব সামনাসামনি শুনেও কিছুই বললো না। এসব শুনতে হবেই তাকে। রাতে খাবার খাওয়ার পরেও কত জনের কত আবদার মেটাতে হচ্ছে। কারো চা চাই, কারো আবার চানাচুর মাখা, কেউ বলছে মেহেদী দিয়ে দাও আবার কালকে ঈদের দিন। কত রকমের রান্না সেসবের প্রস্তুতি নিচ্ছে সে।
অয়নের বোনের বাচ্চা হবে, শ্বাশুড়ি বয়স্ক তাই সব তাকেই তো দেখতে হবে।
.
.
আড্ডা থেকে অয়ন উঠে জোড় করে অনুকে নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। মেয়েটা পাইছে কি? যা ইচ্ছা হবে তাই করবে।
.
-ভুলেও না! উঠার চেষ্টা করেছো তো পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো।
-বাহিরে মানুষ কি ভাববে?
-রাত বারোটা অবশ্যই নাচার সময় না যে তুমি নাঁচতে নাঁচতে বাহিরে যাচ্ছো।
.
আলো হাসে, অয়ন আবার বলে।
-হাসার মতো কিছু বলি নাই। খাইছো?
– উঁহু সময় পাইনি।
-হ্যাঁ! তুমি তো বিল গেটস এর পোলার বউ তোমার কত্ত কাজ! তাই না? পুরো বাড়ির মানুষ খেয়েছে আর উনি না খেয়ে বসে আছে।
.
বলেই ওর মুখের সামনে ভাতের লোকমা ধরে। ডিম ভাজি আর আলুভর্তা।
.
-আমি তো আজ এসব রান্না করিনি। আপনি কই পেলেন?
-আপনি যা রান্না করেছেন তাও তো খাবেন না তাই আমাকেই করতে হলো।
.
আলো চুপচাপ ভাত খাচ্ছে। অয়ন খাইয়ে দিচ্ছে। আচ্ছা এত সুখ কপালে সইবে তো?.
.
.
-সরি।
-কেনো?
-আমি বুঝিনা মেয়েদের কি কি লাগে তাই কাল শুধু মেহেদী আর কাজল এনেছিলাম।
-যদি আল্লাহ্ তালা কাউকে পায়ে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে সালাম করার অনুমতি দিতো তাহলে আমি আজ তাই করতাম।
-সালাম না করতে পারো আদর তো দিতেই পারো।
.
আলোকে ঘুরিয়ে ওর চুলে নাক ডোবাতেই দরজায় নক। অয়ন দাতে দাত চেপে বললো
-এবার যদি তাঞ্জু থাকে দরজায়, খোদার কসম ওর গালে আমার পাঁচ টা আংগুলের ছাপ বসে যাবে।
.
.
দরজা খুলে দেখে অয়ন ওর ছোট ভাই আমিন দাঁড়িয়ে আছে।
.
-ভাইয়া! ভাবী ঘুমিয়েছে?
-না কেনো?
-সবাই শুইতে যাবে। ব্যবস্থাদি করতে হবে। তুই চল তাহলে
-আলোকে ডাকবো?
-না ঘুমাক। সম্পর্কে ভাবী হলেও সে আমার ছোট। সারাদিন অনেক ধকল গেছে। রেস্ট নিতে দে। আর আমরা তো প্রতিবছর করিই। এবারো পারবো।
.
.
আমিনের কথা শুনে অয়ন হাসলো। আর বললো তুই যা আমি রুমে তালা দিয়ে আসি। না হলে পরে আবার ঘুম নষ্ট হবে ওর।
.
.
আলো এতটাই ক্লান্ত ছিলো যে সত্যিই ঘুমিয়ে গেছে।
অয়ন মাথার নিচে বালিশ ঠিক করে দিয়ে ফোন টা নিয়ে সিগারেট হাতে বেরিয়ে আসে। অবশ্যই তালা দিয়ে রেখেছে আলোকে কারণ বাড়িতে আজ অনেক মানুষ। কার মনে কি চলে কে জানে?
.
.হাতে গরম বাতাস লাগছে আলোর। গাল চুলকানোর জন্য হাত বাড়াতেই অয়ন দুহাত ধরে।
.
– এখনি তো গাল টা লাল হয়ে যেতো। আর আমার খেয়ে নিতে ইচ্ছে করতো। তখন মানুষ কি বলতো শুনি?
.
অয়নের কথার মাথা মুন্ডু না বুঝে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
তারপর বুঝতে পারলো অয়ন দুহাত ভরে মেহেদী দিয়ে দিয়েছে।
মোটামুটি শুকিয়ে আসায় আলো গিয়ে হাত ধুয়েমুছে এসে শুয়ে পড়লো।
.
.
ঈদের দিন সকাল হতেই আলো খুব দ্রুত কাজ করছে। সব কিছু গুছিয়ে নামাজের আগে গিয়ে অয়নের সামনে দাঁড়ায়। হাত পেতে বলে
.
-আমার সালামী!
অয়ন ওর হাতে চুড়ি পড়িয়ে দিয়ে বলে। এবার আমার টা দাও।
.
অনু বিষ্ময়ে তাকিয়ে আছে। সোনার চুড়ি?
-তোমার স্বামী হয়তো কম বেতনের চাকুরী করে কিন্তু তুমি আসার পরেই তার প্রমোশন হয়েছে সে কি তুমি জানো?
তাছাড়া শুধু বোনাসের টাকা দিয়েই আপনার জন্য এটা এনেছি। যাক সে সব কথা এখন আমার সালামী?
.
-উম্ম নামাজ পড়ে আসেন পেয়ে যাবেন।
.
.
নামাজ শেষে অয়ন এসে দেখে আলো শাড়ি পড়েছে। সবাই কে খেতে দিচ্ছে। ঠিক তখন যখন সে দুলাভাইকে খেতে দিতে যাবে অয়ন খেয়াল করলো তার দৃষ্টি মোটেও সুবিধাজনক না।
অয়ন গিয়ে হেসে হেসে বললো
.
-বউ তো রান্না করেছে আমি না হয় পাত বেড়ে খাওয়াই?
.
.
অয়ন আসার পর থেকে আলো নিজের হাতে তো খাচ্ছেই না। বেশ সুযোগ পেয়েছে সে। অয়ন বেশ উপভোগ করে এ ব্যাপারটা ।
.
.
সারাদিন পর বিকেলে সবাই মিলে চিন্তা করলো মাজারে যাবে। যে ভাবনা সেই কাজ। যেহেতু মাজার তাই সবাই যাবে। আলোকে রেডি হতে বলে অয়ন বেরিয়ে গেলো। অনেকগুলো অটো ঠিক কর‍তে হবে কারণ অনেক মানুষ ।
আলো সবার সাথে আসবে৷ স্ট্যান্ডে গিয়ে আলো কে কল দিতেই খেয়াল করলো আলোর ফোন তো সাথেই নিয়ে এসেছে।
.
পর পর সবাই নামলেও যখন আলো নামলো না তখন অয়ন বেশ চিন্তায় পড়ে সবাই কে জিজ্ঞেস করে। ওরা বলে যে অয়নের মা না কি বলেছে বাসায় থেকে রাতের খাবার টা গুছিয়ে রাখে।
.
হঠাৎ করে আমিন অয়নের হাত ধরে বলে ভাই! দুলাভাই না কি মাঝ রাস্তায় নেমে বাড়ি চলে গেছে।
দুই ভাইয়ের মুখে চাপা ভয় ফুটে উঠেছে। কাউকে বুঝতে না দিয়ে বাইক নিয়ে দুজনে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
.
.
বাড়ির সদর দুয়ার খোলা ভেতরের দরজাও খোলা৷ ড্রয়িংরুমের এক পাশে রহমান মাথা চেপে বসে আছে৷ মাথা দিয়ে গলগলিয়ে রক্ত পড়ছে।
আলো? আলো কই?.
.
মনে হচ্ছে রঙ খেলা হয়েছে৷ পুরো বাড়িতে আলো নেই। রক্তের দাগ গিয়ে থামলো স্টোর রুমের দরজার সামনে।
কয়েকবার ডাকতেই আলোর শুধু গোংরানি আওয়াজ আসছিলো। অয়ন, আমিন দরজা ভাঙতেই অবচেতন আলো ঢলে পড়লো অয়নের উপর।
.
.
চলবে (অয়ন কি পাল্টে যাবে? নিলয়ের মতো? )

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে