শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ৭

0
3415

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

একনজরে আলিফা আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি আস্তে করে ওর কপালে আমার ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলাম তারপর ওকে বুকে নিয়ে জরিয়ে ধরলাম…..

–ছাড়ো আমাকে (আলিফা ধাক্কা মেরে আমাকে সরিয়ে দিল)
–কি হল
–আমাকে জরিয়ে ধরেছ কেন
–এইটা কেমন প্রশ্ন তুমি তো আমার বউ
–কিসের বউ আমি মানি না এই বিয়ে আর আমি কাঁদছি বলেই আমাকে দুর্বল ভেবো না
–কি বলছ এসব বিয়ে মাননা মানে
–কতোবার বলবো আমি রাতুলকে ভালোবাসি
–ঠিক আছে আমিও দেখে নিবো রাতুল তোমাকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসে কিভাবে
–মানে কি করবে তুমি
–জোর করবো তোমাকে এতে কোনো অপরাধ হবে না কারণ তুমি আমার বিয়ে করা বউ
–দেখ আমাকে একদম টাচ করবে না কিন্তু
–ওই আমি কি বলেছি আমি তোমাকে টাচ করে জোর করবো এতো নেগেটিভ ভাবনা কেন তোমার, শুনো তুমি যেদিন নিজে চাইবে সেদিনই আমি তোমাকে টাচ করবো তবে ভালোবাসবো সবসময় বুঝেছ রাগিণী
–আবার রাগিণী ডাকছ
–হ্যাঁ আর সবসময় ডাকবো
–উফফফফ তোমাকে আমি….
–আদর করবে তো নাও করো
–রিফাত
–চিৎকার করছ কেন সোনা আমি তো তোমার পাশেই আছি
–ধ্যাত (রাগ দেখিয়ে রুমে চলে গেলো)
–যতোই যাও আমি তোমাকে ছাড়ছি না রাগিণী আজ থেকে আমার নতুন ভালোবাসা দেখবে যে ভালোবাসায় রাগ, অভিমান, শাসন, জোর করা সবকিছু থাকবে এমনকি অত্যাচারও (জোরে জোরে বললাল যেন শুনতে পায়)
রাতুলের কথা শুনলেই এতো রাগ হয় কেন আমার তাহলে কি আমি আলিফাকে ঠিক ততোটাই ভালোবাসি যতোটা ভালোবাসতাম নিলাকে, দুজনকে সমান ভালোবাসাই তো উচিত আমার কারণ নিলা আমার কাছে যেমন ছিল তেমন তো সবসময় থাকবে তাই বলে যাকে এখন ভালোবেসেছি তাকে কম ভালোবেসে অবহেলা করবো তাহলে তো আলিফার ভালোবাসাকে ছোট করা হবে, আলিফাকে আমি প্রথম দেখায় ভালোবেসেছি তাকে তো অবহেলা করতে পারিনা সে অন্য কাউকে ভালো বাসলেও না আজ থেকে আলিফা আমার সবকিছু হবে আর নিলা…. নিলার কথা ভাবতেই ওর মৃত্যুর কথা মনে পরে গেলো, আমার তো কিছুতেই মাথায় আসছে না যদি নিলার কোনো রোগ থাকবে আমাকে কেন বলেনি আর আমাকে নিয়ে যার এতো স্বপ্ন ছিল সে কেন বিয়ের দিন বিষ খেয়েছিল, উফফফফ মাথায় কিছুই আসছে না
–ভাইয়া (হঠাৎ প্রিতির ডাকে যেন বাস্তবে ফিরে আসলাম নিলার মৃত্যুটা আমার কাছে কেমন যেন রহস্যের মতো লাগছে তাই যখনি ভাবি কোথায় যেন হারিয়ে যাই)
–এই ভাইয়া কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন
–কিছু হয়নি
–নিচে চলো ছোটমা ডাকছেন
–হুম চল

ড্রয়িংরুমে এসে দেখি সবাই বসে আছে
আমি: ছোটমা ডাকছিলে
ছোটমা: হ্যাঁ আমরা তো আগামীকাল চলে যাবো তাই তোকে ডে….
আমি: এতোদিন আমার থেকে দূরে থেকে হয়নি বুঝি এখন আবার চলে যেতে চাচ্ছ
চাচ্চু: যেতে তো হবেই নাহলে গ্রামের সবকিছু দেখাশোনা কে করবে
আমি: এসব আমি বুঝিনা তোমরা এখানেই থাকবে
আব্বু: ঠিক আছে ওরা থাকবে কিন্তু এক সপ্তাহ এর বেশি না
আমি: আব্বু এখনো কি তোমরা ভয় পাচ্ছ
আব্বু: উহু এখন তো আলিফা মা আছে আমার বিশ্বাস ওকে ভালোবেসে তুই ভালো থাকতে পারবি কিন্তু তোকে তো বুঝতে হবে ওদের গ্রামে ফিরে যেতে হবে তাছাড়া গ্রামে তো নীলিমা একা একা আছে
আমি: হুম ওকে
প্রিতি: ভাইয়া ভাবি তোমাকে ডাকছে (বাব্বাহ্ রাগিণী হঠাৎ আমাকে ডাকছে কেন)
ছোটমা: বউমা ডাকছে যা রুমে যা
আমি: ওকে

রুমে এসে দেখি আলিফা কাপড়চোপড় গুচাচ্ছে আশ্চর্য তো কোথায় যাবে ও
–আলিফা কোথায় যাবে
–আব্বুর কাছে
–মানে
–বাংলা কথা বুঝনা হিন্দিতে বলতে হবে নাকি
–এতো রেগে আছ কেন
–তো কি করবো
–কি হয়েছে তোমার
–আমি আব্বুর কাছে চলে যাবো আমাকে দিয়ে আসো
–বিকেল হয়ে এসেছে আজ যেতে হবে না আগামীকাল আমি নিয়ে যাবো
–আমি আজকেই যাবো
–ওকে তোমার রাতুলকে ফোন করে বলো তোমাকে যেন এসে নিয়ে যায়
–ইয়ার্কি করছ
–তুমিও তো ইয়ার্কি করছ বিয়ের পরদিনই ব্যাগ গুছিয়ে বলছ বাবার কাছে চলে যাবে
–আমি মুটেও ইয়ার্কি করছি না আমি আব্বুর কাছে চলে যাবো আর আসবো না
–তোমার কথা মতো তো সব হবে না সোনা আমি যা বলি তাই হবে, তুমি আগামীকাল যাবে দুদিন থেকে আবার চলে আসবে (ওর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম)
–বলেছি যখন আজকে যাবো তাহলে আজকেই যাবো (আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো, আমি কি এতো সহজেই ছেড়ে দিব নাকি ওর হাত ধরে টান দিয়ে আমার বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম)
–রিফাত ছাড়ো আমাকে
–আগে বলো আমার কথা মতো চলবে তাহলে ছেড়ে দিবো
–তোমার কথা মতো আমি চলতে যাবো কেন
–ওকে (আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম)
–আচ্ছা তোমার কথা শুনবো এবার ছাড়ো আমি ব্যাথা পাচ্ছি (ছেড়ে দিলাম যেহেতু সব কথা শুনবে বলেছে)
–কথা না শুনলে এভাবে রোমান্টিক ভাবে অত্যাচার করবো তোমার উপর বুঝেছ রাগিণী বউ হাহাহাহা
–তুমি কি জানো হাসলে তোমাকে দেখতে একদম….
–সুন্দর লাগে দেখতে তাই তো যাক আমার হাসির উপর তো ক্রাশ খাইছ
–হাসলে তোমাকে একদম বানরের মতো দেখায় আর আমার রুচি এতো খারাপ না যে এমন বানর মার্কা হাসি দেখে ক্রাশ খাবো (হাসতে হাসতে চলে গেলো কিন্তু কি বলে গেলো এসব আমার হাসি বানর মার্কা, দুর বলুক তাতে কি আমারই তো বউ)

রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ আলিফা এসে পাশে দাঁড়ালো হাতে কফির মগ
–রাগিণী কফি কার জন্য
–এখানে দুজন আছি কফিও দুই মগ তাহলে বুঝে নাও কার জন্য হতে পারে
–কি ব্যাপার বলতো, রাগিণী বললাম রাগ করলে না আবার কফিও বানিয়ে খাওয়াচ্ছ মতলব কি ভালোবেসে ফেলছ নাকি
–রিফাত….
–ভালোবাসবে জানতাম কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যে বাসবে জানতাম না
–সবকিছুতে এতো বেশি কথা বলো কেন আমার মন ভালো নেই তাই রাগিণী ডাকাতে রাগ করিনি
–কেন কি হয়েছে শরীর খারাপ লাগছে তোমার
–না রাতুলের কথা খুব মনে পড়ছে কয়েকদিন ধরে তো কথ….
–ঠাস (যেও কফির মগে চুমুক দিতে যাচ্ছিলাম মোডটাই নষ্ট করে দিল, কফির মগ ছুড়ে ফেলে দিলাম)
–কি হল কফির মগটা এভাবে ছুড়ে ফেলে দিলে কেন
–বেশ করেছি
হনহন করে হেটে বাসার বাইরে চলে আসলাম, মাথাটাই নষ্ট করে দিল সবসময় শুধু রাতুল রাতুল, বিয়ে হয়ে গেছে তারপরও পুরনো প্রেমিককে ভুলতে পারেনি

বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না তাই রাস্তায় আনমনা হয়ে হাটছি হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, প্রিতি ফোন দিয়েছে রিসিভ করলাম
–ভাইয়া কোথায় তুমি
–রাস্তায়
–রাত দশটা বাজে আর তুমি এখনো রাস্তায় তাড়াতাড়ি বাসায় এসো
–রাখ আসছি

ফোন রেখে বাসায় চলে আসলাম, খাবার টেবিলে বসে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু সবাই এখানে আছে আলিফা তো নেই
প্রিতি: ভাইয়া কাকে খুঁজছ
আমি: আলিফা কোথায়
প্রিতি: ভাবিকে অনেক বার ডেকেছি কিন্তু আসেনি খিদে নেই বলছে
আব্বু: তোরা কি ঝগড়া করেছিস (এখন কি বলি ওর বানানো কফি ছুড়ে ফেলে দিয়েছি বললে আব্বু তো বকবে)
আব্বু: কিরে চুপ হয়ে আছিস কেন
ছোটমা: আমি বুঝেছি ওকে আর বলতে হবে না, রিফাত তুই খাবার রুমে নিয়ে যা আলিফাকেও খেতে বলিস
আমি: হুম
খাবার নিয়ে রুমে আসলাম আলিফা বিছানামুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে
–খাবার রেখে যাচ্ছি উঠে খেয়ে নাও
–(নিশ্চুপ)
–আমি ফ্রেশ হয়ে এসে যেন দেখি খেয়ে নিয়েছ
–আমি খাবো না
–আমি যেমন ভালোবাসতে জানি তেমন শাসনও করতে জানি যদি না খাও আগে কফির মগ যেভাবে আছাড় দিয়েছিলাম তোমাকেও সেভাবে আছাড় দিবো (ভয় দেখিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম)

ফ্রেশ হয়ে এসে যা দেখলাম আমি হাসবো নাকি অবাক হবো ভেবে পাচ্ছিনা, আলিফা ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি খাচ্ছে, ভয়ে এতো তাড়াতাড়ি খাচ্ছে যে বিষম খেতে পারে সে খেয়ালও নেই
–আরে আস্তে খাও এতো ভয় পাচ্ছ কেন আমি তো এমনি তোমাকে ভয় দেখিয়েছিলাম তুমি এতো ভয় পেয়ে যাবে ভাবিনি
–(নিশ্চুপ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, এতো রাগি মেয়ে সামান্য কথায় এতো ভয় পেয়ে গেলো কেন বুঝলাম না)
–আচ্ছা বাবা সরি আমি তো মজা করে বলছি
–(নিশ্চুপ)
কি আর করার বাকি খাবার আমি নিজের হাতে তুলে খাইয়ে দিলাম, আলিফা কোনো রাগ না দেখিয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো

আমি খেয়ে এসে দেখি আলিফা মন খারাপ করে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে, আমিও গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ালাম
–আলিফা প্লিজ মন খারাপ করে থেকো না আমি মজা করে বলেছিলাম
–(নিশ্চুপ)
–আচ্ছা তুমি এতো রাগি একটা মেয়ে সামান্য কথায় এমন ভয় পেয়ে গেলে কেন
–কথাটা তো নতুন শুনিনি আরো অনেকবার শুনেছি তাই
–মানে
–খুব ছোটবেলায় আম্মু আব্বুকে হারিয়েছি তো তাই ছোট থেকেই এতিমখানায় বড় হয়েছি, এতিমখানায় তো আর সবাই এক হয় না কেউ ভালোবাসতো আবার কেউ এভাবেই ধমক দিয়ে খেতে বলতো কথা না শুনলে….. (আর বলতে পারছে না ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে আমিও কান্না করছি, যাকে এতো ভালোবাসি তাকে নিজের অজান্তেই আজ এতো কষ্ট দিয়ে ফেললাম, সত্যিই তো মেয়েটা ছোট থেকে এতিমখানায় বড় হয়েছে কারো ভালোবাসা পায়নি আর আমি কিনা…)
–আলিফা আগের সবকিছু ভুলে যাও এখন তো তোমার সব আছে এই পরিবার তো তোমারই
–(নিশ্চুপ)
–এখনো রেগে আছো (ওকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলাম আর কানের কাছে আস্তে করে বললাম….)
–আর কখনো এমন হবে না এইযে কান ধরেছি আর কখনো তোমাকে ধমক দিবো না এবার অন্তত একটু হাস (কান তো আমার ধরিনি ধরেছি আলিফার কান তাতেই পাগলীটা ফিক করে হেসে দিলো)
আলিফাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বাইরে তাকিয়ে আছি ও রাতের আকাশ দেখছে আর আমি ভাবছি এই পাগলীটাকে আর কখনো কষ্ট দিবো না অনেক ভালোবাসবো ওকে অনেক…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে