“শপথ” পর্ব-৩

0
1879

“শপথ” পর্ব-৩

অবন্তিকা নিয়মিত স্যামসদের বাসায় যায়। স্যামসের মায়ের সাথে অবন্তিকার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। সে স্যামসকে চোখ পাঁকায় আবার হাসতে হাসতে হেলে হেলেও পড়ে। স্যামস্ অবন্তিকার চোখ পাঁকানো দেখে নার্ভাস হয়, তার হাসি দেখে বিমুগ্ধ হয়। তার হাসির আওয়াজে দিনরাত সে ঘায়েল হয়ে যায়।
স্যামস্ এর মাও অবন্তিকাকে খুব ভালোবাসেন। অবন্তিকা এমন একটা মেয়ে, যাকে কে না ভালোবাসবে! তাকে ভালো না বেসে কারোই উপায় নেই। কি এক বিস্ময়কর ম্যাজিক দিয়ে সে সবাইকে দিয়ে ভালোবাসিয়ে নেয়! স্যামস্ এর রুমে তার মা ছাড়া আর কারো প্রবেশ নিষেধ, সেখানে অবন্তিকা হুড়মুড় করে তার রুমে ঢুকে। এই আধা পাগলি মেয়েটাকে ধমক ধামক কোনোটাতেই কাজ হয় না তাই অবশেষে স্যামস্ হাল ছেড়ে দিয়েছে। একদিন সে ওয়াশরুম থেকে গোসল করে বেরিয়েই দেখলো অবন্তিকা তার রুমে কি যেন খুঁজছে।
স্যামস্ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো-
–“এই তুমি এখানে কি করছো?”
অবন্তিকা ব্যস্ততার ভঙ্গিতে তার দিকে না তাকিয়েই বললো-
–“কাজ আছে।”
–“আমার রুমে তোমার কিসের কাজ? আর জানো না যে, কারও রুমে ঢুকার আগে অনুমতি নিতে হয়?”
এবার অবন্তিকা স্যামসের দিকে তাকিয়ে বললো-
–“দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে দুই তিনবার বলেছি, ‘ডাকাত ভেতরে আসবো?’ কিন্তু কোনো জবাব পেলাম না। তাই ভাবলাম যে, নিরবতা সম্মতির লক্ষণ।”
–“কিহ? নিরবতা সম্মতির লক্ষণ?
–“এমা আপনি এটা জানেন না?”
–“আমি ওয়াশরুমে ছিলাম তাই শুনতে পাইনি। তোমার তো অপেক্ষা করা উচিত ছিল।”
–“এই ছাড়ুন তো উচিত অনুচিত, সারাক্ষণ নিজের রুমটাকে প্রশাসনিক ভবন বানিয়ে রাখেন কেন? চিরকাল বিনা নোটিশে আপনার রুমে ঢুকার অনুমতি দিয়ে দিন তো!”
–“বিনা নোটিশে আমার রুমে ঢুকতে হলে তো তোমাকে আমার বউ হতে হবে।”
–“এমা তা কেন? আমি কোনো ডাক্তারকে বিয়ে করবো না।”
–“কেন?”
–“ডাক্তারদের হৃদয় মিসিং। এরা কারণে অকারণে মানুষকে সুচ ফুটিয়ে দেয়। বেশি রাগ হলে আবার অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে কেটেকুটে একাকার করে ফেলে।”

অবন্তিকার এই শিশুসুলভ বোকা বোকা কথা শুনে স্যামস্ হো হো করে হেসে ফেললো। মেয়াটার মাথার সবগুলো তারছেড়া তা প্রমানের আর কোনোই অবকাশ নেই।
–“ডাক্তাররা তোমার মতো ফাজিল পাজি মেয়েদেরকেই শুধু সুচ ফুটায়। এখন থেকে লক্ষী হয়ে যাবা, না হলে কিন্তু সুচ ফুটাবো।”
–“সেদিন রাতে জোর করে ধরে ইনজেকশন করেছেন কিছু বলিনি, এরপর যদি আসেন তাহলে কিন্তু আমিও আপনাকে জোর করে ধরে ঝাল মাখানো কাঁচা আম খাইয়ে দেবো। সাথে তেঁতুল গুলানো পানিও খাওয়াবো।”
–“এটা আবার কেমন কথা?”
–“এটা ভীষণ ভালো কথা, বুঝলেন ডাকাত ডাক্তার?”

কথাটা বলেই সে হাসতে শুরু করলো। এই সেই ভয়ানক হাসি, যেটা রোজ স্যামস্ এর কাছে নতুন লাগে। যতবার সে এই হাসি দেখে ততোবারই সে মুগ্ধ হয়ে নতুন করে অবন্তিকার প্রেমে পড়ে। সে মনে মনে বললো, “তুমি আসলেই একটা পাগলি।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


স্যামসের অবসরটা ভালোই কাটে। বাসায় এসেও সে একটুও রেস্ট পায় না। অবিরাম চলে অবন্তিকার কথার ঝুড়ি। কবে সে কি কি করেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা করে সে। স্কুল জীবন থেকে বর্তমানে তার কলেজ জীবনের যাবতীয় ইতিহাস সব সে বর্ণনা করে। রাস্তায় রিকশাওয়ালার সাথে কি কি কথা বলেছে, ক্লাসের কোন ছেলে তাকে কি বলেছে, কোন ছেলে ড্যাব ড্যাব করে তার দিকে চেয়েছিল আর সেটা দেখে তার কি কি বলতে ইচ্ছে করেছে সব সে বর্ণনা করে। তার নিয়মিত শ্রোতা হলো স্যামস্ আর তার মামনি। কাউকে কিছুই বলার সুযোগ দেয় না সে। মা ছেলে অবন্তিকার এই ছেলেমানুষি দেখে শুধু হাসে। তাদের এই নিস্তব্ধ বাড়িটাকে এভাবে ভরিয়ে রাখার জন্য এমন একটা পাগলি মেয়ের ভীষণ দরকার ছিল।

স্যামস্ আজকাল রাতের নিস্তব্ধতায় নিয়মিত অবন্তিকাকে অনুভব করে। তার আর বুঝতে বাকি নেই যে, সে অবন্তিকার প্রেমে হোচট খেয়ে পড়ে গেছে। এখান থেকে যে তার উদ্ধার পাওয়ার কোনো আশা নেই সেটাও সে বুঝে গেছে। কিন্তু অবন্তিকা যে পাগলি টাইপের, সে কি কখনো তার মনের কথা বুঝবে? যদি না বুঝে তাহলে তার কি হবে? এ যে বিফল প্রেমের বীজ বপন হবে। হাসপাতাল, রোগী আর অবন্তিকা, এই তিনটাই স্যামস্ এর ব্যস্ততার কারণ। ইদানিং অবন্তিকাকে চোখের সামনে না দেখলে তার অস্থির অস্থির লাগে। কাজের চাপে সে বাড়িতে বেশি সময় কাটাতে পারে না। বাড়িতে থাকা সেই আল্প সময়টাতে অবন্তিকাকে না দেখলে তার দম আটকে আসে। মাঝরাতে যে একটা মেয়ে তার বাড়িতে থাকতে পারবে না, এই সরল সত্যটুকু তার মন কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। তার মনে হয়, প্রতিটা মুহূর্তে অবন্তিকা তার পাশে থাকুক, এমন কি ভীষণ ব্যস্ততার সময়েও। সে চায় পাগলিটা তার মুখোমুখি বসে অবিরাম কথা বলুক, তার কথা শুনতে শুনতে সব কাজ ভুল হয়ে যাক তবুও যেন তার কথা না থামে।
এই সব নানান ভাবনায় তার ঘুম ছুটি নিয়েছে। হঠাৎ তার ব্যালকোণ বারান্দার দরজাতে ঢিল ছুড়ার শব্দ শুনে সে চমকে উঠলো। সে দরজা খুলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে হতবাক হলো। অবন্তিকা একটা মোম জ্বালিয়ে বসে আছে। মোমের আলোতে তাকে দেবীর মত দেখাচ্ছে। এই মেয়েটা এমন মায়াবী সুন্দর কেন তা বুঝে পায় না স্যামস্। তার চেতনা ভেঙে দিয়ে অবন্তিকা বললো-
–“এই ডাকাত ডাক্তার আপনি সারাদিন কোথায় থাকেন হুম? সারাদিনে একবারও আপনার সাথে দেখা হয় না। কি পেয়েছেন আপনি?”

অবন্তিকার কথাতে স্যামস্ নার্ভাস ফীল করলো। এই তারছেড়া মেয়েটার কথার কি জবাব দেবে সে?
–“এই তুমি এত রাতে এখানে কি করছো? আর আমার দরজাতে ঢিল ছুড়েছো কেন?”
–“আপনার জানালাতেই ঢিল ছুড়তে চেয়ে ছিলাম কিন্তু জানালার গ্লাস ভেঙে যাবে তাই দরজাতে ছুড়েছি।”
–“বাট হোয়াই?”
–“আপনার সাথে কথা বলার জন্য।”
–“মানে?”
–“আমি তো রাতেই আপনার সাথে দেখা করতে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু আম্মু যেতে দেয়নি।”

অবন্তিকার কথা শুনে অবাক হলো স্যামস্। তার কাছে আসার জন্য কেন এত ব্যাকুল অবন্তিকা? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পেলেও মনে দ্বিধা থেকেই গেল। কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে সে বলেই ফেলল-
–“আমার সাথে তোমার কি কথা আছে যে, রাতে আসতে চেয়েছো?”
–“আপনি এত রাত জেগে আমার কথা কেন ভাবছেন সেটা জানার জন্য।”

এবার স্যামস্ পুরাই নার্ভার হয়ে গেল। এই মেয়ে মন পড়তে পারে নাকি? এই সব বলছে কি করে? স্যামস্ যে নার্ভাস ফীল করছে সেটা অবন্তিকা বুঝতে পেরে হাসতে শুরু করলো। এই সেই ভয়ানক হাসি যেটা বারবার, শতবার স্যামস্’কে ঘায়েল করে। সে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো-
–“এই আমি তোমার কথা কেন ভাবতে যাব? আমি তো ঘুমোচ্ছিলাম।”
–“এমা তাই? তাহলে আমি ভুল দেখলাম নাকি?”
–“তুমি আমার রুমের ভেতরে ছিলে নাকি যে, আমি কি করছি না করছি তা দেখতে পাবে?”
–“আমি তো আপনার মনের ভেতরে আছি তাই আপনার মন কি করছে না করছে তার সবটাই দেখতে পাচ্ছি।”

অবন্তিকার কথা শুনে স্যামস্ ঘামতে শুরু করলো। প্রতিদিন সে কত অপারেশন করে কিন্তু কখনো সে নার্ভাস হয়নি অথচ এই মেয়েটা নিয়মিত তাকে নার্ভাস করে দেয়। মনের সব কথা বুঝতে পারলে তো ভীষণ বিপদ! স্যামস্ মনে মনে কত কিছু ভাবে, সব জেনে গেলে তো বিষয়টা লজ্জাজনক হবে। এসব ভেবেই টেনশনে সে অস্থির হয়ে গেল। নিজেকে স্বাভাবিক করে সে বললো-
–“রাত বারোটা পার হয়ে গেছে এখন ঘুমাও। আমার ভীষণ ঘুম পেয়েছে।”
–“কিন্তু আপনার তো আমাকে ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে।”
–“কে বলেছে?”
–“আমার ভেতরের টুনি মন বলেছে।”
–“টুনি মন মানে?”
–“আমার তো দুইটা মন। একটা বাহিরের মন আর আরেকটা হলো ভেতরের মন। ভেতরের মনের নাম টুনি রেখেছি।”
–“এই প্রথম জানলাম মানুষ মনেরও নাম রাখে।”
–“কেউ রাখে না, আমি রাখি, তাতে আপনার কি সমস্যা?”
–“কোনোই সমস্যা নাই।”
অবন্তিকা হাত ইশারা করে বললো-
–“ঐ যে কাঠগোলাপের গাছটা দেখছেন।”
–“হ্যাঁ দেখছি।”
–“ওটার নাম স্যামস্ রেখেছি।”
–“মানে?”
–“গাছের নাম স্যামস্।”
–“আমার নাম তুমি কাঠগোলাপের গাছের রেখেছো?”
–“হ্যাঁ রেখেছি। আর আপনার নাম রেখেছি ডাকাত ডাক্তার।”
–“বাহ্ কি বুদ্ধিমতি তুমি!”
অবন্তিকা খুশি হয়ে বললো-
–“হ্যাঁ সবাই তাই বলে।”
–“যারা বলে তারা সবাই নির্বোধ পাগল।”
–“কি?”
–“তুমি মূলত একটা পাগলি।”
–“হ্যাঁ আমি পাগলি, আর সেই পাগলিকে ভেবে ভেবেই তো রাত জেগে আছেন।”
–“কে বলেছে এই সব আজগুবি কথা?”
–“টুনি বলেছে।”
–“আর কি কি বলেছে সে?”
–“সে বলেছে আপনার টুনা মন ভীষণ অস্থির আছে। সে আজ সারাদিন আমার সাথে কথা বলতে পারেনি তাই অস্থির।”
–“আর কি বলেছে?”
–“সে বলেছে আপনি ওটিতে অপারেশন করতে করতে আমার কথা ভেবে উদাসীন হয়ে যান।”
–“আর তোমার মন উদাসীন হয় না? আমার কথা মনে পড়ে তোমার অস্থির লাগে না?”
–“না তো।”
স্যামস্ রেগে গিয়ে বললো-
–“তাহলে জেগে আছো কেন? যাও ঘুমাও, আর কখনো ঢিল ছুড়বে না।”
–“এই আপনি আমাকে বকছেন নাকি?”
–“হ্যাঁ বকছি।”
–“সব মামনিকে বলে দেবো কিন্তু।”
–“কি বলবা?”
–“আপনার মনে যা কিছু চলে সব।”
–“আমার মামনি জানেই যে, তার ছেলে মেয়েদের থেকে দূরে থাকে। বানিয়ে বানিয়ে আষাঢ়ে গল্প বলে লাভ নেই।”
–“দেখা যাবে লাভ হবে কি না। এখন যান ঘুমান তো। দেখতে চেয়েছেন দেখতে পেয়েছেন এখন শান্তিতে ঘুমান। টা টা।”

কথাগুলো বলেই অবন্তিকা ঘরের ভেতরে চলে গেল। স্যামস্ আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অবন্তিকার বলে যাওয়া কথাগুলো ভেবে একাই হাসলো।

কৃষ্ণচুড়ার রঙে মনটাকে রাঙিয়ে দিয়ে ভালোবাসার বসন্ত এলো অবন্তিকার জীবনে। বদলে গেল অবন্তিকার অনুভূতি সমূহ। সারাক্ষণ তার মাথায় স্যামস্ এর ভাবনাগুলো ঘুরপাক খায়। স্যামস্’কে ভেবেই তার মনে শিহরণ বয়। অজানা এক খুশি এসে তাকে জাপটে ধরে। স্যামস্’কে দেখতে না পেলে তার মনে বিষাদ নামে। তাকে দেখবার ব্যাকুলতা অবন্তিকাকে বিরহী করে। ঘুমের ঘোরে তার ভাবনায় সে কেঁপে কেঁপে উঠে। মাঝরাতে পাশ ফিরতে গিয়ে ঘুম ভেঙে গেলে তার স্যামস্ এর কথা মনে পড়ে। তাকে মিস করার বিরহ অবন্তিকার চোখে কুয়াশা নামায়। সে বুঝতে পারে না এটার নাম ভালোবাসা কি না।
ভালোবাসা এমন একটা অনুভূতির নাম, যে অনুভূতি মানুষের জীবনটাকেই বদলে দেয়। শত বিরহের মাঝেও সুখের দোলা জাগায়। আজকাল মায়ের বকুনি অবন্তিকার কানে ঢুকে না। সে দিনরাত উদাসীন থাকে। বেলকোণ বারান্দায় বসে স্যামস্ এর ফেরার প্রহর গুনে। সে একা বসে বসে সোনালী স্বপ্ন আঁকে। যে স্বপ্নের দেশে স্যামস্ আর অবন্তিকা ছাড়া কেউ নেই। তাকে ভেবেই সকাল হয়, তাকে ভেবেই রাত আসে। তারপর সেই ভাবনাতেই সে ডুবন্ত থাকে। একদিন স্যামস্’কে দেখতে না পেলে অবন্তিকার মেজাজ গরম হয়ে যায় তখন তার স্যামস্ এর সব চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে স্যামস্ এর ঘরের দরজা জানালা ভেঙে ফেলতে। ভাঙতে না পেরে তার রাগ আরও দিগুণ আকার ধারণ করে। তাই সে নিয়মিত স্যামস্ এর দরজাতে ঢিল ছুড়ে তাকে বারান্দায় টেনে আনে।
–“এই ডাকাত ডাক্তার, রাজ্যের ব্যস্ততা কি আল্লাহ একমাত্র আপনাকেই দিয়েছে?”
–“তুমি জানো না যে, এটা আমার পেশা?”
–“আপনার তো দেখছি বউ পালিয়ে যাবে?”
–“কেন?”
–“দিনরাত হাসপাতালে পড়ে থাকেন। আপনার বউ নিশ্চয়ই মাদার তেরেসা হবে না?”
–“অমন বয়স্ক মহিলা আমার বউ হতে যাবে কেন?”
–“উনি না হোক, উনার টাইপের কাউকে আপনার বিয়ে করা উচিত। দু’জন মিলে দিনরাত মানুষের সেবা করবেন। আর পাশের বাসায় যে একটা অবলা মেয়ে থাকে তার খবর নেয়ার তো দরকার নেই।”
–“পাশের বাসার মেয়েটা তো ভালোই আছে। আর কি খবর নেবো?”
–“কে বলেছে ভালো আছে?”
–“আমার টুনা মন বলেছে।”
–“আপনার টুনা মন একটা ব্যাক্কল বজ্জাত।”
–“কেন? কেন?”
–“সে কিছুই জানে না, সব মিথ্যা বলে।”
–“তো পাশের বাসার অবলা ডাকুরানী কেমন আছে?”
–“বলবো না।”
–“কেন?”
–“নিজে থেকে তো কথা বলতে আসেননি। আমি ঢিল ছুড়ে আপনাকে বাহিরে এনেছি তাই বলবো না।”
–“এখন কি তবে কান ধরবো?”
–“হ্যাঁ ধরুন।”
–“তাহলে কি ডাকুরানীর মন ভালো হবে?”
–“হতেও পারে তবে গ্যারান্টি নাই।”
–“তাহলে থাক ধরবো না।”
–“আচ্ছা ধরতে হবে না। এখন আপনার ফোন নম্বর দিন।”
–“কেন?”
–“কাঁচা আমের সাথে আপনার নম্বর মিশিয়ে খেলে বেশি টেস্টি লাগবে তাই চাইছি। আর আপনাকেও এক বাটি দিয়ে যাব।”
–“কি বলো এসব?”
–“দেবেন নাকি ঢিল মেরে আপনার জানালার কাঁচ ভাঙবো?”
–“আল্লাহ এ কোন পাগলির পাল্টে পড়েছি আমি!”
–“তিন পর্যন্ত গুনতে গুনতে যদি না দেন তাহলে আপনার জানালার কাঁচ আহত হবে তার পর নিহত হবে। জানালার কাঁচকেও তো আর অপারেশন করে ঠিক করতে পারবেন না।”

স্যামস্ জানেই এই পাগলি মেয়েটা সব কিছুই করতে পারে। তাই সে একটু ভয় পেয়ে গেল। কারণ এই মেয়ে জানালার কাঁচ ভেঙেও শান্ত হবে না।
–“আচ্ছা দিচ্ছি।”

ফোন নম্বর পাওয়ার পর থেকে অবন্তিকার উৎপাত আরও বেড়ে গেল। বাসার বিড়ালটাকে খুঁজে না পেলেও সে স্যামস্’কে ফোন করে। গাছে একটা ফুলের কলি এলেও সে ফোন করে। আর রাতে ঘুম না এলে তো কোনো কথাই নেই।
এসবে অবশ্য স্যামস্ বিরক্ত হয় না। বরং সে চায় অবন্তিকা চিরকাল যেন এমন পাগলি হয়েই থাকে। পাগলামি ছাড়া তাকে যে মানাবে না। স্তব্ধতা আর অবন্তিকা এক সাথে যায় না।

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

(পরের পর্ব আসছে……)
Written by- Sazia Afrin Sapna

পর্ব-২
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=928273797603340

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে