রোমান্টিক_অত্যাচার-২ পর্ব-১০

3
4145

রোমান্টিক_অত্যাচার-২
পর্ব-১০
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
মাহিঃ সামনে এটা কে দাড়িয়ে আছে? ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।ব্রেকটা না কষলেই তো ধাক্কা লাগিয়ে দিতাম।
আলিশাঃ গাড়ি থেকে নেমে মাহির গাড়ির কাছে গেলাম।সামনে যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমারই তো কলিজার পানি শুকিয়ে গেছে।যেভাবে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে আছে যখন তখন ব্লাস্ট হতে পারে।
মাহিঃ আমি তো শুধু গাড়ির ভেতোর বসে আছি। আজকে আর আমি গাড়ি থেকে নামছিনা। সামনে আমার যে বিশাল দেহের এক হিংস্রমানব দাড়িয়ে আছে।সে আর কেউ নয় সে আশফি চৌধুরী। আমি জানতাম গার্ডগুলো ওকে জানিয়ে দিবে।যেভাবে তাকিয়ে আছে তা দেখে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও ভয়ে দৌড়াবে।
★২০ মিনিট পর★
মাহিঃ এটা কি ধরনের শাসন আমি বুঝতে পারছিনা।ঘরের দরজা আটকে সেই তখন থেকে শুধু তাকিয়েই আছে। যেভাবে তাকিয়ে আছে তাতে তো মনে হচ্ছে যখন তখন আমার পিঠে তাল পড়বে।
আমি তো রুমের এক কোণে গুটিসুটি মেরে দাড়িয়ে আছি।কখন হাঁক তুলবে সেই অপেক্ষায়।দরজাটা ও বন্ধ করে রেখেছে যাতে পালাতে না পারি। এইতো…. এগিয়ে আসছে আমার দিকে।আমার একদম কাছে চলে এসেছে।
-আশফি তুমি আমাকে মারবে নাকি?
কথাটি শেষ করার আগেই আমার হাতটা ধরে বিছানার উপর বসিয়ে দিলো।
আশফিঃ সবকিছুর একটা লিমিটেশন থাকে। আর সেটা যদি কেউ জেনে বুঝে ক্রস করে তাহলে তার সাথে আমি কতোটা খারাপ করতে পারি তা তুমি ভালোই করেই জানো। অনেক সহ্য করেছি। আজকে আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিয়েছো। ভালোবেসে যেহেতু তোমাকে আমি কিছু বোঝাতে পারলামনা তাই খারাপ পথটাই আমাকে অবলম্বন করতে হবে।
মাহিঃ কি করতে চাইছো তুমি? আমার কথার উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে চলে গেলো।কিন্তু দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে গেলো মনে হচ্ছে।আমি দৌড়ে দরজার কাছে গেলাম সেটা দেখার জন্য যে সত্যি দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে গেছে নাকি।হ্যা ও তাই ই করে গেছে। এ কেমন ধরনের শাস্তি দিচ্ছে ও এভাবে ঘরের ভেতোর আটকে রেখে?কতক্ষণ এভাবে ঘরে বন্দী হয়ে বসে থাকতে পারবো? আমার তো দম আটকে আসবে। এটা কি ধরনের শাস্তি দিচ্ছে আশফি?
আশফিঃজি ড.। আপনি যদি একটু কষ্ট করে আসতেন তাহলে ভালো হতো।ওর একটু চেকআপটা করানোর প্রয়োজন ছিলো। ওকে তাহলে আপনি চলে আসুন।
আলিশাঃআশফি তুমি পুরো ব্যাপারটা আসলে জানোনা।আমিই আসলে……..।
আশফিঃআমি জানতেও চাইনা।ওকে নিয়ে কোনো সুপারিশ করো না আলিশা।আমি সেগুলো শোনার মুডে নেই।
আলিশাঃতুমি আমার কথাটা শুনো আগে।
আশফিঃ কি শুনবো? এগুলোই তো বলবে যে তুমি ওকে বলেছিলে এসব করতে? তাও তো আমি ব্যাপারটা মেনে নিবোনা।কারণ ও কি এডাল্ট নয়?ওর কি অজানা আছে যে এসময় জার্নি বা ড্রাইভিং থেকে দূরে থাকতে হয়?
ডক্টরঃ আশফি?
আশফিঃএসে গেছেন? প্লিজ চলুন ওর চেকআপটা করানো খুবই জরুরি।
মাহিঃ ড. এসে আমার চেকআপ করা শুরু করলো। বুঝতে পারলাম না।হঠাৎ করে ড.কে খবর দেওয়ার কি হলো?কিন্তু ও তো রুমে আসলোনা।ও বুঝি বাইরেই দাড়িয়ে আছে।ড. চেকআপ করে আমাকে কিছু না বলে বাইরে বেরিয়ে গেলো।একটু টেনশনে পড়ে গেলাম।কি করবো বাইরে গিয়ে শুনবো ড.কি বলছে?না থাক তাতে যদি ও আবার রেগে যায়?
আশফিঃকেমন দেখলেন ড.?
ডক্টরঃ চিন্তা করার মত কোনো বিষয় হয়নি মি. আশফি।তবে সাবধানের তো মার নেই।প্রথম প্রেগন্যান্সি তো অনেক কেয়ারফুল থাকতে হবে। আর ওর বোধহয় ঘুমটা এখনো ঠিক হচ্ছেনা। কড়া ডোজের ঘুমের মেডিসিন দিয়েছি।সেটা খাইয়ে দিবেন দুপুরের খাবারের পর।আর আগের যে মেডিসিনগুলো দিয়েছি সেগুলো যেনো একটা বেলাও মিস না যায়।
আশফিঃওকে।থ্যাংকস ড.।
ডক্টরঃ এটা আমার কর্তব্য। এখন তাহলে আমি আসি।
আশফিঃজি চলুন আপনাকে এগিয়ে দিই।
মাহিঃ চুপটি করে বিছানার উপর বসে আছি।না জানি কি বলেছে ড.। সব ঠিক আছে তো?কিছুক্ষণ বাদে আশফি রুমে ঢুকলো। কিন্তু আমার দিকে একবারও তাকালোনা।অফিসের জন্য বের হবে বোধহয়।বেচারা আমার জন্য সেই অফিস থেকে আবার ব্যাক করেছে। আমি তো বেশিক্ষণ ড্রাইভিংটা করতাম না। একটু বেশি বেশি করে ছেলেটা।ওর যা করে তাতে মনে হয় আমিই যেনো পৃথিবীর সর্বপ্রথম গর্ভবতী।
আশফিঃআমি না আসা পর্যন্ত এই ঘর থেকে এক পা বাইরে বের হবেনা।তোমার যা প্রয়োজন হবে সব ওরা(সার্ভেন্টস)এসে করে দিয়ে যাবে।আর মেডিসিনটা ও ওরা এসে দিয়ে যাবে।
মাহিঃ তুমি কি বেশিই করছোনা?
-ও চলে যাচ্ছিলো।আমার কথাটা শুনে দাড়িয়ে গেলো।
আশফিঃওর এই একটা বাক্য শুনে আমার ঠান্ডা মস্তিষ্ক আবার বিগড়ে গেলো।ওর কাছে এসে ওকে ধাক্কা দিয়ে ঠাস করে বিছানায় বসিয়ে দিলাম।
-তোমার কাছে যদি আমার এই বিষয়গুলো বেশি মনে হয় তাহলে তুমি যা করছো সেগুলো কি?খুব কম? ফাইন।আমি বেশি বেশি করছি।তোমার কাছে ব্যাপারটা এমনই মনে হচ্ছে।তাহলে সেই বেশি বেশিটাই আজ থেকে শুরু করবো।
ওকে রেখে বাইরে চলে এলাম।তবে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম বাহির থেকে। কারণ আমি জানি ও ঘরে বসে থাকা মেয়ে নয়।আর ও বাইরে থাকা মানেই আমার টেনশন।ওর কাছে ওর বিষয়টা খুব ইজি মনে হচ্ছে।কিন্তু আমার কাছে সেটা ইজি নয়।ওর সামান্য কোনো ভুলের জন্য যদি বড় কোনো কিছু ত্যাগ করা লাগে তবে সেটা আমি মেনে নিতে পারবোনা। সেটা আমার সহ্য সীমার বাইরে চলে যাবে।ওকে এভাবেই রেখে চলে গেলাম দরজাটা লক করে।ভেতোর থেকে অনেকবার ডাকাডাকি করছে আমাকে।কিন্তু কোনো সাড়া দিলাম না। এতো পরিমাণ রাগ হচ্ছে ওর কথা আর ওর কার্যকলাপে যা বলার মত নয়।সবথেকে বেশি রাগ হচ্ছে এটা দেখে যে বিষয় নিয়ে আমি যতোটা চিন্তিত তার এক অংশও মাহি চিন্তিত নয়। ওখান থেকে সোজা অফিসে চলে এলাম।
মাহিঃ ও কি এটা ঠিক করলো?এভাবে আমি কতক্ষণ ঘরে বসে থাকবো। ২ ঘন্টা পার হয়ে গেলো। এর মাঝে আলিশা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে দরজাটা খোলার। কিন্তু সেটা তো আর আশফি ছাড়া খুলতে পারবেনা। চাবিটা তো ওর কাছেই। রাগ যা হচ্ছে ওর উপর। ও না আসা পর্যন্ত এভাবে থাকতে হবে আমাকে? জানালার কাছে এসে চুপচাপ দাড়িয়ে আছি। আকাশের অবস্থা ভালো নয়।যে কোনো সময় ঝপ করে বৃষ্টি নামবে।ভালোই হবে।আজকে মনটা আমার ও খারাপ।আকাশের মনও হয়তো খারাপ।দুজনে সন্ধি করবো আজ।
আলিশাঃআশফিটা কি বুঝতে পারলাম না।এভাবে মেয়েটাকে আটকে রাখার কোনো মানে হয়?না খেয়ে আছে মাহি।খেতে দিবোই বা কি করে?কতক্ষণ না খেয়ে থাকবে ও?ফোন করছি তখন থেকে ফোনটাও তুলছেনা। আশফিটা একটু বেশিই কড়াকড়ি করছে।নাহ্ এভাবে বসে থেকে সময় নষ্ট হচ্ছে।তার চেয়ে বরং ওর অফিসেই যাই।না হলে তো ওকে আর জানাতে পারছিনা।সোজা ওর অফিসে চলে এলাম।ওর সেক্রেটারির সাথে কথা হলো।মাত্রই নাকি কনফারেন্স রুমে চলে গেছে। এখন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এতো কষ্ট করে যখন এসেছি তখন একটু না হয় অপেক্ষা করি। উফ অপেক্ষা করতে করতে আমি টায়ার্ড।আর পারছিনা এভাবে বসে থাকতে।এদিকে মাহি ও ঘরে বন্দী হয়ে আছে।
আশফিটা কি পাগল হয়ে গেলো বুঝতে পারছিনা। ওকে না পেয়ে চলে যাচ্ছিলাম পেছন থেকে ওর গলার আওয়াজ পেয়ে থেমে গেলাম।হ্যা ও বেরিয়েছে মিটিং শেষ করে।আমাকে দেখে ও আমার কাছে এগিয়ে এলো।
আশফিঃআলিশা তুমি?
আলিশাঃহ্যা আমি। কি আর করবো।তুমি মাহিকে ওভাবে আটকে রেখে এসেছো ঘরে।ওর কি……
আশফিঃতো তুমি এখানে ওর জন্য সুপারিশ করতে এসেছো?
আলিশাঃআশফি…??
আশফিঃএসেই যখন পড়েছো তাহলে আর একটু ওয়েট করো আমি এক্ষনি বাসায় ফিরবো।
আলিশাঃওকে।পুরো এ্যাংগ্রি বার্ড একটা।১০ মিনিট পর আমাকে নিয়ে আশফি বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলো।বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ওয়েদার এর অবস্থা খুবই খারাপ।স্নো পড়ছে বৃষ্টির সঙ্গে।
-একি তুমি সুপারশপের সামনে এলে যে?
আশফিঃভেতোরে গেলেই বুঝতে পারবে।
আলিশাঃআশফি নানানরকম খাবার কিনছে।
-এতো খাবার কিনছো যে? বাসায় তো রান্না হয়েছে।
আশফিঃএগুলো আমার মহারানীর জন্য।
আলিশাঃযাক তাহলে মাহির খাওয়ার কথা তোমার মনে পড়লো। বেচারি সেই সকাল ১০ টার পর থেকে না খেয়ে রুমের মধ্যে একা বসে আছে। ওকে যে গিয়ে একটু দেখবো সেই উপায়টা ও রেখে যাওনি।কি হলো তুমি আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আমি আবার কি করলাম?
আশফিঃআমি আসার পর থেকে ওকে খেতে দাওনি?
আলিশাঃদেবো কি করে তুমি তো চাবিটা তোমার সাথে করেই নিয়ে গেছো।
আশফিঃএরকম একটা ভুল আমি কি করে করতে পারলাম?তখন রাগের মাথায় ওদের কাছে চাবিটাও দিয়ে আসিনি। দুপুরের পর যে ওর কিছু মেডিসিন ছিলো সেগুলো ও নিশ্চই খাওয়া হয়নি।ও ঠিক আছে তো?যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে?ওকে কন্ট্রোল করতে গিয়ে আমি ওর কোনো ক্ষতি করে ফেললাম না তো।
আলিশাঃকি ভাবছো? দেখো বাইরের অবস্থা কি খারাপ।বাসায় যাবো কি করে বুঝতে পারছিনা।
আশফিঃএক্ষণি বেরোতে হবে আমাদের।তাড়াতাড়ি চলো।
-আরে ভাই কোথায় যাচ্ছেন?দেখছেন না বাইরের কি অবস্থা? ঐ দিকের রাস্তা তো পুরো ব্লক হয়ে গেছে বরফে।
আশফিঃআপনি কি দেখে এসেছেন সেটা?
-আরে অদ্ভুত তো।দেখে আসবো কেনো?নিউজ চ্যানেলে বলছে শুনতে পারছেন না? আজব মানুষগুলো।এদের সাহায্য করাও সমস্যা।যত্তসব।
আলিশাঃআশফি তুমি এরকম মাথা গরম করছো কেনো?উনি তো ঠিকই বলছে।তুমি দেখো নিউজ চ্যানেলে এখনো দেখাচ্ছে রাস্তাগুলো কিভাবে ব্লক হয়েছে বরফ পড়ে।আর বাইরের অবস্থাও ভীষণ খারাপ।
আশফিঃনা আলিশা আমার এক সেকেন্ডও এখন দেরি করা সম্ভব না।মাহির কিছু মেডিসিন ছিলো যা এক বেলা ও মিস না করার কথা বলেছে ড.।আর তার উপর এতক্ষণ ও না খেয়ে আছে।আমি আর ভাবতে পারছিনা।আলিশা তুমি গাড়ির চাবিটা রাখো।
ওয়েদার ঠিক হলে তারপর তুমি চলে এসো।
আলিশাঃকি বলছো তুমি এসব?আচ্ছা ঠিক আছে। আমার গাড়ি লাগবেনা। গাড়িটা তোমার প্রয়োজন।
তুমি নিয়ে যাও।আমি পরে ট্যাক্সি করে চলে আসবো।
আশফিঃনা না।এই ওয়েদারে ট্যাক্সি পেতে কষ্ট হবে তোমার।তুমি চাবি রাখো আমাকে নিয়ে ভেবোনা আমি ঠিক চলে যেতে পারবো।ওকে বাই টেক কেয়ার।
আলিশাঃআরে আরে দাড়াও।আশফি?ছেলেটা কি পাগল হয়ে গেলো। এই অবস্থাতে ও যাবে কি করে? টেনশন তো আরো একটা চাপিয়ে দিয়ে চলে গেলো। এদের ছেলেমানুষি আর নিতে পারছিনা।দুটোই মাঝে মাঝে বাচ্চা হয়ে যায়।
আশফিঃজানিনা মাহির এখন কি অবস্থা?ফোন করছি ফোনটাও তুলছেনা। ইচ্ছে করেই তুলছেনা নাকি?কিছুই বুঝতে পারছিনা।বাসায় না পৌঁছানো পর্যন্ত আমার শান্তি লাগছেনা।কি করে পারলাম আমি ওর সাথে এরকমটা করতে?কতোটা কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা।
(বৃষ্টিতে ভিজে দৌড়ে যাচ্ছে আশফি মাহির কাছে। অবশেষে আধা ঘন্টার রাস্তা আশফি দৌড়ে ১ ঘন্টায় পৌঁছালো। গাড়িতে এলে আশফি আধা ঘন্টার মাঝে পৌঁছে যেতো।)
আশফিঃভেজা অবস্থাতেই আমি দৌড়ে রুমের দরজা খুললাম।আমাকে এভাবে আসা দেখে গার্ডস সার্ভেন্টস সবাই অবাক হয়েছে। রুমের দরজা খুলে দেখলাম মাহি জানালার সামনে দাড়িয়ে আছে।দরজা খোলার শব্দ শুনে আমার দিকে তাকালো।ওর মুখটা পুরো ভিজে আছে। জানালার সামনে দাড়িয়ে থাকার কারণে বৃষ্টিজল জানালা দিয়ে প্রবেশ করে ওর মুখটা ভিজিয়ে দিয়েছে। হয়তো ইচ্ছে করেই জানালার ভেতোরে মুখটা এগিয়ে দিয়ে রেখেছিলো ভিজতে ইচ্ছা হয়েছিলো হয়তো। আমাকে দেখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিছানার কোনায় গিয়ে বসে পড়লো।
মাহিঃ ও এমনভাবে ভিজে এসেছে কেনো?আর আমাকে এভাবে ভিজতে দেখে না জানি এখন কি রিয়্যাক্ট করবে।আজকাল তো ওর পারমিশন ছাড়া টয়লেটে যেতেও ভয় লাগে। একি?ও দৌড়ে এসে আমার কোলের কাছে বসে পড়লো(নিচে)।আমার কোলের উপর মাথা রেখে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। হায় আল্লাহ্ ও এমন করছে কেনো কি হয়েছে ওর?
-আশফি?কি হয়েছে তোমার?এমন কেনো করছো তুমি?আর এভাবে ভিজে আছো কেনো? প্লিজ কান্না থামাও আমার খুব ভয় করছে।
আশফিঃওর কথা শুনে আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম।আমার কান্না করা দেখে ও নিজেও কান্না শুরু করে দিয়েছে।
-তুমি ঠিক আছো তো?
মাহিঃ আমি ঠিক আছি মানে?তোমার কি হয়েছে আগে সেটা বলো।আমার খুব…..।
-ওর কার্য দেখে আমার কথা থেমে গেলো।আমার হাত দুটো আগে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কান্না করে তারপর হাতে চুমু দেওয়া শুরু করলো।
আশফিঃআমি তোমাকে প্রমিস করেছিলাম কখনো তোমাকে কষ্ট দিবোনা। কিন্তু সেই কথা আমি রাখতে পারিনি।মাহি তুমি কি জানো আমার জীবনটা তোমার মধ্যে বিদ্যমান। আল্লাহ্ না করুক তোমার কিছু হয়ে গেলে সেদিন আশফির ও পৃথিবীতে কোনো অস্তিত্ব থাকবেনা। আল্লাহ্ পাকের পর আমার বেঁচে থাকার ভরসা তুমি। আমার দেহটা আমার কাছে থাকলেও আমার আত্মাটা তোমার কাছে পড়ে থাকে। তোমার চিন্তায় আমি যে কতোটা ব্যাকুল তা যদি তোমাকে একবার দেখাতে পারতাম তাহলে হয়তো তুমি আমাকে বুঝতে। আমার কথার অমান্য করতে না।তোমাকে শাস্তি দিতে গিয়ে আমি যে কতোটা শাস্তি পাই সেটা যদি তোমাকে দেখাতে পারতাম তাহলে হয়তো তুমি আমার শাস্তির কথা চিন্তা করে নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে।
(মাহি বিছানায় বসে আছে। আর আশফি নিচে মাহির কোলের কাছে বসে ওর হাতদুটো বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে কথাগুলো বলছে।আর চোখ দিয়ে অনর্গল বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে)
মাহিঃ আমি মাফ করে দাও।আর কখনো আমি তোমাকে কষ্ট দিবোনা। আমি সত্যি বুঝতে পারিনি আমার কার্যকলাপের জন্য তুমি এতোটা কষ্ট পাও। আমিও যে তোমার কষ্ট সহ্য করতে পারিনা।আমি সত্যিই খুব খারাপ।সেই শুরু থেকে তোমাকে কষ্ট দিয়ে আসছি।এমনকি তোমার জীবনে যা সব দুর্ঘটনা তা সবই আমার জন্য।
আশফিঃমাহি প্লিজ এসব কথা বন্ধ করো।আমি তোমাকে নিষেধ করেছি না এগুলো তুমি কখনোই বলবেনা। আমার আর তোমার সাথে যা হয়েছে সেগুলো আমাদের ডেসটিনি।
মাহিঃ এখন বলো তুমি এভাবে কাঁদছিলে কেনো? আর তোমার এ অবস্থা কেনো?
আশফিঃসেসব পরে বলছি। আগে তোমার খাওয়ার ব্যবস্থা করি।
মাহিঃ এই দাড়াও। কোথায় যাচ্ছো তুমি?তোমার কি অবস্থা হয়েছে সেটা তুমি দেখতে পাচ্ছোনা?আমার কাছে এসো আমি মাথা শরীর সব মুছে দিচ্ছি। এই না,একদম আমার কথা অমান্য করবেনা।১০ মিনিট দেরি করে খেলে আমার কিছু হবেনা কিন্তু তুমি ১০ মিনিট দেরি করলে আজকে আর তোমাকে দেখতে হবেনা।ভেজা জামা কাপড় খুলো আগে।
আশফিঃশাসন করা হচ্ছে আমাকে?
মাহিঃ শাসন+টেক কেয়ার।
আশফিঃআচ্ছা? তাহলে আমার জামা-কাপড়টা তুমিই খুলো।
মাহিঃ কি ভেবেছো আমি সেটা পারবোনা।দাড়াও।
-ওর কাছে গিয়ে স্যুট টাই শার্ট সব খুললাম।যখনই প্যান্টে হাত দিতে গেলাম তখনই আমার হাতটা ধরে থামিয়ে দিলো।
আশফিঃএটা থাক।আমিই খুলতে পারবো।
মাহিঃ না তা কেনো? আমিও তো খুলতে পারবো।তুমি ছাড়ো আমি খুলছি।
আশফিঃনা না সবাই দেখে ফেলবে।
মাহিঃসবাই কারা দেখে ফেলবে?
আশফিঃঐ যে ওরা?
-সামনের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখালাম।ও তখন সেদিকে দেখার জন্য ঘুরলো।সেই ফাঁকে আমি পালিয়ে এলাম ওয়াশরুমে। না হলে আজকে সত্যি সত্যি সবার সামনে ফ্লাশ করে ফেলতো।
মাহিঃ ও, আমাকে বোকা বানানো হলো?ঠিক আছে পরে দেখে নিবো।
আশফিঃওকে ডিয়ার রেডি থাকবো।
মাহিঃ পাঁজি একটা।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আগে গেলো আমার জন্য খাবার আনতে। আমি হয়তো পৃথিবীর সব থেকে বেশি ভাগ্যবতী ওর মত স্বামীকে পেয়ে।কেউ কাউকে এতোটা ভালোবাসতে পারে ওর ভালোবাসা না পেলে হয়তো তা জানতে পারতামনা। খাবার এনে আমাকে খাওয়াতে শুরু করলো।খাওয়া শেষে ও উঠে চলে যাচ্ছিলো আমি ওর হাতটা টেনে ধরলাম।
-কোথায় যাচ্ছো?আমার খাওয়া শেষ হয়নি তো।
আশফিঃখাওয়া তো শেষ। আর তো কিছু নেই।আর একটু খাবার আনবো?
মাহিঃ তার কোনো প্রয়োজন নেই।এখানেই যথেষ্ট খাবার আছে।
-আমি ওর আঙ্গুলে জড়িয়ে থাকা খাবার গুলো চেটে খেলাম ওর আঙ্গুল গুলো মুখের মধ্যে নিয়ে।
আশফিঃতো হয়েছে খাওয়া?
মাহিঃউমম…..নাহ্। আর একটু বাকি আছে।
আশফিঃআর কি বাকি আছে?
মাহিঃমিষ্টি।
-আমি ওর সামনে দাড়িয়ে ওর কলারটা ধরে ওকে কাছে টেনে ওর ঠোঁটে আমার ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া দিলাম।opps…..শুধু দিলাম নয় নিলামও।মিষ্টি?। তাও সেটা ১/২ মিনিট নয়। এরপর(…….)
চলবে।

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে