রোমান্টিক অত্যাচার-২
পর্ব-০৯
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
মেহেরুনঃতারপর থেকেই তার প্রতি আমার সন্দেহ দ্বিগুণ হয়েছে।
পিতাঃসন্দেহ করার আর কোনো অবকাশ নেই মেহেরুন।যে কোনো সময় রাজ্য আক্রমণ হতে পারে। আমি কিভাবে আমার রাজ্য, রাজত্যকে রক্ষা করবো?আমি যে দিশেহারা হয়ে পড়ছি।
মেহেরুনঃভেঙ্গে পড়বেন না পিতা।আপনি ভেঙ্গে পড়লে রাজ্যের বাকিসবার কি হবে। তারা তো আপনার থেকেই শক্তিসঞ্চার করে।
পিতাঃ এতদিনে ঐ গুপ্তচর আমার রাজমহলের আর রাজ্যের সকল তথ্য জেনে গেছে।
মেহেরঃতাতে কি হয়েছে? আপনি রাজ্যে সমস্ত স্থানে খবর পৌঁছে দিন। রাজ্য যে কোনো সময় হামলা হতে পারে।কোন রাজ্যের রাজা বা কারা এসব কিচ্ছু জানা নেই।সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে বলুন।আর হ্যা রাজ্যে যদি কোনো অচেনা বা অপরিচিত কোনো ব্যক্তিকে দেখা যায় তাহলে তাকে যেনো খুব দ্রুত রাজদরবারে উপস্থিত করা হয়।
পিতাঃ হ্যা।আর সময় অতিবাহিত করা যাবেনা।
ফালাকঃহা হা হা। এতক্ষণে রাজা জাভেদ খানের কিরূপ অবস্থা হয়েছে তা আমার দেখার ভীষণ সাধ ছিলো।
ইকরামঃআগামীতে যে আরো কত ভয়াবহ অবস্থা হবে তা যদি জানতে পারতো রাজা জাভেদ খান!
ফালাকঃআর কতোদিনই বা রাজ্য চালাতে পারবে রাজা জাভেদ।শেষ কিছুদিন না হয় একটু রাজত্য করুক নিজের রাজ্যে।তারপর তার অবস্থান কোথায় হবে শুধু তিনিই জানেন।(উপরে ইশারা করে দেখিয়ে)।
মন্ত্রীঃ সম্রাট আপনি ঠিক কোন ক্ষণে রাজ্য শেরপুর আক্রমণ করতে চাচ্ছেন আর তা কিভাবে?
ফালাকঃতা আমি আপনাদের সঠিক সময়ে জানিয়ে দিবো মন্ত্রী সাহেব।
মন্ত্রীঃ যথাইচ্ছা মহারাজ।
(এরপর রাজা ফালাক মাঝখানে ৭ দিন অতিবাহিত করলো।এদিকে রাজা জাভেদ ও তার কন্যা মেহেরুন সহ সবাই প্রস্তুতি গ্রহণ করছে যুদ্ধে মোকাবিলা করার জন্য। এরই মাঝে রাজা জাভেদ খানের ছোটো ভাইয়ের একমাত্র পুত্র জন্মগ্রহণ করলো।সেই খুশিতে রাজমহলে বড় করে উৎসবের আয়োজন করলো রাজা জাভেদ খান। ঐ ছোট্ট শিশুটির মুখটা দেখে রাজা জাভেদ খানের কেমন যেনো সব দুশ্চিন্তা উধাও হয়ে গেলো।শিশু বাচ্চাকে তিনি বড্ড ভালোবাসেন আর তার রাজকন্যা মেহেরুন ও। রাজা জাভেদ খানের আফসোস ছিলো যে তার কোনো পুত্র সন্তান নেই সেই সাথে মেহেরুনের ও।
এই খুশিতে তারা ভুলে গেলো তাদের পরিকল্পনা কি ছিলো।যেদিন উৎসব হবে সেদিন সকালে………..)
পিতাঃ মেহেরুন মা?
মেহেরুনঃজি পিতা? আদেশ করুন।
পিতাঃআরে না না আদেশ করবো কেনো?সেই সূর্যোদয়ের পর থেকে তুমি উৎসবের সব আয়োজন নিজে হাতে একাই সামলাচ্ছো।তো তুমি কখন তৈরি হবে শুনি? আর একটু পর যে বাইরে থেকে সব অতিথি চলে আসবে যে।
মেহেরুনঃপিতা আমার একমাত্র ভ্রাতার জন্ম উপলক্ষে উৎসব।সেই উৎসবে আমি কোনো ত্রুটি রাখতে চাইনা।
পিতাঃঅনেক সাধ ছিলো তোমার তাইনা? তোমার একটা ছোট্ট ভাইজান থাকবে?
মেহেরুনঃছিলো তো। তাতে কি হয়েছে? চাচাজানের পুত্র কি আমার নিজের ভাই নয়? আপনি অনেক দুঃখ পান তাইনা? আপনার রাজ্যের উত্তরাধিকারী নেই বলে।এখন তো আর দুঃখ হওয়ার কথা নয়।এ রাজ্যের ভাবিরাজা যে জন্মেছে।
পিতাঃআমার উত্তরাধিকারীনি তো অনেক আগেই জন্মেছে।সে আর কেউ নয় আমার রাজকন্যা মেহেরুন।
মেহেরুনঃবি বলছেন এসব পিতা?আমি কেনো হবো?
পিতাঃতুমি আর কোনো কথা বাড়িয়োনা তো মেহেরুন।যাও নিজের কক্ষে গিয়ে অতি শিঘ্রই তৈরি হও।
মেহেরুনঃজি পিতা।
(পেছন থেকে মেহেরুনের চাচা আরব খান তাদের পিতা কন্যার কথা সব শুনলেন আর রাগে ফুসতে থাকলেন।তিনি বড় আশাই আছেন এ রাজ্যের রাজা তিনি হতে না পারলেও তার পুত্র আজগার খান(শিশু) ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী হবে।কিন্তু রাজা জাভেদ খানের কথা শুনে তার ক্রোধ যেনো অত্যাধিক হয়ে গেলো।সে ঐ স্থান থেকে অন্দরমহলের বাইরে চলে আসতে লাগলেন। হঠাৎ করে তার সাথে একজন মালির ধাক্কা লাগলো।সে ফুলগুলো এনেছে অন্দরমহল সাজানোর উপলক্ষ্যে। মালিটি ক্ষমা ভিক্ষা চাইলো আরব খানের কাছে। আরব খানের ক্রোধ তখন সীমাহীন ছিলো তাই সে মালিকে স্বজোড়ে থাপ্পড় মেড়ে দিলো। মালিটি তার দিকে আগুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঐ স্থান ত্যাগ করে চলে আসছিলো।তখন আরব খানের কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছিলো মালিটির চেহারা।মাথায় পাগড়ি আর মুখে দাড়ি গোফের জন্য লোকটির চেহারায় বোঝা যাচ্ছিলোনা। আরব খানের কেমন যেনো সন্দেহ হলো। এ রাজ্যে বা রাজমহলে তাকে কখনো দেখা যাইনি। আরব খান খুব সচেতনভাবে মালিটিকে ধরলো এবং রাজমহলের বাগান কিনারায তাকে টানতে টানতে নিয়ে এলো। মালিটিকে বিভিন্নরকম জেরা করছিলো কিন্তু মালি কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলোনা।তখন আরব খান সিদ্ধান্ত নিলো রাজা জাভেদ খানের সামনে তাকে হাজির করবে।এ কথা শুনে মালি তার মুখ খুললো এবং সে যে ছদ্মবেশী ছিলো তা আরব খানের সামনে তার ছদ্মবেশী রূপ উপস্থাপন করলো। এই রূপ দেখে আরব খান কিছু বলার আগেই মালিটি তার পরিচয় দিলো সে মোহননগর রাজ্যে রাজা ফালাক তাজ। ফালাক তাজের অসম্ভব উপস্থিত বুদ্ধি ছিলো। সে আরব খানকে বিভিন্নরকম কথার জালে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিলো।তাকে সাম্রাজ্যের অধিপতি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিলো।রাজা ফালাক এমন তথ্য অনেক আগেই সংগ্রহ করেছিলো যে রাজা জাভেদ খানের কোনো পুত্র নেই তাই আরব খান চাই শেরপুর রাজ্যের সিংহাসনে তার পুত্রকে সে দেখতে। আরব খান প্রথম অবস্থায় রাজা ফালাকের প্রতিশ্রুতি মানতে চাইছিলোনা। কারণ সে ভাবছিলো এতে তার কি স্বার্থ?)
[#উভয়ের_কথোপকথন]
ফালাকঃআমার কি স্বার্থ তা কি আপনার জানা খুবই প্রয়োজন?
আরবঃঅবশ্যই। তুমি আমাকে ধোঁকা দিবে তা আমি পুরোপুরি নিশ্চিত। এক্ষণি আমি তোমাকে মহারাজের সামনে উপস্থিত করবো।চলো আমার সাথে।
(ফালাকের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছিলো)
ফালাকঃদাড়ান আরব সাহেব। আমার উদ্দেশ্য আপনাকে জানাতে চাই।
আরবঃকি উদ্দেশ্য?
ফালাকঃএ রাজ্যের রাজকন্যা মেহেরুনের রূপে আমি মুগ্ধ। তাকে আমি আমার রাজ্যের রানী করতে চাই। কিন্তু আপনাদের মহারাজ তাতে রাজি নন।তিনি চান তার কন্যাকে এ রাজ্যের রাজসিংহাসনে বসাতে। তার কন্যার হাতে এই সাম্রাজ্য তুলে দিতে চাই।
(কথাগুলো সম্পূর্ন বানিয়ে বললো ফালাক)
আরবঃ হ্যা। ভাইজান যে মেহেরুনকেই রাজসিংহাসনে বসাতে চাই ইহা সত্য। মেহেরুনের যে বিবাহের প্রস্তাব এসেছিলো তা তো ভাইজান আমাকে বলেনি।এতো গোপনীয়তা? তার মানে ভাইজান আমার সাথে………….। কিন্তু একটা বিষয় কি করে সম্ভব।মেহেরুনকে তার পিতামাতা আর আমরা ছাড়া বাহিরের অন্য কেউ কখনো দেখেনি।তাহলে রাজা ফালাক কি করে দেখলো?তার মানে সে আমাকে মিথ্যা কথায় ভোলাতে চাইছে।
-তুমি মিথ্যুক।রাজকন্যা মেহেরুনকে আমরা আর তার দাসী ছাড়া পৃথিবীর কেউ তার রূপ দেখেনি।তাহলে তুমি কিভাবে তাকে দেখেছো? বলো?উত্তর দাও?
ফালাকঃ অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।এই বিষয়টা আমার মাথাতে একটুও আসেনি।কথাটা অন্যদিকে ঘোরাতে হবে।
-আপনার কাছে আর কোনো কিছুই গোপন রাখতে চাইনা।কিছুদিন আগে আপনাদের রাজমহলের কর্মী সেজে রাজমহলে প্রবেশ করেছিলাম।একদিন বাগানে কাজ করছিলাম তখন রাজকন্যা মেহেরুন তার দাসীদের সঙ্গে করে বাগানে এসেছিলো ঘুরতে।অনিচ্ছাকৃতভাবে তার মুখের উপর থেকে পর্দা সরে যায় আর তখনই আমি তার রূপ দর্শন করি।আর তার পূর্বেই অন্দরমহলের ভেতরের মানুষের কাছ থেকেই আমি খবর পেয়েছি সে অনেক রূপবতী।কার নিকট থেকে পেয়েছি তা আমি বলতে ইচ্ছুক নই। কি? এখন আমাকে বিশ্বাস হয়েছে আরব খান? আমি যদি রাজকন্যা মেহেরুনকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারি তাহলে তাতে কিন্তু আপনারই সবথেকে বেশি ফায়দা। এখন আপনি ভেবে দেখুন।
(আরব খান কিছুক্ষণ ভেবে রাজা ফালাকের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বিশ্বাস করলো। এরপর ফালাক আরব খানের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করলো কিভাবে কি করে রাজা জাভেদ খানকে আটক করবে। আসলে আরব খান ছোটো থেকেই সিংহাসনে বড় ভাইকে দেখে সবসময় ঈর্ষান্বিত হতো।সে সবমসয় চাইতো রাজসিংহাসনে তাদের পিতা তাকে বসাক। কিন্তু তা হয়নি আর তা হওয়া কোনো যুক্তি ও নেই। সে ভেবে নিয়েছিলো জাভেদ খানের যেহেতু কোনো পুত্র সন্তান নেই তাই তার পুত্র সন্তান হলে তাকেই সে রাজসিংহাসনে বসানোর চিন্তা করবে।আর রাজা জাভেদ খান তা মেনে নিতে বাধ্য। কিন্তু তার সেই আশা ভরসা বিফলে গেলো যখন সে নিজে কানে শুনলো যে রাজা জাভেদ খান তার কন্যাকে রাজসিংহাসনে বসাবেন।
যা কখনোই মেনে নেওয়ার যোগ্য নয়।একজন নারীকে রাজা জাভেদ খান বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন যেখানে তারই ভাইয়ের পুত্র সন্তান রয়েছে।তাকে উপেক্ষা করে সে তার নিজের কন্যাকে সিংহাসনের অধিকার দিবের।আরব খান রাজা জাভেদ খান কে কেবল স্বার্থবাদী হিসেবে বিবেচনা করেছে।আর তাই রাজা ফালাকের সাথে সে হাত মিলিয়েছে। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক চারিদিকে রাজা ফালাকের সৈন্যসামন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। রাজমহলের রক্ষী প্রহরী অন্যান্য লোকেরা তা বুঝতে পেরেছে যে রাজমহলে বাহিরের লোক ঢুকে পড়েছে।কিন্তু আরব খানের নিষেধাজ্ঞার কারণে কেউ কিছু করতে পারছেনা আর রাজা জাভেদ খান কে ও কিছু জানাতে পারছেনা। আরব খান তাদের ভুল বুঝিয়েছে যে এসব বাহিরের লোকদের সে আমন্ত্রণ করে এনেছে।)
ফালাকঃ মূর্খ আরব খান। রাজ্য দখলে আসার পর তোমার হাল কি হবে তা তোমার চিন্তাশক্তির বাহিরে।এতক্ষণে আমার সব সৈন্যবাহিনী রাজমহল ঘিরে ফেলেছে। সবাই বুঝতে পেরেও কিচ্ছু করতে পারছেনা।কারণ তারা অপ্রস্তুত ছিলো যে।আস্তে আস্তে সবকিছু জাভেদ খানের আয়ত্তের বাহিরে চলে আসছে।তার আর আমাদের আটকানোর ক্ষমতা থাকবেনা। সবাই আক্রমণ করা শুরু করে দিয়েছে।রাজা জাভেদ খানের সৈন্যরা যে যেমনভাবে পারছে লড়াই করছে কিন্তু তাতে কোনো সুবিধা করতে পারছেনা। মুখ থুবড়ে পড়ে পড়ে যাচ্ছে। আমি কিছু সৈন্যের সাথে লড়াই করে অন্দরমহলে প্রবেশ করলাম। উদ্দেশ্য রাজা জাভেদ খানকে বন্দি করা। সে কোন কক্ষে আছে তা আমার জানা নেই। এতক্ষণে নিশ্চই তার কানে পৌঁছে গেছে রাজা ফালাক তার দুয়ারে দাড়িয়ে তার সাথে যুদ্ধের আহ্বান করতে এসেছে। আমি রাজ্যের পেছন দিক থেকে প্রবেশ করে সামনের দিকে আসছি। একদম মাঝের যে কক্ষটি দেখলাম সেটাতেই প্রবেশ করলাম।কিন্তু একি কক্ষ যে ফাঁকা।তার মানে রাজা জাভেদ খান কি পালিয়েছে? হা হা হা। নির্বোধ পালিয়ে কতদূর যেতে পারবে।সব জায়গায় যে আমার সৈন্যরা বিস্তার করছে।কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসবো হঠাৎ মনে হলো স্নানাগার থেকে কিছু যুবতী নারীর আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমি তো নিজেই নির্বোধ হয়ে গিয়েছি। স্নানাগার না খুঁজেই আমি বেরিয়ে যাচ্ছিলাম।
জাভেদ খানঃ আমাকে বাঁধা দিওনা।আমাকে যেতে দাও আরব। আমার কন্যা যে তার কক্ষে রয়েছে। সে ওখানে নিরাপদ নয়। তার কাছে যে এখন পর্যন্ত খবর যাইনি যে রাজমহল আক্রামণ হয়েছে। আর তুমি আমাকে এখানে লুকিয়ে রাখছো?
আরবঃভাইজান আপনাকে কি করে ওখানে যেতে দিই? আপনি ওখানে গেলে যে রাজা ফালাক তার কার্যসিদ্ধি করতে পারবেনা। আর তার কার্যসিদ্ধি করতে না পারলে আমার উদ্দেশ্য সফল হবেনা।
-ভাইজান আপনি আর ভাবীসাহেবা ঐ রাজার সামনে পড়লে যে আপনাদের হত্যা করে ফেলবে।
রানীঃআরব তুমি কি বুঝতে পারছোনা আমরা ওখানে না গেলে যে আমার একমাত্র কন্যার সর্বনাশ করে দিবে ঐ পশুতুল্য রাজা।
আরবঃভাবীসাহেবা! আপনি তো জানেন আমাদের মেহেরুন কতোটা আত্মবিশ্বাসী আর কতোটা বুদ্ধমতী সে। আর সাথে তার অস্ত শিক্ষা তো আছেই। আপনারা কেনো এতো ভাবছেন? একটু ধৈর্যধারণ করুন। মেহেরুন যদি না ফিরে আসে তাহলে আমি নিজে যাবো। তবু আপনাদের যেতে দিবোনা।
জাভেদঃ আরব?? তুমি আমাদের হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে বলছো?
ফালাকঃ আমি ধীর পায়ে স্নানাগারের দিকে এগোতে থাকলাম। স্নানাগারের পর্দা সরিয়ে যা দেখলাম তা দেখে আমার চক্ষুদ্বয় ও বিশ্বাস করতে পারছিলোনা। অর্ধনগ্ন শরীরে একজন অপরূপ সুন্দরী…. না না এ যে কম বলা হয়ে গেলো। তার যা সৌন্দর্য যাকে বলে বিশ্রি সুন্দরী।সুন্দরীশ্রেষ্ঠা সে। কিছু দাসী তাকে স্নান করাচ্ছিলো গোলাপের পাপড়ি আর দুধ মিশ্রিত পানিতে। এর আগে অনেক সুন্দরী নারীকে আমি কাছে পেয়েছি। কিন্তু এমন নারী আমি জীবনে কখনো দেখিনি। আমাকে দেখে ফেললো তার কিছু দাসী। চিৎকার দিয়েই সেই স্থান থেকে তারা পলায়ন করলো। আসলে আমার সারা শরীরে এমনকি মুখমন্ডলে রক্ত বেয়ে বেয়ে পড়ছে।অন্য মানুষের রক্ত ছিলো সেগুলো। এ নারী নিশ্চই রাজা জাভেদ খানের কন্যা মেহেরুন। এতে আর ভুল নেই। আমাকে দেখা মাত্রই সে তার অর্ধনগ্ন শরীর মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলো। কিন্তু তাতেও যে তার রূপ উপচে পড়ছিলো। আমি তার দিকে এমন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছি। মনের অজান্তেই তার অনেক নিকটে এসে দাড়িয়েছি আমি।তার গালের কোণে লাল গোলাপের একটি পাপড়ি লেগে আছে।যা তার সৌন্দর্যকে ঢেকে দিচ্ছে। আমি হাত বাড়ালাম পাপড়িটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য। আমি তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এতোটাই মগ্ন ছিলাম যে তার হাতে একটা তড়োযার লুকায়িত ছিল তা আমি খেয়াল করিনি।হাতটা বাড়ানোর সাথে সাথেই সে তোড়ায়ারি বের করে আমার হাতে আঘাত করলো।হাতের পিছা কিছুটা কেটে গিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করলো। তখন আমার চেতনা(ঘোর) ফিরলো। আমি শুধু একবার আমার হাতে রক্তের দিকে দৃষ্টিপাত করলাম।কেনো যেনো এই আঘাতটা আমার কাছে আঘাত মনে হচ্ছিলোনা। আবারো সেই তার দিকে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলাম।কিন্তু এবার চেতনা হারিয়ে নয়।সে আমার দিকে তড়োয়ার হাতে করে যখন আমাকে আঘাত করার জন্য এগিয়ে এলো আমি তখন তোড়ায়ারির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করে দূরে সরে এলাম। আমি যে তার বিপরীতে অস্ত্র তুলতে পারছিনা। তার সুন্দর শরীরটাতে আঘাত লাগলে সে যে কষ্ট পাবে আর তার শরীরের সৌন্দর্য ও নষ্ট হবে। আমি কেবল নিজেকে তার থেকে রক্ষা করে চলেছি।তারপর তাকে আটকানোর একটা বুদ্ধি এলো মাথায়।সে যখনই আবার আমাকে আঘাত করতে এলো তখন তার হাতটা ধরে ফেললাম। সে আমার থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে এবং সেই চেষ্টা যখন সফল হলো আমি তখন তার শরীর থেকে কাপড়টা টেনে ফেলে দিলাম।সে তখন নিজের শরীর ঢাকতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।আর আমিও এটাই চাইছিলাম যাতে তার ধ্যান তার শরীর ঢাকার দিকে থাকে। সে দুহাত দিয়ে অর্ধ শরীর ঢেকে রেখেছে। আমি তার দিকে আস্তে আস্তে এগোচ্ছি। তারপর………..
মাহিঃএই?
আশফিঃ কি হলো?
মাহিঃএবার থামো না? ঘুম আসছে খুব।
আশফিঃউফ অবশেষে তাহলে তোমার ঘুম আসলো।তারপর
ওকে আমার বুকের মধ্যে টেনে এনে জড়িয়ে ধরে দুজনে ঘুমিয়ে পড়লাম।
★সকালে নাস্তার টেবিলে★
মাহিঃ এই শুনোনা। আলিশা তো বেশ কিছুদিন হলো এসেছে।ওকে নিয়ে আমরা কোথাও তো একটু ঘুরতে ও বের হলাম না। বেচারি ঘরে বসে বোর হয়ে যাচ্ছে।
আশফিঃ হুম বিষয়টা আমিও ভেবেছি। আজকে তো একটা জরুরি মিটিং আছে বিকাল ৪ টায়। তাই আজ আর সম্ভব না। কাল আমরা একদম সকাল সকাল বেরিয়ে পড়বো। কেমন?
আলিশাঃ এই শোনো। তোমরা না একটু বেশিই ভাবছো।আমি মোটেও বোর হচ্ছিনা।মাহির সাথে আমার সময় বেশ যাচ্ছে। আমার জন্য তোমাদের এতো চাপ নিতে হবেনা।
মাহিঃ আরে এতে চাপ নেওয়ার কি আছে। আমাকে নিয়েও ও গত তিন মাস কোথাও বের হয়না। আমিও খুব বোর হচ্ছি।
আশফিঃআমিও খুব বোর হচ্ছি ডিয়ার তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনা বলে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। এটুকু sacrifice তোমাকে করতেই হতো যে। তবে আলিশার ওসিলায় একটা সুযোগ পেয়েছো তুমি।
মাহিঃ হুহ।??
আশফিঃ মুখ ভেংচি দেওয়া হচ্ছে তাইনা।অফিস থেকে ফিরি তারপর তোমাকে দেখছি। ওকে গাইস তাহলে আমি আসি।বাই দাও আমাকে।
আলিশাঃবাই। ??
আশফিঃ কি ব্যাপার তুমি বাই বলছো না যে?
মাহিঃ কি করে বলি বলো তো। আমার তো তোমাকে কখনো চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করেনা।
আশফিঃ এতো পাম্প করোনা ফেটে যাবো।
মাহিঃ হা হা হা। ওকে বাই। নিজের খেয়াল রেখো।
আশফিঃহুম। তা তো অবশ্যই। না হলে তোমাকে দেখবে কে? আচ্ছা বাই।
আলিশাঃ হ্যালো ডার্লিং! মনে আছে তো?
মাহিঃ কি বিষয়ে বলো তো?
আলিশাঃ ভুলে গেছো?
মাহিঃ হুমম। ও হ্যা মনে পড়েছে। ড্রাইভিং চ্যালেঞ্জ?
আলিশাঃইয়াপ। মনে পড়েছে তাহলে? ভয় পাচ্ছো নাকি?
মাহিঃ কিসের ভয়?
আলিশাঃ হেরে যাওয়ার ভয়?
মাহিঃতোমার এমন মনে হওয়ার কারন কি ডার্লিং?
আলিশাঃ না হলে তুমি ভুলে গেলে কি করে?
মাহিঃ আসলে এই ব্যাপারটা আমার কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। তাই ভুলে গেছি। কিন্তু তুমি আমার দিকে যেভাবে চ্যালেঞ্জটা ছুড়লে তাতে বিষয়টা গুরুত্ব দিতে হচ্ছে।
আলিশাঃতাহলে বেরিয়ে পড়ি?
মাহিঃ এখনি?১১ টার দিকে বেরোনোর কথা ছিলো তো।
আলিশাঃ লেট করে লাভ কি? চলো এখনি বেরিয়ে পড়ি।
মাহিঃ ওকে।তাহলে তুমি রেডি হয়ে এসো। আমিও যাচ্ছি।
-তারপর দুটো গাড়ি নিলাম। ঝামেলা হলো বের হওয়ার সময়। আসলে আশফির পারমিশন ছাড়া আমাকে বের হতে দিবেনা কেউ।আমি তো রেগে পুরো আগুন। তারপর আলিশা আধা ঘন্টা যাবত ওদেরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তারপর বাইরে বের হওয়ার পারমিশন নিলো। কিন্তু আমি ভাবছি বিষয়টা ওরা আশফির কানে না দিয়ে দেয়।
আলিশাঃতো মাহি? স্টার্ট?
মাহিঃ উমমম…ওকে। নাও স্টার্ট।
-দুজনে সেই গতিতে ড্রাইভিং করতে লাগলাম। কখনো ও আমাকে ওভার করছে আবার কখনো আমি ওকে ওভার করছি। আমাদের একটা টার্গেট আছে ঠিক কোথায় আমাদের প্রতিযোগিতা শেষ হবে। দারুণ লাগছে আমার।আলিশা ও অনেক এনজয় করছে বিষয়টা।
আলিশাঃ মাহি আমার সামনে চলে এসেছে। মেয়েটা ড্রাইভিং খারাপ জানেনা। ও মাই গড। মাহি কি দেখতে পাচ্ছেনা সামনে? মাহি?????
মাহিঃ হায় আল্লাহ্। আউ…..(চিৎকার দিয়ে উঠলো)
চলবে।