মন ফড়িং ❤ ১৬. 

3
2998
মন ফড়িং ❤
১৬.
– সবাই ফ্রেশ হয়ে খেতে আসার আগে আমাকে একটু ডেকে দিতে পারবেন?
রশীদ সাহেব বললেন
– অবশ্যই।
রিতা তার রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলেন।বেশ কয়েক মাস পর তার পুরাতন রোগ টা ধরা পড়েছে। মাথার ভেতর কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। হাত পা কাঁপে। কিছুক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকলে হাত পা  কাঁপা টা কমে কিন্তু মাথার সমস্যা টা যেতে একদিনের বেশি সময় নেয়।
নিজের উপরই বিরক্ত হলেন রিতা। অসুস্থ হওয়াএ আর সময় পেলো না।
চুপচাপ শুয়ে রইলেন। ঘুমানো যাবেনা, তাহলে মেহমানদের খাবার,পানি গুছিয়ে দেয়ার কেউই নেই। লিলিকে দিয়ে ওই আশা করা ভুল, চরম ভুল। ওদিকে অদ্রি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাতে ইয়া বড় একটা ফোসকা বানিয়ে এখন পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে।
ঘুম ভাঙলেও সমস্যা। ওই রুমে কেনো থাকতে দেয়া হলো?অদ্রির এই  প্রশ্নের উত্তরে সে কী বলবে? নতুন মেহমানকে তো আর রাগ শোনানো যায়না। সব দায় তার কাঁধে নিতে হবে।
নিদ্র রুমে ঢুকতেই অবাক হলো। সবকিছু ঠিক যেমন সে রেখে গিয়েছিলো তেমনই আছে। দেয়ালের নকশা, রঙ সে যেমন করেছিলো ঠিক তেমনই আছে। বিছানার চাদরের রঙটা খুব সুন্দর। হালকা বেগুনি রঙের মধ্যে কস্তুরি ফুলের নকশা। নিশ্চয়ই অদ্রির পছন্দ। মেয়েটা সবসময় হালকা রঙ পছন্দ করে।
অদ্রি কী করছে? আছে, তার রুমে চুপচাপ বসে বা জানালা থেকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।
গোসল সেরে চুল মুছতে মুছতে নিদ্র অদ্রির রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। দরজা আপসানো, একটু ধাক্কা দেয়াতে পুরোটা খুলে গেলো।
নিদ্র নিঃশব্দে রুমের ভেতর ঢুকে দরজা আটকে দিলো।
হাতের তোয়ালে টা পাশে রাখা চেয়ারে রেখে দিলো। অদ্রি ঘুমুচ্ছে, কে বলবে ঘুমুচ্ছে? ঘুমালে গায়ের জামা কাপড় ঠিক থাকেনা বা এলোমেলো থাকে। কিন্তু এই মেয়ের হয়েছে উল্টো।
বুকের উপর ওড়নাটাও একদম ভালোভাবে আছে। ভেজা চুলগুলো ছড়িয়ে আছে বালিশের উপরে। ডান হাতে কালসিটে দাগ আর ফোসকা দেখে নিদ্র অনুমান করলো, হয়তোবা গরম তেলে পুড়ে গেছে। নিশ্বাস পড়ছে ছন্দে ছন্দে। অদ্রি একটু নড়ে উঠলো আর তখনই নিদ্রের ঘোর কাটলো।
নিদ্র মুচকি হেসে অদ্রির কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে দ্রুত তোয়ালে নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।
বাসায় নতুন একজন মানুষ আছে, সে কোনোভাবে দেখে ফেললে বিপদ।
বিছানার উপর হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলো। প্রথম চুমুর অনুভূতি তাকে গ্রাস করছে ধীরে ধীরে। কী মনে করে যেন কাজটা সে করে ফেললো।
তার কি ভাবা উচিৎ ছিলো অন্ততপক্ষে একবার?
অদ্রি কি বুঝতে পেরেছে? না, বুঝতে পারলে ও ওইভাবে চুপচাপ শুয়ে থাকতে পারতো না। নিশ্বাসের উঠানামা তে বোঝা যেত সে জেগে আছে।
নিশ্বাসের উঠানামা ধীরে ধীরে যদি হয় তখন বোঝা যায় সে ঘুমুচ্ছে।
কীসব ভাবছে সে? নিজেকে বিজয়ী মনে হচ্ছে। অনেক বড়সড় যুদ্ধ জয় করে ফিরে এসেছে। সামান্য একটা চুমু কিন্তু অনুভূতিটা অসামান্য।
তবে অনুভূতিটা শুধু সেই পেয়েছে, অদ্রি তো ঘুমুচ্ছিলো।
নাজমুল সাহেব তার মাকে ডেকে বললেন
– মা, দেখো তো খাবার আছে কিনা?
– দেখছি।
আসমা জামান বসার ঘরে রশীদ সাহেবকে খবরের কাগজ পড়তে দেখলেন। বসার ঘর মানে ড্রয়িংরুমের সাথেই ডাইনিং রুম।
রশীদ সাহেবকে বললেন
– রশীদ নাজমুল খেতে চাচ্ছে।
– আচ্ছা আপনারা টেবিলে বসুন। আমি রিতা আপাকে ডেকে আনি।
রিতা নাজমুল সাহেবের প্লেটে ডাল বেড়ে দিচ্ছিলেন তখন নিদ্র নিচে নেমে আসলো।
ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে রশীদ সাহেবকে বললেন
– চাচা, লিলি টা কই?
– আছে ওর রুমে।
নিদ্র তার সামনে রাখা প্লেটে ভাত বেড়ে নিয়ে বললো
– চাচা, ভাজি টাজি আছে নাকি?
রিতা বললেন
– হ্যাঁ আছে।
আসমা জামান রিতাকে জিজ্ঞেস করলেন
– আজকে কি শুটকি রান্না হয়েছে নাকি?
– হ্যাঁ।
– গন্ধটা কতদিন পর পেলাম। আমি আজকে শুধু শুটকি দিয়েই খাবো।
সন্ধ্যার দিকে অদ্রির ঘুম ভাঙলো। আজকে সে খুব সুন্দর স্বপ্ন দেখেছে। ঘুম ভাঙার সাথে সাথেই স্বপ্নের কথা মনে পড়তেই সে কপালে হাত দিয়ে হেসে ফেললো। স্বপ্নটা কিছুটা এমন ছিলো – নিদ্র চুল মুছতে মুছতে তার রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। তার কিছুক্ষণ পর তার কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে গেলো। অসম্ভব সুন্দর স্বপ্ন, দিবাস্বপ্ন যা পূরণ হবার নয়।
 ডান হাতটার উপর ভর করে শোয়া থেকে উঠতে গিয়ে অদ্রির ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। পুরো হাত ব্যথা।
বাম হাতের উপর ভর করেই তাকে উঠতে হলো।
মুখ ধুয়ে রুম থেকে বের হয়ে নিচে নেমে আসলো। রিতাকে সোফার উপর বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করলো
– খেয়েছেন আপনি?
– না, তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।
– আপনি খেয়ে নিতেন। শুধু শুধু কষ্ট করতে হলো আপনাকে।
– তুমি নিজ হাতে রান্না করেছো। তাই ভাবলাম একসাথে খাই।
টেবিলে খাবার দেখে অদ্রি জিজ্ঞেস করলো
– লিলি একা এতো খাবার খেলো কীভাবে? নাকি রশীদ চাচা এসেছিলেন?
– রশীদ সাহেব তিনজন মেহমান নিয়ে এসেছেন। তারাই এখানে এসে দুপুরের খাবার খেয়েছেন।
– তারা চলে গেছে নাকি?
– না, মনে হয় থাকবেন।
– রাতের যোগ্য খাবার আছে নাকি রান্না করতে হবে?
– রান্না করতে হবে।
– লিলিকে সাথে নিও হেল্পার হিসেবে।
– রাজি হবে?
– কেনো হবেনা? চামচ হলে সুবিধা হতো খেতে। পুরো ডান হাত নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে।
– নিষেধ করেছিলাম।
খাওয়া শেষ হলে অদ্রি দোতলায় উঠে চলে যাচ্ছিলো। রিতা বললেন
– একটা কথা বলার ছিলো।
অদ্রি থেমে গিয়ে বললো
– বলুন।
– তিনজনের একজন মেহমান ওই রুমটাতে উঠেছে। সে অন্য রুমে নাকি যাবেনা।
– কোন রুম খালা মনি?
– দক্ষিণের কোণার দিকের রুমটা।
– আচ্ছা আমি দেখছি।
অদ্রির মেজাজ বিগড়ে গেলো। ওই রুম অন্য কারো জন্যে না। দক্ষিণের দিকে আরো একটা রুম আছে। পারলে ওখানে উঠুক, কিন্তু ওই রুমে না।
দরজায় কয়েকটা জোরে টোকা দিয়ে অদ্রি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।
দরজা খুলে নিদ্র মুচকি হেসে বললো
– ম্যাডাম, এতো অস্থিরতা কীসের? একটু ঘুমাবো আর আপনি দরজা প্রায় ভেঙে ফেলার প্ল্যান পূরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
অদ্রি হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো নিদ্রের দিকে। তার দু চোখকেই বিশ্বাস হচ্ছেনা।
সত্যিই কি নিদ্র?
স্বপ্ন দেখছে না তো সে???
চলবে……!
© Maria Kabir

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে