মন ফড়িং ২৬.

1
2912
মন ফড়িং ❤
২৬.
বিকালের দিকে নিদ্র ফিরে এলো। লিলি অপেক্ষা করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়েছে।
অদ্রি দুপুরে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ব্যাংকে আজকে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে। ম্যানেজারের শ্বাশুড়ি অসুস্থ, তাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। ম্যানেজার আসার পর অবশ্য বেশি সময় লাগেনি।
নিদ্র তার রুমে গিয়ে বাইরের কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
অদ্রির রুমের দরজা খোলা পেয়ে টুপ করে অদ্রির রুমে ঢুকে গেলো।
গভীর ঘুমে মগ্ন অদ্রি। ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিদ্রের বুকের বাম পাশটাতে চিনচিনে একটা ব্যথা অনুভব হলো।
সারাদিন ও বাসায় আসেনি এই খোঁজটা কি রেখেছে,অদ্রি?
না, রাখেনি। রাখলে এভাবে শান্তিতে ঘুমাতে পারতোনা।
বারবার দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতো। আর মনে মনে ভাবতো, এই এলো বুঝি!
কীসব ভাবছে সে? নিজেকেই ধিক্কার দিয়ে প্রশ্নটা করলো নিদ্র।
ভালোই তো বাসেনা তাকে। নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে।
অদ্রির কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে আসলো নিদ্র।
স্যুপের প্যাকেট নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে চুলা ধরিয়ে দিলো।
স্যুপের জন্য যা যা লাগবে খুঁজে বের করতে খুব বেশি সময় লাগেনি। এই বাড়ির কোথায় কী আছে সে ভালো ভাবেই জানে।
রীতা রান্নাঘরে নিদ্রকে দেখে বললেন
– আমাকে বললেই তো পারতেন।
নিদ্র মুচকি হেসে বললো
– সামান্য একটা ব্যাপারে আপনাকে কষ্ট দেয়ার কোনো মানে হয়না।
– আপনি মেহমান এই বাসার।
– মেহমান হলেও আপনাকে কষ্ট দেয়ার কোনো মানে হয়না।
– আপনার দুপুরের খাবার এখনো আছে। স্যুপের দরকার ছিলোনা।
– আমার আসলে স্যুপ খেতে ইচ্ছে করছিলো। তাই বানানো। একটা কথা বলি রাগ করবেন না তো?
– বলেন।
– স্যুপের বাটি বা ওই সাইজের বাটি হবে?
– হ্যাঁ হবে।
– দুইটা বাটি আনলেই হবে আর স্যুপের চামচ।
রীতা দুইটা বাটি আর চামচ নিয়ে রান্নাঘরের সিংকে ধুয়ে নিলেন।
নিদ্র দুটো বাটিতে স্যুপ ঢেলে দিয়ে ধনিয়াপাতা উপর দিয়ে ছিটিয়ে দিলো।
এক বাটি স্যুপ রীতাকে দিয়ে বললো
– এটুকু আপনার জন্য।
রীতা বললো
– একটু আগেই খেয়েছি। পেট এখনো ভরা।
– এটুকু খেলে আপনার পেট ফেঁটে যাবেনা।
নিদ্র বসার রুমে সোফার উপর আসন পেতে বসে স্যুপ খাওয়ায় মন দিলো।
রীতা কিছুটা অবাক হলো। ছেলেটাকে সে যতোটা খারাপ ভেবেছিলো ততটা না।
সাবলীলভাবে  তার সাথে ব্যবহার করছে যেন কতো আগের চেনা সে।
সন্ধ্যার দিকে ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করলো। ঝড়ো হাওয়ার সাথে বেশ জোরে বৃষ্টি পড়তে শুরু করলো। নিদ্র তখনো সোফায় বসে ছিলো। বাড়ির মেইন দরজা খোলা থাকায়। বেশ ভালোভাবেই বৃষ্টি পড়া দেখা যাচ্ছিলো।
ঝড়ের সাথে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো। লোডশেডিং হওয়াতে রীতা মোমবাতি, হারিকেন আর চার্জার লাইট জ্বালিয়ে দিলেন। আসমা জামান ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
নিদ্র সোফা থেকে উঠে অদ্রির রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। অদ্রি কেবলই ঘুম থেকে উঠে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির শব্দেই মূলত তার ঘুম ভেঙে গেছে। নিদ্র রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। অদ্রি অন্যমনস্ক থাকায় নিদ্রের উপস্থিতি বুঝতে পারলোনা।
নিদ্র পেছন থেকে অদ্রির কোমর জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে চুমু দিতে লাগলো।
অদ্রির প্রত্যেকটা চুমুতে কেঁপে উঠল। ছেলেটা হুটহাট করে এমন কিছু করে বসে যে অদ্রির বাঁধা দেয়ার ক্ষমতা থাকেনা।
অদ্রির পিঠের ওপর ছড়িয়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিলো নিদ্র।
অদ্রি ঘুম জড়ানো কণ্ঠে বললো
– এতটা অভিমান করা ঠিক না।
– অভিমান করার মতো কাজ করেছেন বলেই তো করেছি।
– মোটেও না। সবসময় আপনার সকল আবদার পূরণ করতে পারবোনা। সমাজ বলে একটা কথা আছে।
– আমার আবদার সমাজ বিরোধী ছিলো সেটা বলতে চাচ্ছেন?
– না। সবসময়…..
– হয়েছে অদ্রি আর এমন করবো না।
– সারাদিন আপনি বাসার বাইরে। দুপুরে খাননি পর্যন্ত আর এখন এসেছেন প্রেম করতে।
– পেট ভরে খেয়ে আসুন তারপর প্রেম করতে আসবেন।
– স্যুপ খেয়েছি।
– অন্য খাবারের কী হবে?
– ওগুলো আপনি খাবেন। আপনার শরীরে হাড্ডি ছাড়া তো কিছুই নেই। একটু খেয়ে দেয়ে স্বাস্থ্য ভালো করুন।
– খাওয়া দাওয়া করতে ভালো লাগেনা।
– আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিলে ভালো লাগবে?
– আপনি খাইয়ে কেনো দিবেন?
– আপনার স্বামী তাই…….
কথাটা বলে নিদ্র অদ্রিকে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে কপালে চুমু দিলো। অদ্রি মুচকি হেসে বললো
– আচ্ছা আপনিই খাইয়ে দিবেন। হ্যাপি?
– এক শর্তে!
– শর্তটা কী?
– সাজুগুজু করবেন? অন্যান্য মেয়েরা এতো সাজুগুজু করে আর আপনি বিধবা মহিলা সেজে থাকেন।
অন্যদিন হলে অদ্রি বলতো – আমি বিধবাই তো!
কিন্তু এতো সুন্দর মূহুর্তে এই বিশ্রী অতিতটাকে টেনে না আনাই ভালো।
চলবে…..!
© Maria Kabir
প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে  থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা  মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন =>        ??????  https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে