মন পায়রা পর্ব-১৪

0
711

#মন পায়রা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:১৪

‘এই মাঝরাতে তুমি আমার বাড়িতে কি করছো? তোমার বাবা জানে তো তার মেয়ে যে অন্যের বাড়িতে লুকিয়ে প্রবেশ করেছে?

ইনান আর পায়রা এনায়েত মির্জার কাছে ধরা পড়ে গেছে। ইফাত ঘুমিয়েছে নাকি দেখার জন্য এনায়েত মির্জা ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন।ইফাতের ঘর দু’তলায় আর এনায়েত মির্জা এবং ইতি বেগম নিচ তলায় থাকেন।ড্রয়িং রুম পেরিয়ে তারপর সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয় আর তখনি অন্ধকারে দু’জন ব্যক্তির অবয়ব দেখে আলো জ্বালিয়ে পায়রাকে দেখে তিব্র রেগে গেছেন এনায়েত মির্জা। পায়রা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে কিছু বলার মতো মুখ নেই তার এনায়েত মির্জা পায়রার মৌনতা দেখে আরও চটে গিয়ে,

– চুপ করে আছো কেন? আমার বাড়িতে কি চাই? ইনান তুই এখানে কেন?

এনায়েত মির্জা ব্রু জোড়া খানিকটা কুঁচকে,
– আমার বড় ছেলেকে অপমান করে এখন কি ছোট ছেলের পেছনে লেগেছ?

ইনান আর পায়রা এনায়েত মির্জার দিকে তাকালো ইনান প্রতিবাদ করে,
– বাবা কি বলছো এসব?

পায়রা অসহায় কন্ঠে,
– এসব কি বলছেন আঙ্কেল ইনান ভাইয়াকে আমি সবসময় নিজের ভাই মনে করি।

ইতি বেগম ইফাতের দাদীও উঠে ড্রয়িং রুমে চলে এসেছে তারা কিছুক্ষণ আগেই ইফাতের কাছ থেকে এসে শুয়েছিল তাই কথার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। পায়রাকে দেখে ইফাতের দাদী মুখ বাঁকিয়ে,

– এই মাইয়া এত রাইতে এনে কি করে?

ইতি বেগম শাশুড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়ে,
– তুমি এখানে কেন পায়রা? ভেতরে আসলে কিভাবে?

– ইফাতকে দেখতে এসেছি।

– দাদু ভাইরে দেখতে আইছো? কাইল কত কথা কইলা তোমার লাইগা আমার নাতির এমন অবস্থা হইছে আবার কি ক্ষতির করার ইচ্ছা আছে?

পায়রা টলমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
– আমি জানি আমি অনেক বড় ভুল করেছি তাও একবার ইফাতের সঙ্গে আমায় দেখা করতে দিন তারপর চলে যাবো।

– আমার ছেলের সঙ্গে আর কখনও তোমার দেখা হবে না আমি থাকতে কখনোই না।(ইতি বেগম)

– আন্টি প্লিজ এমন বলবেন না শুধু একবার দেখা করতে দিন এই তিনটা দিন অনেক কষ্টে ছিলাম ইফাতের সঙ্গে দেখা করার অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি আজ এতকাছে এসে না দেখে কিভাবে চলে যাবো।

– একদম কান্না করবে না চোখের পানি দিয়ে আমাদের মন ভুলাতে পারবে না।

ইফাত জেগেই ছিল বাইরের চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে উঠে বসেছে পায়ে অনেক ব্যথা ব্যান্ডজ করা যার কারণে হেঁটে দরজা পর্যন্ত যাওয়াই অসম্ভব। কথাগুলো শুনার চেষ্টা করেও পুরোপুরি শুনা যাচ্ছে না শুধু চেঁচামেচির মতো শব্দ ভেসে আসছে। মনের ভেতরটা ছটফট করছে ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না কিন্তু নিচে যাওয়ার অবস্থায় সে নেই তাই গলা খাঁকারি দিয়ে,

– মা নিচে এত আওয়াজ হচ্ছে কিসের? কিছু কি হয়েছে?

পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে পায়রার ভেতরে যেন ঠান্ডা এক স্রোত বয়ে গেল।ইতি বেগম আর ইফাতের দাদীর চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট তারা কেউই চায় না ইফাত আর পায়রা মুখোমুখি হোক। ইফাতের দাদী ইতি বেগমের উদ্দেশ্যে,

– বউমা আমি দাদু ভাইয়ের কাছে যাই তোমরা মিলে এই মাইয়ারে বাইর করো বাড়ি থাইকা।

– আপনি সিড়ি বেয়ে যেতে পারবেন মা?

– পারমু যা বলছি তাড়াতাড়ি করো আমি চাই না এই মাইয়ার কারণে আমার নাতি কষ্ট পাক।

ইতি বেগম শক্ত করে পায়রার হাত ধরলো। পায়রা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে,
– আন্টি ছাড়ুন আমায় আমি ইফাতের কাছে যাবো এমন করবেন না।

– একদম চুপ আমি চাই না ইফাত জানুক তুমি এখানে এসেছ।

ইনান এসে,
– মা এমন করছো কেন? একবার দেখা করতে দাও তারপর না হয় তাড়িয়ে দিও।

– তুই চুপ কর আগে ওকে বিদায় করি তারপর তোকেও দেখে নিবো।

বলেই পায়রাকে টানতে টানতে নিয়ে গেইটের বাইরে বের করে দিলো। পায়রা অনেক অনুরোধ করেও একবার ইফাতকে দেখতে পারলো না কথাও বলতে পারলো না।

ইফাতের দাদী ইফাতের ঘরে আসতেই ইফাত প্রশ্ন করল,
– তুমি উপরে উঠতে গেলে কেন আর নিচে কি এমন হয়েছে?

– ওইসব তোর ভাবতে হইবো না তুই ঘুমা।

– আগে বলো কি হয়েছে?

– ইনান দাদুভাই দেরি করে বাড়ি আইছে বইলা তোর মা রাগারাগী করছে।

– ইনান তো বাড়িতেই ছিল সন্ধ্যায় আমার সঙ্গে দেখা করে গেল।

– মনে হয় আবার বাহির হইছিল তুই ঘুমা আমি চুলে বিলি কেটে দেই।

ইফাত আর কিছু না বলে চুপ করে শুয়ে পড়ল ইফাতের দাদী তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে ইফাত চোখ বন্ধ করে রেখেছে। একপর্যায়ে ইফাত ঘুমিয়ে পড়তেই তার দাদী দরজা পুনরায় চাপিয়ে চলে গেলেন। ইতি বেগম শাশুড়ির দিকে এগুতে উনি বললেন,

– চিন্তা করো না বউমা আমি বানিয়ে একটা কথা বলে দিয়েছি।

– ঘুমিয়েছে?

– হুম।

– মা আপনিও শুবেন চলুন।

পায়রা বাড়িতে আসতেই সদর দরজা খোলা দেখলো ভেতরে আলো জ্বলছে ভয়ে ভয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই বাড়ির সবাইকে দেখে অবাক হয়ে গেল। পায়রাকে দেখেই পলাশ শেখ গিয়ে ঠাসিয়ে একটা চড় মা’র’লো। পায়রা বেগ না পেয়ে নিচে পড়ে গেছে। পলাশ শেখ জোরে চেঁচিয়ে,

– তোর জন্য আর কত অপমানিত হবো? তুই নিজেই ইফাতের নামে খারাপ কথা বললি ছবি দেখালি আর আজ তুই এত রাতে লুকিয়ে ওদের বাড়িতে গিয়েছিস?

পায়রা গালে হাত দিয়ে রেখেছে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। মনে মনে প্রশ্ন করছে,’বাবা জানলো কিভাবে?’

পলাশ শেখ ধমক দিয়ে,
– তোর জন্য দুই পরিবারের এতদিনের সম্পর্ক নষ্ট হয়েছে তাও কিছু বলিনি আজ এমন একটা ঘটনা ঘটালি সেটা আবার এনায়েতের কাছ থেকে শুনতে হলো, কি লজ্জা।

– আমি বাধ্য হয়ে কাল ওইসব বলেছি আমি তো ইফাতকে…

আবরার দ্রুত এসে পায়রাকে থামিয়ে দিয়ে,
-আঙ্কেল যা হওয়ার হয়ে গেছে, সাবিহা পায়রাকে ঘরে নিয়ে যা।

সাবিহা পায়রাকে নিয়ে দ্রুত ঘরে চলে গেল। আবরার পলাশ শেখের কাছে গিয়ে,
– খালু এমন করলে হিতে বিপরীত হবে আমাদের উচিত পায়রাকে ভালো করে বুঝানো তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

পলাশ শেখ আবরারের কথায় সায় দিলেন। আবরার এই সুযোগে পলাশ শেখের সঙ্গে অনেক সখ্যতা গড়ে তুলেছে এবং বিশ্বাস যোগ্য হয়ে গেছে যার দরুন আবরারের সব কথা নিঃসন্দেহে মেনে নেন।

সাবিহা পায়রাকে নিয়ে ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে,
– দেখা হয়েছে ভাইয়ার সঙ্গে? সব বলেছিস?

পায়রা কেঁদে দিলো সাবিহা পায়রার মাথায় হাত রেখে,
– কাঁদছিস কেন আপু?

পায়রা একে একে সব কথা বলল সাবিহাকে।সাবিহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে,
– কি থেকে কি হয়ে গেল তোর উচিত ছিল প্রথমেই সবটা ইফাত ভাইয়াকে জানানো তাহলে হয়তো আজ এমনটা হতো না।

– এখন ওইসব ভেবে কি হবে তখন আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম মাথা কাজ করছিল না ভেবেছিলাম পরে সবাইকে বুঝিয়ে দিব কিন্তু পরিবেশ কি হয়ে গেল ইফাতকে একটু চোখের দেখাও দেখতে পারলাম না।

– ইফাত ভাইয়া সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে তার আগে কিছু করা সম্ভব নয় আর হ্যা জেঠুর সামনে ইফাত ভাইয়ার নাম উচ্চারণ করবি না।

– বাবাকে সব বললে ঠিক বুঝবে।

– এখন কিছুই বুঝবে না বুঝলেও আবরার ভাইয়া কিছু বুঝতে দিবে না এই তিনদিনে জেঠুকে নিজের কথার ছলে ভুলিয়েছেন এখন উনার কথাই জেঠুর ঠিক মনে হয়।

– তাহলে তো আবরার ভাইয়াকে বিয়ে করতে হবে।

– সবার সামনে রাজি হয়ে যাবি কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করবি কেন ইফাত ভাইয়ার বাবাকে জেঠু বলেছিল তোর পড়াশোনা শেষ হলে বিয়ে দিবে তুই যদি এবারো জেঠুর কথা মতো চলিস তাহলে এখনও তেমনটাই হবে।

– হুম যা বলবি আমি শুনবো ইফাতকে পাওয়ার জন্য সব করতে রাজি আমি।
__________________

পেরিয়ে গেছে তিন বছর।এই তিন বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে শুধু বদলায়নি ইফাতের প্রতি পায়রার ভালোবাসা। পায়রা পড়াশোনা শেষ করে বাবার ব্যবসার দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়েছে আবরারের সঙ্গে বিয়েটাও ভেঙ্গে দিয়েছে পলাশ শেখ রাগারাগী করলেও পায়রা একান্তে সবটা বুঝিয়ে বলতেই তিনিও মেনে নিয়েছিলেন। আবরার পায়রাকে অনেক অনুরোধ করেছিল কিন্তু পায়রা আবরারকে কোনো সুযোগ দেয়নি।

অশমির বিয়ে হয়ে গেছে বলতে গেলে জোর করে দেওয়া হয়েছে আবরার নিজেই ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়েছে বোনকে। অশমি এখন নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত পায়রার কাছে অনেক ক্ষমা চেয়েছে পায়রাও ক্ষমা করে দিয়েছে। আড়াই বছর অপেক্ষা এবং চেষ্টা করেও পায়রার মন পায়নি আবরার,শেষে আতিফা বেগম বাধ্য করে আবরারকে বিয়ে দেয় প্রথমে না মানলেও এখন মেনে নিয়েছে বিয়েটা তবে সুখে নেই।

তিন বছর অতিবাহিত হলো অথচ এই তিন বছরে একটাবারের জন্যও ইফাতকে দেখতে পায়নি পায়রা অনেক খুঁজেছে কিন্তু পায়নি যে ইচ্ছে করে হারায় তাকে খুঁজে পাওয়া সহজ নয়।

সেদিন পায়রাকে পুনরায় ঘর বন্দি করা হয়।সাবিহার কথা মতো সে সবটা যখন মেনে নিয়ে সবার সামনে পরিবর্তন হওয়ার নাটক করলো তখন সবাই আবারো পায়রাকে স্বাধীনতা দেয়। আবারো ভার্সিটি যাওয়া শুরু করেছিল পায়রা তারপর ইফাতের সঙ্গে দেখা করার জন্য অনেক চেষ্টা করে কিন্তু ইফাতের কোনো খোঁজ পায় না।

ইফাতের বাড়িতেও গেছে দারোয়ানের কাছ থেকে জানা গেছে তারা বাড়িতে নেই কোথায় গেছে জানে না। অফিসে গিয়ে আরাফকেও জিজ্ঞেস করেছে তারও এক কথা জানি না।সবাই সব জানে কিন্তু কেউই কিছু বলবে না তাই নিজেই খোঁজছিল আর তিন বছর পেরিয়ে গেল দেখা মিললো না। ইনানের নাম্বারে ফোন করেছিল,ইনান পায়রাকে ব্লক করে দিয়েছে। ইফাতের নাম্বার ব্লক ছাড়িয়ে ফোন দিলেও কাজ হয়নি নাম্বার বন্ধ।

তিনবছর ধরে প্রতিদিন পায়রা এই নাম্বারে কল দেয় এই আশায় হয়তো একদিন বন্ধ সিম চালু হবে আর ইফাতের সেই কন্ঠস্বর শুনবে আশা পূর্ণতা পায়নি। পায়রার ধারণা সাবিহা সবটা জানে কিন্তু সাবিহা আজ পর্যন্ত মুখ খুলেনি।

পায়রা অফিসে নিজের কেবিনে বসে আছে। তাদের কোম্পানি এখন বেশ নামকরা এতে পায়রার অবদান অনেক ।অল্প সময়ে ব্যবসা শিখে গেছে পায়রা,পলাশ শেখ এখন আর তেমন অফিসে আসেন না মেয়ের উপর দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে আছেন। পায়রা বসে বসে ল্যাপটপে কিছু করছে তার ম্যানেজার ভেতরে প্রবেশ করে,

– ম্যাম আমাদের কোম্পানির জন্য বড় একটা কাজের সুযোগ আছে এতে কোম্পানি আরো বড় করা যাবে।

পায়রা তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
– প্রতিপক্ষ কোম্পানি কয়টা?

– ম্যাম পাঁচটা।

– এই কাজটা পাওয়ার জন্য যা যা করতে হয় করুন।

– ম্যাম এ জন্য আপনাকে আমেরিকা যেতে হবে কোম্পানিটা ওখানকার তবে কোম্পানির সিইও বাংলাদেশী ওরা চাইছে এবারের কাজটা বাংলাদেশের ভালো কোনো কোম্পানিকে দিতে ছয়টা কোম্পানির মধ্যে আমাদের কোম্পানিকেও সিলেক্ট করেছে।

– কোম্পানির সিইও সিলেক্ট করেছে নাকি?

– উনার কোম্পানির এই বিষয়ক নির্ধারিত লোক করেছে আর উনার পি.এ আমাদের জানিয়েছে।

– কবে যেতে হবে?

– এক সপ্তাহ পরে মিটিং হবে তাই যত আগে যাওয়া যায়।

– আপনি যাওয়ার ব্যবস্থা করুন।

– ঠিক আছে ম্যাম।

পায়রা অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেল।পলাশ শেখ সোফায় বসে চা খাচ্ছেন উনার পাশে সবেমাত্র এসে আসমা বেগম বসলেন। পলাশ শেখ চায়ের কাপ টি টেবিলে রেখে মুখটা গম্ভীর করে,

– বুঝলে আসমা পায়রার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে আমার।কি একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেল মির্জা পরিবারের কোনো খবর পেলাম না আমাদের মেয়েটাও ইফাতের অপেক্ষায় তিনটা বছর কাটিয়েছে।

– মেয়ের জন্য কি আমার কম চিন্তা হয়? যতই ও ভালো থাকার অভিনয় করুক আমি তো জানি সবার আড়ালে রাতে চোখের পানি দিয়ে বালিশ ভেজায় মা হয়ে কি এসব সহ্য করা যায়।

– ও তো এক জিদ নিয়েই বসে আছে ইফাত ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না এমনটা আর কতদিন চলবে কম চেষ্টা তো করিনি কিন্তু কি হলো ইফাতকে কোথাও পাইনি।

পায়রা বাড়িতে চলে এসেছে, পায়রাকে দেখেই দু’জনে থেমে গেল। পায়রা বাবার পাশে বসে,
– কি কথা হচ্ছিল? আমাকে দেখেই থেমে গেলে যে।

– তোকে নিয়েই হচ্ছিল আজ এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে?(পলাশ শেখ)

– বাবা আমাদের কোম্পানির জন্য বড় একটা কাজের সুযোগ পেয়েছি তাও আবার আমেরিকার এক কোম্পানির সঙ্গে।

– এটা বেশ ভালো খবর।

– কিন্তু এ জন্য আমাকে আমেরিকা যেতে হবে।

– একা একা তোর কোথাও যাওয়া হচ্ছে না।(আসমা বেগম)

পায়রা বাবার দিকে তাকিয়ে,
– বাবা মা’কে বুঝাও প্লিজ।

সাবিহা ভার্সিটি থেকে সবেমাত্র বাড়িতে আসলো ওদের কথা কিছুটা শুনে উৎসুক হয়ে,
– সমস্যা নেই আমিও আপুর সঙ্গে যাবো তাহলে আর তোমাদের চিন্তা থাকবে না আর আমিই আপুকে দেখে রাখবো।

পায়রা সাবিহার কান টেনে,
– পাকামি হচ্ছে? পড়াশোনা নেই?

– কিছুদিন আগেই পরীক্ষা গেছে আপাতত এখন আমি ফ্রি এই সুযোগে একটু ঘুরে আসা হবে অনেকদিন ঘুরা হয় না।

পলাশ শেখ আসমা বেগমের দিকে তাকিয়ে হেসে,
– তাহলে ঠিক আছে দুই বোন মিলে ঘুরে আয় সাথে কাজটাও হয়ে যাক।

– তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই (আসমা বেগম)

সিদ্ধান্ত হয়ে গেল আগামীকাল পায়রা এবং সাবিহা আমেরিকা যাবে তাদের সঙ্গে অফিসের কিছু স্টাফও যাবে।

পায়রা ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় চলে গেল।এই বারান্দায় আসলে বারবার ইফাতের কথা মনে পড়ে কারণ যখন পায়রাকে দেখতে ইচ্ছে হতো তখন এই বারান্দা দিয়েই তো তার কাছে আসতো। পায়রা ইফাতের ছবিটা বের করে মনোযোগ সহকারে তাকিয়ে আছে,ছবিটা পায়রাই তুলেছিল লুকিয়ে গত তিন বছর ধরে এই ছবি দেখেই কষ্ট নিবারণ করছে।

ছবির দিকে তাকিয়ে অভিমানী সুরে,
– এই আপনার ভালোবাসা ইফাত? আপনি আমায় বলেছিলেন কখনও আমায় ছেড়ে যাবেন না তাহলে আজ কেন আড়াল হয়ে গেলেন? কেন নিজেকে লুকিয়ে নিলেন? আপনি কি বুঝতে পারছেন না আপনার মন পায়রার অনেক কষ্ট হচ্ছে আপনাকে ছাড়া থাকতে?

চলবে……….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে