মন পায়রা পর্ব-০৩

0
698

#মন পায়রা
#মাশফিয়াত_সুইটি(ছদ্মনাম)
পর্ব:০৩

‘এই মন পায়রা কেমন আছো?’

পায়রা আর তার বান্ধবীরা মিলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিল ইফাতের ডাক শুনে সবাই তার দিকে তাকাল। পায়রার মুখে বিরক্তির ছাপ, পায়রার এক বান্ধবী বলে উঠল,
– পায়রা দেখ ছেলেটা কি সুন্দর! আমি তো ফিদা হয়ে গেলাম।

ওদের সঙ্গে অশমি ছিল ইফাতকে দেখে অশমির মুখে হাসি ফুটলেও অন্য মেয়ের মুখে ইফাতের নাম শুনে ক্ষিপ্ত স্বরে,
– একদম ওর নাম নিজের মুখে আনবি না নজরও দিবি না।

পায়রা ব্রু নাচিয়ে,
– তোর এত জ্বলে কেন অশমি?

ইফাত রাস্তা পাড় হয়ে পায়রার সামনে এসে দাঁড়াতেই ওদের কথা বন্ধ হয়ে গেছে।ইফাত হেসে পায়রাকে আবারো প্রশ্ন করল,

– কি গো আমার মন পায়রা কেমন আছো বললে না তো?

পায়রা ঝাঁঝালো কন্ঠে,
– এতক্ষণ ভালো ছিলাম কিন্তু আপনাকে দেখে আর ভালো নেই।

– হুশ আমার তোমাকে দেখে অনেক ভালো লাগছে।

পায়রা বিড়বিড় করে,
– কাল রাতেই তো দেখে আসলো আবার আজ সকাল হতে না হতেই দেখতে চলে আসলো সত্যি লোকটা পাগল।

– কিছু বললে পায়রা?

– উহু।

– ভার্সিটি না গিয়ে এখানে কি করছো?

– দেখছেন না ফুচকা খাচ্ছি আপনি খাবেন?

ইফাত নাক ছিটকে,
– না না এসব আনহাইজেনিক ফুড আমি খাই না।

– কিন্তু আমার তো ফুচকা খুব ভালো লাগে যে ছেলের ফুচকা পছন্দ নয় তাকে আমারও পছন্দ নয়।

ইফাত অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পায়রা ফুচকা খাচ্ছে আড়চোখে ইফাতকে দেখছে এবার একটা ফুচকা ইফাতের মুখের সামনে ধরে,

– হা করুন।

– বললাম তো এসব খাই না।

– ঠিক আছে খাওয়ার দরকার নেই আপনি এ জীবনে আমার মন পাবেন না।

– ফুচকার সঙ্গে মনের কি সম্পর্ক?

– সম্পর্ক আছে এখন বলুন খাবেন কি খাবেন না?

ইফাত মনে মনে নিজেকে অসংখ্য বকা দিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হা করতেই পায়রা তার মুখে একটা ফুচকা ঢুকিয়ে দিলো।ফুচকায় কামড় দিতেই ইফাতের ঠোঁট লাল হয়ে গেল কিছুটা চেঁচিয়ে,

– এত ঝাল কেন? এত ঝাল মানুষ খায়!আরাফ….আরাফ…..

ইফাতের এসিস্ট্যান্ট আরাফ বসের এমন অবস্থা দেখে দ্রুত গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে দৌড়ে এলো।ইফাত পানির বোতলটা ছো মেরে নিয়ে পুরোটা খেয়ে ফেলল। ইফাতের অবস্থা দেখে পায়রা হাসছে ইচ্ছে করেই ফুচকা ওয়ালাকে ইশারা দিয়ে ঝাল দিতে বলেছিল যাতে ইফাতকে একটা শিক্ষা দিতে পারে। ইফাত মোটামুটি ঝাল খেতে পারে কিন্তু ফুচকায় একটু বেশিই ঝাল ছিল। অশমি এগিয়ে এসে,

– ইফাত ভাইয়া ঠিক আছেন আপনি,খুব ঝাল লেগেছে তাই না? পায়রা তোর কিন্তু এটা করা মোটেও ঠিক হয়নি।

ইফাত জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলে,
– আমি ঠিক আছি।

অশমি আবারো বলল,
– ঠিক আছেন মানে আপনার মুখ লাল হয়ে গেছে দাড়ান আমি চকলেট নিয়ে আসছি।

– বললাম তো ঠিক আছি।

পায়রা ভেংচি কেটে,
– তোর এত দরদ উতলে পড়ছে কেন? তোর মুখেও এবার এমন একটা ফুচকা ঢুকিয়ে দিব।

অশমি রাগ দেখিয়ে,
– পারলে নিজে একটা খেয়ে দেখা সবসময় সবকিছু নিয়ে মজা করিস।

ইফাত অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক করে,
– আমাকে নিয়ে তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছো কেন?

পায়রা আর অশমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।পায়রা অবাক হওয়ার ভঙিতে,
– আপনার জন্য আমি ঝগড়া করব কেন? ঝগড়া অশমি করছে ওর আপনার জন্য দরদ উতলে পড়ছে।

অশমি রেগে,
– বেশি হয়ে যাচ্ছে পায়রা।

ইফাত ওদের থামিয়ে,
– চুপ থাকো তো আচ্ছা পায়রা বাই পরে দেখা হবে।

ইফাত পায়রার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে চলে গেল আজ গাড়ি ড্রাইভ করছে আরাফ।পায়রা এবার অশমির দিকে তাকিয়ে,
– অশমি ইফাতের জন্য তোর এত দরদ কেন ব্যাপার কি?

– কোনো ব্যাপার নেই তুই বল তোদের মধ্যে কি চলছে?

– কিছুই না তবে উনি নাকি আমায় পেয়ার করেন।

– ইফাত ভাইয়া তোকে!!

– এত অবাক হওয়ার কি আছে? আমি সুন্দরী যে কেউ পছন্দ করতেই পারে নে চল এবার ক্লাসে যেতে হবে।

অশমির মনে এখনও গেঁথে আছে ইফাত পায়রাকে পছন্দ করে কোনভাবেই যেন এটা মেনে নিতে পারছে না।

ইফাত সিটে হেলান দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে আরাফ গাড়ি চালাচ্ছে।আরাফ ইফাতের দিকে একবার তাকিয়ে,
– স্যার আইসক্রিম খাবেন?

– এসময় আইসক্রিম খেতে যাবো কেন?

– আসলে স্যার ঝালে আপনার মুখটা টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে আইসক্রিম খেলে ঝালটা কমবে ভেতরটাও ঠান্ডা লাগবে।

– আরাফ তোমার কি মনে হয় সামান্য ঝাল আমাকে কাবু করতে পারবে? অনেক গরম তো তাই মুখ লাল হয়ে গেছে।

– কিন্তু স্যার গাড়িতে এসি চলছে।

– এই গরম এসিতে যাবে না তুমি মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাও নইলে এক্সিডেন্ট করে দু’জনের হাসপাতালে গিয়ে শুয়ে থাকতে হবে।

আরাফ গাড়ি চালানোয় মনোযোগ দিয়ে মনে মনে,
– স্যার ভাঙবে তবে মচকাবে না।
______________
অফিসে এসে আরও এক বোতল ঠান্ডা পানি খেয়ে মিটিং এর জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল ইফাত।আজ বড় একটা মিটিং আছে বিদেশি এক কোম্পানির সি ইউ এসেছে।এই মিটিং এর মাধ্যমে ডিলটা পেয়ে গেলে তাদের কোম্পানি অনেক সাফল্য অর্জন করবে। এনায়েত মির্জা এসেছে তবে মিটিং এ নিজেদের কোম্পানির হয়ে যোগ হবে ইফাত। ইফাতদের পলাশ শেখের সঙ্গে পার্টনারশিপ ছাড়াও আলাদা পারিবারিক একটা বড় বিজনেস আছে আজ সেই বিজনেস মিটিং। আবরারও এসেছে নিজেদের কোম্পানির জন্য তাদের ডিলটা প্রয়োজন।

সবাই চলে এসেছে নিজস্ব আসন গ্ৰহন করেছেন সময় মতো ইফাতও ভেতরে প্রবেশ করে নিজের জায়গায় বসল সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করল।

মিটিং শুরু হয়ে গেছে যে যার যার কোম্পানির সম্পর্কে সিভি দেখাচ্ছে। একে একে সবার কাজ শেষ হতেই ইফাত সামনে গেল সুন্দর করে নিজের কোম্পানির ভালো দিক তুলে ধরল সিভি গুলোও অনেক সুন্দর করে সাজানো।ইফাত এই পর্যন্ত অনেক বড় বড় মিটিং এ জয়েন হয়েছে নিজের বিচক্ষণতা এবং ব্যবসায়িক বুদ্ধির মাধ্যমে বড় বড় কোম্পানি গুলোর সামনে থেকে ডিল গুলো নিয়ে এসেছে। এবারো ব্যতিক্রম হলো না বিদেশি কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিয়ে মির্জা গ্ৰুপ অফ কোম্পানিকে নিজেদের ডিলটা দিয়ে দিলেন।

ইফাত এবং এনায়েত মির্জা অনেক খুশি আজও তারা সফল। আবরারের খুব রাগ হচ্ছে ইফাতের কাছে হেরে যাওয়ায়। মিটিং শেষে আবরার ইফাতকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চলে গেছে।ইফাত তার চেয়ারে গিয়ে বসতেই এনায়েত মির্জা ভেতরে প্রবেশ করে,

– ওয়েল ডান মাই সন! এবারো তুই বাজিমাত করে দিয়েছিস আমার তো খুশি ধরছে না এতো বড় একটা ডিল আমরা পেয়ে গেলাম।

– খুশি হলে তো হবে না গিফ্ট দিতে হবে।

– ওকেহ আজ সন্ধ্যায় তোর জন্য বড় একটা পার্টির এরেঞ্জ করব আমার তরফ থেকে।

– তুমি পার্টি ছাড়া কিছু বুঝো না কেন বাবা?

– আমাদের এত বড় সাফল্য সবাইকে জানানো উচিত আর সেই মাধ্যম হচ্ছে পার্টি। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে আসবি আর তোর সব ফ্রেন্ডদের ইনভাইট কর।

– আচ্ছা।

এনায়েত মির্জা রাফাতকে নিয়ে চলে গেলেন আজ তিনি অনেক খুশি। বাড়িতে গিয়ে পার্টির আয়োজন শুরু করে দিলেন সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তিনি গার্ডেনে বসে জুস খাচ্ছেন আর সবটা দেখছেন। ইতি বেগম স্বামীর কাছে এসে,

– কি শুরু করলে বুড়ো বয়সে কি ভিমরতি ধরেছে? দু’দিন পর পর কিসের পার্টি?

– এখনও ছেলেরা বিয়ে করল না নাতি-নাতনি আসলো না তুমি আমাকে বুড়ো বলছো?

– হয়েছে ঢং রেখে বলো পার্টি কিসের?

– তোমার ছেলে আজকের ডিলটাও পেয়ে গেছে। আমি অনেক টেনশনে ছিলাম কিন্তু ইফাত এত সহজে ডিলটা পেয়ে যাবে ভাবতেই পারিনি।

– ওহ এই ব্যাপার আমি তো জানতামই আমার ছেলে ঠিক পারবে।

– হয়েছে হয়েছে এবার গিয়ে দেখো শাড়ি আর গহনা পছন্দ হয়েছে কিনা।

– হুম যাচ্ছি কিন্তু তোমার ছেলেরা কোথায়?

– ইফাত অফিসে সন্ধ্যার মধ্যে চলে আসবে আর ইনানকে একটা কাজে পাঠিয়েছে।

– আচ্ছা।
________________

ইফাতদের বাড়ির সামনে সু-বিশাল বাগান সেই বাগানেই পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। মিটিং এ উপস্থিত সকলকে ইনভাইট করা হয়েছে শেখ পরিবারের সবাইও আসবে। শেখ পরিবারের আর মির্জা পরিবারের ভালো সম্পর্ক থাকায় যেকোনো অনুষ্ঠানে তাদের আগে ইনভাইট করা হয় আজও তাই হয়েছে।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিন্তু ইফাতের আসতে দেরি হয়ে গেছে।ইফাতকে দেখে এনায়েত মির্জা কাছে এসে,
– আসতে দেরি করলি কেন?

– গাড়ির টায়ার পাংচার হয়ে গেছিল।

– আজই হতে হল আচ্ছা তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে আয়।

– হুম।

ইফাত দ্রুত ঘরে চলে গেল রেডি হতে কিন্তু ঘরে এসে সে অবাক হয়ে গেল।ইফাতের ঘরের মাঝখানে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পায়রা আশপাশটা দেখছে ইফাত আস্তে করে দরজা আটকে,

– এখানে কি করছো মন পায়রা? বিয়ের আগেই হাজব্যান্ডের ঘরে চলে এলে।

পায়রা আচমকা ইফাতকে দেখে ভয় পেয়ে গেছে ভিতু চোখে ইফাতের দিকে তাকিয়ে,
– আমি বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম এটা যে আপনার ঘর প্রথমে বুঝতে পারিনি।

– আগেও তো অনেকবার এসেছ তখন বাড়ি ঘুরে দেখনি?

– দেখা হয়নি বলতে গেলে সুযোগ পাইনি।

ইফাত ঠোঁটে দুষ্টু হাসি রেখে পায়রার দিকে এগুচ্ছে পায়রা পিছনে যেতে যেতে,
– এভাবে এগুচ্ছেন কেন? সরুন আমি বাবার কাছে যাব।

– তোমাকে এতটা কাছে পেয়েও যেতে দিব ভাবলে কি করে?

– আমি কিন্তু চেঁচাবো।

– জোরে জোরে চিৎকার করো আজই আমাদের বিয়েটা হয়ে যাক।

– বিরক্তিকর একটা লোক আপনি আমার জীবন তেজপাতা করে দিচ্ছেন।

– আমি তোমার কাছে বিরক্তিকর হলেও তুমি আমার ভালো থাকার কারনে।

– আজ এখানে আসাই ভুল হয়েছে।

– কি আর করার ভুল তো করেই ফেলেছো তবে ভুল না করলে বাড়ি থেকে তোমায় তুলে নিয়ে আসতাম।

বলেই পায়রাকে ছেড়ে দিলো পায়রা ছুট লাগালো।ইফাত মুচকি হেসে রেডি হতে চলে গেল।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে