ভুল ও ভালোবাসা
পর্ব- ০৩
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
মা, আমার জরুরী কাজ আছে। তাই আমায় হসপিটালে যেতে হচ্ছে। দয়া করে আমায় পিছু ডেকো না।
পিছু ডাকবে না মানে? বউটা অসুস্থ্য। আর ওকে ফেলে তুই হসপিটালে চলে যাচ্ছিস? তুই কিরে? তোর ভিতর কি মায়া দয়া বলতে কিচ্ছু নেই? একটুও মানবতা নেই?
” বাবা, শুনো! আমাকে তোমরা মানবতা শিখাতে এসো না। কারন, মানবতা শেখার আমার কোনো প্রয়োজন নেই। তোমাদের আদরের বউ মা অসুস্থ্য। সমস্যা কি? তোমরা তো আছ মানবতাবোধ সম্পূর্ণ ব্যক্তি। তো আর দেরী কেন? এখনি লেগে পরো কাজে। আমার এত মানবতা দেখানোর টাইম নাই। আমি গেলাম।”
বাবার কথার মুখে মুখে জবাব দিয়ে চলে যায় শুভ্র। জনাব শফিকুল ইসলাম মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরেন। রোকসানা বেগমও রীতিমত অবাক ছেলের এমন আচরণে। জনাব শফিকুল ইসলাম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেতেছে, আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম রোকসানা। আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম। একটা সময় যেই ছেলেকে নিয়ে গর্ববোধ করতাম, আজ সেই ছেলে আমায় ব্যর্থ করে দিয়েছে। আমি একজন ব্যর্থ বাবা হয়ে গেলাম। আমি পারলাম না আমার ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করে তুলতে। আমার সারাজীবনের পরিশ্রম আজ ব্যর্থ হয়ে গেল। হু, হু করে কেঁদে উঠল শুভ্রর বাবা। এই মুহূর্তে কিছু সান্ত্বনার বানী বলা দরকার বুঝতে পারছিল শুভ্রর মা। কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না ওনার। অনেক চেষ্টা করে রোকসানা বেগম কাঁপা গলায় শুধু এটুকু বলল, শান্ত হও!
সেদিন রাত্রে বাসায় ফিরে কারো সাথে কথা বলেনি শুভ্র। লাবণ্যের সাথে কথা নাইবা বলল, নিজের বাবা মায়ের সাথে তো কথা বলতে পারত। কিন্তু তাও বলেনি। একটা বারের জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ করেনি, খেয়েছ তোমরা? যেহেতু সেদিন শুভ্রর বাবা মা এসেছিল তাই তাদেরকে লাবণ্যর ঘরটা ছেড়ে দিতে দিয়ে শুভ্রর রুমে থাকতে হলো। লাবণ্য রুমে প্রবেশ করা মাত্রই খাট থেকে একটা বালিক নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেয় শুভ্র। লাবণ্য বুঝতে পারে ওর জায়গা খাটে নয়, ফ্লোরে। সে শুয়ে পরে ফ্লোরে। একে তো অসুস্থ্য শরীর, তারউপর ঠান্ডা ফ্লোর। রাত্রে আবারো হাড় কাঁপিয়ে জ্বর আসে লাবণ্যর। উপয়ান্তর না পেয়ে বালিশ নিয়ে উপরে উঠে সে। শুভ্রর পিছনে বালিশ পেতে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পরে লাবণ্য। ঘুমিয়ে পরে সে। জ্বরের ঘোরে কাঁপতে কাঁপতে কখন যে শুভ্রর চাদরের নিচে চলে যায় কিছুই টের পায় না লাবণ্য। খেয়াল হয় যখন হ্যাঁচকা টানে কেউ একজন ওকে খাট থেকে ফেলে দেয়। শুভ্রর রক্তবর্ণ চোখ দেখে ভড়কে যায় লাবণ্য। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, “আসলে খুব শীত…(…)….???
পুরো কথা বলতে পারে নি লাবণ্য। তার আগেই শুভ্র হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ছাদে চলে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখের কোণে জড়ো হওয়া জলটুকু মুছে নেয় লাবণ্য।
সকালে হসপিটালে যাবার প্রাক্কালে শুভ্রর পথ আগলে দাঁড়ায় ওর মা। রাত্রের পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী ওনি। দরজার আড়াল থেকে সব, সবটা শুনেছেন ওনি। আজ তাই কিছু প্রশ্ন নিয়ে ছেলের সম্মুখীন হলেন। আজ ওনি ওনার সব প্রশ্নের উত্তর শুনে তবেই একটা সিদ্ধান্তে আসতে চান। প্রশ্ন করেন ছেলেকে, লাবণ্যর প্রতি তোর কেন এত বিতৃষ্ণা? কেন এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস অসহায় মেয়েটাকে? মায়ের প্রশ্নের জবাবে চিৎকার করল বলে উঠে শুভ্র, আমার ওকে ভালো লাগে না কথাটা শুনা সত্ত্বেও কেন আমায় জোর করে বিয়ে করালে? কেন? কেন? দুনিয়াতে কি এই মেয়ে ছাড়া আর কোনো মেয়ে তোমাদের চোখে পরেনি? এই মেয়ের মধ্যে কি পেয়েছ তোমরা? এই মেয়ে কি জাদু করেছে তোমাদের যে এই মেয়ের জন্য তোমরা আমায় ব্ল্যাকমেইল করেছ???
রোকসানা বেগম ছেলের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালেন,কি বললি ব্ল্যাকমেইল করেছি আমরা তোকে?
শুভ্র উঁচু গলায় জবাব দেয়, তা নয়তো কি? বাবার ইচ্ছে এই মেয়েকে পুত্রবধূ করার। এখন ওকে বিয়ে না করলে বাবা মনে কষ্ট পাবে। স্ট্রোক করবে…..
উত্তেজিত হয়ে শুভ্রর মা বলেন, চুপ কর শুভ্র। শুভ্র ব্যঙ্গাত্বক স্বরে বলে, এই মেয়ের সম্পর্কে আমারও কোনো কথা বলতে ভালো লাগে না মা। তুমি প্রশ্ন করছ তাই জিজ্ঞেস করলাম, কি জাদু করেছ ও তোমাদের?
শুভ্রর মা শান্ত গলায় বলেন, শুভ্র! এই মেয়ে আমাদের কোনো জাদু করেনি। ওর মা আমার বান্ধবী। আমার খুব ভালো একটা বান্ধবী ছিল লুবনা মানে লাবণ্যর মা। কয়েকবছর আগে লাবণ্যর বাবা, মা, ভাই একটা…..(…..)…..???
Enough! অনেক হয়েছে মা। এবার বন্ধ করো তোমার সিনেমাটিক ডায়লগ। আমার সময় বয়ে যাচ্ছে। আমি গেলাম। আল্লাহ হাফেজ। শুভ্র ওর মায়ের পুরো কথা না শুনে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।
পর্দার আড়াল থেকে মা ছেলের কথোপকথনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনে নিয়েছে একজন।
চলবে……