ভুল এবং ভালোবাসা
পর্ব- ১৫
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
লাবণ্য একটু একটু করে পিছনে যাচ্ছে আর শুভ্র একটু একটু করে সেদিকেই এগুচ্ছে। এ ঘটনা সুমন- নাইমা এবং হিমেল- লামিয়ার চোখও এড়ায় না। পলাশ মৌরির সাথে সাথে ওদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে দুই,দু’জোড়া কপোত কপোতী তাকিয়ে আছে। এসব কিছুই টের পায়নি শুভ্র। খাবার টেবিল থেকে আচমকা এহেম বলে একটা মেকি কাশি দিয়ে উঠে পলাশ। লাবণ্য কাঁপা দৃষ্টিতে সে দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। হায় আল্লাহ! ওনারা এভাবে তাকিয়ে আছেন। ইস! কি লজ্জা…..
ভাসুরা’রা এবং ওনাদের বউদের সামনে এভাবে ধরা খেলাম! আমার তো লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। একহাতে লাবণ্য শুভ্রকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা খেয়ে লাবণ্যর থেকে সরতে যাওয়ার সময় শুভ্রর কনুই থেকে কনুইয়ের নিচ থেকে গায়ে জড়ানো তোয়ালে’টা সরে যায়। মুহূর্তেই ব্যান্ডেজে জড়ানো হাতটা সকলের চোখে পরে।
চোখ বড় বড় করে-
” ওরে আল্লাহ! তোর হাতের এই অবস্থা কেন? কি হয়েছে তোর? এক্সিডেন্ট’টা হলো কিভাবে? কখন এ অবস্থা হইছে? আল্লাহ, শুভ্র এ অবস্থা কিভাবে করছ? আম্মা জানে? একটু দেখে কাজ করতে পারো না?”
পলাশ আর লাবণ্য বাদে উপস্থিত সকলে শুভ্রর দিকে একঝাক প্রশ্ন ছুড়ে দেই। নিশ্চুপ শুভ্র মাথা নিচু করে আছে। কি করে বলবে এসব? হাজার হোক ওরা তো বড় ভাই ভাবি। ওদের সামনে কিভাবে লাবণ্যর কথা বলে। ওকে ছোট করে? সবচেয়ে বড় কথা ঘরের খবর বাইরে যাক এটা শুভ্র চাচ্ছে না। চাচ্ছে না এ নিয়ে কোনো ঝামেলা হোক। আর তাই চাচ্ছে না বলেই শুভ্র ওর ভাইদের দিকে তাকিয়ে বলে, সে কিছু না! একটু কেটেছে। বাদ দাও তো তোমরা! শুভ্রর ভাই ভাবি খাবার রেখে শুভ্রর পাশে এসে ঝেকে বসল। ওহ গড! এত্তখানি জায়গা জোড়ে ব্যান্ডেজ আর তুই বলছিস কিচ্ছু হয়নি? শুভ্র ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠে বলে, কেবল ব্যান্ডেজ করে ফিরছি। ছাড়ো তো, ব্যাথা পাচ্ছি। পাশ থেকে পলাশ বলে উঠে, সে তো পাবে’ই। বলছিলাম না ডাক্তার কিছু ঔষধ দিবে সেগুলো নিয়ে আসতে! আনিস নি, ভালো হয়ে যাবি বলে চলে আসলি। এখন কি? ব্যাথা সেরে গেছে, তাই না? শুভ্রর কাছ থেকে সরে এবার সবাই পলাশের দিকে আসলো। ” পলাশ! তুই জানিস কি হয়ছে?”
পলাশ শুভ্রর দিকে একনজর তাকাই। শুভ্র তখন মাথা নাড়িয়ে ইশারা করতেছে যাতে না বলে। কিন্তু পলাশ?!!! মুচকি হাসি দিয়ে গড়গড় করে বলা শুরু করে,
” আমাদের শুভ্র বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছিল, ভাইয়া- ভাবি! গড়াগড়ি’টা এতটাই বেশী হয়ে গেছে যে খাট থেকে’ই ধপাস করে পরে গেছে। আমরা যে জিনিসগুলো বড় আম্মাকে দিয়ে এসেছি, মানে দা, বটি,ছুড়ি ঐগুলো কাকিমা ফ্লোরে রেখেছিল। দূর্ভাগ্যক্রমে আমাদের ভাইটা সেখানেই গিয়ে গড়িয়ে পরেছে। এই আর কি…..”
সকলের দৃষ্টি তখন লাবণ্যর দিকে। লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল সবাই।
” গড়াগড়ির আর সময় পাইলা না। ফজরের নামাজের সময় গেছো বিছানায় গড়াগড়ি করতে, কথাটা বলেই একটা রহস্যজনক হাসি দিল শুভ্রর দুই ভাবি।”
পলাশ ভাবিদের সাথে পাল্লা দিয়ে টিপ্পনী কাটলো, আরে ভাবি’রা! বুঝো না কেন? এখন সময় ভালো…..!
পলাশের কথায় আর সবাই হো, হো করে হেসে উঠল। লজ্জায় কষ্টে লাবণ্যর চোখ’জোড়া ছলছল করে উঠল। লজ্জা পাচ্ছে ভাসুর বউ মানে ভাবিদের টিপ্পনী শুনে, আর কষ্ট হচ্ছে খাট থেকে ও নিজেই তো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে! আর ওর কারনে আজকে শুভ্র এতটা কষ্ট পাচ্ছে। ব্যাপারটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে লাবণ্য। আজ যেন চোখের জলও বাধ মানছে না। অঝোরে গড়িয়ে পরছে চোখ থেকে অশ্রকণারা। অজস্র জলকণারা ভীড় করছে লাবণ্যর নেত্রকোণে। খাবার সামনে থেকেও কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছে না লাবণ্য। চোখ দুটো যেন ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে। হাতধূয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে যায় লাবণ্য। ভাসুর বউরা চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করে, সেকি লাবণ্য! ঝালমুখ না করেই চলে যাবে? লাবণ্য মাথা নাড়িয়ে কিছু একটা বলল, যেটা কেউ বুঝতে পারল না। কিচেনে চাচী শাশুড়িকে কিছু একটা বলে বিদায় নিল লাবণ্য।
” কিরে! তোর বউ আবার কি হলো?”
হিমেলের প্রশ্নে শুভ্রর জবাব, হয়তো পেট ভরে গেছে হিমেল ভাই।”
পাশ থেকে সুমন বলে উঠে,
” পেট ভরে গেছে নাকি নাইমা, লামিয়া ভাবির কথা শুনে কিছু মনে করল?”
শুভ্র জোর গলায় বলে উঠে, কি যে বলো না সুমন ভাই। ও এরকম মেয়ে না। লামিয়া বলে বলে উঠে, তাহলে কিরকম মেয়ে? শুভ্র ঢোক গিলে বলে, ভাবি! ওর একটু বেশী লজ্জা। সেখানে ভাসুরদের সামনে রেখে এভাবে মজা করছ, তাই বোধ হয় লজ্জা পেয়ে চলে গেছে। পলাশ শুভ্রর কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলে উঠে, হ্যাঁ ভাবি! সেটাই। দেখো নি খাবার সময় কেমন পেছন দিকে যাচ্ছিল? স্মিতহাস্যে নাইমার জবাব, পেছনে যাবে না? তোমার ভাই লাখে একটা বলতে হয়। ঘরভর্তি মানুষ রেখেও খাবার সময় আসছে রোমাঞ্চ করতে। শুভ্র মাথা নিচু করে ফেলে। ” ইয়ে মানে আমি আসছি….”
সবাই হেসে উঠে শুভ্রর আমতা আমতা করে কথা বলা দেখে। সবাই যখন হাসাহাসিতে ব্যস্ত শুভ্র তখন কেটে পরে ঐ স্থান থেকে।
সকাল সাড়ে ৮টা। ঈদের নামাজের সময় গেছে। আশেপাশের ঈদগাহ ময়দানের মাইক থেকে সে স্বর’ই ভেসে আসছে। সমস্ত মুসলমান ভাইদের ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান করা হচ্ছে। নতুন পাঞ্জাবী পাজামা গায়ে জড়িয়ে, কাঁধে জায়নামাজ’টা নিয়ে বাপ, চাচা, চাচাতো, জ্যাঠাতো ভাইদের সাথে এগিয়ে চলছে শুভ্র ঈদগাহের দিকে। বাড়ি থেকে বের হয়ে দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায় ওরা। বাড়ির মুরুব্বী’রা যাচ্ছে বাড়ির কাছের নতুন ঈদগাহে আর ছেলেপিলেরা যাচ্ছে কিলোখানেক দুরে ওদের স্কুলের ঐ পুরনো ঈদগাহে। রাস্তায় গিয়ে পিছু ফিরে তাকায় শুভ্র। বিশাল জামগাছের আড়াল থেকে মুখ বের করে শুভ্রকে দেখছিল একজোড়া চোখ। শুভ্রর পিছনে তাকানো দেখে গাছের আড়ালে লুকিয়ে যায় মানুষটা।
” কিরে! বার বার পিছনে কি দেখছিস?”
কাজিনের প্রশ্নে সে কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে পথচলতে থাকে শুভ্র। ওরা সকাল ১১টা নাগাদ ঈদগাহ থেকে নামাজ এবং একটা ছোট্ট আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরল। ঈদগাহ থেকে বাড়ির ছেলেরা সরাসরি শুভ্রদের বাসায় চলে আসে। কারণ, ঈদগাহে যাওয়ার আগে বাড়ির মুরুব্বি বড় আম্মা মানে একমাত্র জ্যাঠিমা বলে দিয়েছে, নামাজ শেষে যেন এ বাসায় চলে আসা হয়।
আর সেই মতেই ওরা এখানে এসে উপস্থিত হলো। বাড়িতে পা রাখতেই শুভ্রর কানে ভেসে মায়ের কন্ঠ। কন্ঠ শুনে মনে হচ্ছে ভিষণ রেগে আছে। শুভ্র ওর কাজিনদের রুমে বসতে বলে কেইসটা কি জানার জন্য মায়ের রুমের দিকে পা বাড়ায়। রুমে প্রবেশ করা মাত্র’ই আঁতকে উঠে শুভ্র। মায়ের রুমের বিছানার চাঁদরের অনেকাংশ ফোঁটা ফোঁটা রক্তে ভেঁজা। আর তার ঠিক পাশেই মাথা নিচু করে বসে আছে লাবণ্য। তারপাশেই ডাক্তারসহ ওর বাবা মা এবং বোন। অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করে শুভ্র,
শিশির! এত রক্ত কিসের এখানে? শিশির ভেঁজা গলায় বলে উঠে, ভাবি পেয়াজ কাটতে গিয়ে হাত কেঁটে ফেলেছে। শুভ্রর ভিতরটা মুচড় দিয়ে উঠে। চোখ চলে যায় লাবণ্যর হাতের দিকে। ডান হাতের ৪টা আঙ্গুল ব্যান্ডেজে জড়ানো। চোখ বড় বড় করে শুভ্রর প্রশ্ন, পেয়াজ কাটলে কারো এভাবে হাত কাটে? তুই আমাকে শিখাতে আসছিস? শিশির কাঁপা গলায় বলে, কিন্তু ভাবিতো পেয়াজ’ই কাটতেছিল……!
” কাটতেছিল কিন্তু পেয়াজ কাটায় হাতের এ অবস্থা হয়নি ওর। রক্ত দেখছিস? দেখে মনে হচ্ছে গরু জবাই করা হয়ছে এখানে।”
লাবণ্য তখনো মাথা নিচু করে চুপটি করে বসে আছে। শুভ্র অশ্রুভেঁজা চোখে লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জানি লাবণ্য। তুমি পেয়াজ কেটে নয়, অন্যভাবে হাত কেটেছ।
দেখি বাপ! সরতো…..
ডাক্তারের কথায় হুশ হয় শুভ্রর। হাতে একটা ইনজেকশন নিয়ে ডাক্তার দাঁড়িয়ে। সেটা দেখে পথ সরে দাঁড়ায় শুভ্র। ডাক্তার কাকা লাবণ্যর দিকে ইনজেকশনের সিরিজ নিয়ে এগুতো থাকে। ভয়ে চিৎকার দিয়ে খাটের একপাশ থেকে মধ্যিখানে গিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকে লাবণ্য। ডাক্তার একটা হাসি দিয়ে বলল, আরে মা! কিচ্ছু হবে না তোর। তুই খুঁজও পাবি না। আয়। এদিকে আয়….
লাবণ্য নিজেকে গুটিয়ে আরো জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে খাটের মধ্যিখানে। শুভ্রর বাবা বলল, লাবণ্য! এদিকে আসো। তুমি একটুও ব্যাথা পাইবা না। লাবণ্য চোখ বন্ধ করে বলতেছে, না বাবা! আমি পারব না। আমি ইনজেকশন দিব না। লাবণ্যর শ্বশুর শাশুড়ি, ডাক্তার চাচা, কারো কথা শুনেনি লাবণ্য। সেটা দেখে খাটে লাবণ্যর কাছে যায় শিশির। ভাবি! তোমার কিচ্ছু হবে না। ভয় পাওয়ার কিচ্ছু নেই ভাবি। ইনজেকশনটা দিয়েই দেখো না ভাবি। মনে হবে যেন পিঁপড়া কামড় দিয়েছে। ব্যাস, এটুকুই। আর ব্যাথা পাবে না। লাবণ্য দাতে দাত চেঁপে বলল, বললাম তো আমি আমি দিব না ইনজেকশন। লাবণ্যর শাশুড়ি রাগে কটমট করে বলে উঠে, ” অনেক শিশির! আর না…
তুই উঠ ওখান থেকে। আর একে রুমে নিয়ে যা। এর যা ইচ্ছা তা করুক। সেসব আমার দেখার বিষয় না।”
শিশির ওর ভাবিকে নিয়ে রুমে চলে যায়।
” আসলে যেভাবে রক্তক্ষরন হয়েছে ইনজেকশনটা দেওয়া খুব জরুরী ছিল। এই বলে ব্যাগ গুছিয়ে ডাক্তার চলে যাচ্ছিল। শুভ্র পিছন থেকে ডাক দেয়, কাকা!
ডাক্তার দাঁড়িয়ে পরে। শুভ্র ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলে, কাকা! ইনজেকশনটা আমার কাছে দিয়ে যান। আমি বুঝিয়ে শুনিয়ে এটা পুষ করে দিব। ডাক্তার শুভ্রর হাতে ইনজেকশনটা দিয়ে যায়। শুভ্রর মা কিচেনে চলে যায়। শুভ্র শিশিরের রুমের দিকে পা বাড়ায়। শুভ্র গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়। ভাইকে দেখে শিশির রুম থেকে বেরিয়ে আসে। ” ভাইয়া কিছু বলবি?”
শুভ্র লুকিয়ে রাখা ইনজেকশনের দিকে চোখ ইশারা করে। লাবণ্য সেটা দেখে মুচকি হাসে। শুভ্র জানায়, শিশির! ওরা সবাই খেতে আসছে। যা, মায়ের সাথে গিয়ে হেল্প কর। আমি আছি তোর ভাবির পাশে। মুচকি হেসে শিশির সেখান চলে যায়।
ইনজেকশনের সিরিজ হাতে পিছনে হাত রেখে রুমে প্রবেশ করে শুভ্র। শুভ্রকে দেখে কিছুটা ইজিলি বসে লাবণ্য। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে, আহ্! বাঁচা গেল। ভোরের ঘটনাটার জন্য স্যরি বলার এখন’ই উপযুক্ত সময়। লাবণ্য খাটের মধ্যিখানে বসেই শুভ্রর দিকে তাকায়। তারপর নিচু স্বরে বলে, স্যরি…..
শুভ্র লাবণ্যর দিকে তাকায়। লাবণ্য ভেঁজা কন্ঠে বলে, আসলে আমি জানতাম না নিচে দা, বটি রাখা আছে। আমি সত্যি’ই দুঃখিত তখনকার ঘটনাটার জন্য। শুভ্র একটা অট্টহাসি দেয়। বোকার মত লাবণ্য শুভ্রর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, কি হলো?
শুভ্র নীচু স্বরে বলে, আরে বোকা মেয়ে! আমার তো কোনো হাত’ই কাটেনি। লাবণ্য চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করে, মানে? শুভ্র ব্যান্ডেজে জড়ানো হাতটা লুকিয়ে অন্য হাত লাবণ্যর সামনে উপস্থাপন করে। এই দেখো। কিচ্ছু নেই। কোনো ব্যান্ডেজ নেই।
” আমি বিশ্বাস করি না বলেই লাবণ্য খাট থেকে নেমে শুভ্রর অন্য হাতের দিকে এগিয়ে যায়। তারপর শরীর তোয়ালে টা ফেলে দেয়। শুভ্রর তখন পাঞ্জাবী গায়ে ছিল, তাই লাবণ্য ব্যান্ডেজ’টা দেখতে পায়নি। তবে যা দেখতে পায় তা দেখে ওর শরীরটা শিউরে উঠে। শুভ্রকে কিছু না বলেই দৌঁড়ে পালাতে চাচ্ছিল লাবণ্য। দরজার সামনে আড়ি পেতে ছিল শিশির। লাবণ্যর রুম থেকে বের হওয়ার আগেই দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেয় শিশির। অট্টহাসিতে মেতে উঠে ডাক্তার শুভ্র। ইনজেকশন হাতে লাবণ্যর দিকে এগুতে থাকে। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম লাবণ্যর। দেয়ালের সাথে একদম মিশে যায় সে। ধীরপায়ে শুভ্র সেদিকেই এগুচ্ছো। একটু একটু করে পৌঁছে যায় দরজার পাশে, লাবণ্যর কাছে। একহাত দিয়ে প্রাণপণে লাবণ্য শুভ্রকে দুরে সরানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু শুভ্রর সাথে কিছুতেই পেরে উঠতে পারছে না। চোখ দুটো বন্ধ করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে লাবণ্য, আমি ইনজেকশন দিব না। তবুও আপনি কেন এমন করতেছেন আমার সাথে? কেন এভাবে আমার পিছু লেগেছেন? কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার? চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলছিল লাবণ্য। জবাবে শুভ্র বলে উঠে, ভুলিনি এখনো ভোরের ঘটনা। এখনো হাতটা ব্যাথা করতেছে। শুভ্রর এমন কথা শুনে চোখ মেলে তাকায় লাবণ্য। জল ছলছল চোখে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে, স্যরি বলছি তো।
—- তাহলে ইনজেকশনটা দাও, স্যরি একসেপ্ট করব, প্রমিজ।
লাবণ্য শুভ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে গায়ের জোর ছেড়ে দেয়। এইমুহূর্তে একদম ইজিলি দাঁড়িয়ে আছে লাবণ্য। শুভ্র সেই সুযোগটাই কাজে লাগালো। জলদি ইনজেকশনটা রেডি করে লাবণ্যর দিকে তাকায়। গম্ভীর কন্ঠে বলে, তাহলে প্রস্তুত? লাবণ্য মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোধক সম্মতি জানায়। শুভ্র লাবণ্যর হাত ধরে খাটে নিয়ে বসায়। লাবণ্য তখনো শুভ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে। ধারালো সুচ দেখে ঘোর কাটে লাবণ্যর। শুভ্র ততক্ষণে কাজ সেরে ফেলতেছে। একহাতে লাবণ্য শুভ্রর কাঁধের কাপড় চেপে ধরে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে।
চলবে……