ভালো থেকো ভালোবাসা পর্ব-৯+১০

0
699

#ভালো_থেকো_ভালোবাসা
#৯বম_পর্ব
লেখনীতে;নাহার সাইবা

~ উফফ পড়ালেখা যে কী ভেজালের একটা জিনিস!! এতদিন এসবের থেকে দূরে থেকে শান্তিতেই ছিলাম কিন্তু এখন আবার মাস্টারমশাই পড়ালেখার সুযোগ করায় হাত ছাড়াও করতে পারলাম না আবার এখন আরাম আয়েশ করারও সুযোগ পাচ্ছি না!! কী একটা উভয়সংকটে পড়লাম রে বাবা!!না পারি পড়াশোনা ত্যাগ করে সংসারি হতে আর না পড়াশোনা ঠিকমতো করতে মন চায়।এ কেমন ভালোবাসা পড়ালেখার প্রতি?? ( মেঘলা)
মেঘলা নিজেই নিজের বিবেককে প্রশ্ন করতে লাগল আর উচ্চ মাধ্যমিকের পদার্থবিজ্ঞানের বইয়ের পাতা উল্টাতে লাগল ।তার চোখেমুখে একরাশ বিরক্তির ছাপ যেন এই মুহুর্তে তাকে তার অনিচ্ছার বিরুদ্ধে ধরে বেঁধে পড়ানো হচ্ছে। অবস্থাটা আসলে এমনটাই ঠিক তবে একটু ভিন্ন। মেঘলার মস্তিষ্ক তার দুরন্ত মনটাকে বেঁধে রেখে পড়ালেখার মাঝে খুব শক্ত ভাবে তবে যেকোনো সময় বন্ধন ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। অপরদিকে তার মন যথাসম্ভব চেষ্টা করছে তাকে পড়ালেখা নামক কল্যাণকর অধ্যায় থেকে দূরে সরিয়ে অকাজে ব্যস্ত রাখতে।ঠিক এমন সময় আকাশের উদয় ঘটল।মেঘলার কথাগুলো পাশের রুম থেকেই শুনতে পেয়েছে তাই মজা নিতে ছুটে এসেছে।
~ তা এতই যখন বিরক্তি দরকার কী পড়ালেখার? ছেড়ে দাও ।তুমিও বাঁচবে আমার টাকা-পয়সা গুলোরও শ্রাদ্ধ হবে না। কারণ আমি বুঝেই গিয়েছি তুমি মুখে বলায় পটু কাজে কচু!! ( আকাশ)
আকাশের মেঘলা উঠে দাঁড়ালো তারপর আকাশের সন্নিকটে গিয়ে বলল
~ আপনি দেখি অদূরদর্শী!! ভবিষ্যৎ বাণী দান করতে পারেন দারুণ। এখনো এক মাসই গেলো না কলেজে ভর্তি করালেন এর মাঝেই বুঝে গেলেন আমার দ্বারা কোনোকিছু হবে না??বাহ্ আপনার তারিফ না করে তো পারাই গেলো না।আর যদি আপনার ভবিষ্যৎ বাণীকে সম্পূর্ণ মিথ্যা করে আমি ভালো কিছু করে দেখাতে পারি তখন কী হবে শুনি??( মেঘলা)
মেঘলা কোমড়ে দু’হাত রেখে জিজ্ঞেস করল আকাশ কিছুটা দূরে সরে গিয়ে বলল
~ অসম্ভব ব্যাপার এটা।তোমার মাঝে ইচ্ছাশক্তির প্রচন্ড অভাব ঝিমুনি স্বভাবটা বেশি। আর অলস জাতি কখনোই সফলতার শীর্ষে যেতে পারে না ইতিহাস তাই বলে।( আকাশ)
মেঘলা আবারো এগিয়ে এলো আকাশের দিকে
~ আপনি কিন্তু এবার আমাকে কটাক্ষ করে কথাগুলো বলছেন যা মোটেও ঠিক নয়। ( মেঘলা)
~ কোনটা ঠিক আর কোনটা ভূল তা কী তোমার কাছ থেকে শেখার প্রয়োজন পড়েছে নাকি?অন্তত এতটাও অক্ষম বা অজ্ঞ নই নিশ্চয়ই। ( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলা অন্যদিকে ঘুরে নাক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইল, আকাশ যা দেখে মৃদু হাসল।তারপর আবার নিজের বেডরুমে গিয়ে ফিরে এলো একটা বাক্স হাতে।মেঘলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল
~ তোমার জন্য একটা ফোন অল্প দামেই কেনা বাটন ওয়ালা নকিয়া। শুধুমাত্র যোগাযোগের জন্য সারাদিন বাসায় থাক। কোনো খোঁজখবর তো নেওয়ার সুযোগ ও নেই।কোনো অঘটন ঘটিয়ে বসে থাকলে খবরও পাব না,তাই অফিস থেকে ফেরার পথে গতকাল নিয়ে এসেছিলাম আজ দিয়ে দিলাম।আমার নাম্বার সহ কেবল প্রয়োজনীয় কনটাক্টের নাম্বার গুলোই থাকবে এর থেকে বেশি কিছু যাতে এর দ্বারা সাধিত না হয়।( আকাশ)
আকাশের শাসন মিশ্রিত কথায় মেঘলা উৎফুল্ল হয়ে ফোনের বক্সটা হাতে নিল, অতি দ্রুততার সাথে বক্স থেকে ফোন বেড় করে তা বারবার দেখতে লাগল।ঠোঁটের কোণে অমলিন হাসি লেপ্টে আছে চোখমুখ ঝলমলে। আকাশের দিকে তাকিয়ে চওড়া হাসি উপহার দিয়ে প্রফুল্ল কন্ঠে বলে উঠল
~ আমায় আপনি ফোন কিনে দিয়েছেন এটাই অনেক বেশি সেটা স্মার্টফোন না হলেও চলবে আমার এই বাটন ওয়ালা ফোনই দরকার ছিল।আর এত বছরের জীবনে কখনো নিজের মালিকানাধীন ফোন পাইনি ধন্যবাদ আমার প্রয়োজনটা বুঝে আমায় দেওয়ার জন্য। আর ভালোই হলো রাত্রে শুয়ে শুয়ে এফএম রেডিও শুনতে পারব। উফফ আমি যা খুশি বলে বুঝাতে পারব না আপনাকে।( মেঘলা)
মেঘলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আকাশ সন্তুষ্ট হলো তবে তা মেঘলাকে বুঝতে না দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠল
~ তোমার প্রয়োজন নয় বরং আমি আমার দরকারেই ফোনটা তোমায় দিয়েছি এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই।( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলা মনঃক্ষুণ্ন হলেও ভেংচি কেটে বলল
~ হয়েছে হয়েছে আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করতে হবে না আপনাকে।আমি তো বুঝিই আপনার আমার প্রতি সামান্য হলেও অনুভূতি আছে তা না হলে আমার জন্য এতকিছু শুধু মামা-মামীর কথা রাখতেই করবেন না অবশ্যই।আমি সবই বুঝি বুঝলেন মাস্টারমশাই?? ( মেঘলা)
মেঘলা এই বলে মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।আকাশ সম্পূর্ণ কথাটাকে আমলে না নিয়েই বিরক্ত হয়ে বলল
~ এই যে তোমার বেশি বোঝার রোগটা তোমার মাঝে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।আমি তিল বললে তুমি বুঝো তাল।তাই তোমার মতো মানুষদের উপকার করতেও মন সায় দেয় না।সবসময় কয়েক ডিগ্রি বেশি বোঝা।( আকাশ)
আকাশ এই বলে আবারো সেখান থেকে বেড়িয়ে পড়ল। মেঘলার মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো হঠাৎ করেই কালো মেঘ জমাট বাঁধল তার পরিবর্তে।

রোশানি ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেশ হচ্ছিল এমন সময় একটা পরিচিত নাম্বার থেকে কল এলো।ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো অনিকের নাম্বার। ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল।এই ছেলেটার সাথে তার সম্পর্ক অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বেশ গভীর হয়ে গেছে বলতে গেলে খুব ভালো বন্ধু তারা এখন।রোশানিকে ডিপ্রেশন থেকে বেড় করে আনতে অনিক বেশ ভূমিকা পালন করেছে।ছেলেটা মজারও খুব যেকারো মন ভালো করার জন্য তার বস্তাপঁচা জোক্স গুলোই যথেষ্ট। রোশানি আর কিছু না ভেবে কলটা রিসিভ করল
~ কী রে রুশা,তোকে আমি বিকেল বেলা কল দিলাম।ধরলি না কেন?এতক্ষণ কোথায় ছিলি তুই?( অনিক)
~ আরে বন্ধুদের সাথে ছিলাম লাইব্রেরিতে ফোন সাইলেন্ট করে ব্যাগে রেখেছিলাম তাই তোর কলটা দেখিনি। বাসায় আসলাম একটু আগে এখনই ফোন দিতাম তোকে।( রোশানি)
রোশানির কথায় যেন অনিক হাফ ছেড়ে বাঁচল
~ ওহ্ তাই বল।আমি তো ভাবলাম না আবার কোনো সমস্যা হলো তোর। ( অনিক)
~ আরে না না তেমন কিছুই না আমি একদম ঠিক আছি,সুস্থ আছি,বাসায় আছি। আপনাকে চিন্তা করতে হবে না জনাব( রোশানি)
রোশানির কথায় ওপাশের অনিক হোহো স্বরে হেঁসে উঠল,রোশানিও তার হাসির শব্দে তাল মিলিয়ে হাসলো। তারপর হঠাৎ অনিক বলল
~ এই শোন কাল তো শুক্রবার তোর বন্ধ আছে চল না আমরা কোথাও দেখা করি সময় নিয়ে তোকে কিছু জরুরি কথা বলার আছে আসলে।( অনিক)
~ কী জরুরি কথা এখনই বল না।আমি শুনছি তো।( রোশানি আগ্রহ নিয়ে বলল)
~ আরেহ না এই কথা ফোনে বলা যাবে না।তুই কাল আয় তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।( অনিক)
অনিককে এমন তড়িঘড়ি করে কলটা কেটে দিতে দেখে রোশানি অবাক হলো কিছু বলার সুযোগ ও পেলো না।ছেলেটার মাঝে চঞ্চলতাও বেশি আবার আজ তার কন্ঠে উত্তেজনাও ছিল।সব মিলিয়ে রোশানি যেন কিছু একটা আন্দাজ করতেই পারছে তবুও অপেক্ষায় রইল আগামীকালের সারপ্রাইজের।

সন্ধ্যার পরে বাসার বাহির থেকে একসাথে কয়েকটা সিগারেট ফুঁকে বাড়ি ফিরল আকাশ।তার এই সিগারেটের নেশাটা অতিসম্প্রতি ধরা পড়েছে তবে মেঘলার সামনে প্রকাশ করেনি তা। আবার কত জ্ঞান দেওয়া শুরু করবে।যথারীতি বাড়ির কলিংবেলটা বাজানোর পরও কেউ না খুলাই সেই দরজা খুলল কেননা দরজা ভেতর থেকে খিল দেওয়া ছিল না।সব রুমের লাইটও জ্বালানো।বেডরুমে চলে গেলো সোজা দেখতে পেলো বিছানার এক কোণে চাদর মুড়ি দিয়ে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে আছে।আকাশ সেদিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করেই বলল
~ কেউ বোধহয় আজ সকালেই বলেছিল ইতিহাস পাতিহাঁসের রেকর্ড ভেঙে অসাধ্য সাধন করব।তা এভাবে সাঝের বেলা পড়াশোনার সময়ে ঘুমিয়ে কী করে কোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় আমার আসলে জানা নেই। তুমি যদি জানাতে মেঘলা।( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলা কেবল ধীর স্বরে বলল
~ আপনি এসেছেন মাস্টারমশাই? এই সন্ধ্যাবেলা কোথায় ছিলেন?আজ তো আপনার অফিস ছিল না।এমন সময়ে বাসায় একা আমায় না ফেলে গেলেও পারতেন।( মেঘলা)
~ তা,আমি বাসায় থাকলে কী তুমি পড়ে উল্টাতে বুঝি দুনিয়া? আসলেই কী তাই?তুমি কেবল আমাকে দেখানোর জন্য পড়ালেখা কর আর অন্যসময় টুংটাং করে বেড়াও?( আকাশ)
আকাশের প্রশ্নে মেঘলা আধো আধো রুগ্ন স্বরে বলল
~ না,না তা নয়। আজ আমার শরীরটা আসলেই খারাপ লাগছে।পায়ের হাঁটু থেকে গোড়ালি পর্যন্ত ব্যাথা করছে।বোধহয় ব্যাথা থেকে জ্বরও এসে পড়েছে। অনেক চেষ্টা করেছি তবুও চোখ দুটো খুলে রাখতে পারছিলাম না।তাই এসে শুয়েছি ঠান্ডাও লাগছে। ( মেঘলা)
মেঘলার কথায় আকাশ হেঁসে বলল
~ হাহা মেঘলা তুমি তো দেখি সেই ছোটবেলায় পড়া ফাঁকি দেওয়ার জন্য যেমন অসুস্থতার অভিনয় করতাম ঠিক তেমনই করছ।তবে তখন তো আমি ছোট ছিলাম এমন বাচ্চামো করলে মানাতো কিন্তু তুমি তো আর বাচ্চা নও বুঝলে তো ব্যাপার টা তাই এই নাটকটা না করলেও পারতে সরাসরি পড়ালেখা করার ইচ্ছে নেই বলে দাও এত অযুহাত, অভিনয়ের কী দরকার বলো?( আকাশ)
আকাশের হাসতে হাসতে চলে গেলো।মেঘলার নাক থেকে ক্রমাগত গরম নিঃশ্বাস নির্গত হতেই লাগল সেই সাথে কাঁপনিও বাড়তে লাগল।একদিকে শারীরিক যন্ত্রণা অপরদিকে আকাশের বলা কথাগুলো মানসিকভাবে যেন তাকে জোড়ালো আঘাত প্রদান করেছে। ভেতর বাহির সকল অস্থিরতা মিলিয়ে তার দুর্বলতা আরো বাড়তেই লাগল।আর সে একটা ভালোবাসার হাতের ছোঁয়ার অপেক্ষায় থাকল,এই বুঝি আকাশ এসে তার পুরুষালী হাতে কপাল ছুঁইয়ে তাপমাত্রা দেখবে,জলপট্টিটা কপালে দিব, পরম ভালোবাসায় মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে। তবে তা তার কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ সারারাত অপেক্ষাতেই কাটল বাস্তবে উদয় ঘটল না আকাশ নামক কোনো ব্যক্তির ভালোবাসার।

চলবে…

#ভালো_থেকো_ভালোবাসা
#১০ম_পর্ব
লেখনীতে ; নাহার _সাইবা

আকাশ যেহেতু বেসরকারি আইটি ফার্মে চাকরি করে তার ছুটির দিন থাকে বৃহস্পতিবার তাই সকলের সাপ্তাহিক ছুটির দিন অর্থ্যাৎ শুক্রবারে তাকে অফিস করতে হয়।তার অফিস আজিমপুরে। নিউমার্কেট এলাকা ফেলে কিছুটা পরেই।নিউমার্কেট এলাকায় এসে বাস থেকে নেমে পড়ল যদিও এই জায়গায় ভিড় বারো মাসই লেগে থাকে তবে আজকে মানুষের ভিড় নয় বরং জটলা লক্ষ্য করল।কৌতুহলের বসে সেদিকে এগিয়ে গেলো,ভিড় ঠেলে সামনে যেতেই চোখ ছানাবড়া!! সবার উৎসাহিত চোখ দুজনের দিকে।একজন তরুণ অপর এক তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে তা নিয়েই বাঙালির আগ্রহ, তবে আকাশ ঝটকা খেলো তখনই যখন সে দুজন তরুণ-তরূণীকে দেখতে পেলো।আরে এ যে তার ছোট ভাইয়ের মতো অনিক তার প্রাক্তন প্রেমিকা রোশানিকে প্রেম নিবেদন করছে!!

~ রুশা, তোর মতো নিঃস্বার্থভাবে কাউকে পূর্বে ভালোবাসতে দেখিনি।তুই একটি অবহেলিত মেয়ের কথা ভেবে যেভাবে নিজের সাত বছরের ভালোবাসার মানুষটাকে ছেড়ে দিতে পারিস সে আর যাইহোক কখনোই ভালোবাসার সাথে বেইমানি করতে পারে না।তোকে দেখে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি ভালোবাসা কতটা পবিত্র। আমি জানি তুই আর যাইহোক কখনোই ভালোবাসাকে অপমান করতে পারবি না।আমার তোর প্রতি ভালোবাসা গুলো সর্বদা সম্মান করবি তার যত্ন নিবি এই আশা নিয়েই আজ আমি তোর কাছে এসেছি।অনুরোধ আমায় খালি হাতে ফিরিয়ে দিবি না।জানি একবার বিচ্ছেদের পর অন্যকাউকে ভালোবাসা কষ্টের। তবে আমায় একটা সুযোগ দে যেভাবে এতদিন বন্ধু হিসেবে পাশে ছিলাম ঠিক একইভাবে ভালোবাসার মানুষ হিসেবে তোর পাশে থেকে তোর জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকতে চাই।কথা দিচ্ছি কখনো তোর অতীতকে টানব না কেননা আমি দেখেছি তোর আর আকাশ দা’র ভালোবাসার সম্পর্ক। তবে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে যেমন সে এখন বিবাহিত ঠিকই তাই আমার মনে হয় তোরও আবার জীবনকে সুযোগ দেওয়া উচিত।বলব না কোনোদিন আকাশ দা’কে ভূলে যেতে তবে বলব আমাকেও অধিকার দে তোকে ভালোবাসার।তোর সকল অনুকূল, প্রতিকূল পরিবেশে পাশা থাকার।আমার বাড়ানো হাতটা কী ধরবে প্রিয়তমা?হতে দিতে আমায় জীবনসঙ্গী? তুই যেমনটা বলবি তেমনটাই হবে, কখনো তোর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে অতিরিক্ত অধিকার,দায়িত্ব দেখাব না।মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তোকে প্রেমিকা বানিয়ে শেষে ছেড়ে দেব না।তুই রাজি থাকলে আমি তোকে যেকোনো পরিস্থিতিতে বিয়ে করতে রাজি আছি। এখন বলব সবটাই তোর বিবেচনার অপেক্ষায় থাকবে।তবে এই অনিক তোর জন্য সারাটি জীবন উৎসর্গ করতেও রাজি।( অনিক)
অনিকের প্রস্তাবে রোশানি বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ল সে কী উত্তর বা জবাব দিবে তার বিপরীতে তাই ভেবে পাচ্ছিলে।কান্না গুলো গলার কাছে আঁটকে আসছিল।অনিক আবারো বলে উঠে
~ তোর ভাবার যত সময় লাগে নে। তবুও বলব খুব ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ আমি কিন্তু তোর জন্য খারাপ নই। ( অনিক)
অনিকের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই একটা জোড়ালো ঘুষি এসে পড়ল নাকে।সে ব্যালেন্স রাখতে না পেরে মাটিতে পড়ে গেলো।রোশানি তো অবাক হয়ে গেলো হুট করে আগন্তুক ভিলেনের আগমনে ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো আকাশ দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে। সে যেন তার ভাবনার অতীত কাউকে দেখল।আর অনিক ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে দাঁড়াতেই আকাশকে দেখে নিজেও বিস্মিত হলো।উপস্থিত সকলেই অবাক হলেও কেউ এগিয়ে গেলো না তাদের মাঝে।আকাশ অনিকের কলার চেপে ধরল দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল
~ আমি তোকে ছোট ভাইয়ের মতো দেখতাম সেই অনুযায়ী স্নেহও করতাম।আর সেই তুই বেইমানি করে এখন আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড কে নিজের পাতা ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছিস??কেন দুনিয়াতে আর কোনো মেয়ে ছিল না?তোর রোশানিকেই কেন প্রপোজ করতে হবে?যেই আমি একটু সরে দাড়ালাম অমনি সুযোগ বুঝে নিজের জায়গা তৈরি করে নিলি অসভ্য। ( আকাশ)
আকাশের কথায় অনিকের মাথায়ও রাগ চড়ে বসল সে তেড়ে গিয়ে বলল
~ কেন তুমি যাকে পাবে না তাকে আরেকজন পাবে না এই নীতি কোথায় আছে?আর নিজে তো ঠিকই বিয়ে করে সেটেল এখন রোশানির ভালো কেউ করলে তাও তোমার সহ্য হচ্ছে না তাই না?( অনিক)
অনিকের কথায় আকাশের রাগের পারদ বেড়েই গেলো।সে রুদ্ধশ্বাস কন্ঠে বলে উঠল
~ দেখ অনিক তুই নিজের সীমার মধ্যে থাক।এমন কিছু করিস না যাতে করে এই ভরা জমায়েতে তোকে আমি চরম অপমান করার জন্য বাধ্য হই।( আকাশ)
এতক্ষণ রোশানি সবটাই চুপচাপ দেখে যাচ্ছিল কিছু বলার বা করার সুযোগ পাচ্ছিল না।এবার অনিক কিছু বলতে যাবে তার আগেই আকাশ আর অনিককে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে সরিয়ে তাদের মাঝে এসে দাঁড়ালো।একবার অনিকের দিকে তাকিয়ে ভ্রুকুচকে আকাশের দিকে তাকালো জিজ্ঞেস করল
~ তোমার সমস্যা কোথায় আকাশ?এখানে অযথা ঝামেলা সৃষ্টি করছ কেন?আর এভাবে অনিককে মেরে তুমি কী প্রমাণ করতে চাইছ?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না তোমার ভাবসাব। ( রোশানি)
আকাশ জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল
~ তুমি আমার সমস্যার কথাটা বুঝতে পারছ না রোশানি?আমি তোমায় ভালোবাসতাম এখনো বাসি কেবল তোমার কথায় আমি তোমার থেকে দূরে সরে গিয়েছি।তাই বলে এই দূরত্বের সুযোগ নিয়ে অনিক কী করে তোমায় প্রেমের প্রস্তাব দেয়?আবার তুমি আমায় জিজ্ঞেস করছ আমি কেন অনিককে মেরেছি!! ( আকাশ)
আকাশের কথায় বিস্ময় তবে রোশানি বিস্মিত হলো না সে স্বাভাবিকভাবেই বলল
~ আমি তো অনিকের কাজে কোনো ভূল দেখছি না।আর তুমি আমায় ভালোবাস কেন এখনো? আমি তো বলেনি তোমায় আমাকে ভালোবাসতে। আমি বলেছি আমায় ভূলে গিয়ে তুমি মেঘলার সাথে সুখে সংসার কর।এখন যদি তুমি আমায় ভূলতে না পারো বা আমায় এখনো ভালোবাস সেখানে তো আমার দোষ নেই।তোমার এই ভালোবাসার দায়স্বরূপ তো আমি সারাজীবন একলা থাকতে পারি না।তোমাকেও পরামর্শ দিয়েছি মেঘলার সাথে ভালো থাক,আর আমাকে ভালো থাকতে দেও সেটা অনিকের সাথে হোক বা অন্যকারো সাথেই।( রোশানি)
রোশানির কথায় যেন আকাশ আরো কয়েক দফা ঝটকা খেলো।সে রোশানিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার চোখে চোখ রেখে বলল
~ তুমি এসব কী বলছ রোশানি?আমি জানি তুমিও আমায় খুব ভালোবাস।আর…আর তু..তুমি এখন আমায় তোমার আর অনিকের মাঝ থেকে সরে যেতে বলছ?( আকাশ)
আকাশের কথায় রোশানি তার থেকে দূরে সরে দাঁড়ালো অতঃপর আকাশের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগল
~ দেখো আকাশ আমি তোমায় আগেও বলেছি এখনো বলছি তুমি বিবাহিত তোমার স্ত্রী রয়েছে তার প্রতি অবিচার কর না।বারবার আমার কাছে ফিরে এসে মেঘলার চোখে আমায় অপরাধী বানিও না।একজন নারীর সংসার ভাঙার মতো অপরাধ আমি করতে পারব না।দয়া করা,দয়া করে বলছি যদি কোনোদিন আমায় এতটুকু ভালোবেসেও থাক ফিরে যাও মেঘলার কাছে তার ভালোবাসাকে সাদরে গ্রহণ কর,দেখবে তুমি তোমার সকল শান্তি তার মাঝেই পাবে।আর আমার জীবনে তোমাকে আমি চাই কী করে বল তো যখন তুমি অপরের স্বামী। আমি কারো কাছ থেকে তার স্বামীকে কেড়ে নিতে পারি না।আবার তোমাকে না পেয়ে একাকী সারাজীবন থাকব বা অন্য পুরুষের সংস্পর্শে আসতে পারব না তেমনটাও নয়।আমি ভালো থাকতে চাই এমন একজনের সাথে যার উপর কারো অধিকার নেই কেবল আমার আছে।( রোশানি)
রোশানির কথা শেষ হতেই আকাশ আঁটকে উঠল
~ তার মানে তুমি অনিকের প্রস্তাবে রাজি? তুমিও তাকে ভালোবেসে ফেলেছ?( আকাশ)
আকাশের কথায় রোশানি এবার অনিকের দিকে ফিরে তাকালো। অনিকেরও জিজ্ঞাসুক চাহনি।রোশানি আকাশ, অনিক দু’জনকে অবাক করে দিয়ে অনিকের একটা হাতে নিজের কোমল হাত সঁপে দিল।শক্ত করে তার হাত অনিকের হাতের মুঠোবন্দি করে অনিকের পাশে দাঁড়িয়ে আকাশের মুখোমুখি হয়ে বলল
~ হুম আমিও অনিককে ভালোবেসে ফেলেছি কারণ তোমার প্রস্থানে ও আমার খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছিল।আমায় ডিপ্রেশন থেকে বেড় করে আনতে ওর ভূমিকা ভোলবার মতো নয়।আমার প্রথম ভালোবাসা যদিও তুমি তাই বলে আমি অন্যকাউকে ভালোবাসতে পারব না এমনটা নয় যেখানে তোমাকে পাওয়ার অধিকার আমার নেই।অনুরূপভাবে তুমিও পারো মেঘলাকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করে আমাকে দেখিয়ে দাও তুমিও তোমার জীবনে সুখী আছ।( রোশানি)
রোশানির কথায় আকাশ আর কিছু বলল না সরে দাঁড়ালো। অনিক আনন্দের সাথে রোশানিকে জড়িয়ে ধরল।রোশানি ও তার আলিঙ্গনে আবদ্ধ হলো।
আকাশ বিকেলের ধূলো উড়ানো রাস্তায় হাঁটছে আর ভাবতে লাগল মনে মনে
” সবকিছুর জন্য ঐ মেঘলা দায়ী।যদি না ও আসত আমার জীবনে তাহলে রোশানি হারাত না আর আজ আমার সামনে দিয়েই অন্য ছেলের প্রস্তাবে সাড়া দিত না।সব দোষ ঐ মেঘলার, ওর আগমনে আমার জীবনটা তছনছ হয়ে গেছে। বহুদিন মানবতার খাতিরে ভালো ব্যবহার করে এসেছি আর নয় এবার ওর জন্য যে পরিমাণ খেসারত আমি দিচ্ছি তা ওকেও দিতে হবে।এবার থেকে শুরু হবে মেঘলার সুদিন!! ”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে