ভালো থেকো ভালোবাসা পর্ব-৫+৬

0
658

#ভালো_থেকো_ভালোবাসা
#৫ম_পর্ব
লেখনীতে;নাহার সাইবা

সকালবেলা ঘুম থেকে জাগতে দেরিই হয়ে গেলো আকাশের,চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসল তারপর যেই ফোনটা হাতে নিল ওমনি দেখতে পেলো সাড়ে নয়টার উপরে বাজে।এক লাফে উঠে দাঁড়ালো, আশেপাশে তাকিয়ে দেখল ঘরে সে একাই।বিছানা গুছানো সে ফ্লোরে। তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো, এক দৌড়ে রুমের এটাস্ট ওয়াশরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে দাঁত ব্রাশ করে নিল।ওয়াশরুম থেকে বেড় হতেই দেখল মেঘলা ভেজা চুলে শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে। আকাশকে দেখে চওড়া হাসি উপহার দিল,আকাশ উপহারটি একপ্রকার প্রত্যাখান করে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ল
~ এত সকাল হয়ে গেল অথচ আমায় ডাকলে না কেন?( আকাশ)
মেঘলা তার কথায় কিঞ্চিৎ অবাকই হলো বটে,তাই সামান্য বিস্ময়ের সাথে বলল
~ আপনি কী আমায় বলেছিলেন সকালে ডাক দিতে?তাছাড়াও আমার প্রতিটি কাজ বা আপনার ব্যাপারে হস্তক্ষেপে তো আপনি বিরক্তই হন বটে তাই আর সকালে জ্বালাতন করিনি।ভালো করেছি না?( মেঘলা)
মেঘলা দাঁত বেড় করে কথাগুলো বলে যত শান্তি পেলে আকাশ ঠিক ততটাই রেগে গেলো তবে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটালো না।মেঘলার দিকে একবার তাকিয়ে চাপা রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলল
~ অকাজের সময় তো ঠিকই জ্বালাও স্ত্রীর অধিকার নিয়ে মানববন্ধন কর,আর এখন আমার উপকারের বেলায় একটু ডেকেও দিতে পারলে না! ঠিক আছে মনে রাখলাম।পরে শোধ তুলে নেব ফাজিল, কুটবুড়ি কোথাকার। সারাদিন আমাকে জ্বালাতন করার জন্য কুটচাল চালো তাতো আমি জানিই আর কাজের সময় দেখাই পাওয়া যায় না।ভালো,খুব ভালো।দিন আমারো আসবে মনে রেখো।( আকাশ)
আকাশ এই বলে গলায় তোয়ালে পেচিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।মেঘলা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে উচুস্বরে বলল
~ এখন কী তবে আপনার রাত চলছে নাকি? যে দিন আসবে?আপনার মতো বদমেজাজিকে কীভাবে সোজা বানাতে হয় এই ঘাড়ত্যাড়া মেঘলার ঠিকই জানা আছে।( মেঘলা)
মেঘলার কথাগুলো আকাশের কানে পৌঁছালেও সে তর্কে জড়ালে না,কেননা এখন যে তাড়াতাড়ি তৈরি হতে হবে এক জায়গায় যাওয়া বাকি!!
মেঘলা মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বিড়বিড় করে বলল
~বদমেজাজী, বকরাক্ষস একটা আমার পাল্লায় পড়েছ এত সহজে তো ছাড়া পাবে না।দেখুন না কী কী হয় আপনার সাথে!( মেঘলা)

আকাশ রেডি হয়ে ডাইনিং রুমে আসতেই দেখতে পেলো মেঘলা হেঁটে হেটে বোয়মের চিড়া খাচ্ছে, তার জন্য কোনো খাবারের সন্ধান করতে পারল না।তাই মেঘলার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
~ আমার ব্রেকফার্স্ট কোথায়?আমি অফিসে যাব তো।এভাবেই কাল ছুটি কাটালাম,আজ এত দেরি লাল কার্ড তো খেয়েই ফেলেছি। তাও তুমি নাস্তা সাজাওনি।( আকাশ)
আকাশের কথায় সাথে সাথেই প্রতিক্রিয়া দেখালো না মেঘলা।আগে নিজের মুখে থাকা চিড়া চিবিয়ে শেষ করল তারপর মুখ খুলল
~ বাসায় গ্যাস আছে নাকি তরিতরকারি আছে যে আপনার জন্য নাস্তা বানিয়ে সাজিয়ে রাখব।আটা,গ্যাস ছাড়া কী হাওয়া দিয়ে রুটি বানাবো নাকি চাল ছাড়া পানি দিয়ে ভাত বসাব কোনটা?( মেঘলা)
মেঘলার কথায় আকাশ আশাহত হলো।
~ তো আগে বলবে না?আমি গতকাল সন্ধ্যায় বেড়িয়ে ছিলাম যা যা লাগত নিয়ে আসতাম।( আকাশ)
আকাশের কথায় মেঘলা মুখ ভেংচে বলল
~ আহারে এসেছে নবাবজাদা!! তা বলি আটা,ময়দা, চাল থাকলেই রান্না হবে?গ্যাসের লাইনের কানেকশন কোথা থেকে আসবে? আপনার প্রেমিকার বাড়ি থেকে উড়ে উড়ে আসবে নাকি?যাইহোক ও-ই বাড়ি থেকে চিড়ামুড়ি এনেছিলাম শুকনো খাবার বলে। বাটিতে দিচ্ছি তাই খেয়ে যান, আমিও তাই খাচ্ছি। ( মেঘলা)
মেঘলার কথায় আকাশ নাক কুঁচকালো অতঃপর বলল
~ না,না লাগবে না সকাল সকাল এই চিড়ামুড়ি খেতে ইচ্ছে করছে না।এসব তুমিই খাও আমি বাহিরে খেয়ে নেব।আর মিস্তিরিকে বলে যাব এসে গ্যাসের চুলা ফিট করে কানেকশন দিয়ে যাবে। রাতে এসে যাতে রান্না থাকে টেবিলে।( আকাশ)
আকাশ এই বলে বেড়িয়ে যেতে নিলে মেঘলা চেচিয়ে উঠল
~ গ্যাস না হয় এলো রান্নার সরঞ্জাম, উপদান গুলো কোথা থেকে আসবে?বাজারই তো নেই বাসায়।( মেঘলা)
মেঘলার কথায় আকাশ বিরক্ত হলো উত্তর দিতে ইচ্ছে না করলেও ছোট করে বলল
~ ঠিক আছে আমি বাজার করে আনলে তবেই রান্না কর (আকাশ)
আকাশ আর দাঁড়ালো না বেড়িয়ে পড়ল।

রোশানির বলা ঠিকানায় এসে পৌঁছালো আকাশ,ফাইভ স্টার একটা রেস্টুরেন্ট।রোশানির নাম্বারে ডায়াল করল তবে রিং হতেই রোশানি কেটে দিল। আকাশ বুঝতে পারল রোশানি কাছাকাছি কোথাও তাই সে রেস্টুরেন্টের ভেতরে গিয়ে বসল।কিছুক্ষণ পরই রোশানির দেখা মিলল,একটা অফ হোয়াইট কালারের কুর্টি পড়ে এসেছে সে।চেহারায় বিস্তর পরিবর্তন। চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে একত্রিত করা,চোখের নিচে কালি পড়েছে,স্বাস্থ্যেরও বেশ অবনতি ঘটেছে । আকাশ উঠে দাঁড়ালো রোশানির দেখায় রোশানি তাকে দেখেও খুব একটা উত্তেজিত হলো না নির্দিষ্ট জায়গায় বসল,আকাশও তার বিপরীতের চেয়ারে বসল।রোশানি তখন থেকেই শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশ তাকে কিছু বলার মতো পাচ্ছে না।রোশানিই জিজ্ঞেস করে বসল
~ আমায় ডেকেছেন কেন?( রোশানি)
রোশানির কথায় আকাশ বিস্মিত হলো। সে হতভম্বের ন্যায় বলল
~ আপনি!! তোমার আর আমার সম্পর্কটা একটা দূর্ঘটনায় নষ্ট হয়ে গেলো!! এতটাই পর হয়ে গেলাম আমি? ( আকাশ)
আকাশের কথায় রোশানির মাঝে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো না সে কেবল আকাশের দিকে ফিরে তাকালো,শুষ্ক ঠোঁটে জিজ্ঞেস করল
~ কোনটা দূর্ঘটনা আকাশ?আপনার আকস্মিক বিয়েটা যেটা আপনি নিজ ইচ্ছায় করলেও বলছেন আপনি অসুখী নাকি আমার সাথে আপনার সম্পর্কটা যেটা সেই বিয়েকে কেন্দ্র করে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল?( রোশানি)
রোশানির প্রশ্নে আকাশ চুপ মেরে গেলো,আকাশকে নিরব থাকতে দেখে ভেজা গলায় আঁটকে আটকে বলল
~ চুপ করে মাথা নুইয়ে আছ কেন কাপুরষ? তখন তো বলেছিলি মামা মামীর সিদ্ধান্ত কখনোই ফেলতে পারবে না তাই বিয়েটা করেছ।তাহলে এখন কেন বিবাহিত স্ত্রীর সাথে থাকতে চাইছ না?সুখী করতে পারিনি তোমায়?তাই আবারো পুরনো মানুষের কাছে ফিরে এসেছ?আসলে তুমি জানো কী তোমার অবস্থা এখন ঠিক কী?তুমি দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছ যার জন্য শীঘ্রই তোমার ভরাডুবি ঘটবে।( রোশানি)
রোশানির ঘৃণা মিশ্রিত কথায় আকাশ ব্যথিত হলো,সে কাতর স্বরে বলল
~ বিশ্বাস করো রোশানি তখন ভাবিনি যে এমন একটা বাকে জীবনটা চলে যাবে যেখান থেকে পুনরুদ্ধার অসম্ভব প্রায়।আমি নিজেও বিয়েটা নিয়ে প্রচন্ড অসন্তুষ্ট। তবে আমি মামা-মামীর চাপে ছাড়তেও পারছি না মেঘলাকে আবার তোমায় ছেড়ে স্বাভাবিকভাবে বাঁচতেও পারছি না।তুমি কী বুঝতে পারছ না আমার যন্ত্রণা?( আকাশ)
~ আর তোমার কারণে যে আরো দুজন নারী অসহ্য মানসিক শারীরিক যন্ত্রণায় আছে তার কী খেয়াল আছে?সবসময় নিজেরটা এত বেশি বুঝ কেন আকাশ?নিজের স্বার্থ উদ্ধার করতে না পারলে তুমি কেমন যেন পাগলের মতো কর!! কেন তোমার অবশ্যই উচিত ছিলে ভেবে কাজ করা,কাজ করে ভাবা নয়।তবে তুমি তাই করছ আফসোস ছাড়া জীবনে আর কিছুই জুটবে না তোমার।( রোশানি)
রোশানির কথাগুলো আকাশের বুকে তীরের ন্যায় বিঁধল। সে যেই রোশানির হাতটা নিজের বুকে চেপে ধরে কিছু বলতে যাবি অমনি রোশানি সাথে সাথে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল।উঠে দাঁড়ালো তারপর চোখমুখ মুছে আকাশের দিকে তাকালো দৃঢ় কন্ঠে বলল
~ আমি তোমার কথায় এখানে আসতে রাজি হয়েছে বিশেষ কারণে।তোমায় জরুরি কিছু কথা বলার জন্য যা বলা বাকী রয়েছে। আর তোমার সাথে কথা বাড়াবো না,যা বলার বলেই চলে যাচ্ছি। শুনে রাখ জীবনে যা ঘটে ভালোর জন্য। আজ হয়ত আমার মতোই তুমি আমাকে হারিয়ে আফসোস করছ,তবে মনে রেখো যদি তুমি মেঘলাকে ভালোবাসতে পারো তবে এই আফসোস আর থাকবে না।কেননা দূর্ঘটনা আর যাইহোক বিয়েটা হয়ে গেছে।তোমার লাইফে আমার কামব্যাক ইম্পসিবল, তাই সেই চিন্তা থেকে দূরে থাক।আর হ্যা আমি এতটাও খারাপ মেয়ে নই যে আরেক মেয়ের সংসার ভাঙব।তাই আমিও চাই তুমি মেঘলাকে সুখী রাখ,নিজেও সুখে থাক।আমাকে ভূলে যাও,আমিও ভূলে যাব তোমায়।আরেকটা কথা মনে রেখো ভালোবাসা শুধু পূর্ণতার জন্য নয়, কিছু সময় অপূর্ণতাও সুন্দর হয়।( রোশানি)
রোশানি আর দাঁড়ালো না বেড়িয়ে পড়ল।আকাশ বসেই রইল সেখানে আর উদাস পানে তাকিয়ে রইল রোশানির যাওয়ার দিকে।
দুনিয়াটা কী অদ্ভুত তাই না?হয় যাকে আমরা ভালোবাসি সে আমায় ভালোবাসে না,আবার কখনো একে অপরকে ভালোবেসেও পাওয়া হয় না।বাস্তবতার কাছে এভাবেই পরাজয় ঘটে কিছু ভালোবাসার।থাক না কিছু ব্যর্থতা, শুরু হোক সেখান থেকেই নবসূচনা।শূণ্যতাই না হয় দিল উপহার পূর্ণতা!!

চলবে….

#ভালো_থেকো_ভালোবাসা
#৬ষ্ঠ_পর্ব
লেখনীতে ;নাহার সাইবা

ঘড়ির কাটায় দশটা বেজে গেলেও আকাশের আসার নাম নেই।এদিকে মেঘলার ঘুম,ক্ষুধা সহ পায়ের অসহ্যকর ব্যাথায় দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থা নেই।এতক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করে আর পারল না দাঁড়িয়ে থাকতে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।পায়ের নিচে উপরে দুটো বালিশ দিয়েও যন্ত্রণা কমে না হাঁটুর সন্ধিস্থানটা সামান্য ফুলেও রয়েছে কোমড় থেকে নিচ পর্যন্ত সবটা অবশ মনে হচ্ছে।বাসায় ঔষধ ও নেই যে ব্যাথার ঔষধ খেয়ে একটা ঘুম দিবে তাহলে হয়ত শান্তি পেত। তাই নিরুপায় হয়ে বিছানার উপর ছটফট করতে লাগল।

প্যাকেটের লাস্ট সিগারেটটা লাইটারের সাহায্য জ্বালালো,অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তায় চলতে লাগল একাকী সিগারেটের ধোঁয়াকে সঙ্গি করে।দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় তিরিশ টার কাছাকাছি সিগারেট শেষ করেছে, ঠোঁটের রং বদলে তামাতে রঙ ধারণ করেছে।ভেসে আসছে নিজের নাকেই এক বিদঘুটে আঁশটে গন্ধ। আকাশ,যেই ছেলেটা বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে পর্যন্ত সিগারেটের সুখটান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিল স্বাস্থ্যের জন্য। আজ হঠাৎ করে কেন যেন এই জিনিসটাকেই বড্ড আপন মনে হচ্ছে। বারবার একই কথা কানে বাজছে রোশানির বলা
” তুমি মেঘলাকে সুখী রাখ,নিজেও সুখে থাক।আমাকে ভূলে যাও,আমিও ভূলে যাব তোমায়।আরেকটা কথা মনে রেখো ভালোবাসা শুধু পূর্ণতার জন্য নয়, কিছু সময় অপূর্ণতাও সুন্দর হয়।”
আচ্ছা রোশানির বলতে যতটা সহজ ছিল মেনে নেওয়া কী ততটাই কঠিন নয়?? ভালোবাসা কী বারবার মানুষ পরিবর্তন করে হয়? একজনকেই সে শুরুতে মন দিয়েছিল তার সাথেই অন্তিম অধ্যায় রচনার ইচ্ছে ছিল তবে তাতো হলই না আজ যেন সেই মানুষটাই তাকে ছেড়ে গেল উপদেশ দিয়ে গেল অপরজনকে ভালো রাখার জন্য। একসময় মনে হয় রোশানি বড্ড স্বার্থপর তা না হলে তার কথাটাও কী একবার ভাবা গেলো না,বিয়ে করে সে যে ভূল করল মাশুল দিতে হবে তবে সারাজীবন? আবার মনে হয় রোশানি মেয়ে কিছুটা স্বার্থহীনই বটে না হলে নিজের ভালোবাসাকে কী কেউ দান করে অপরের ভালোবাসার জন্য নিঃস্বার্থভাবে??তার ক্ষেত্রে হয়ত রোশানি স্বার্থপর,পাষাণী আবার মেঘলার জন্য যেন দয়ালু হাতেম তাই!! তাই সে আকাশকে উৎসর্গ করে গেল মেঘলার হৃদয়ের জাঁহাপনা, বাদশা বানিয়ে।

আকাশ ফ্ল্যাটে পৌঁছে কয়েকবার বেল বাজানোর পরও যখন মেঘলা আসল না,তখন দরজার হ্যান্ডেলটা ঘুরিয়ে বুঝতে পারল ভেতর থেকে লক করা, নিজের পকেটে রাখা চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল।ঘুটঘুটে অন্ধকারে কোনোভাবে এগিয়ে গেলো নিজের রুমের দিকে।প্রথমেই দেখতে পেলো বিছানায় পড়ে আছে একজন নারী নিদ্রিত দশায়।জানালার শিকের ফাঁক দিয়ে আসা চাঁদের আলোয় শ্যাম বর্ণের নারীর মুখটি যেন আরো চিকচিক করছে।মুখে এক অসহ্য যন্ত্রণার ছাপ পড়ে আছে,চোখমুখ কুঁচকানো। নিঃশ্বাসের শব্দ ক্রমেই ভারি হয়ে আসছে।আকাশ তার পাশ ঘেঁষে বসল।কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল আবেগহীন দৃষ্টিতে তারপর কী মনে হতেই ঘন কালো চুলের রাশি ছোঁয়ার এক প্রবল আগ্রহ জেগে উঠল।সে ছুয়ালো তার হাত চুলে, নাক ডুবিয়ে দিল চুলে অতি কৌতুহলে।আচ্ছা এত মিষ্টি কেন চুলের গন্ধ, পরক্ষণেই মনে হলো চুলের কী আবার ঘ্রাণ,স্বাদ হয় নাকি সবটাঔ স্যাম্পুর ক্যারিশমা।তারপর উঠে এলো মেঘলার উপর থেকে অতি সাবধানে যাতে মেঘলার ঘুম না ভাঙে।দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল মেঘলার দিকে ভাবতে লাগল রোশানির বলা কথাগুলো সন্ধি করতে লাগল কিছু বিষয়ের।

” আসলেই কী আমি পারব রোশানির কথামতো মেয়েটার সাথে থাকতে?পারাটা কী এতই সহজ একজনকে নিয়ে সাজানো সপ্ন চুরমার করে অপরকে নিয়ে সংসার সাজানো। তবে রোশানি যদি তার কথামতো আমার জীবনে না আসে তবে কী করব আমি?চিরকুমার রয়ে যাব?আমিও ভালোবাসতে চাই আমার প্রতি কারো ভালোবাসা গুলোকে।কেন আমার জীবনটাকে এলোমেলো করে দিলে ভগবান?? সেই ছোটবেলা থেকে আপনজন হারা ছিলাম।নিজের জীবনে যখন কেউ ছিল না,ভালোবাসার মতো তখন এসেছিল রোশানি,তবে তার ভালোবাসার প্রতিদানও দেওয়া হলো না মেঘলা মেয়েটার জন্য। আর রোশানিও হয়ত আসবে না তার জীবনে ফিরে ,তার মতো সুন্দরী, স্মার্ট,সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে বরাবরই তার থেকেও ভালো কাউকে ডিসার্ভ করত তবুও চেয়েছিল আকাশের শেষ বয়সের সঙ্গিনী হতে। তবে সবই যে বিধাতার খেল।আমি আজ অনিশ্চয়তার দোলাচালে দুলছি কবে এই অনিশ্চয়তা হতে মুক্তি পাব উপরওয়ালাই জানেন ভালো হাহ!!

আকাশের আক্ষেপ দায়ক কথাগুলোর শেষে নির্গত হলো এক দীর্ঘশ্বাস যার মাধ্যমে শুরু হলো তার অপেক্ষা জীবন নামক অধ্যায়ে নির্দিষ্ট পথ লাভের অপেক্ষা।

কয়েকদিন পর নিজেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর প্রয়াসে বেড়িয়েছে রোশানি বাড়ির গাড়ি করে কিছু শপিং এর জন্য সামনে কাজিন এর বিয়ে।তাছাড়া সে নিজেকে যতটা মানুষের ভিড়ের মাঝে রাখবে তার ততটাই লাভ হবে,একাকীত্ব তাকে আরো ঠেলে দিবে অন্ধকারে তার থেকে একটু হলেও জীবনকে সুযোগ দেওয়া উচিত। কারণ সে জানে যে জীবন থেকে চলে যায় অন্যকারো হয়ে তাকে পাওয়াটা অন্যায় বা চাওয়া টাও পাপ।তবে তাকে হারিয়ে জীবনভর আফসোস করাও বোকামি। কেননা জীবনটা যে একান্তই আমাদের একার।নিউমার্কেটের সামান্য দূরে গাড়িটা পার্ক করতে বলে নেমে গেলো সে।রাস্তায় পার হয়ে মার্কেট চত্তরে ঢুকে পড়ল।চারদিকে নানা দোকানের পশরা,এই বিকেলে প্রচুর মানুষের ভিড় যদিওবা কোনো উৎসবের মৌসুম নয় তবুও নানান শ্রেণির উপচে পড়া ভিড়ে নিজেকে মিশিয়ে নিল।প্রথমেই জুয়েলারি শপ গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল।তারপর কাপড়ের দোকানে গিয়ে ঢুকল।দেখতে লাগল জামাকাপড় কোনটাই মনমতো হচ্ছে না সবগুলোই হাত বুলিয়ে রেখে দিচ্ছে। হঠাৎ নজর গেলো একটা ওড়নার দিকে, হাতে নিয়ে দেখল টিস্যু কাপড়ের রংটাও সুন্দর। যখন সে ওড়না টায় মনোনিবেশ করেছিল হঠাৎ তার নাম ধরে কেউ ডাকল
~ আরে রোশানি যে!!
নিজের নাম ধরে কাউকে ডাকতে শুনে মনোযোগ নষ্ট হলো,সে আশেপাশে তাকালো যে ব্যক্তি তাকে ডেকেছে তার সন্ধানে। খোঁজ ও পেল তার আরে এই যে আকাশের রুমমেট অনিক!! অনিকের চোখেমুখে হাসির ঝিলিক, এগিয়ে এলো দ্রুততার সাথে রোশানির দিকে
~ আপনি এখানে!! আর আমি আপনাকে গত সপ্তাহ ধরে খুঁজছি। এ যে দেখি নিজ থেকেই এসে ধরা দিলেন।তা বলুন কেমন আছেন?আর আমায় চিনতে পেরেছেন তো?( অনিক)
রোশানি মৃদু হাসল তারপর বলল
~ চিনব না কেন?আপনি তো আকাশের রুমমেট ওখানে গেলে প্রায়ই দেখা হত।ভালো আছি আমি আপনি কেমন আছেন?( রোশানি)
অনিক মাথা চুলকালো তারপর রোশানির দিকে তাকিয়ে বলল
~ আমি তো ভালোই আছি তবে আপনার থেকে কিছু জানার আছে আমার।( অনিক)
~ জ্বি বলুন না কী জানতে চান?( রোশানি)
~ আসলে আকাশ গত তিনদিন আগে হুট করেই রুম ছেড়ে দিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে গেলো তখন আমি ফ্ল্যাটে ছিলামও না,পরে ফোন দিলাম ধরল না।এভাবেই একসপ্তাহ ধরে ও সবসময়ই বাহিরে বাহিরে থাকত।হয়েছে টা কী ওর?হঠাৎ করে মেস ছেড়ে দিল এই ব্যাপারে কিছু জানেন আপনি?( অনিক)
আকাশের প্রসঙ্গ উঠায় রোশানির মনটা খারাপ হয়ে গেলো তবুও যতটা সম্ভব নিজেকে সামলে বলল
~ কেন আপনি জানেন না আকাশের বিয়ে হয়ে গিয়েছে? ও জানায়নি? বউ নিয়ে নতুন বাসায় উঠেছে ওরা।( রোশানি)
রোশানি ঠোঁটে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে কথাগুলো বলল,আর অনিকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।সে হতভম্ব হয়ে গেল।নিজেকে ধাতস্থ করতেই লেগে গেলো কয়েক সেকেন্ড।
~ মা..মানে এসব কী বলছেন আপনি??আকা.শ তো আপনাকে ভালোবাসত তাহলে আরেকজনকে কী করে বিয়ে করবে?আর আপনি তা করতেই বা দিবেন কেন?( অনিক)
~ কেন আমি তাকে বাঁধা দিব বিয়েটাতে,বরং তাকে উৎসাহিত করেছি স্ত্রীকে নিয়ে ভালো থাকতে। আর সেও ইচ্ছা থেকে করেনি মামা-মামীর চাপে পড়েই করেছে তবে তাতে আমার কষ্ট নেই।যেই মামা-মামী তাকে এতটা বড় করল তাদের ভালোবাসার এতটুকু প্রতিদান তো সে দিতেই পারে। কী বলুন?( রোশানি)
রোশানিকে এতটা কষ্টের মাঝেও হাসতে দেখো বিস্মিতই হলে বটে অনিক। সে চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে বলল
~ তাহলে আপনার? আপনার কষ্ট হচ্ছে না?আপনার সাথে কীই-বা হবে?( অনিক)
~ আমার সাথে আবার কী হবে?আমি আগে যেমনটা ছিলাম তেমনটাই থাকব,কেবল একজন মানুষ আমার জীবনে অনেকটা প্রভাব বিস্তার করত সে আর থাকবে না প্রভাব খাটানোর জন্য এই যাহ!!( রোশানি)
রোশানির উত্তরে অনিক বলার মতো কিছু পেলো না,সে কেবল স্তম্ভিত হত এত কিছু ঘটার পরেও একটা মেয়ে কী করে এতটা স্বাভাবিক থাকতে পারে তাই ভেবে।রোশানি অনিকের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেঁসে বলল
~ আজ তাহলে আসি পড়ে কথা হবে দেখা হলে।( রোশানি)

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে