“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-১২)

0
1397

“ভালোবাসার প্রান্ত”(পর্ব-১২)

আমাদের দিনগুলো আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল সেই আগের মত।
সকালে সে অফিসে বের হবার জন্য রেডি হচ্ছে। আমি তার ঘড়ি ওয়ালেট কলম সব এগিয়ে দিয়ে তার শার্টের বোতাম লাগাতে গিয়ে হাসলাম। কেন হাসলাম তা আমি নিজেও জানি না। কারণ খুঁজে না পেয়ে আরও হাসি পেলো। দিন দিন আমি বোধহয় পাগল টাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার হাসি দেখে সে থমকে গিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। বুঝলাম তীর বিঁধেছে ডাকাতের বুকে। মনে মনে খুব খুশি হলাম। আমার ইচ্ছে করে হাসি দিয়ে তাকে আটকে রাখতে। কীসের এত অফিস টফিস হুম? লেখাপড়া আর চাকরি বাকরি মানুষের জীবনটাই নষ্ট করে দিলো। জীবনের কত সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত মানুষ নষ্ট করে অফিসের চেয়ারে বসে আর স্কুল কলেজের বেঞ্চে বসে। আমার তেমন ক্ষমতা থাকলে স্কুল কলেজ অফিস আদালত নিষিদ্ধ করে দিতাম। আমার বরটা তাহলে সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে থাকতো। কতই না ভালো হতো! কোন হতচ্ছাড়া যে এই লেখাপড়া আবিষ্কার করেছে, তাকে সামনে পেলে মরিচ থেরাপি দিতাম আর বলতাম, কিরাম লাগে রে হতভাগা? কোটি কোটি মানুষের জীবন তুই নষ্ট করেছিস। এখন দেখ মরিচ থেরাপির স্বাদ কেমন!
আমি সীমান্তর চোখের দিকে তাকিয়ে অতল গভীরে ডুবে গেলাম।
সে বলল-
__তোমার হাসি দেখে সেই প্রথম দিনের মতোই ফিদা হয়ে যাই আমি, কী করি বলো তো সোনাবউ?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



আমি ডোন্ট কেয়ার মুখ করে বললাম-
__আরো ফিদা হয়ে যাও। কে বারণ করেছে?

সে দুষ্টুমির চোখে তাকিয়ে বলল-
__সব ষড়যন্ত্র, আমি সব বুঝি। গুন্ডী একটা!

কিছুই জানি না এমন ভান করে বললাম-
__কী ষড়যন্ত্র করলাম?

__এই যে আমি অফিস যাবার আগে তুমি এখন কেন এত হাসছো সেটা কী আমি বুঝতে পারছি না ভেবেছো?

আমি নির্দোষ মুখভঙ্গি করে বললাম-
__কেন হাসছি?

__আমাকে ঘায়েল করে আটকে দেবার জন্য।

__কে বলেছে? মোটেও না।

__আমি বলছি। মোটেও হ্যাঁ।

আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম-
__বয়েই গেছে আমার তোমাকে আটকাতে। আমার কত কাজ আছে জানো? এখনি আমার কিচেনে যেতে হবে।

__জানি তো কত কী কাজ আছে মহারাণীর।

__কী কী জানো?

__আমি ওটিতে ঢুকার পর থেকে কিছুক্ষণ পর পর তুমি মেসেজ করতে শুরু করবে। আর কী কী মেসেজ করবে সেটাও জানি।

আমি লাজুক চোখে তাকিয়ে বললাম-
__কী কী মেসেজ করবো?

__লিখবে- “আমার এটার পিপাসা পেয়েছে, ওটার পিপাসা পেয়েছে।”
লিখবে- “তোমার পেছনে দাড়িয়ে আছি একটু পেছন ফিরে তাকাও সুয়ামী।”
লিখবে- “বাড়ি ফিরবে কখন?”
লিখবে- “বউকে ভুলে গেলে চলবে?”
লিখবে- “তোমায় মিস করে করে শেষ হয়ে যাচ্ছি ডাকুরাজ।”

এই ডাকাত তো দেখছি সব ফাঁস করে দিচ্ছে। কী লজ্জার কথা! মেসেজ করি ঠিক আছে, তাই বলে এমন করে বলতে হবে?
আমি মুখ ভেংচি কেটে বললাম-
__একদিন লিখেছি বলে রোজ এসব লিখবো নাকি হুহ?

__তুমি তো এসব বছরের পর বছর ধরে লিখে আসছো। আরও কত কিছু লেখো। দাঁড়াও মনে করে বলছি।

আমি হাত দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে বললাম-
__এই চুপ, আর বলতে হবে না।

সে আমার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল-
__কেন? আর গুলোও বলি? সারাদিনে আমার বউ কী কী কাজ করে সেগুলো বলতে দাও সোনা!

আমি লজ্জা লুকিয়ে বেশ ভাব নিয়ে বললাম-
__আমার বরকে আমি মেসেজ করি তাতে পড়শীদের কী আর তোমারই বা কী? তুমি নিজের কাজ করো।

__কিছু না তো, আমার কী হবে? এই আমার লেট হয়ে গেল। ঘরে বখাটে বউ থাকলে অফিসে লেট হবেই। এই যে এখনও আমাকে আটকে রেখেছো। ছাড়ো বলছি ছাড়ো!

আমি তার কথা শুনে টাস্কিত হলাম। সে এমন ভাবে ছাড়ো ছাড়ো বলছে যেন আমি তাকে জড়িয়ে ধরে আছি। আমি হতবাক চোখে তাকিয়ে বললাম-
__ও মোর খোদা! তোমায় আমি বেঁধে রেখেছি নাকি? হ্যালো সাহেব আপনার আর আমার সামনে এক হাত দূরত্ব, সো ছাড়তে বলার কোনো মানেই নেই।

সে এদিক ওদিক তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল-
__ওহ তাই তো! আমি ভেবেছি তুমি আমাকে ধরে রেখেছো।

আমি মুখ ভেংচিয়ে বললাম-
__বয়েই গেছে আমার তোমার মতো ডাকুরাজকে ধরে রাখতে হুহ।

__কার সাথে কথা বলছো তুমি সোনাবউ? আমি কখন তোমায় ধরে রাখতে বললাম?

আমি চমকে উঠে সরে দাঁড়ালাম। তার দিকে তাকিয়ে দেখি সে হতবিহ্বল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই রে এতক্ষণ ধরে আমি কল্পনায় ওর সাথে কথা বলছিলাম? আমি কী সত্যিই পাগল হতে চলেছি? বেবি কন্সিভ হলে কী মেয়েরা এমন আধ পাগলি হয়ে কল্পনায় কথা বলে? আমি আহত চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম-
__কী বলেছি? কী কী শুনেছো?

__বললে, “বয়েই গেছে আমার তোমার মতো ডাকুরাজকে ধরে রাখতে।” তারপর মুখ ভেংচি কাটলে।

যাক বাবাহ, তাহলে সব সে শোনেনি। থ্যাংকস গড! সে আমার কাছে এগিয়ে এসে আমার হাতে টাই ধরিয়ে দিয়ে বলল-
__তোমার কী দিন দিন মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে? একাই কথা বলে চলেছো। কী হয়েছে?

আমি হুট করেই চুপসে গেলাম। কেন জানি আমার মনটাও খারাপ হয়ে গেল। আমি টাই বেঁধে দিতে দিতে বললাম-
__কিছু না।

সে দুষ্টুমির চোখে তাকিয়ে বলল-
__আমার বউ বোধহয় চাইছে আমি আজ অফিসে না যাই।

আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়ে বললাম-
__জানি না।

__না জানলে হবে কী করে?

__তাও জানি না।

__তাহলে আমাকে আটকে রাখার কথা একা একা কেন বলছিলে?

হঠাৎ আমার খুব অভিমান হলো। অভিমানে চোখে জল চলে এলো। সে আর আমার হাসিতে ঘায়েল হয় না। আগের মতো আমাকে ভালোও বাসে না। আমি বোধহয় সত্যিই পুরোনো হয়ে গেছি। আমার হাউ হাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
আমার চোখে জল দেখে সে আরও অবাক হয়ে বলল-
__কী হয়েছে তোমার সোনাবউ? একটু আগেই তো সুন্দর করে হাসছিলে। হঠাৎ কী এমন হলো যে, হাসি কাঁন্নায় রূপান্তরিত হলো?

আমি কাঁন্না জড়ানো কন্ঠে বললাম-
__তুমি একটা নিষ্ঠুর পাষাণ হৃদয়হীন। আমি পুরোনো হয়ে গেছি তাই তুমি আমাকে আর ভালোবাসো না।

কথাগুলো শুনে সে হাবার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।


নাস্তা রেডি করছি সে নাস্তা করেই বের হবে। দশ মিনিট পরে সে ডায়নিং এ এলো। তাকে দেখে আমার চোখ কপালে উঠলো। সে ড্রেস চেঞ্জ করে এসেছে। মানে সে অফিসে যাবে না। হঠাৎ তার আবার কী হলো? সে চেয়ার টেনে বসতেই নানান এসে বসলেন। তার দিকে তাকিয়ে নানান বললেন-
__আজ তোমার অফিস নেই?

সে নাস্তার প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল-
__না

__ছুটি নিয়েছো?

সে মুখ না তুলেই বলল-
__হ্যাঁ।

নানান অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন-
__হঠাৎ এই আকস্মিক ছুটির কারণ?

সীমান্ত আমার দিকে তাকিয়ে নানানকে বলল-
__এক পাগলি নাকি ঘুরতে যাবে।

মনে মনে বললাম, এমা কী ডাহা মিথ্যা বলছে ডাকাতটা! আমি কখন ঘুরতে যেতে চাইলাম? কিন্তু সে কী সত্যিই আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে?
নানান দুষ্টুমির চোখে তাকিয়ে বললেন-
__শুধু শুধু অফিস কামাই করে সরকারকে ফাঁকি দেয়ার দরকার নেই। কত রোগী তোমার অপেক্ষায় বসে আছে। তুমি হসপিটালে যাও আমি পাগলিকে ঘুরিয়ে আনবো। জাস্ট আমি রঙিন একটা পাঞ্জাবি পরবো শুধু।

সীমান্ত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল-
__নিজের বউ নাই আপনার?

নানান হতাশ সুরে বললেন-
__আছে তো এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা।

সীমান্ত গম্ভীর স্বরে বলল-
__তাকে নিয়েই ঘুরতে যান। আর অন্যের বউকে নিয়ে ঘুরার স্বপ্ন দেখা ছাড়েন। এসব ভালো কথা নয়।

__সে তো আমার ছোট রাণী। পর কেউ তো নয়। আমারও অধিকার আছে। আচ্ছা আমাদের সাথে তোমাকেও নেবো, তুমি রাগ করো না।

কথাটা বলেই নানান ঠোঁট টিপে হাসলেন। সীমান্ত অবাক হয়ে বলল-
__মানে?

__মানে আমরা তিনজন যাচ্ছি।

সীমান্ত রাগ করে বলল-
__আমি যাব না কোথাও। নাস্তা শেষ করে অফিসে যাব।

নানান মুচকি হেসে বললেন-
__এই হাফ প্যান্ট পরেই যাবে অফিসে?

সীমান্ত নিজের প্যান্টের দিকে তাকিয়ে নিয়ে তারপর অবাক চোখে নানানের দিকে তাকিয়ে বলল-
__এটা কোয়াটার প্যান্ট। আপনি আর আপনার ছোট রাণী এটাকে হাফ প্যান্ট কেন বলেন বুঝি না!

__ঐ একই কথা। হাফ আর কোয়াটারের মধ্যে মাত্র কয়েক ইঞ্চির ব্যবধান।

__আজব মিল আপনাদের দু’জনার মধ্যে। আমি রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে তারপর অফিসে যাব আপনি চিন্তা করবেন না।

__আচ্ছা যাও। আমি ছোট রাণীকে নিয়ে ঘুরতে যাব।

সীমান্ত আর কোনো জবাব দিলো না। নানুন এসে নানানের কাছে দাঁড়িয়ে রাগ দেখিয়ে বললেন-
__ওরা একটু নিজেদের মতো করে ঘুরবে। তুমি কেন সবসময় ওদের পিছু নিয়ে থাকো? তোমার লজ্জা করে না?

নানান কিছুটা বিস্ময় আর কিছুটা নির্দোষ মুখভঙ্গিমায় বললেন-
__ লজ্জা করবে কেন? আমি কী তাদের বেডরুমে উকি দিচ্ছি নাকি? আর পিছু নেয়ার এই মজা তুমি বুঝবে না। নাতি আমার ডুবে ডুবে জল খেয়ে বিয়ে করেছে। বলে কী না, এই মেয়ে ছাড়া আমি জীবনে বিয়েই করবো না। আমি তার ডুবে ডুবে জল খাওয়ার সময় একটুও টের পাইনি। এখন আমি ওদের সব জল খাওয়া দেখব। ডিসিশন ফাইনাল।

নানুন রেগে উঠে বললেন-
__তোমার আসলেই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তোমাকে পাগলা গারদে রেখে আসা উচিত।

নানান মুচকি হেসে নানুনের দিকে তাকিয়ে বললেন-
__তোমাকে সাথে নিচ্ছি না বলে জ্বলছো নাকি? পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি।

নানুন রাগ করে সরে গেলেন।
নানান আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
__সবার পোড়া মনে ঘি ঢেলে রেডি হও ছোট রাণী। আমরা আজ ঘুরতে যাব। আর ওদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে অঙ্গার করবো।

আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। নানান খেয়েই চলেছেন। সীমান্ত খাওয়া শেষ করে রুমে চলে গেল। আর আমাকে চোখের ইশারায় রুমে ডেকে গেল। এই অবেলায় রুমে ডাকলো কেন?

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আসছে…..
Written by- Sazia Afrin Sapna

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে