বিড়াল মারার গল্প

0
1087

রফিক মশারীর ভেতরে বসে ইতি উতি তাকাচ্ছে।

নীলা কিছুক্ষন আগে তাকে শাসিয়ে গেছে

একটা মশাও যেনো মশারীর ভেতরে না থাকে; প্রতিদিন মশারা কানের কাছে গুনগুন করে; বলি চোখের মাথা খেয়েছো নাকি মশা খুজে পাও না। নাকি স্ত্রী মশাদের গুনগুন তোমার মধুর লাগে? ভাবো কতগুলো মেয়ে তোমাকে ঘিরে নাচছে এবং উলালা উলালা গাচ্ছে;

রফিক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, কোন দুঃখে বাসর রাতে গদগদ হয়ে নীলাকে বলতে গিয়েছিল মশারী খাটাতে কাউকে আবার লাগে নাকি; সেই ভুলের মাশুল এখনো দিয়ে যেতে হচ্ছে।

বাসর রাতে সবাই বিড়াল মারার কথা বলে কিন্তু এই ব্যাপারে কোন ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা নাই। রফিকের যদি কখনো টাকা হয় তাহলে বাসর রাতে বিড়াল মারার ১০১ টি উপায় নামক একটা কোর্স করাতো। ফেসবুকে এই নামে একটা গ্রুপ খুলতো; সেই গ্রুপের এডমিন হতো রফিক;

রফিক বহুবার নীলাকে মশারী চেঞ্জ করার কথা বলেছে; গোলাপি রঙের মশারী তার মধ্যে বড় বড় চকলেট কালারের ফুল ফুল ডিজাইন; মশাগুলো চকলেট কালারের মধ্যে হারিয়ে যায়। এটা নাকি পীরের ফু দেয়া মশারী; নীলার গ্রামের বাড়ির এক মামা দিয়েছে; বিয়ের দিন রফিককে কানে কানে বলে জামাই তেমন কিছু দিতে পারি নাই কিন্তু যা দিয়েছি তা তোমাকে প্রশান্তি দিবে; আরাম দিবে; তাড়াতাড়ি নাতি নাতনীর মুখ দেখতে চাই।

রফিক মনে মনে খুশী হয়ে যায়। প্রশান্তি, আরাম!! আহা!! গ্রামেও মানুষ উপহার হিসেবে এসি দেয়??? কি উন্নত গ্রাম, কি পয়সায়ালা মামা। তার আবার কি বিনয়; রফিক একবারের জায়গায় দুইবার কদমবুসি করে। বাসায় এসে দেখে চকলেট কালারের ফুল ফুল মশারী। সেই থেকে গ্রামের মানুষের সরলতার উপর রফিকের মন উঠে গেছে।

মশাদের নাতি পুতি, সেই নাতি পুতির ঘরের নাতি পুতি হয়ে গেছে কিন্তু রফিকের কোন খবর নাই। সারারাত কাটে মশা মারতে মারতে;

রফিক ভাবে নীলা আসতে আসতে ফেসবুকে বাসর রাতে বিড়াল মারার ১০১ টি উপায় গ্রুপ খুলে ফেলবে কিনা!

বিড়াল মারার প্রথম উপায়; ছেলে দুই হাতে চার/পাঁচটি আংটি, গলায় তিন চারটা চেইন পড়ে বাসর ঘরে ঢুকেই একটা সিগারেট ধরাবে; সবচাইতে ভালো হয় যদি হুইস্কির বোতল নিয়ে ঢুকতে পারে; সত্যিকারের হুইস্কি না; হুইস্কির বোতলে ফান্টা থাকবে; ছেলে কিছুক্ষন পর পর আয়েশ করে চুকচুক করে ফান্টা খাবে এবং বাকের ভাই স্টাইলে গান গাইতে থাকবে “হাওয়ামে উড়তা যায়ে”। মেয়েটি ভয়ার্ত চোখে ছেলেটার দিকে তাকাবে; ছেলেটা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলবে নো চিন্তা, ডু ফূর্তি; আগে এইগুলো প্রিয় ছিল, এগুলোতে নেশা ধরতো; এখন থেকে এইগুলো বাদ; তোমাতে আমার নেশা ধরবে; মেয়ে ভয়ে মশারী খাটানোর কথা, আগে কয়টা প্রেম করছো আমার মাথায় হাত দিয়ে বলো, তোমার মা প্রিয় নাকি আমি প্রিয় সব ভুলে যাবে;

বিড়াল মারার দ্বিতীয় উপায়; ছেলে বাসর ঘরে ঢুকেই বাথরুম থেকে এক বালতি পানি নিয়ে আসবে; তারপর কিছুক্ষন বালতির মধ্যে মাথা ডুবিয়ে রাখবে; বালতি থেকে মাথা উঠিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রহস্যময়ী হাসি দিবে; মেয়ে ভয়ার্ত চোখে ছেলেটার দিকে তাকাবে; ছেলের চোখ টকটকে লাল, ফিসফিস করে বলবে পূর্ণিমার রাতে আমাকে জীনে ধরে; আমার এই জীনের ঠাণ্ডার সমস্যা আছে; পানিতে মাথা ডোবালে সে আর কাছে ভিড়ে না। আমি খুব দুঃখিত; আজকে পূর্ণিমার রাত; তোমার সাথে আমার গুটুর গুটুর গল্প করার কথা তা না করে আমি পানিতে মাথা ঢুবিয়ে রেখেছি; তুমি কিছু মনে করো না; তোমার কি কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার আছে? মেয়ে ভয়ে ভয়ে বলবে না;

বিড়াল মারার তৃতীয় উপায়;

এর মধ্যে নীলা রুমে ঢুকে।

একটাও মশা মারার আওয়াজ পাই নাই; বলি হাত চালাতেও এত কষ্ট;

রফিক হটাত বিছানার উপর চিত হয়ে শুয়ে গড়াগড়ি দিতে থাকে; মুখ দিয়ে ঘোঁত ঘোঁত আওয়াজ বের হয়;

নীলা ভয় পেয়ে যায়।

এই তোমার কি হয়েছে?

রফিক মাথা ঘুরাতে থাকে। আমাকে বোবায় ধরেছে। বুকের উপর বসার চেষ্টা করছে;

কি বল এগুলো;

রফিক চোখ বড় বড় করে নীলার দিকে তাকায়; আমি বারবার সরে যাচ্ছি। আবার লাফ দিয়ে পড়ছে; জানিনা এভাবে কতক্ষন পারবো; তুমি তাড়াতাড়ি অন্যরুমে যাও;

আগেতো কখনো দেখিনি। তোমাকে একা রেখে আমি কিভাবে যাই। নীলার গলা কান্না কান্না;

ছোটবেলায় ধরতো। অনেকদিন ছিল না। কিছুক্ষন আগে একটা মশা মেরেছিলাম তারপর থেকে এই অবস্থা;

নীলা রফিকের হাত নিজের হাতে নিয়ে কাঁদতে থাকে; তোমাকে আর মশারী খাটাতে হবে না; মশাও মারতে হবে না।

রফিকের নড়াচড়া ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসে; রফিকের চোখ জুড়ে ঘুম। কতদিন পর প্রশান্তি লাগছে;

#আমিনুলের_গল্প_সমগ্র

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে