বসের সাথে প্রেম পর্ব- ১০

0
6416

♦মহাসপ্তাহ♦
বসের সাথে প্রেম
পর্ব- ১০

লেখা- অনামিকা ইসলাম।

ছেলেটির ডায়েরী_
সেদিন আমি ইচ্ছে করে বাথরুমে ঢুকিনি, তবুও ও কেমন যেন হয়ে গেল। সবসময় আমার থেকে দুরে দুরে থাকত, আমি কথা বলতে গেলে আমায় এড়িয়ে চলত, কথা বলত না, আমার দিকে তাকাতো না। যদি ভুল করেও কখনো সামনাসামনি পরে যায় তখন অন্যদিকে তাকিয়ে চলে যায়। আমি বুঝতে পারছিলাম না আমি কি এমন অন্যায় করলাম যার কারনে ও আমার সাথে এমন করতেছে। সেদিন ভাবতেছিলাম আর ডায়েরী লিখতেছিলাম।
আচ্ছা, ও লজ্জায় এমন করছে না তো?!!!
যদি তাই হয় তাহলে তো ও আর আমার সাথে কথায় বলতে পারবে না, বলবে না।আচ্ছা, ওর দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটি হাসি-আনন্দ যদি আমি আর না দেখতে পাই?!!!
না, না….
যে করেই হোক ওকে কাছে আনতে হবে আর স্যরি বলতে হবে।
সেদিন মাথা ব্যথার অভিনয় করে সারাবিকেল কান্না করছি। আম্মু খবর শুনে আসছিল ঔষধ খাওয়াতে, আমি খাইনি। রাত্রে যখন গিয়ে বলি মাথাটা টিপে দিতে, তখন আম্মু শুয়েছিল। আম্মুর শরীরটা এমনিতেই বেশী ভালো লাগছিল না সেদিন। তাই আমি জানতাম আম্মু আমার মাথাটা টিপে দেওয়ার জন্য মায়াকেই পাঠাবে।
হ্যাঁ, তাই হলো। আমি যখন শুয়ে শুয়ে কানে হেডফোন গুজে দিয়ে গান শুনছি, তখন’ই ওর আগমন ঘটে। রুমের সামনে এসে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। কান থেকে হেডফোনটা তাড়াতাড়ি খুলে ফোনটা বালিশের নিচে লুকিয়ে রেখে জোরে জোরে কান্না জোড়ে দিলাম। আমার কান্না শুনে মায়া আর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকেনি, তাড়াতাড়ি করে রুমে প্রবেশ করে। আমি চোখ’টা মিটমিট করে দেখছি ও দেখছি ও কি করে?!!!??
ও রুমে এসে, আমার দিকে একটু তাকালো। তারপর ধীরপায়ে আমার দিকে’ই এগিয়ে আসতে থাকে। আমি এবার চোখটা পুরো বন্ধ করে দিলাম।☺☺
ও আমার পাশে এসে বসল।
আমার কান্না একটু কমে গেল। ও চুপটি করে বসে আছে ৪,৫ মিনিট হয়ে গেলো তারপরও কিছু করছে না/বলছে না দেখে আমার আর ভালো লাগছিল না। তাই জোরে জোরে কান্না করতে লাগলাম। মনে হচ্ছে, কৌটা জাতীয় কিছু খুলছে, তারই শব্দ হলো। তবুও চোখটা একটু ফাঁক করে দেখে নিলাম। হ্যাঁ, আমার আন্দাজটাই ঠিক। ও কৌটা খুলেছে। মলমের কৌটা। আঙুল দিয়ে একটু মলম নিয়ে কৌটাটা বন্ধ করে আমার কপালের চারিপাশে মলম দিয়ে তা মালিশ করে দিয়েছে। যদিও আমার কিচ্ছু হয়নি তারপরও ও অর্ধেক রাত পর্যন্ত আমার মাথার পাশে বসে থেকে আমার মাথা’টা টিপে দিয়েছে। সেদিন কি যে সুখ পেয়েছিলাম ওর নরম হাতের ছোয়ায় তা বলে বা লিখে বুঝানো যাবে না। বেচারী!
যতবার’ই চেয়েছে উঠে চলে যেতে ততবার’ই আমার কান্না শুনে থমকে গেছে। শেষমেষ যখন বুঝতে পারলাম, ওর চোখ দুটো লাল টকটক হয়ে আছে তখন কান্নাটা থামিয়ে চুপ করে রইলাম। ও তখনো আমার পাশেই বসে আছে। আমি বারবার আড়চোখে ওকে দেখছিলাম। হঠাৎ’ই মনে হলো ও নেই। চোখ যায় নিচে, আমার বিছানায়। হুম, ও আমার বিছানার এককোণে ঘুমিয়ে পরেছে। আধঘন্টার মত আমি শুধু ওর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়েই বসেছিলাম। তারপর কেন জানি শরীরটা গরম অনুভূত হতে থাকে। আর মাথাটাও একটু একটু করে ব্যথা করতেছে। আর পারছিলাম না। ওকে বিছানার এককোণ থেকে টেনে বিছানায় আনলাম। তারপর বুকের মধ্যে ওর মাথা’টা রেখে শুইয়ে দিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম টের পায়নি। সেদিন স্বপ্নে মায়াকে দেখেছিলাম। ও আমার পাশে বসেছিল। মনে হচ্ছে কিছু একটা বলতে এসেছে কিন্তু বলেনি। কিছু না বলে কি মনে করে যেন উঠে চলে যাচ্ছিল। আমি ওর হাতটা ধরে ফেললাম। ও যতবার উঠতে চেষ্টা করেছে ততবার আমি ওর হাত ধরে ওকে আমার বিছানায় বসিয়ে দিয়েছি। হঠাৎ করে মনে হলো,
কেউ যেন কানের খুব কাছে এসে বলছে,
ভাইয়া, কি করছেন এসব? ছাড়েন….ছাড়েন প্লিজ।
শালার কপাল….
ভাইয়া ভাইয়া শুনতে শুনতে আমার মাথাটা গেল আর সেই ভাইয়া ডাকটাই স্বপ্নে এসে ব্যঘাত ঘটালো?!!
চোখ মেলে তাকালাম।
একি?!
এ যে স্বপ্ন নয়, বাস্তব।
আর আমি ওর হাত নয়, ওর মাথাটা চেপে ধরে আছি বুকের সাথে….
তার মানে আমি এতক্ষণ…. (…..?…….)
ভাবতে পারছিলাম না, উঠে বসলাম বিছানায়। ও ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে, মনে হয় ভয় পেয়েছে। ওর দিকে তাকালাম, চোখে চোখ পরতেই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। তারপর মাথা নিচু করে স্যরি বললাম।
জানি না, ও কি মনে করেছে তবুও স্যরি বললাম। ও যাতে আমায় নিয়ে বাজে কোনো কিছু না ভাবে তাই বলে ফেললাম,
মায়া—
আমি তোমায় ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরিনি। আসলে স্বপ্নে দেখলাম আমার রাজকুমারী পাশে বসে আছে, তাই ওকে মনে করে তোমায় অনেকগুলো কথা বলে ফেলেছি।আমি সত্যি’ই লজ্জিত মায়া। তুমি কিছু মনে করো না প্লিজ। আমি কথাগুলো একনিঃশ্বাসে বলে ওর দিকে ফিরে তাকালাম। ও মনে হচ্ছে এতক্ষণ ধরে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিল। চোখে চোখ পরতেই চোখটা সরিয়ে নিল। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরল। অন্যদিকে তাকিয়েই বলছে,
মনে করার কি আছে, ভাইয়া? আমি কিচ্ছু মনে করিনি, কিচ্ছুই মনে করিনি। আমি তারপরও কিছু জিজ্ঞেস করছিলাম ও আমার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি……
মেয়েটির ডায়েরী_
সেরাতে ঘুমুতে পারিনি। সারা রাত গুমড়ে গুমড়ে কেঁদেছি। চোখের জল যেন কিছুতেই বাঁধা মানছিল না। গড়িয়ে গড়িয়ে পরছিল দু’চোখের জল। তারপর মনকে এটা বলে শান্তনা দিলাম যে,
পৃথিবীর সব সুখ তো শুধু পাওয়ার মধ্যে না,
মাঝে মাঝে না পাওয়ার মধ্যেও এক নিদারুণ সুখ নিহিত থাকে। আর ভালোবাসা মানেই কি শুধু কাছে পাওয়া?!
না, তাতো নয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে