বউ চয়েজ

0
624
কে বলে আমার কপালে বিয়া নেই? এইতো মাত্র বিয়ের শুভ কাজটা শেষ করলাম। আনন্দে আমার গান গাইতে ইচ্ছা করছে। আহা! কী আনন্দ আকাশে বাতাসে! আমি বিয়া করলাম অবশেষে! আহা! কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!
কীভাবে বিয়ে করালাম তা বলছি। আমার পরিবার থেকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে ওরা আর মেয়ে দেখতে পারবে না। আমাকে একা একাই বিয়ে করতে হবে। বাধ্য হয়ে আমি পথে নেমে গেলাম বউ খুঁজতে। যেতে যেতে দেখি এক বয়স্ক লোক কাঁদছে আর বলছে– আল্লাহ! তুমি কেনো আমাকে এমন মেয়ে দিলা? এখন আমি ওরে বিয়া দিমু কেমনে? বিয়ের কথা শুনার সাথে সাথে আমার কানটা খাড়া হয়ে গেলো, পা দুটো থেমে গেল। ধীরে ধীরে বয়স্ক লোকটার পাশে গিয়ে বসলাম। আর বললাম– কী আর বলবো দুঃখের কথা আঙ্কেল! আমিও বিয়ে করতে পারছি না। আমি নাকি দেখতে বলদ আর বোকা। আচ্ছা, আমাকে দেখে কি এমন মনে হয়? লোকটি বলল– না, তার চেয়ে বড় টা মনে হচ্ছে। আমি– সেটাই। তো আপনার মেয়ের বিয়ে না হওয়ার কারণ কী? লোকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল– আমার মেয়ের দোষ হলো, সে আজ পর্যন্ত পর পুরুষের সাথে কথা বলেনি। আমি– বলেন কী! এটা তো তার গুণ! আজকাল এমন ভালো মেয়ে বাটি চালান দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। লোকটি– আমার মেয়ের আরেকটা দোষ হলো, সে পর পুরুষদের এক চোখেও দেখতে পারে না। আমি– এটা তো মহিয়াসী নারীর লক্ষণ! আমার তো আপনার মেয়েকে না দেখেই পছন্দ হয়ে গেছে। মেয়ে বিয়ে দিবেন নাকি আমার কাছে? লোকটি– তার আরো একটা দোষ আছে। আমি– কী সেটা? লোকটি– মাত্র পাঁচ দিন ছাড়া জীবনেও আমার মেয়ে অন্য কারো বাড়িতে থাকেনি। আমি– এটাতো আরো ভালো লক্ষণ! এমন ভালো মেয়ের বিয়ে হবে না কেনো? কেউ না করলেও আমি করবো। কাজী ডাকেন।
মেয়েকে আমি দেখিনি। এমন ভালো মেয়েকে দেখতে হয় না। মেয়ের বাবা অবশ্য একবার বলেছিলো মেয়েকে দেখে নিতে। আমি সাফ সাফ বলে দিলাম– যে গুণ শুনলাম, তাতে দেখার কী প্রয়োজন? আমার পছন্দ হয়েছে। ও আপনার মেয়ে হোক কিংবা ছেলে, আমি ওকেই বিয়ে করবো। কাজী সাহেব এসে বিয়ের পর্ব শেষ করালেন। আমি বাড়ি ফোন দিয়ে বললাম– আম্মু! তোমার বৌমা নিয়ে আসতেছি। বরণ করে নিতে রেডি থেকো। বাড়ি এসে দেখলাম সবাই এক রাশ আশ্চর্য নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি বীর বাহাদুরের বেশে ঘরে প্রবেশ করলাম। মনে হয় যেন রাজ্য জয় করে এসেছি। বউকে দেখে সবাই হাসাহাসি করছে এবং বলছে– তুই তোর উপযুক্ত বউ পেয়েছিস। মনে মনে খুশি হলাম। তাহলে আমার চয়েজ পার্ফেক্ট। যদিও এখনো বউকে দেখিনি এবং কথাও বলিনি।
ফুল শয্যার জন্য ঘরে ঢুকলাম। দেখলাম বউ সুন্দর করে বসে আছে। সালাম দিয়ে বললাম– কেমন আছো? কোনো উত্তর এলো না। ভাবলাম নতুন তো তাই লজ্জা পাচ্ছে। আবার সালাম দিয়ে বললাম– কেমন আছো? এবার সে পাশে থাকা কলম আর খাতা নিয়ে লিখলো– ওয়ালাইকুম সালাম। আমি ভালো আছি। আপনি? আমি অবাক হলাম। বউ আমার সাথেও কেনো কথা বলছে না! আমি তো পর পুরুষ না, ওর স্বামী। তাহলে রহস্য কী? জিজ্ঞেস করলাম– কথা বলছো না কেন, তুমি কি বোবা? সে লিখলো– জী, তবে কানে শুনতে পাই। আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো। বললাম– এই জন্যই কি তোমার বাবা বলেছেন, তুমি কোনো দিন পর পুরুষের সাথে কথা বল নি? সে লিখলো– জী। আমি সাথে সাথে বৌয়ের মুখ থেকে ঘোমটা সড়ালাম। দেখলাম ওর একটা চোখ নষ্ট। দেখে আমার মাথা যেন ভন ভন করছে। বললাম– এই জন্যই কি তোমার বাবা বলেছেন, তুমি পর পুরুষদের এক চোখেও দেখতে পারো না? সে লিখলো– জী। মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পরলাম। ভাবছি, কী ধান্দাবাজের পাল্লায় পড়লাম রে বাবা! কারণ খুঁজতে লাগলাম পাঁচ দিন অন্য যায়গায় থাকার কথা কেনো বলল। দেখলাম বউ তার জিনিস পত্র ব্রিফকেসে ভরে ফেলছে। বললাম– এসব গুছিয়ে ফেলছো কেনো? সে লিখলো– এর আগে আমার পাঁচ যায়গায় বিয়ে হয়েছিলো। সবাই ফুল শয্যার রাত কাটানোর পর আমাকে তালাক দিয়ে দিছে। আপনিও তো তা-ই করবেন। সে জন্য বাড়ি যাওয়ার আগাম প্রস্তুতি নিয়ে নিচ্ছি। আমি– এই জন্যই কি তােমার বাবা বলেছিলেন, তুমি কেবল পাঁচ দিনই নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও থেকেছিলে? সে লিখলো– জী। আমি চিৎকার করে বললাম– আমারে কেউ বাঁচাও। আমিতো খাল কেটে বউ এনেছি! (তবে কে জানতো আমার বউ আমাকে এতো ভালো বাসবে! বেশ সুখে আছি।) . । জোবায়ের আহমেদ শরীফ ? বা, স, রু১, তা- ৩১-১২-১৯

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে