প্রেমের_পরশ পার্ট_22

0
7069

প্রেমের_পরশ
পার্ট_22
জামিয়া_পারভীন

শুভ নিরুকে বাবুর আম্মু ডাকাতে বেশ লজ্জিত হয় নিরু সাথে খুব অবাক ও হয়। নিরু তখন শুভ কে বলে,
• “ বাবুর আম্মু মানে! আমার তো বাবুই নেই! ”
• “ নেই তো কি হয়েছে, খুব শীঘ্রই আসছে মি. শুভ আহমেদ এণ্ড নিরুফার চৌধুরীর একমাত্র সন্তান। ”
• “ ফান করো না তো ।”
• “ সিরিয়াসলি, তুমি প্রেগন্যান্ট, আর এই খুশির খবর নিচে জানিয়েই তবে ঘরে এসেছি। ”
• “ এ মা! কি করেছো তুমি! আমার তো এখন নিচে যেতে লজ্জা লাগবে। ”
• “ ওরে আমার লাজুক লতা, ঐ সময় বুঝি লজ্জা করেনি। ”
• “ যাও দূর হও তো , সব সময় ন্যাকামি করে।

নিরু অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়, তখন মনে পড়ে শুভ ওর নাম এর শেষ এ চৌধুরী টাইটেল দিয়েছে। তখন শুভর দিকে ঘুরে আবারো জিজ্ঞেস করে,
• “ আচ্ছা শুভ , তুমি আমার নাম বললে নিরুফা! কিন্তু আমার নাম তো নিরুফার জাহান। ”
• “ তাই বলেছি নাকি! যাই হোক তুমি বাচ্চা মেয়ে, কিছুই বুঝবে না। ”
• “ বুঝবো, বুঝিয়ে বললেই হয়।”
• “ নিলাশা চৌধুরীর মেয়ে তো নিরুফার চৌধুরী ই হয়। ”
• “ তুমি আমার মায়ের নাম কিভাবে জানলে! ”
• “ তুমি যদি সত্যিই অনাথ হতে! তাহলে তোমার এতো বিপদ হতো না। খুব ভয় হয় জানো! যদি তোমাকে তোমার মায়ের পরিনতি ভোগ করতে হয়। যদি তোমার কিছু হয়ে যায়! নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা। নিজেকেও শেষ করে দিবো, এতো ভালোবাসি তোমাকে। ”
• “ এতো ভয় পেয়োনা! আল্লাহ যা করে তাতেই হয়তো মঙ্গল। ”

আরোও দুই মাস পার হয়ে যায়, আর মাত্র তিন দিন পর নিরুর বার্থডে। নিরুর ১৮ বছর পূর্ন হবে সেইদিন। আর শুভ এই দিন টাকেই ভয় করে নিরুর সিকিউরিটি আরোও বাড়িয়ে দিয়েছে। নিরু প্রেগন্যান্ট হবার পর থেকেই শুভর কেয়ারিং অনেক বেড়ে গিয়েছে। নিরু ঘুম থেকে উঠলেই বেড টি হাজির হয়। নিরু ফ্রেশ হয়ে আসতে না আসতেই ব্রেকফাস্ট রেডি হয়ে যায়। নিরুর যেন কক্ষনো খিদে পেটে থাকতে না হয় সেই জন্য ঘরের মধ্যে সার্বক্ষণিক খাবার রেডি থাকে। নিরুকে প্রতিদিন নিয়ম করে এক্সেরসাইজ করায় শুভ। যেন মা ও বাচ্চা সুস্থ থাকে সেই জন্য সব চিকিৎসা শুভ নিজে উপস্থিত থেকে করায়।

রুবির মা এখনো আই সি ইউ তেই আছে। মাথায় প্রচন্ড আঘাত, প্রচুর রক্তক্ষরণ এর জন্য এখনো জ্ঞান ফিরে আসেনি। প্রতিদিন রুবি অফিস শেষে মা কে দেখে বাড়ি আসে। আফজাল হোসেন ও হসপিটাল এ গার্ড রেখেছেন যেনো লুতফা বেগম এর কোন ক্ষতি কেউ করতে না পারে। ঘুম থেকে উঠে সাগরকে রুবি বলে,
• “ এভাবে আর কতো দিন চলা যায় বলো তো! আম্মুকি আর সুস্থ হবে না।! ”
• “ ধৈর্য ধরো, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। ”
• “ আমাদের ফিউচার প্লান কি হবে, এই ব্যপারে কিছু ভেবেছো কি? ”
• “ কি ব্যপারে? ”
• “ নিরুর বেবি হবে, আর আমাদের কবে আসবে সাগর। আমিও যে মা হবার সুখ পেতে চাই। ”
• “ আমরা তো বেবি চাইছি ই। কিন্তু আল্লাহ যদি না চান আমাদের বেবি আসুক তাহলে আমরাই বা কি করতে পারি বলো। মাত্র তো বিয়ের চার মাস হলো, আরোও কিছুদিন ওয়েট করো। আমাদের ঘর আলো করেও সন্তান আসবে। ”
• “ নিরু আমার থেকে অনেক ছোট অথচ ওর বেবি আসছে। আর আমি চাকুরী আর ব্যস্ত জীবন নিয়েই পড়ে আছি। ”
• “ ধৈর্য ধরো, সব ঠিক হয়ে যাবে। ”

সাগর উঠে চলে যায়, রুবি ভাবতে থাকে তার পাপের কথা। কৈশোর এ করা পাপ তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। হয়তো কখনো ও মা হতে পারবেনা রুবি। এইসব যদি সাগর জানতে পারে হয়তো ওকে তালাক পেতে হবে সাগরের কাছ থেকে। একবার নিজ অবৈধ সন্তান কে হত্যা করার পাপেই হয়তো তার কখনো সন্তান হবে না। নিরুর মা হবার খবর শুনার পর থেকেই রুবির ভিতরের পাপ বোধ রুবিকে কুরে কুরে খাচ্ছে। রুবি যে নিরুপায় ছিলো, সে তো তার সন্তান কে হত্যা করতে চায়নি। বাধ্য হয়ে করেছে এইসব। রুবি আজকাল প্রচুর কান্না করে, আর সাগর ভাবে হয়তো ওর মায়ের জন্য কাঁদছে।
,

নিরু সন্ধ্যে বেলা ঘরে বসে আছে তখন শুভ ঘরে আসে, এসেই নিরু কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
• “ মহারাণীর মন কেনো খারাপ তা কি জানতে পারি। ”
• “ হুমম পারো। ”
• “ আজকাল প্রায়ই মন খারাপ করে বসে থাকো কেনো। ”
• “ এইযে তুমি আমার এতো কেয়ারিং করছো, খুব ভাল লাগে । কিন্তু আমারও যে একটু ঘুরতে মন চাই, নিয়ে তো যাওনা কখনো। ”
• “ বাগানে যাবে, ছাদে যাবে, বেবি আসুক পৃথিবী তে। অনেক ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াবো তোমাকে। ”
• “ তুমি খুব পঁচা, বেবি এসেই ভুল হয়েছে। তুমি আমার পায়ে শিকল পড়িয়ে দিয়েছো। ”
• “ উঁহু! এমন করে বলতে নেই। বেবি রাগ করবে তাহলে। সব সময় হাসি খুশি থেকো। এখন চলো নিচে যায়, সবাই নিচে বসে আছে। ”
• “ কিছু হয়েছে কি? ”
• “ আরে চলোই না। ”

শুভ নিরুকে নিচে নিয়ে যায়, নিরুর বাবা এসেছে আজ। এই প্রথম এই বাড়িতে নিরুর বাবা পা রেখেছে। রুবি সাগর, শুভর বাবা মা, রিমি সবাই এক সাথে বসে গল্প করছে। নিরু বাবা কে অনেক দিন পর দেখতে পেয়ে খুশি হয় খুব।
আফজাল হোসেন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,

• “ তুই আমার আর নিলাশার ভালোবাসার সন্তান। নিলাশা কে হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু তোকে হারাতে পারবোনা। নিজের যত্ন নিস, যানি শুভ খুব ভালো ছেলে। ওর সব কথা শুনে চলবি। আমি জানি, শুভ তোকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করবে। ”
• “ হ্যাঁ বাবা, শুভ আমাকে খুব ভালোবাসে , অনেক কেয়ার করে। আমি এখানে খুব খুব খুশি। ”

দেখতে দেখতে দুইদিন পার হয়ে যায়, নিরুর ঘুম ভাঙে রাত তিন টায়। ঘুম থেকে উঠে দেখে পুরো ঘরে জোনাকির আলো মিটমিট করছে। বিছানা থেকে নেমেই জোনাকি পোকা ধরার চেষ্টা করছে। ধরছে আবার উড়িয়ে দিচ্ছে। নিরু যেন খুশিতে নাচছে। হটাৎ করে ঘরে লাইট জ্বলে ওঠে । নিরু খেয়াল করে পুরো ঘরে বেলুন দিয়ে সাজানো। মনে করার চেষ্টা করে, রাতে তো ঘরে এগুলো কিছুই ছিলো না। তাহলে ঘর কে সাজালো। নিরু বেলুনের গায়ে দেখে লিখা আছে ❤ U Niru

নিরু বুঝতে পারে সব শুভর কাজ, একটু এগিয়ে যেতেই কোন কিছুর সাথে পায়ে পাড়া লাগে, উপর থেকে গোলাপের পাপড়ির বর্ষণ হতে থাকে। নিরু হাত তুলে নাচছে, প্রতিটি মুহুর্ত সে উপভোগ করছে। নিরু একটা চিরকুট দেখতে পায়, ওতে লিখা আছে, “ ড্রইং রুমে এসো প্লিজ, তোমার জন্য অপেক্ষায় আছে তোমার ভালোবাসা। ”

নিরু আর ওয়েট না করে ড্রইং রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে