প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর
পার্ট: ৮
তাড়াতাড়ি আম্মুর কাছে গেলাম
–আম্মু কি হইছে তোমার
–তুই কার সাথে কথা বলছিলি
–কই কারো সাথে না তো
–আজকে মিথ্যে বলে লাভ নেই আমি স্পষ্ট দেখেছি তোর সামনে একটা সাদা গোলাপ ভাসছে আর তুই কাকে যেন জিজ্ঞাসা করছিলি সাদা গোলাপ পছন্দ নাকি
–আম্মু তুমি ভুল দেখেছ
–চুপ একদম চুপ আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল, বুঝেছি তোর উপর জ্বীন আছর করেছে
–আম্মু কি বলছ এসব
–চল নিচে চল কালকেই তোকে হুজুরের কাছে নিয়ে যাবো
আম্মু আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে আসলো পিছন ফিরে একবার সাইয়ান এর দিকে থাকিয়েছিলাম পাগলটা কাঁদছে
রাতে খাবার টেবিলে বসে আম্মু আব্বুকে একে একে সব ঘটনা খুলে বললো, আব্বু সব শুনে বললেন সকালে বাসায় হুজুর আনবেন, এই কথা শুনে না খেয়েই রোমে চলে আসলাম, কি করবো এখন সাইয়ান কে আমি হারাতে পারবো না
সকালে আম্মু এসে ড্রয়িংরুমে যেতে বললেন, গিয়ে দেখি আম্মু আব্বু আর একজন হুজুর বসে আছেন, আমি গিয়ে সোফায় বসলাম
হুজুর: তোমার আব্বু আমাকে সব বলেছেন আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই
আমি: হুম বলুন
হুজুর: তোমার উপর দুষ্টু আত্মার নজর পরেছে (কথাটা শুনে ইচ্ছে হলো হুজুর কে আচ্ছা করে বকে দিতে সাইয়ান নাকি দুষ্টু আত্মা ফাজিল হুজুর কোথাকার)
আব্বু: কথা বলছিস না কেন
আমি: কি বলব
হুজুর: দুষ্টু আত্মাটা কি তোমার কোনো ক্ষতি করেছে
আমি: সাইয়ান দুষ্টু আত্মা না ও অনেক ভালো
হুজুর: সাইয়ান কি আত্মাটার নাম
আমি:হ্যা
হুজুর: তোমার সাথে কি ওর কথা হয়
আমি: হ্যা
হুজুর: বুঝেছি
আমাকে রোমে পাঠিয়ে দিলো, একটু পর আম্মু একটা তাবিজ নিয়ে আসলেন আমার গলায় পরিয়ে দেওয়ার জন্য, আমি তাবিজ ছুড়ে ফেলে দিলাম আম্মু রাগে হনহন করে চলে গেলেন, একটু পর আবার আসলেন হাতে পানি নিয়ে, এসেই আমার সারা রুমে পানি ছিটিয়ে দিলেন, বুঝলাম এইটা পড়াপানি চুপচাপ বসে রইলাম
সারাদিন রুমে বসেই কাটিয়ে দিলাম কিছু খেলামও না, সাইয়ান এর সাথে আজ একবারো কথা হয়নি তাই ছাদে গেলাম, সাইয়ান দুলনায় বসে আছে
–আজকে আমার রুমে একবারো যাওনি কেন
–কিভাবে যাবো
–মানে
–তোমার রুমে পানিপড়া ছিটানো আছে আমি যেতে পারবো না কখনো
কথাটা শুনে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হলো আব্বু আম্মু কেন আমাদের আলাদা করতে চাইছে, খুব রাগ হলো আব্বু আম্মুর উপর তাই ছাদ থেকে নেমে সুজা আম্মুর কাছে গেলাম
–আম্মু একটা কথা বলার আছে
–বল
–আমি সাইয়ান কে ভালবাসি
–পাগল হয়ে গেছিস নাকি সাইয়ান মৃত পৃথিবীতে ওর কোনো অস্তিত্ব নেই
–আমি কিছু জানিনা বুঝি না আমি শুধু সাইয়ান কে চাই
–বেশি বাড়াবাড়ি করিস না, করলে এই বাসা ছেড়ে চলে যাবো
–তোমরাও বেশি বাড়াবাড়ি করো না, করলে আমি আত্মহত্যা করবো
–অর্পিতা এসব কেমন পাগলামি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছিস নাকি
–হ্যা পাগল হয়ে গেছি সাইয়ান এর জন্য পাগল হয়েছি
–ও মারা গেছে তোদের মিলন সম্ভব না
–তাহলে আমিও আত্মহত্যা করে ওর কাছে চলে যাবো
–অর্পিতা শুন
আম্মুর কথা না শুনেই রুমে এসে শুয়ে পরলাম, খুব কষ্ট হচ্ছে সাইয়ান কেন মারা গেল ও বেঁচে থাকলে আমাদের মধ্যে কোনো বাঁধা থাকতো না, এখন কি করবো আমি
একটু পর আব্বু আম্মু দুজন আমার রুমে আসলেন
আব্বু: অর্পিতা এসব কি শুনছি তুই তোর আম্মুকে আত্মহত্যার ভয় দেখাচ্ছিস কেন
আমি: ভয় দেখাই নি তোমরা সাইয়ান আর আমার মাঝে বাধা হলে সত্যিই আত্মহত্যা করবো
আব্বু: আমাদের ভালবাসার চেয়ে একটা আত্মার ভালবাসা তোর কাছে বড় হয়ে গেলো
আমি: এইটা তো আমি বলিনি আমার তোমাদের ভালবাসা যেমন প্রয়োজন সাইয়ান এর ভালবাসাও তেমনি প্রয়োজন
আব্বু: আজকেই আমি সাইয়ান এর ভূত তোর মাথা থেকে নামানোর ব্যবস্থা করছি
আমি: যা খুশি করো
আব্বু আম্মু চলে গেলেন আমি চিলকোঠোর ঘরে গেলাম, গিয়ে দেখি সাইয়ান মেঝেতে বসে কাঁদছে
–এই কাঁদছ কেন
–(নিশ্চুপ)
–বল বলছি কাদতেছ কেন
–তোমার আব্বু কবিরাজ এর কাছে গেছেন কবিরাজ বলেছে দুদিন পর পূর্ণিমারাত, সেই রাতেই আমার কঙ্কাল দাফন করবে তাহলে আমার আত্মা আর এই পৃথিবীতে থাকবে না
কথাগুলো শুনে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো কি করবো এখন আমি সাইয়ান কে ভুলে যাবো না না এইটা সম্ভব না কিন্তু দুদিন পর তো সাইয়ান কে হারাতে হবে
মেঝেতে বসে আছি চোখ দিয়ে পানি ঝরছে সাইয়ান এসে আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো
–অর্পি আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না তোমার আব্বুকে আটকাও
আমি কিছু না বলে সাইয়ান কে ছাড়িয়ে আমার রোমে চলে আসলাম, আমি জানি আব্বুকে কোনো ভাবেই আটকানো সম্ভব না তাই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলাম
আম্মু রান্না ঘরে আব্বু বাহিরে আমার রুমে সাইয়ান আসতে পারবে না তাই মেঝেতে বসে ফল কাটার চাকু হাতে নিলাম, বাম হাতের রগে চাকু ধরে চোখ বন্ধ করে এক টান দিলাম রগটা কেটে গেলো পিনকী দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো, মেঝে রক্তে লাল হয়ে গেলো আমার চোখ দুইটা বুজে আসলো, আস্তে আস্তে চোখ দুইটা বন্ধ হয়ে গেলো………
চলবে?