প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর পার্ট: ২

2
2363

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর

পার্ট: ২

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেলো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে কলেজে চলে গেলাম

নতুন জায়গা কলেজে কাউকেই চিনি না তাই একা একা মাঠের এক কোনে গিয়ে বসে রইলাম, হঠাৎ একটা মেয়ে আসলো
–হাই আমি সুজাতা
–আমি অর্পিতা
–এক মাস হলো ক্লাস শুরু হয়েছে তোমাকে আগে কখনো দেখিনি তো এই এলাকায় নতুন বুঝি
–হ্যা আমরা এখানে নতুন এসেছি
–কোথায় থাকো
–কলেজ থেকে পশ্চিম দিকে ৫-৭মিনিট হেটে গেলে ডান পাশে যে লাল রঙের বাসাটা পরে ওই বাসাতেই
–কি তোমরা ওই বাসায় থাকো
–হ্যা কেন
–বাসাটা কি তোমরা ভাড়া নিয়েছ
–না আব্বু কিনে নিয়েছে অনেক সুন্দর বাসা
–কিন্তু
–কিন্তু কি
–আমি শুনেছি ওই বাসায় নাকি ভূত আছে
–কি ভূত
–হ্যা অনেক মানুষ বলে ওই বাসার ছাদে নাকি একটা ছেলেকে দেখা যায় কোনো সময় ফুল গাছের যত্ন করে, কোনো সময় গিটার বাজায়, আবার কোনো সময় ছাদের রেলিং ধরে দূর আকাশে আনমনে থাকিয়ে থাকে
–ছেলেটা কে ভূত মনে হয় কেন সবার
–কারন চার বছর আগে নাকি ওই পরিবারের সবাই মারা গিয়েছিল আর বাসাটা তো চার বছর পরিত্যক্ত ছিলো ছেলেটা আসবে কোথায় থেকে
–হুম

বাসায় চলে আসলাম মাথা থেকে ছেলেটার কথা একদম সরছেই না, আচ্ছা ছেলেটা যদি ভূত হবেই তাহলে আমাদের কোনো ক্ষতি করে না কেন, তাহলে কি ছেলেটা ভালো ভূত দুর কি ভাবছি ভূত আসবে কোথায় থেকে ভূত বলতে পৃথিবীতে কিছু আছে নাকি

সন্ধ্যায় পড়তে বসলাম আর তখনি শুরু হয়ে গেলো গিটারের শব্দ তাড়াতাড়ি আম্মুর কাছে গেলাম
–আম্মু একটা জিনিস শুনতে পাইতেছ
–কি
–গিটারের শব্দ
–না তো
–আমি তো শুনতে পাইতেছি
–কই আমি তো শুনছি না
–কিন্তু
–তোর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে তাই এসব আবুল তাবুল কথা বলছিস যা পড়তে বস
–হুম

দুর ছাই কি হচ্ছে এসব আমি শুধু গিটারের শব্দ শুনতে পাই কিন্তু আম্মু পায় না কেন, আচ্ছা জিসান পায় কিনা গিয়ে জিজ্ঞেস করি তো
–ভাই কি করছিস
–পড়ছি
–আচ্ছা তুই কি ছাদে কোনো কিছুর শব্দ শুনতে পাচ্ছিস
–কই নাতো
–ভালো করে শুনে দেখ তো
–না পাচ্ছি না
–ওহ আচ্ছা পড় তুই আমি যাই

কি যে হচ্ছে বুঝতেছি না নির্ঘাত আমার মাথার তার ছিড়ে গেছে নাহলে আম্মু শুনে না জিসান শুনে না শুধু আমি কেন গিটারের শব্দ শুনতে পাই

রাতে খাবার টেবিলে আব্বু জিজ্ঞেস করলেন
আব্বু: অর্পিতা বাসা পছন্দ হয়েছে
আমি: হ্যা আব্বু বাসাটা অনেক সুন্দর
আম্মু: জানো অর্পিতা কি যেন বলছিল ও নাকি সন্ধ্যায় ছাদে গিটারের শব্দ শুনতে পায়
আমি: না না আব্বু এমনি বলেছি ফাজলামো করে
জিসান: আপু তুমি কি আমার সাথেও ফাজলামো করেছিলে
আমি: হ্যা হ্যা
আম্মু: আর এমন ফাজলামো করলে খবর আছে
আব্বু: আরে বকা দিচ্ছ কেন একটু ফাজলামো নাহয় করেছে
আম্মু: তোমার জন্য মেয়েটা দিন দিন ফাজিল হচ্ছে একদিন দেখবে ও অনেক বড় কান্ড করে বসেছে
আব্বু: আচ্ছা সে দেখা যাবে
আমি: এই নাহলে আমার আব্বু হিহিহি
আম্মু: হাসি বন্ধ কর
আমি: হুম

আম্মু আব্বু কে সত্যিটা বলিনি বললে হয় আমাকে পাগল বলবে নাহয় বাসা ছেড়ে দিবে কিন্তু এই বাসা তো ছাড়া যাবে না এই রহস্য তো আমাকে বের করতেই হবে

একটা সপ্তাহ কেটে গেলো এভাবেই আর অদ্ভুত কান্ড গুলাও ঘটলো, ফুল গাছে পানি দিতে গিয়ে দেখি গাছে পানি দেওয়া, দোলনা দোলতেছে মনে হয় যেন কেউ এখনি দোলনা থেকে উঠে চলে গেলো, চিলাকোঠোর ঘর খুব সুন্দর করে পরিপাটি করা মাঝে মাঝে টেবিলে বই পাই মনে হয় কেউ পড়ছিল আমাকে দেখে লুকিয়ে গেছে, আর সন্ধ্যায় গিটারের শব্দ তো আছেই যা শুধু আমি শুনি অবশ্য গিটারের শব্দ শুনতে আমার অনেক ভালো লাগে খুব সুন্দর করে গিটার বাজায় কিন্তু ছেলেটা কে কখনো দেখতে পাইনি

দুপুরে বারান্দায় বসে আছি আম্মু আসলো
–অর্পিতা চিলকোঠোর ঘরটা কি তুই পরিষ্কার করেছিস
–কেন
–আমি ভাবলাম পরিষ্কার করে রাখি গিয়ে দেখি খুব সুন্দর করে সাঝানো রোমটা
–হ্যা আমিই পরিষ্কার করেছি ভাবলাম মাঝে মধ্যে গিয়ে পড়তে বসবো
–খুব ভালো করেছিস

রাতে ঘুমিয়ে আছি হঠাৎ কারো গুনগুন শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, কান পেতে শুনার চেষ্টা করলাম ওমা ছাদ থেকে তো কন্ঠটা ভেসে আসছে তারমানে ওই ভূত ছেলেটা গান গাইতেছে, কন্ঠটা খুব মিষ্টি এমন গান শুনতে শুনতে ঘুমাতে পারলে মন্দ হয় না, গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি মনেই নেই

সকালে ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসেই বুদ্ধি করলাম আজ ভূত ছেলেটা কে যেভাবেই হউক দেখবই, তাই কলেজে গেলাম না, আম্মু জিসান কে নিয়ে চলে যাওয়ার পর সিড়িতে গিয়ে লুকিয়ে রইলাম, প্রায় দুই ঘন্টা ধরে দারিয়ে আছি ভূতের আসার নামই নেই দারিয়ে থাকতে থাকতে তো আমার পা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে তাও আজ দারিয়ে থাকবো ভূত আমি দেখবই

প্রায় তিন ঘন্টা পর হঠাৎ দেখলাম দোলনা নিজে নিজে দোলতেছে দেখে তো আমার ভয়ে চিৎকার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে……

চলবে?

2 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে