প্রেমময় আসক্তি পর্ব-১৬

0
1185

#প্রেমময়_আসক্তি❣️
#পর্ব_১৬
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৬.

সময়ের স্রোতে এখন আদ্রিয়ান একদম সুস্থ। রোদেলা দিন রাত এক করে আদ্রিয়ানের সেবা করেছে। আদ্রিয়ান সুস্থ হবার আগ পর্যন্ত রোদেলা আদ্রিয়ানের বাসায় ছিলো। আদ্রিয়ান এখন আবার আগের মতো অফিস, রোদেলা, তার কাজ সব কিছুতে সময় দিচ্ছে।

রোদেলার মা-বাবা ঢাকায় আসছে। রোদেলা আর আদ্রিয়ানের বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেছে। এই মাসের শেষের দিকে আদ্রিয়ান-রোদেলার বিয়ে হবে। এখন আদ্রিয়ান আর রোদেলা একদম চুটিয়ে প্রেম করছে।

সকাল সকাল আজকে কলেজ অফ। পরিক্ষা শেষ এখন কলেজ অফ। মুন নাস্তা বানাচ্ছে তখন রাফসান রান্না ঘরে এসে মুনকে বললো,

রাফসান: মুন শুনো।
রাফসানের ডাক শুনে মুন থমকে গেলো আসতে করে জবাব দিলো,

মুন: জ্বি বলুন।
রাফসান:আজকে বিকালে রেডি থেকো। তোমাকে নিয়ে মার্কেটে যাবো। আসলে রিয়ার জন্য কিছু জিনিস কিনবো। আমিতো মেয়েদের জিনিস পত্র তেমন বুঝিনা। তুমি আমাকে হেল্প করবা।

রাফসানের কথা শুনে মুন ভিতরে একদম শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। তবুও মিথ্যা হাসি মুখে রেখে মুন যাওয়ার সম্মতি দিলো।

বিকালে,,,,,
মুন রাফসানের কথা মতো রেডি হলো। রাফসান ওকে বলেছে নীল শাড়ি পরতে ও সেটাই পরেছে। নীল শাড়ি, দুইহাতে নীল চুড়ি, কানে দুল আর চুল গুলো খোলা। কিছুক্ষন পর রাফসান কল দিতেই মুন নিচে নামে। মুনকে দেখে রাফসানের তো জান যায় যায় অবস্থা। রাফসান আসতে করে বলে,

“মাশাআল্লাহ আমার বউটাকে দেখতে তো একদম পরীর মত লাগতেছে। কারো নজর যেন না লাগে।”

মুন গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। রাফসান মুনকে ইশারা করে গাড়ির সামনের সিটে বসতে বললো। মুন রাফসানের ইশারা মতো সামনের সিটে এসে বসলো। কিন্তু সমস্যা মুন সিট বেল্ট বাঁধতে পারেনা। রাফসান সেটা জানে তাই সে বেধেঁ দিলো মুনের সিট বেল্ট। তারপর গাড়ি চালানো শুরু করলো।

৪ ঘন্টার মাথায় তারা এসে পৌছালো একটা রিসোর্টে। মুন বুঝতে পারছেনা রাফসান এখানে কেন তাকে নিয়ে এসেছে। রাফসান গাড়ি থেকে নেমে মুনের সাইডের দরজা খুলে দিয়ে ওকে বাহিরে আসতে বললো। মুন বাহিরে আসার পর রাফসান ওর হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায়। রাফসান মুনকে নিয়ে ভিতরে ঢুকতেই সবাই এক সাথে চিল্লিয়ে বলে উঠে,

“হ্যাপি বার্থডে মুন”

মুন সবাইকে এক সাথে দেখে চমকে যায়। আজকে যে তার জন্মদিন সেতো সেটাও ভুলেগেছিলো। রোদেলা, কাশু, রুবা এসে মুনকে জরিয়ে ধরলো।

রোদেলা: স্যরিরে মুনু। ভাইয়ার প্ল্যান ছিলো তোকে এভাবে সারপ্রাইজ দেওয়ার। তাই আগে উইস করিনি।
রুবা: হ্যাঁ সব ভাইয়ার প্ল্যান।
কাশু: রাগ করিস না প্লিজ।

মুন: সব বুঝলাম।

রাফসান: এখন কেকটা কাটো।

এরপর মুন কেকটা কাটলো। একে একে সবাই মুনকে গিফটস দিলো। হঠাৎ লাইট অফ হয়ে গেলো আর কিছু রজ্ঞিন লাইট অন হয়ে গেলো। মুন কিছু বুঝে
উঠার আগে রাফসান ওর সামনে হাটু গেড়ে বসলো। মুন এটা দেখে আরো অবাক হলো।

রাফসান মুনের সামনে একটা রিং ধরে ওকে প্রপোজ করলো,

রাফসান: জানিনা কিভাবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়। কিভাবে নিজের মনের অনুভুতি তোমাকে বলে বুঝাবো। যখন তোমাকে প্রথম দেখতাম আমাদের বাসায় তখন একটা আলাদা অনুভুতি হতো নিজের মাঝে। তবুও তখন সেই অনুভুতিকে পাত্তা দিতাম না। কিন্তু যত সময় যেতে লাগলো অনুভুতি আরো প্রখর হচ্ছিলো। বুঝতে পারছিলাম আমি এক চঞ্চল রমোণীর প্রেমে পরে যাচ্ছি। কিন্তু তখন বয়সটা কম তাই সেভাবে তাকে বুঝতে দিতামনা। তারপর ধীরে ধীরে সেই রমণী বড় হলো। এক আলাদা মায়া তার চেহারায় পেতাম আমি। তবে তখনো জানতাম না, সেও কি আমার জন্য একই অনুভুতি অনুভব করে কিনা!
একদিন সেই রমণী জানতে পারে, আমার বিয়ে অন্য কারো সাথে হবে। সেদিন আমি তার চোখে আমাকে হারানোর ভয়-বেদনা দেখেছিলাম। সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম আমি একাই শুধু না সেও আমার মতো অনুভুতি রাখে।
আমি আজ বিনা কোনো সংকোচে আমার মনের কথা তোমাকে বলছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি মুন। নিজের সবটা দিয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসবো। আমার বাকিটা জীবন আমি তোমার হাত ধরে চলতে চাই মুন। ধরবে কি তুমি আমার হাত। হবে কি আমার জীবনের পথচলার সাথি।”

____
রাফসানের কথা শুনে মুন অবাক বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। চোখের কোণা বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। মুনকে চুপ থাকতে দেখে রিয়া ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে,

রিয়া: তোমার রাফসান তোমারি আছে মুন। তাকে তোমার থেকে কেড়ে নেওয়ার সাদ্ধ কারো নেই। আমি তো রাফসানকে শুধুই বন্ধু ভাবি। রাফসান না থাকলে আমার আর রাহুলের এক হবার আশা থাকতো না। তোমার রাফসান তোমাকেই ভালোবাসে। সে তুমি ছাড়া নিজের স্ত্রী হিসাবে অন্য কাউকে কল্পনা করতে পারেনা। তোমার ভালোবাসা সার্থক মুন। তাই আর কোনো পিছুটানের চিন্তা করোনা। গ্রহন করে নেও ভালোবাসা।

রিয়ার কথা শুনে মুন রাফসানের দিকে তাকায়। রাফসান খুব আশাভরা নয়নে তাকিয়ে আছে মুনের দিকে। মুন সযত্নে আংটির জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। রাফসান খুশি হয়ে পড়িয়ে দেয় আংটিটা মুনের হাতে।

আর সবাই খুশিতে হাত তালি দেয়। রাফসান উঠতেই মুন রাফসানকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়। আর রাফসান পরম আদরে মুনকে বুকে নেয়। সবাই ওদের আলাদা টাইম স্পেন্ড করতে দিতে অন্য সাইডে চলে যায়।

রুবা, কাশু লাইটিং সাইডে যায়। রিয়া রাহুল বাহিরে। আর রোদেলা, আদ্রিয়ান সুইমিংপুল সাইডে আসে।

রোদেলা আর আদ্রিয়ান হেঁটে হেঁটে কথা বলছে।

রোদেলা: আজকে আমি অনেক খুশি। ফাইনালি ভাইয়া আর মুন এক হলো।
আদ্রিয়ান: হুম। তবে এখনো একটা জোরা বাকি আছে।
রোদেলা: জোরা কোন জোরা?
আদ্রিয়ান: আরাভ-রুবা।
রোদেলা: কিহ!!!!
আদ্রিয়ান: আস্তে! আস্তে! এভাবে কেউ চিল্লায়? লোকে শুনলে কি বলবে!
রোদেলা: আরাভ ভাইয়ার সাথে রুবা! কিভাবে কেমনে হইলো?
আদ্রিয়ান: আরে পাগল। আরাভ পছন্দ করে রুবাকে। রুবা ওকে পছন্দ করে কিনা জানিনা।
রোদেলা: আপনি কিভাবে জানলেন?
আদ্রিয়ান: আরাভ আমার বন্ধু কম ভাই বেশি। তাই ওর সব কিছুই আমি জানি।
রোদেলা: বাহরে আপনারা দুই বন্ধু আমাদের দুই বান্ধুবির পিছনে পরলেন কেন? হু?
আদ্রিয়ান: কারন তোমরা হচ্ছো মধুর চাক। মধু বেয়ে বেয়ে পরে তোমার থেকে তাই পরছি তোমাদের উপর।
রোদেলা: 😒😒
আদ্রিয়ান: কি হলো? মুখ বাঁকা করো কেন?
রোদেলা: কিছুনা চলুন চলুন।

আদ্রিয়ান আর রোদেলা কিছুক্ষন ঘুরে রাফসানদের কাছে আসলো। সবাই রাতের ডিনার করে একেবারে তারপর বাসায় আসলো।

৪দিন,,পর,,,,

দেখতে দেখতে রাহুল একটা ভালো জব পেয়েছে। ৪মাস সময় ঘনিয়ে আসছে। রাফসান রেডি হচ্ছে মা বাবাকে বলার জন্য। তারা বাসায় আসছে দুইদিন হলো। এর মাঝে আজকে রোদেলাদের একটা দাওয়াত আছে। কলেজের মাহিন আর তিথির বিয়ের দাওয়াত। তিথি রোদেলাদের ক্লাসমেট। আর মাহিন তাদের সিনিওর। কলেজের অনেকজনকে দাওয়াত করছে তারা। প্রেমের বিয়ে তাদের। অনেক স্ট্রাগল করে আজ তারা এক হচ্ছে। রোদেলা,মুন,কাশু রেডি হয়ে চলে আসে সেন্টারে। সেন্টারে এসে ওরা তিথির কাছে যায়। বেশ কিছু ছবি তুলে গল্প করে। স্টেজে বসে কাশুর চোখ গেলো সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকা কাউসারের দিকে। কাউসার আজকে ব্লাক কালারের পাঞ্জাবি পরে কাশু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে কাশুও আজলে ব্লাক ড্রেস পরছে।

কাউসার কথা বলতে বলতে নজর গেলো কাশফিয়ার দিকে। কাউসার কাশফিয়াকে দেখে একটা চোখ টিপ দিলো। কাশফিয়া সেটা দেখে লজ্জায় তাড়াতাড়ি চোখ ঘুরিয়ে নিলো। দেখতে দেখতে তিথি-মাহিনের বিয়ে হয়ে গেলো। তিথির বিদায়ের সময় সে অনেক কান্না করছিলো। বিয়ে বাড়ি থেকে আসতে অনেক রাত হয়ে গেলো।

রোদেলারা বাসায় আসার পর ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরে।

আরো ১দিন পর,,,,

আজ থেকে রোদেলা আদ্রিয়ানের বিয়ের তোরজোর শুরু হয়েগেছে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব কিছু।

রাফসান এখনো ওর আর মুনের কথা বলতে পারেনি। রোদেলার বিয়ের পর বলবে ভেবে নিয়েছে।

রোদেলারা শপিং করতে বেরিয়েছে। একটা গাড়িতে রোদেলা, আদ্রিয়ান। অন্য গাড়িতে মুন, রাফসান,কাশু রুবা।

আদ্রিয়ান ড্রাইভ করছে আদ আড়চোখে রোদেলাকে দেখছে।
রোদেলা: এতো দেখার কিছু নাই। আমি ফুরিয়ে যাচ্ছিনা যে এখনি দেখে রাখতে হবে।😒
আদ্রিয়ান: নিজের জিনিস দেখতে কারো অনুমতি আর সময় লাগেনা।
রোদেলা নিজের ব্যাগ থেকে একটা মরিচ বের করে আদ্রিয়ানের মুখের সামনে ধরে বলে,

রোদেলা: সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালান নাইলে এই মরিচ খাইয়ে দিবো।
আদ্রিয়ান: What🙄!
রোদেলা: হুহ। এটা নাগা মরিচ খাইলে আর দুনিয়ায় থাকবেন না হু। একদম মহাআকাশ ঘুরে আসবেন।

আদ্রিয়ান: তোমার পার্সে মরিচ কি করতে রাখছো?🙄
রোদেলা: আরে বইলেন না অনেক সময় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বখাটে জ্বালায়। তাই তাদের সাথে তর্ক না করে ঠুস করে এই মরিচ মুখে ঢুকিয়ে দেই ব্যাস কাম খাতাম, পেসা হাজাম।🤭

আদ্রিয়ান রোদেলা কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে মনে মনে বলে,

“ইয়া আল্লাহ কবে না জানি আমাকেও এই নাগা খাইয়ে মারে।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে