প্রেমময় আসক্তি পর্ব-১৪

0
1144

#প্রেমময়_আসক্তি ❣️
#পর্ব_১৪
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৪.

আইসিউ কেবিনের বেডে শুয়ে আছে আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের পাশের চেয়ারে বসে আছে রোদেলা। এমন একটা দিন তো আদ্রিয়ান তার পাশে বসে ছিলো আর সে ছিলো আদ্রিয়ানের জায়গায়। আদ্রিয়ানের চোখে ছিলো তাকে হারানোর ভয়। আর তার চোখে আজ অনুতাপ, কান্না, হারানোর ভয় সব আছে। রোদেলা আসতে করে আদ্রিয়ানের একটা হাত নিজের দুইহাতের মাঝে নিলো। রোদেলার আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,

রোদেলা: “কতটা পাগল আপনি আমার জন্য। একবারও নিজের জীবনের কথা ভাবলেননা! শুধু আমাকে বাঁচাতে নিজের জীবনটা দিয়ে দিতে চাইলেন। একবারও কি ভেবেছেন, যদি আপনার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমরা কিভাবে থাকবো? জানেন আদ্রিয়ান ভালোবাসার মতো সুপ্ত অনুভুতি আমার মনে কোনোদিন আসেনি। কারন আমি সেরকম কোনো ছেলের প্রতি হেল ছিলোনা। তবে আপনাকে দেখার পর একটা আলাদা কিছু অনুভব করেছিলাম আমি। তখন আমি জানতাম না আপনি একজন মাফিয়া। যেদিন আপনাকে ওই ছেলেটাকে মারতে দেখলাম সেদিন এক ধাক্কায় সব এলোমেলো লাগছিলো আমার। একজন মাফিয়াকে আমার ভালো লাগছিলো এটা ভেবে আরো খারাপ লাগছিলো। যখন আপনি আমার কাছে এসে নিজের ভালোবাসার কথা বলছিলেন ইচ্ছা করছিলো আমিও তাতে মন বসাই কিন্তু আপনার কাজের কথা মনে হলে সেটা পারিনি। আপনি ওইদিন আমাকে বাসায় নিয়ে যখন এই পথে আসার কারন জানালেন সেদিন আমি নিজেও অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। বিশ্বাস করুন আপনাকে জরিয়ে ধরে আমার শান্তনা দিতে ইচ্ছে করছিলো তবুও কেন জানি পারছিলাম না।
তবুও আপনার পাগলামো ভালোবাসা সব আমার কাছে ভালোলাগতো। শুধু ভয় লাগতো আপনার কাজের জন্য। এই কাজযে কতটা ভয়ানক কাজ। আপনাকে যদি আমার থেকে নিয়ে যায় এই ভয় আমাকে আপনার কাছে যেতে দিতোনা।

কিন্তু আজ আজকে কি হচ্ছে দেখুন সেই আপনি আমাকে একা রেখে যাওয়ার ফন্দি আঁটছেন। আপনি না বলেছিলেন আমাকে একা রেখে কোনোদিন যাবেননা। তাহলে এখন যেতে চাচ্ছেন কেনো? নাকি আমাকে শাস্তি দিচ্ছেন! এতোদিন আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি সেই জন্য। আচ্ছা শাস্তি দিন। কিন্তু আমাকে এভাবে একা রেখে চলে যেয়ে শাস্তি দিয়েন না। আমি আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকবো? আমাকে একা করে দিয়েন না। আমি থাকতে পারবোনা আপনাকে ছাড়া। আপনি কিন্তু প্রমিস করেছিলেন আমাকে একা রেখে যাবেন না। আমাকে আগলে রাখবেন। আমি ভালোবাসি আপনাকে। আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। হ্যাঁ, আদ্রিয়ান আমি ভালোবাসি আপনাকে। ফিরে আসুন আপনার রোদেলা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে দেখুন।

রোদেলা কান্না করে দেয় কথা গুলো বলতে বলতে থাকে। একজন নার্স এসে রোদেলা বাহিরে যেতে বলে। আরাভ এসে রোদেলাকে বাহিরে নিয়ে যায়। রাফসান হাসপাতালে এসেছে সে এসে সব শুনে অবাক আর কষ্ট দুটোই পেয়েছে। রাফসান রোদেলাকে নিয়ে যেতে চাইলে রোদেলা জানায় যে, যাবেনা।
তাই রাফসান মুন, রুবা আর কাশুকে নিয়ে গেলো।হাসপাতালে
আরাভ, রোদেলা, সায়মন, জন থেকে গেলো।

আদৃতা হাসপাতাল থেকে মাত্র বাসায় আসলো। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা হাসপাতালে গেছিলো সে। আরাভ কল দিয়ে জানিয়েছিলো একটা এমার্জেন্সি আছে। তাই সোজা এয়ারপোর্ট থেকে হাসপাতালে গেছে।

আদৃতা বাসায় এসে সোফায় বসলো। সার্ভেন্টস কে ডেকে এক গ্লাস পানি চাইলো। সার্ভেন্টস এসে তাকে পানি দিয়ে গেলো। আদৃতা পানি খাচ্ছে তখন একজন লোক সিড়ি দিয়ে নেমে আসলো আর আদ্রিতাকে বললো,

মিস্টার আশরাফ: অবশেষে বাবার প্রতি রাগ কমলো তাহলে?
আদৃতা পানি রেখে লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো,

আদৃতা: রাগ কমা বাড়ার কিছু নেই। আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই এসেছি। আবার ইচ্ছা হবে চলে যাবো।
মিস্টার আশরাফ: আমার প্রতি তোমার এতো রাগ কেনো? তুমি আজ পর্যন্ত আমাকে একবারের জন্য বাবা বলে ডাকোনি। কিসের রাগ তোমার আমার প্রতি।
আদৃতা: আপনি ভুলে গেলেও আমি ভুলবোনা মিস্টার খান। আপনি আমার মাকে আমার থেকে আলাদা করেছেন। আমার ভাইয়াকে আমার থেকে আলাদা করেছেন। আমার মাকে আমার চোখের সামনে মেরে ফেলেছেন। আমি এগুলো কোনোদিন ভুলবোনা। আপনাকে আমি বাবা বলে কোনোদিন মানিনি মানবোনা। যে বাবা জন্মের পর কোনোদিন এসে একটা খোঁজ নেয়নি, যে স্বামী একজন স্ত্রীকে সম্মান ভালোবাসা দেয়নি। যে বাবা তার বড় সন্তানকে অবহেলা করেছে তার মতো বাবা থাকার থেকে না থাকাই ভালো। আমি আজোও জানিনা আমার ভাইয়া কোথায় আছে। আদৌ সে এই দুনিয়ায় আছে কিনা তাও জানিনা। আমি আপনাকে কোনোদিন ক্ষমা করবোনা। আর একটা কথা আমি আগামীকাল আমার বাসায় উঠবো। আপনার এখানেও আমি আর থাকবোনা। অনেক খেয়েছি আপনার পাপের টাকায়। তখন অসহায় ছিলাম যাওয়ার কোনো জায়গা ছিলোনা। কিন্তু এখন আমি একজন প্রতিষ্ঠিত মানুষ। নিজের মতো থাকতে পারবো।

আদৃতা আর কথা বারায়না সোজা নিজের রুমে চলে যায়। আর মিস্টার আশরাফ রাগে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে।

আদৃতা নিজের রুমে এসে শাওয়ার নিতে ওয়াশরুমে যায়। একটা লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে সে। আদৃতা বারান্দায় গিয়ে বসলো। আদ্রিতার গলার লকেটটা খুলে হাতে নিলো। লকেটটাতে দুটো ছবি আছে একটা ওর মায়ের আর একটা ওর ভাইয়ার। ওরা যখন ছোট ছিলো তখন ওর মা ওদের দুই ভাইবোনকে এই লকেটটা দিয়েছিলো। ওর ভাইয়ার লকেটে ওর আর ওর মায়ের ছবি আর আদ্রিতার লকেটে ওর ভাইয়ার আর মায়ের ছবি। আর ওদের মায়ের কাছে যেই লকেটটা ছিলো সেটায় ওদের দুই ভাই বোনের ছবি ছিলো। আদৃতা লকেটটা নিয়ে একটা চুমু দিলো। চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো তার। আদৃতা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,

আদৃতা: তুমি কোথায় আছো ভাইয়া? আমার কথা কি তোমার মনে পরেনা? আমাকে কি তুমি মিস করোনা? ছোট থাকতে তো আমাকে কত জ্বালাতে। কতো খেলতাম আমরা। ভাইয়া এমন কেন হলো আমাদের সাথে। সব এলোমেলো করে দিলো লোকটা। আমি কোনোদিন তাকে মাফ করবোনা। কোনোদিন না।

আদৃতা উঠে রুমে আসলো। তখন ওর ফোনে কল দেয় হাসপাতালের নার্স। নার্স তাকে কল করে জানিয়েছে আদ্রিয়ান কিছুটা রেস্পন্স দিচ্ছে। আদৃতা সেটা শুনে বলে সকাল পর্যন্ত দেখতে। কল কেটে আদৃতা আদ্রিয়ানের কথা ভাবতে লাগলো।

আদৃতা: আজকের ওই লোকটাকে দেখে কেমন অনেক কাছের মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো উনি আমার কত যুগ কাছের। কিন্তু ওনাকে আমি আজই মাত্র দেখলাম।

সকালে,,,,

মুন রান্না ঘরে রান্না করছে। রোদেলা আর আরাভের জন্য নাস্তা নিয়ে যাবে হাসপাতালে।
রুবা ডাইনিং টেবিলে প্লেট সাজাচ্ছে তখন দরজায় কলিং বেল বাজলো। রুবা গিয়ে দরজা খুলে দেখে রিয়া দাঁড়ানো।

রিয়া: রাফসান আছে?
রুবা: জ্বি। ভিতরে আসুন আপু।

রুবা রিয়াকে ঘরে আসতে বলে। রিয়া ঘরে এসে সোজা রাফসানের রুমে চলে যায়। রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে সবটা দেখে মুন। বুকের মাঝের হাহাকার আবার শুরু হচ্ছে তার। মুন নিজ মনকে শান্ত করতে বলে,

“হায়রে মন কস্ট পাসনা। ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এর তো কথা নেই। থাকনা কিছু ভালোবাসা আড়ালে, থাকনা কিছু চাওয়া অপূর্ন। সব চাওয়াকি পুর্ন হয়। থাকনা ভালোবাসার মানুষটা অন্য কারো সাথে সুখি।
সেতো ভালোই আছে।”

মুন রান্না করে খাবার নিয়ে রুবা আর কাশুকে নিয়ে চলে যায় হাসপাতালে।

এদিকে,,,

রিয়া: রাফসান রাহুল আসতেছে।
রাফসান: কবে?
রিয়া: আগামীকাল।
রাফসান: আচ্ছা তুমি চিন্তা করোনা। আমি আছিতো।
রিয়া: তোমাকে আমি যত দেখি অবাক হই। কিভাবে পারছো বলতো এসব?
রাফসান: জানিনা। আমি হাসপাতালে যাবো এখন।
রিয়া: আচ্ছা ঠিক আছে।

মুন এসে দেখে রোদেলা বসে আছে আদ্রিয়ানের পাশে আর আরাভ অপরপাশে বসে আছে। আদৃতা কিছুক্ষনের মাঝে আসছে জানিয়েছে। আদ্রিয়ান অনেকটা রেস্পন্স করছে। সবাই আশা রাখছে ২৪ ঘন্টার মাঝেই জ্ঞান ফিরার। মুন এসে রোদেলার আর আরাভকে খাবার দিলো। জুঁই সকালে এসেছিলো আবার বাসায় গেছে দুপুরের খাবার সে নিয়ে আসবে।

কিছুক্ষনের মাঝে আদৃতা আসলো। এসে আদ্রিয়ানকে চেকাপ করলো। আর আশা দিলো জ্ঞান ফিরবে খুব তাড়াতাড়ি।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে