প্রেমময় আসক্তি পর্ব-০৬

0
1186

#প্রেমময়_আসক্তি
#পর্ব_৬
#নন্দিনী_চৌধুরী

৬.
দেখতে দেখতে ৪দিন চলে গেছে।রোদেলা এখন একদম সুস্থ আছে।হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসছে।রোদেলা বাসায় এসে একদম রেস্টে আছে মুন,রুবা,কাশু ওকে রেস্টে রেখেছে।আজকে রোদেলা কলেজে যাবে।অনেকদিন হয়েছে যায়না সে।অনেক ক্লাস তার মিস গিয়েছে।রোদেলা রেডি হচ্ছে একটা কালো রং এর থ্রিপিজ পরেছে সে।চুল গুলো বেনী করে নিয়েছে।হাতে ঘড়ি পরে ব্যাগ নিয়ে রেডি সে।৪জনেই রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলো কলেজের জন্য।কলেজে এসে ওরা দেখলো কলেজে কিসের আয়োজন করা হচ্ছে।ওরা ৪জন বুজতে পারলোনা কিসের আয়োজন করা হচ্ছে।ওরা ৪জন ওদের ক্লাসে গিয়ে অন্যদের থেকে জানতে পারলো আজকে কলেজে কলেজের নতুন ট্রাস্টি আসবে।সেই জন্য কলেজে আয়োজন করা হচ্ছে।রোদেলারা কথায় কথায় জানতে পারে নিউ ট্রাস্টির নাম আদ্রিয়ান খান আমান।অনেক মেয়েরা নাম শুনেই কানাকানি শুরু করে দিয়েছে।কিছু মেয়েরা এভাবেই বলছে,

“ইসস নামটা এতো জোস না জানি লোকটা কত জোস হবে।
” হ্যা যদি হেন্ডু হয় তাহলে আমি সিওর তাকে পোটাবো।

এসব কথা শুনে রোদেলা মুনকে বলে,

রোদেলাঃদেখ মাত্র নাম শুনে এমন করছে আসলে তো মনে হয় খেয়েই ফেলবে।
মুনঃযা বলছিস।আমিতো ভাবি অই বেটা যদি বুইড়া হয় তাইলে কি হইবো।এদের এই এতো স্বপ্ন শুরু হবার আগের শেষ হয়ে যাবে।তাতে আমার কি আমার তো আমার রাফু আছেনা।আমার ওইসবের দিকে কোনো নজর নাই।
রুবাঃরাফু কে আবার?
মুনঃআরে রাফসানের কথাই বলছি রাফসানকেই আমি রাফু বলি।
কাশুঃওওওওওওওও।রাফু দ্যা জামাইভাইয়া।
রোদেলাঃআচ্ছা চল চল অদিকে যাই।

তারপর ওরা চলে আসে নিচে ক্যাম্পাসে।ঘন্টা খানের বাদেই চলে আসে সবার অপেক্ষিত মানুষটা।একটা ব্লাক গাড়ি কলেজের গেট দিয়ে ডুকলো।সবাই তাকিয়ে আছে সেটার দিকে।গাড়িটা থামার পর গাড়ির দরজা খুলে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে একটা ব্লাক শার্ট ব্লাক পেন্ট ক্লাস সানগ্লাস পরা আদ্রিয়ান।আদ্রিয়ানের আজকের লুক যেকোনো মেয়েকে তার প্রতি ঘায়েল করার জন্য যথেস্ট।রোদেলা সহ সবাই তাকিয়ে আছে আদ্রিয়ানের দিকে।প্রিন্সিপাল একটা ফুলের বুকে নিয়ে আদ্রিয়ানের কাছে গিয়ে তাকে স্বাগতম জানালো।একে একে সবাই এসে তাকে স্বাগতম জানালো।এরপর আদ্রিয়ানকে নিয়ে প্রিন্সিপাল সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।মেয়েরা আদ্রিয়ানকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।কিন্তু আদ্রিয়ানের চোখ সানগ্লাসের ভিতর থেকে শুধু তার নেশামইয়ের দিকেই।রোদেলার আদ্রিয়ানকে দেখে থমকে গেছে।আসলেই তার ভাবনার থেকে একদম আলাদা লোকটা।আদ্রিয়ান সবার সাথে পরিচয় হতে হতে এভার রোদেলার কাছে আসলো।আদ্রিয়ান রোদেলার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,

আদ্রিয়ান:হাই আমি আদ্রিয়ান।
রোদেলা আদ্রিয়ানের সাথে হাত মিলিয়ে বলে,
রোদেলা:হ্যালো স্যার আমি রোদেলা।
আদ্রিয়ান:রোদেলাময়।
আদ্রিয়ানের মুখে এমন একটা কথা শুনে চমকে গেলো রোদেলা।অবাক হয়ে বলে,

রোদেলা:কি স্যার।
আদ্রিয়ান:নাথিং।নাইস টু মিট ইউ।

আদ্রিয়ান বাকিদের পরিচয় হয়ে চলে গেলো প্রিন্সিপালের সাথে।আদ্রিয়ান চলে যেতেই সবাই ওর কথা নিয়ে পরলো।ও কথা হেন্ডসাম,ওর চোখ এমন ওর ঠোঁট এমন।

রোদেলারাও মিলে একই আলোচনা করছে।

রুবা:বাবারে এতো একদক জেন্টালমেন।
কাশফিয়া:হুম কাউকে পাত্তা দেয়না।
মুন:নামের সাথে ভাবের মিল ও আছে।
রোদেলাঃহুম ঠিক বলেছিস।
মুনঃকিন্তু ওনাকে আমার অনেক চেনা চেনা মনে হচ্ছে কোথায় যেনো দেখেছিলাম।
কাশফিয়াঃতুই আবার একে কই দেখলি।
মুনঃসেটাইতো মনে পরছেনা।
রোদেলাঃআচ্ছা চল এখানে না দাঁড়িয়ে থেকে আমরা ক্লাসে যাই।
রুবাঃহ্যা চল।

এদিকে,,,,,,,
রাফসান ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।তখন রোদেলার মা রাফসানের রুমে আসলো।রাফসানের মা রুমে এসে রাফসানকে ডাক দিলো।

রোদেলার মাঃরাফসান বাবা শোন।
রাফসান ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
রাফসানঃহ্যা মা বলো।
রোদেলার মাঃতোর সাথে কিছু কথা ছিলো।
রাফসান ল্যাপটপ পাশে রেখে ওর মাকে বলে,
রাফসানঃহ্যা বলো এদিকে এসে বসে বলো।
রোদেলার মা বিছানায় গিয়ে বসলেন।
মা বসতেই রাফসান মায়ের কোলে মাথা রাখলো।কতদিন কাজের চাপে মায়ের থেকে আদর খাওয়া হয়না।রাফসানের মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আর বলছেন,

রাফসানের মাঃরাফসান শোন তোর বাবা তোর বিয়ে দিতে চাচ্ছে।তুই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছিস।এখন তোর বিয়ের বয়স হয়েছে।তাই তোর বাবা তোকে বিয়ে দিতে চায়।সে জানতে চাচ্ছে তোর কোনো পছন্দ আছে কিনা।থাকলে জানাতে আমারা তাহলে সেখানেই তোর বিয়ে দিতাম।

রাফসান মায়ের কথা মন দিয়ে শুনলো।মায়ের দিকে তাকিয়ে সে বললো,

রাফসানঃআমার কোনো পছন্দ নেই মা।বাবার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করুক।
রাফসানের মাঃআচ্ছা ঠিক আছে।
রাফসানঃমা ৩দিন পর আমি ঢাকা যাচ্ছি।অফিসের কাজে আসবো ১মাস পর।
রাফসানের মাঃতাহলেতো ১মাস পর বিয়ের কথা বার্তা শুরু করি।আর তুই যখন যাচ্ছিস রোদেলাকে সাথে নিয়ে আসিস।মেয়েটাকে কতদিন দেখিনা।
রাফসানঃআচ্ছা ঠিক আছে মা।

রাফসানের মাথায় আরো কিছুক্ষন হাত বুলিয়ে রাফসানের মা চলে গেলেন।আর এদিকে রাফসান ফ্যানের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে বলতে লাগলো,

আমি তোমাকে কি ভালোবাসি।আমি সেটা জানিনা।কিন্তু আজকে বিয়ের কথা শুনে খারাপ লাগছে কেন তোমার জন্য।মনে হচ্ছে তোমার থেকে দুরে সরে যাবো।জানিনা এটা কেন হচ্ছে।

রোদেলারা কলেজ শেষ করে বাসায় চলে আসে।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেয়।রোদেলার মাথায় এখনো আদ্রিয়ান ঘুরছে।কেন জানি লোকটাকে দেখার পর থেকে এমন হচ্ছে।রোদেলা বাসায় কল দিয়ে বাবা মায়ের সাথে কথা বলে।তারপর একটু ঘুমিয়ে নেয়।সন্ধ্যায় রোদেলা পড়তে বসেছে মুন নাস্তা বানাচ্ছে রুবা লেখছে কাশফিয়া মটিতে মাথা রেখে আর খাটে পা উঠিয়ে দিয়ে বই পড়ছে।তখন হঠ্যাৎ ওদের দরজায় কড়া নাড়ে কেউ।রোদেলা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে কেউ নেই।দরজার নিচে একটা পার্সেল।রোদেলা পার্সেলটা হাতে নিয়ে আসেপাসে তাকিয়েও কাউকে পেলোনা।রোদেলা পার্সেল নিয়ে রুমে আসলো।রোদেলার হাতে পার্সেল দেখে রুবা,মুন,কাশু অবাক হলো।
রোদেলা পার্সেল নিয়ে খাটে বসলো।

রুবাঃএটা কে দিলো?
রোদেলাঃজানিনা দরজার সামনে কে জানি রেখে গেছে।
কাশুঃখুলে দেখ কি আছে ভিতরে।
মুনঃএভাবে একটা অচেনা পার্সেল খোলা ঠিক হবে?
রোদেলাঃআসছে যখন খুলে দেখি।

রোদেলা পার্সেলটা খুললো।অনেক গুলো জামা, চোকলেট,চুড়ি পার্সেলে।সাথে একটা চিরকুট,,,

“নেশামই এগুলো আমার থেকে তোমাকে কিছু ছোট উপহার।অনেক আগে এগুলো তোমার জন্য কিনেছিলাম।আজ পাঠিয়ে দিলাম।আশা করি তোমার ভালো লাগবে।ভালোবাসি নেশামই।”

চিরকুট পরে রোদেলা অবাক হয়ে যায় সাথে বাকিরাও।

কাশফিয়াঃএ আবার কে এলোরে🙂।
রুবাঃনেশামই👻আহা।
মুনঃতোর কোনো গোপন প্রেমিক।
রোদেলাঃদুর কিসের প্রেমিক।আমিতো জানিইনা এটা কে দিছে।আর এই পার্সেলে না আছে না না আছে ঠিকানা।কিভাবে বুজবো কে দিছে।
মুনঃআচ্ছা চিন্তা করিস না। দেখ এরপর এরকম করে কিনা।তাহলে রাফুকে বলবি।

রোদেলা পার্সেল রেখে আবার পড়তে বসে যায়।আর বাকিরাও নিজেদের কাজে মন দেয়।

রাত,,,৩টা,,,,

আদ্রিয়ানের সুইমিংপুলে বেধে রাখা হয়েছে একজনকে।আদ্রিয়ান তার সামনে দাঁড়ানো।লোকটার চোখে মুখে আতংক।আর আদ্রিয়ানের মুখে বাঁকা হাসি।

আদ্রিয়ানঃকিরে এখন এতো ভয় পাচ্ছিস কেন।আমার জানকে যখন মারতে গেছিলি তখন তো এই ভয় পাসনি।তাহলে এখন ভয় পাচ্ছিস কেন।
লোকটাঃআদ্রিয়ান আমাকে মাফ করে দেন আমার ভুল হয়েগেছে।
আদ্রিয়ান লোকটার কথা শুনে হোহো করে হাসতে লাগলো।তারপর চিল্লিয়ে বললো,

আদ্রিয়ানঃক্ষমা!এই আদ্রিয়ানের ডিকশোনারিতে ক্ষমা নামক শব্দ নেই।আমার কাছে অন্যায়ের শাস্তি একটাই আর সেটা এখোনি দেখবি তুই।

আদ্রিয়ান জনকে ইশারা করতে জন একটা বড় ধারালো চাকু এনে আদ্রিয়ানের হাতে দিলো।লোকটা ভয়ে এভার শেষ।সে বুজে গেছে আজ তার শেষদিন।

আদ্রিয়ানঃএই হাত দিয়েই তো আমার রোদেলাকে ধাক্কা মেরেছিলি তাইনা নে এভার।

বলেই আদ্রিয়ান এক কোপে লোকটার হাত ওর বাহু থেকে আলাদা করে দিলো।আর লোকটা গলা কাঁটা মুরগির মতো ধরফর করতে লাগলো।একে একে কোঁপ দিতে দিয়ে লোকটা পুরা দেহ আলাদা করে দিলো আর সব গুলা খন্ড টুইংকেল আর টাইগারকে খেতে দিলো।

আদ্রিয়ান নিজে নিজে বলতে লাগলো,

আমার নেশামই আমার জীবন।ওর দিকে চোখ তুলে তাকালেও তাকে এভাবে মরতে হবে।আমার নেশামইয়ের দিকে কারো হাত বাড়াতে দেবোনা আমি।খুব শিগ্রই নেশামইকে নিয়ে আসবো নিজের কাছে।

#চলবে

ভুল ত্রুটি মাফ করবেন🙂।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে