প্রিয়সীর চিরকুট পর্বঃ ০১

0
1947

প্রিয়সীর চিরকুট পর্বঃ ০১
– আবির খান

আজ খুব দেরি হয়ে গেলো ঘুম থেকে উঠতে। কলেজে যেতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে কোনো রকম রেডি হয়ে হিজাবে পিনটা লাগিয়ে নাস্তা করে বেড়িয়ে পরি কলেজের উদ্দেশ্যে। বড্ড দেরি হয়েছেরে আজ। বাইরে এসে তাড়াতাড়ি হেঁটে সোজা বাস স্ট্যান্ডে চলে আসি। বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। খেয়াল করলাম, আজ আকাশটা বাকি দিনের মতো সূর্যের আলোতে ঝকমক করছে না। আজ আকাশটা ঠিক আমার মনের মতো। ঘন কালো মেঘে পুরো আকাশ ছেয়ে আছে। এই বুঝি বৃষ্টি নামলো বলে। মেঘলা দিন আমার খুব প্রিয়। কারণ মেঘলা মানেই বিষন্নতা। তবে বাকিদের মতো মেঘলা দিন দেখলে আমার মনে কিন্তু কোনো সাড়া দেয় না। কোনো ভয় কিংবা লোমখাড়া হয়না। ওই যে আমার একাকিত্বতা আমাকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছে। তাই মেঘলার এই দিনে কারো হাতে হাত রেখে কাঁধে কাঁধ মিলেয়ে হাঁটার ইচ্ছেটুকু আমি মনে আসতে দিনা। কারণ একাকিত্বই আমার স্বভাব হয়ে গিয়েছে। রাস্তা দিয়ে যখন হেঁটে যাই তখন জুটিদের দেখে কিন্তু আগের মতো আমার ঠোঁটের কোনায় বাকা হাসিটা ঠিকই থাকে। শুধু কারো হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটার বাসনাটা আর আগের মতো নেই। নেই গোধূলি বিকেলে পাখিদের নীড়ে ফেরা আর রক্তিম আকাশ দেখার ইচ্ছেটাও। কারণ?? আমার একাকিত্ব।

এতোটুকু পড়ে হয়তে খুব জানতে ইচ্ছা করছে আমি কে তাইনা?? আমি খুবই সাধারণ একটা মেয়ে। যার এই দুনিয়াতে বাঁচা খুব কঠিন। কেনো জানেন?? কারণ আমার বাবা নেই। আছে শুধু মা। প্রিয় মা আমার নানা বাড়ি থাকে। আমি আমার খালামনির কাছে থেকেই কলেজ করছি। কারণ তার বাসা থেকে কলেজটা অনেক কাছে। আমার নাম কি খুব জানতে ইচ্ছা করছে?? আচ্ছা না বলি। অন্য আরেক দিন বলবো হয়তো। আজ না বলি।

এই মেঘলা দিনে মনটা আজ একটু বেশিই বিষন্ন। কারণ আমার প্রিয় পিচ্চি লেখক আবির খানের আইডিটা আজ দুদিন ধরে খুঁজে পাচ্ছিনা। পাগলের মতো খুঁজেছি তাও পাইনি। সেই আজ থেকে ৩ মাস আগে তার রোমান্টিক গল্প পড়া শুরু করি। তার গল্পগুলো ছিল আমার সময় কাটানোর বন্ধু। কিন্তু সেও আজ নাই।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছি। হঠাৎই মেঘের গর্জন কানে ভেসে আসলো। একটু কেঁপে উঠলাম। পরক্ষণেই মনে পরলো তাড়াহুড়ায় ছাতাটা আজ সাথে আনা হয়নি। অথচ রোদ থাকলেও ছাতাটা আমার সাথেই থাকে সবসময়। কারণ ছাতাটা আমার নানার দেওয়া। আসলেই তাড়াহুড়োর সময় মূল্যবান জিনিসটাই পিছু রয়ে যায়। আকাশের যে আজ অবস্থা দেখছি না জানি কি আছে আজ কপালে।

সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু বাসের দেখা নাই। সত্যিই প্রয়োজনের সময় কিছু পাওয়া যায়না। ওই যে একটা বাস এসেছে। কিন্তু পরপর সব বাসকেই আমার বাদ দিতো হলো। কারণ, কিছু বাসে হয়তো লোক অনেক বেশি। আবার কিছু বাসে সবই ছেলে। আমি স্বভাবতই বেশ লাজুক প্রকৃতির। এতোগুলো ছেলের মাঝে আমি একা মেয়ে মানুষ যাবো আমারতো ভাবতেই শরীর কাঁপছে। এইতো সেদিন ক্লাস মিস যাবে বলে যে বাস পেয়েছি সেটাই উঠে পরি। একি, উঠেতো আমি পুরো অবাক। একটা মেয়েও নেই। সব ছেলে। পাক্কা ১০ টি মিনিট আমি আল্লাহকে ডেকেছি। বাস থেকে নেমে যেন আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি। বাসে ১০ মিনিটের পথ হেঁটে গেলে হয়তো ২০ মিনিটই লাগবে। কিন্তু হেঁটে যাই না কেনো তাইনা?? হাঁটবো কি করে আমি যে অসুস্থ। হাঁটতে খুব কষ্ট হয়। আগে হেঁটে যেতাম। এখন আর পারিনা। এরপর আরো দুটো বাস মিস গেলো। কারণ এরা প্রতিদিনের তুলনায় ভাড়াটা বেশি চেয়েছে। যা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমি একটু সঞ্চয়ি। বিপদের সময় একটা টাকাও অনেক কিছু।

আর সাত পাঁচ না ভেবে শুরু করলাম হাঁটা। অসুস্থতার কথা যেন আমার মনেই নেই। আমার প্রিয় মেঘলা আকাশটাকে সঙ্গী করে হাঁটে চলছি রাস্তা দিয়ে আপন মনে। কিছুটা পথ পার করতেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিটা বেরে গেলে যে আমি ভিজে যাবো সেদিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কারণ এই মেঘলা আকাশের মাঝে আমি যেন হারিয়ে গিয়েছি। আস্তে আস্তে হাঁটছি আর এটা ওটা ভাবছি। যে ভাবনা গুলোর হয়তো কোনো দিন বাস্তবিক রূপ হবে না। কিন্তু হঠাৎই আমার এই ভাবনায় ছেদ পরে কারো গলার স্বর শুনে। আমি পাশ ফিরতেই কে যেন বলে উঠলো, “এভাবে আর কত ভিজবেন??” আমি তার দিকে এবার ভালো করে তাকিয়ে দেখি, সে তার ছাতিটা আমার উপর দিয়ে মিটমিট করে হাসছে। ছাতির এক অংশ আমার উপর আর এক অংশ তার উপর। তার হাসি আর কান্ড দেখে আমার মেজাজটা সাথে সাথেই বিগড়ে গেল। স্বভাবতই আমার কোনো বিষয়ে কেউ হস্তক্ষেপ করলে আমি তা মোটেও সহ্য করতে পারি না। তাই আমি তাকে রাগী ভাবে ধমকের স্বরে বললাম,”কে বলেছে আমার পার্সোনাল বিষয়ে আপনাকে নাক গলাতে?? যান এখান থেকে।” এই বলেই আমি আর পিছনে না তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি কলেজে। বিষন্ন মনটা হঠাৎই আরো খারাপ হয়ে যায় সেই ছেলেটার জন্য। সেতো আমাকে ছাতা দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছিলো আর সেই আমি শুধু শুধু তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে চলে আসছি। হয়তো আমি যাওয়ার পর আমাকে খুব খারাপ ভাবছেন উনি। ধুর আমি যে দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছি। এসব ভাবছি হঠাৎই কলেজের বেলটা বেজে উঠে। আমি তাড়াতাড়ি ক্লাসে চলে যাই ক্লাস শুরু হওয়ার ভয়ে।

দীর্ঘ চারটি ঘন্টা টানা ক্লাস করার পর অবশেষে ছুটি হলো। বাইরে এসে দেখি আকাশটা এখন বেশ শান্ত। বৃষ্টিও কমেছে। কালো মেঘগুলো সরে সূর্যমামা তার আলো ছড়াতে শুরু করেছে। এক অন্যরকম আভা ধারণ করেছে এখন আমার আকাশটা। ভিজে আসার কারণে শরীরটা এখন বেশ খারাপ লাগছে। সর্দি জ্বর হবে বলে মনে হচ্ছে। এরপর হাঁটতে হাঁটতে চলে আসি বাসায়। এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা’টা এলিয়ে দেওয়া মাত্রই হারিয়ে যাই ঘুমের দেশে।

সন্ধ্যা ৭.৩৪ মিনিট,

আস্তে করে চোখটা মিলে তাকিয়ে দেখি পাশে ঔষধ, পানি আর কাপড় রাখা৷ মানে জ্বরটা বোধহয় এসেই গিয়েছিলো। তাই খালামনি জলপট্টি দিয়েছিলো। সাথে ঔষধও এনেছে। জ্বরের কারণেই হয়তো এতোক্ষণ ঘুমালাম। হঠাৎই খালামনি আমার রুমে আসলেন আর বললেন,

— কি মামনি, এভাবে জ্বর বাধালে কি করে? নিশ্চয়ই বৃষ্টিতে ভিজেছো??

আমি আমতা আমতা করে বললাম,

— আসলে আজ ছাতাটা নিতপ একদমই খেয়াল ছিলো না। তাই ভিজতে হলো।

— আচ্ছা সমস্যা নেই। ঔষধ খেলেই জ্বর পালাবে।

এভাবে খালামনির সাথে কিছুক্ষণ গল্প করলাম। রাত এখন প্রায় ৯ টা বাজে। আর শুয়ে শুয়ে ভালো লাগছে না। তাই উঠে কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম। টিভি দেখে রাতের খাবার আর ঔষধ খেয়ে আবার ঘুমাতে আসলাম। বিছানায় চুপচাপ শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না। কারণ সেই একজনই। উনার কথা বারবার মনে পরছে আর মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কেনো যে ওনার সাথে এমন করলাম। নাহ আর ভাবতে পারছি না। এখন ঘুমাই কাল কলেজ আছে। এরপর অনেকটা সময় উনাকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই আমি ঘুমিয়ে পরি।

পরদিন সকাল ৫.১৭ মিনিট,

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেলো। হয়তো কাল রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরেছিলাম তাই। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নামাজ পড়ে জানালার পাশে বই নিয়ে পড়তে বসলাম। একদম কলেজে জাওয়ার আগ পর্যন্ত পড়লাম। এরপর উঠে রেডি হয়ে খেয়ে বেড়িয়ে পরলাম কলেজের উদ্দেশ্যে। যথারীতি আজও বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। ওইযে আজ বাস এসে পরেছে। আমি হাত দিয়ে থামাতে বললাম।কিন্তু পরক্ষণেই মনে পড়লো ওনার কথা। আজ ওনাকে সরি বলতে হবে। গতকাল বড্ড বেশি করে ফেলেছি। তাই আর বাসে উঠলাম না। বাসের কন্টাক্টর কি কি যেন বলতে বলতে চলে গেলো। আমার অনেক রাগ হলো। পঁচা লোক। আর যাবোই না কোনো দিন এই বাসে। এবার শুরু করলাম সেই পরিচিত পথে হাঁটা অপরিচিতকে সরি বলার জন্য। কাল সে হেঁটেই যাচ্ছিলো এই পথ দিয়ে৷ তাই ভাবলাম আজও হয়তো পাওয়া যেতে পারে। হয়তো তার বাসা এখানে কোথাও। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আমি গম্ভীর হয়ে গেলাম। খানিকটা বিচলিত হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি কালকের ঠিক একই জায়গায় সেই উনি মানে সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। আমিতো…

চলবে….

কেমন লেগেছে এই পর্বটি?? জানাবেন কিন্তু। সবার গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। সাথে থাকবেন সবসময়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে