প্রিয় আসক্তি পর্ব-১২+১৩

0
1300

#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ১২
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

সকাল সাড়ে দশটার কাছাকাছি, ক্যাফেতে বসে আছে আলিশা ও আনান। মূলত তারা তাহি’র জন্য অপেক্ষা করছে। তাদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগমন ঘটে তাহির।

তাহি এসে বসে টুকটাক কথা বলে কফি অর্ডার করে, কফি এলে কফিতে এক চুমুক দিয়ে বলে,

এবার বলা শুরু করো, কি কি জানো তোমরা, আর কি কি ইনফরমেশন কালেক্ট করেছো।

-মির্জা পুরের নাম সাধারণত মির্জা জমিদারের কারণেই হয়েছে। আমরা যতোটুকু জানতে পেরেছি, মির্জা বাড়ির জমিদার বেঁচে নেই। তবে উনার বংশধর মানে দুই ছেলে আবার তাদের ছেলে মেয়ে আছে। তারা কেউই জমিদার বাড়িতে থাকে না। সবাই শহরে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে। তবে বছরে তারা একবার সবাই একসাথে মির্জা বাড়িতে হাজির হয়। তখন সবাই এক সাথে মিলে সময় কাটায়। মির্জা জমিদারের দুই সন্তান। আরিফ মির্জা ও আরিয়ান মির্জা। আরিফ মির্জার এক ছেলে আছে। বর্তমানে সে একজন সফল বিজনেস ম্যান। সবাই এক নামে চিনে।(আনান)

– কি নাম সেই বিজনেস ম্যানের?(তাহি)

– আরাধ্য মির্জা। আরিফ মির্জার একমাত্র সন্তান। আরিয়ান মির্জার ও ছেলে আছে। এক ছেলে এক মেয়ে। আরাফ মির্জা ও মেয়ে আরশি মির্জা।(আলিশা)

আরাধ্য মির্জা তার বাবা ও মা কে নিয়ে ঢাকার মিরপুরে নিজের বাড়িতে থাকেন। আরাফ মির্জার মা নেই। নিজের বোন ও বাবাকে নিয়ে তিনিও আরাধ্য মির্জার বাড়ির পাশেই বাড়ি বানিয়েছেন, সেখানেই থাকেন। তবে তিনি বিদেশে বেশি যাতায়াত করেন। কেনো করেন সেটা জানতে চাইলে আরাফ মির্জা বলেছেন তিনি ব্যবসায়ীক কাজে বিদেশে আসা যাওয়া করেন বেশি।
তবে মজার ব্যাপার হলো, যেখানে আরাধ্য মির্জা এতো বড় ব্যবসায়ী হয়েও মাসে একবারো বিদেশে যান কি না সন্দেহ, মানে তিনি সবকিছু অনলাইনেই করেন, বিদেশে বেশি যান না, সেখানে আরাফ মির্জা আরাধ্য মির্জার থেকে ব্যবসার তুলনায় একটু নিচুতে, সেখানে আরাফ মির্জা এতো বার বিদেশ যাতায়াত করেন।(আলিশা)

– আরাফ মির্জার কোনো রেকর্ড আছে? মানে থানায় বা আইনি কোনো রেকর্ড?(তাহি)

– হ্যা আছে, প্রায় দুইবছর আগে আরাফ মির্জার ব্যবসায়ীক মাল বহন করা ট্রাকে ড্রাগস পাওয়া গেছে। পড়ে তিনি বলেন, এগুলো থাকে ফাসানোর জন্য তার কোনো শত্রু করেছে। আর পরে এসব নিয়ে কোনো ঘাটাঘাটি হয়নি। টাকা খাইয়ে পুলিশের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন।(আনান)

– ওকে ধন্যবাদ। আমি খুব শীগ্রই এই কেইসের দায়িত্ব নিবো, আর আমার সাথে তোমরা দুজনও থাকবে।(তাহি)

– শিওর ম্যাম, আমরা আপনার সাথে এই কেইসে কাজ করতে চাই। (আনান ও আলিশা)

– তো ওই কথায় রইলো, মোবাইলে যোগাযোগ হবে, আমিও দুইদিনের ভিতরে পারমিশন নিয়ে এই কেইস নিয়ে তদন্তের কাজে নামবো। তোমাদের জানাবো, ভালো থেকো।(তাহি)

– জ্বি ম্যাম। আপনিও,(আনান ও আলিশা)





চেম্বারে রোগী দেখতে ব্যস্ত নিষ্প্রভ। ডাক্তারদের ছুটি নেই। এই রোগী দেখা তো লেগেই থাকে। সাথে সার্জারী তো আছেই। দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেছে তাই নিষ্প্রভ আরেকটা রোগী দেখে খেতে যাবে।চেম্বারের দরজায় নক করলো কেউ, নিষ্প্রভ ‘কাম’ বলে অনুমতি দিলো।

একটি মেয়ে এসে দাড়ালো, নিষ্প্রভ এক পলক তাকিয়ে বললো ‘ সিট’, মেয়েটি বসলো। নিষ্প্রভ বলে,

– আপনার সমস্যা বলুন।

মেয়েটির মুখ উড়না দিয়ে ঢাকা ছিলো। নিষ্প্রভের কথা শুনে মুখ থেকে উড়না সরিয়ে দিলো।
নিষ্প্রভ মেয়েটির মুখের দিকে থাকাতেই চমকে উঠলো। সারা মুখে মারের দাগ।

– আপনার এই অবস্থা কেনো?

– শুধু মুখেই না, সম্পূর্ণ শরীরে ও আছে। ফুল হাতা জামা পড়ার জন্য দেখতে পাচ্ছেন না।

– আপনার এই অবস্থা কে করেছে?

– সে অনেক কাহিনি। আগে আপনার মোবাইল টা দিন তো।

– মোবাইল দিয়ে কি করবেন?

– পুলিশকে ফোন করবো।

– পুলিশকে ফোন করে কি করবেন?আমাকে বলুন, আমি দেখি আপনার কোনো সাহায্য করতে পারি কি না।


তখনই সেখানে তাহি’র আগমন ঘটে, চেম্বারে অন্য কারো প্রবেশ ঘটেছে বুঝতে পেরে মেয়েটি, আবার নিজের মুখ ঢেকে নেয়। তাহি হুরমুর করে ডুকে নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকায়। নিষ্প্রভের দিকে একবার সামনে বসা মেয়ের দিকে একবার থাকায়।

– এখন তো খাবার টাইম ডাক্তার সাহেব, তাহলে আপনি এখনো রোগী দেখছেন কেনো?(তাহি)

– হ্যা আসলে খেতেই যাচ্ছিলাম, তখনই এই মেয়েটি চলে আসে, তাই ভাবলাম দেখে তারপর যাই।(নিষ্প্রভ)

– তো দেখুন, তারাতারি, আমি আর আপনি একসাথে দুপুরের খাবার খাবো আজ। (তাহি)

– কিন্তু তাহি, তার আগে এই মেয়ের সমস্যা জানতে হবে, মেয়েটি এসেই বলছে পুলিশ কে ফোন করবে। আর মেয়েটির মুখে ও শরীরে মারের দাগ। (নিষ্প্রভ)

– হুয়াট! কোথায় দেখি তো। বলেই মেয়েটির পাশে এসে দাড়ালো তাহি। মেয়েটি নিজের মুখ থেকে আবারো উড়না সরায়। মুখ দেখে চমকে উঠে তাহি। কতো নিষ্পাপ একটি মেয়ে,। কিন্তু মেয়েটির এই অবস্থা কেনো?
– তোমার এই অবস্থা কেনো? কে করেছে এসব?, (তাহি)

– বলবো, আগে আমাকে পুলিশকে ফোন করতে দিন, প্লিজ।(মেয়েটি)

– আমি একজন আইনের অফিসার হই। তুমি আমাকে বলতে পারো।(তাহি)

– হ্যা বলুন আপনার এই অবস্থা কে করেছে, আমরা সাহায্য করবো আপনাকে।(নিষ্প্রভ)

– শুনোন তাহলে। আমি আরশি মির্জা। আরিয়ান মির্জার মেয়ে ও আরাফ মির্জার বোন। আমার বাবা ও ভাই অনেক খারাপ কাজ করে, আমি সেগুলো জানতে পেরে ওদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করি। তার জন্য ওরা আমাকে মেরেছিলো। যে বাবা কখনো আমার গায়ে ফুলের ঠুকা দিতো না সেই বাবা আমাকে চাবুক দিয়ে মেরে এই অবস্থা করেছে। যেই ভাই আমার গায়ে কখনো হাত তুলতো না সেই ভাই আমার গালে থাপ্পড় মেরেছে। মুখে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে। গাল দিয়ে রক্ত পড়েছে৷ তবুও ফিরে থাকায় নি আমার দিকে। আমি আজ অনেক কষ্টে পালিয়ে এসেছি। কোথায় যাবো বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ চোখ যায় হাসপাতালের দিকে, তাই আপনার চেম্বারে চলে এসেছি। বলেই ডুকরে কেঁদে উঠে আরশি। অনেক কষ্টে নিজের কান্না আটকে রেখেছিলো সে।

নিষ্প্রভের চোখে মুখে বিস্ময়। এই টুকো একটা মেয়েকে এতো অত্যাচার করেছে। তাও কি না নিজের বাবা ও ভাই?

তাহি নিশ্চুপ হয়ে গেছে। এই তাহলে আরশি। আরশি মির্জা যার কথা সকালে আনান ও আলিশা বলেছিলো থাকে। তার মানে মির্জা পুরের ওইসব ঘটনা গুলোর সাথে সত্যিই মির্জা পরিবারের সম্পর্ক আছে।

– তুমি আরশি মির্জা? মানে মির্জা জমিদার বংশের ছেলে আরিয়ান মির্জার মেয়ে? (তাহি)

-হ্যা, কিন্তু আপনি এতো কিছু কি করে জানেন? (আরশি)

– সে অনেক কথা, ভালোই হলো তোমাকে পেয়ে গেলাম, কেইস স্লভ্ করতে সহজ হবে(তাহি)

– কিসের কেইস? (নিষ্প্রভ)

– গতকাল আমরা জঙ্গলে গিয়ে জেনেছিলাম না, ওখানের মানুষ কিডন্যাপ হতো, আর কয়েকদিন পরে ওদের শরীরের মূল্যবান জিনিস গুলো নিয়ে ফেলে চলে যেতো?(তাহি)

-হ্যা, কিন্তু এর সাথে আরশির কি সম্পর্ক?

– সম্পর্ক আছে ডাক্তার সাহেব। আমি আজ আনানদের সাথে মিট করেছি। সব কিছু জেনেছি। আর এখন আরশির কথা শুনে আমি শিওর এসবের সাথে আরাফ মির্জা ও তার বাবা আরিয়ান মির্জা জড়িত। (তাহি)

– ঠিক আছে, সব কথা পড়ে হবে। আগে আরশির চিকিৎসা করতে হবে। (নিষ্প্রভ)

– হুম তাই করুন। আরশি তুমি কিছু খেয়েছো? তোমার মুখ দেখেই মনে হচ্ছে কিছু খাও নি। ডাক্তার সাহেব আরশির চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। তার আগে ওর খাওয়ার ব্যবস্থা করুন। আরশিকে সুস্থ হতে হবে। (তাহি)

চলবে, ইনশাআল্লাহ

#প্রিয়_আসক্তি
#পর্বঃ১৩
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

কেটে গেছে এক সপ্তাহ। আরশি মোটামুটি সুস্থ হয়ে গেছে। শরীরের ক্ষত গুলোও শুকিয়ে এসেছে। তাহি দুইদিনের মধ্যেই কেস তদন্তের জন্য দায়িত্ব নিয়েছে।
আনান ও আলিশাকে নিয়ে আরাফ মির্জার সবকিছুর বিষয়ে তদন্ত করে জানতে পেরেছে আজ রাত ১টার দিকে সমুদ্র পথে অবৈধ মাল পাচার করা হবে। সে হতে পারে ড্রাগস, বা মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন- চোখ, কিডনি। আর এটাও জেনেছে যে ট্রলার দিয়ে মানুষ নিয়ে যাওয়া হবে, যাদের কিডন্যাপ করেছে তাদের ও নিয়ে যাওয়া হবে তাদের গুপ্ত আস্তানায়, যেখানে চোখ কিডনি অপারেশন করে নেওয়া হয়। তাহি চাইলেই আরশির জবানবন্ধি নিয়ে আরাফ মির্জা ও তার বাবাকে ধরে আনতে পারে। কিন্তু সেটা করবে না তাহি। সবকিছু হাতের মুঠোয় এনে, হাতে নাতে ধরবে আরাফ মির্জা ও আরিয়ান মির্জা কে।




আরাধ্য মির্জা ও আরিফ মির্জার চোখ ছলছল করছে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। আরশিও ফুপিয়ে কেঁদে উঠছে বার বার। আরশির দিকে এগিয়ে আসলেন আরাফ মির্জা। তার একটা মেয়ের খুব শখ ছিলো, কিন্তু সেটা পূরণ হয়নি। তিনি আরশি কে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসতেন। চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বুকে টেনে নিলেন আরশিকে। এবার আরশি শব্দ করে কেঁদে উঠলো।

অনেকক্ষণ পরে কান্না বন্ধ হলো আরশির, কিন্তু মাঝে মধ্যে ফুপিয়ে উঠছে।

-এবার তাহলে আমি উঠি মিঃ মির্জা। আপনাদের তো সবই বললাম। ওকে আগলে রাখবেন। কোর্টে আরশিই হবে প্রধান সাক্ষী। এখন শুধু প্লান মতো আরিয়ান মির্জা ও তার ছেলেকে ধরার পালা।

তাহির কথা শুনে আরাধ্য এগিয়ে এলো। বিনয়ের সাথে বললো- আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না, মিস তাহি। আমরা কখনো ভাবতেও পারিনি এমন কিছু একটা হবে বা হতে পারে। আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছুটো করবো না। আরশিকে আমি আর বাবা আগলে রাখবো। এবং কোর্টে আরশি অবশ্যই সাক্ষী দিবে।

-ওকে আজ তাহলে আমি আসি। আমার কাজ আছে, বুঝতেই পারছেন।(তাহি)

– জ্বি আপনার সময় নষ্ট করবো না, আপনি আসতে পারেন। (আরাধ্য)

আরশির দিকে এক পলক তাকিয়ে ‘টেক কেয়ার’ বলে চলে গেলো তাহি।

আরাধ্য এগিয়ে এলো আরশির দিকে। মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে বললো- তোকে খুব কষ্ট দিয়েছে ওরা, তাই না আরু? আমি ওদের নিজের হাতে শাস্তি দিতাম। কিন্তু বাবা আমাকে সেই শিক্ষা দেয়নি। আমি আইন নিজের হাতে তুলে নিবো না ঠিকই, তবে ওই ক্রিমিনালদের যাতে এমন শাস্তি দেওয়া হয়, যা দেখে সবাই ভয়ে কখনো অবৈধ পথে পা বাড়াবে না, সেইরকম শাস্তি ওদের পাইয়ে দিবো।

আরিফ মির্জার দিকে তাকিয়ে আরাধ্য বলে- বাবা, আমি আজ এক্ষনি আরশিকে বিয়ে করতে চাই। তোমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে তো।

ছেলের কথা শুনে মুচকি হাসলেন আরিফ মির্জা, তিনি জানেন তার ছেলে আরশিকে ভালোবাসে।
– আমার কোনো আপত্তি নেই বাবা, তুই বিয়ে করবি, তাও আমার আরশি মাকে, সেটাতো আমার জন্য খুশির সংবাদ। আমি আগে থেকেই মনে মনে আরশিকে তোর বউ করার স্বপ্ন দেখতাম, কিন্তু কখনো তোকে বলা হয়নি।

অবাক হয়ে এদের দুজনের কথা শুনছে আরশি। হ্যা এটা ঠিক আরশিও মনে মনে আরাধ্য কে পছন্দ করতো৷ কিন্তু আরাধ্য ও যে তাকে পছন্দ করে বা করতে পারে সেটা কখনো ভাবতে পারেনি আরশি। মনের মধ্যে হাজার কষ্টের মধ্যে ও আরশির ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে।

আরিফ মির্জা বলেন – যা তোরা উপরে যা, আমি মেনেজার কে ফোন করে বলছি, কাজি নিয়ে আসতে। পরে নাহয় ধুমধাম করে তোদের বিয়ে দিবো। বলেই নিজের রুমে চলে গেলেন আরিফ মির্জা।


আরশির হাত টেনে নিজের রুমে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো আরাধ্য। আরশির তো লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। আরশিকে লজ্জা পেতে দেখে বাঁকা হাসলো আরাধ্য। টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আরশি আরাধ্যের বুকে মাথা এলিয়ে দিলো। আরশির মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে আরাধ্য বললো-, ওরা তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছে তাই না?

– ওদের দেয়া কষ্ট আমি ভুলে যেতে চাই, আপনি কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে নিয়ে সারাজীবন বাঁচতে চাই। যেখানে শুধু সুখ থাকবে, অভিমান থাকবে, ভালোবাসা থাকবে। থাকবে না কোনো বিশ্বাসঘাতকতা!

আরশির কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলো আরাধ্য। আরশিকে ছেড়ে দিয়ে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করলো। শাড়ির আচল আরশির মাথায় দিয়ে বললো- জানো আরশি, এটা কার শাড়ি? এটা আমার মায়ের বিয়ের শাড়ি। আমি চাই আজ এটা পড়ে তোমাকে নিজের জীবনে স্ত্রীর স্থান দিতে৷ পড়বে তো?

– কেনো পড়বো না, অবশ্যই পড়বো। আপনি বাইরে যান আমি শাড়ি পড়ছি।

– আচ্ছা, আলমারির বা দিকে একটা ব্যাগে তোমার প্রয়োজনীয় সবকিছু পাবে।




রাত ১০টার কাছাকাছি সময়। খাওয়া দাওয়া অনেক আগেই শেষ হয়েছে। বর্তমানে আরশি আরাধ্যের কোলে বসে আছে। আরশি দেখছে দূর আকাশের চাঁদ, আর আরাধ্য দেখছে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী কে।

-ঘুমাবে না?

-না আর কিছুক্ষণ থাকি না এভাবে।

আরশির নিঃসংকোচ আবদারে না করতে পারলো না আরাধ্য। আরশিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।

আরশি নিজের প্রিয়তম স্বামীর বুকে মাথা রেখে চাঁদ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লো।

আরাধ্য বুঝতে পারলো আরশি ঘুমিয়ে পড়েছে। কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজেও আরশিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।

_____

গভীর রাত, চারিদিকে প্রচন্ড বাতাসে সবকিছু উড়ছে। বর্তমানে নিজের টিমের সবাইকে নিয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে তাহি।

তোমরা সবাই রেডি?(তাহি)

-জ্বি ম্যাম, আমরা সবাই প্রস্তুত। (টিমের সবাই)

-ওঁকে তোমরা সবাই চারিদিকে লুকিয়ে যাও। আমি যখন বের হবো তখন তোমাদের জানাবো। কান থেকে ব্লুটুথ খুলবেনা কেউ। মনে থাকে যেনো।

-জ্বি ম্যাম মনে থাকবে।

-গো, সবাই চারিদিকে লুকিয়ে পড়ো। ওদের আসার সময় হয়ে গেছে।

– আমি আপনার সাথে থাকি ম্যাম (আনান)

– না তার দরকার নেই, তুমি আলিশাকে তোমার সাথে রাখো। যাও কুইক, সবাই চারিদিকে লুকিয়ে পড়ো।

—–
ভোর রাত, হাসপাতালের চারিদিকে অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে উত্তেজনা ভাব বিরাজ করছে। সব ডাক্তার নার্স কর্মীরা দাঁড়িয়ে ভীড় করেছে। কলিজা কাপছে নিষ্প্রভের, বার বার মন কে বুঝ দিচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে যেনো তাহি না হয়।

অ্যাম্বুলেন্সের ভিতর থেকে রক্তাক্ত তাহিকে স্ট্রেচারে করে বের করে আনলো নার্স রা। সাথে আনান ও আলিশা আরো কিছু অফিসার রা আছেন, যারা একটু আধটু আহত হয়েছেন। তাহির রক্তাক্ত শরীর দেখে নিষ্প্রভের পৃথিবী থমকে গেলো।

তাহিকে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকানো হয়েছে, বুকের বা পাশে গুলি লেগেছে,

আনানের ধাক্কায় স্বাভাবিক হলো নিষ্প্রভ, আনানের দিকে তাকিয়ে বললো- আমার পাখিহহ,,,

কিছু হবে না স্যার, আপনি না ডাক্তার, আপনি কি পারবেন না আপনার পাখিকে বাঁচাতে?

– আমি পারবো না আনান, আমি তাহিকে এই অবস্থায় দেখতে পারছিনা। ওর অপারেশন করবো কিকরে?

– জানেন স্যার, ম্যাম জ্ঞান হারানোর আগে কি বলেছেন?

– ক কি বলেছে?

– ম্যাম বলেছেন, ‘দেশের জন্য দেশের মানুষকে বাচানোর জন্য যদি আমার মৃত্যু হয় তাতে আমার কোনো আফসোস নেই। বরং আমি মৃত্যুকে খুশি মনে গ্রহণ করবো, আমি যদি মরে যাই আনান, তাহলে তুমি আমার ডাক্তার সাহেবকে বলে দিও তার পাখি বীরের মতো মৃত্যুবরন করেছে। শত্রুদের কে প্রতিহত করে তারপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। তুমি আমার ডাক্তার সাহেব কে বলে দিও তার অবাধ্য অপ্রেমিকা তাকে অনেক ভালোবাসে। আমি যদি আর ফিরে না আসি তাহলে আমার হয়ে ডাক্তার সাহেব কে আমার শেষ কথাগুলো বলে দিও।

চলবে, ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে