পরীর টিফিন

0
738

-তুমি এটা কি করলা! সকালে অফিসে পৌছেই স্ত্রীর চরম উত্তেজিত গলার ফোন পেয়ে ভড়কে গেলাম। সেরকম কিছু করেছি বলে মনে পড়ছে না। তবুও জিগ্গেস করলাম-

– কেন? কি হয়েছে?

– তুমি টুকটুকির টিফিন ব্যাগে দাও নাই কেন? একটা কাজ তুমি ঠিকমতো করতে পার না। মেয়েটার সেই একটা পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হবে। তোমাকে ব্যাগ গোছাতে বলাটাই আমার ভুল হয়েছে।

আমার মেয়ে টুকটুকি, কেজিতে পড়ে। সকালে অফিসে আসার সময় আমি ওকে স্কুলে রেখে আসি। এমনিতে ওর মা-ই ব্যাগ গুছিয়ে দেয় তবে আজকে ও একটু অসুস্হ থাকায় আমাকে বলেছিল গুছিয়ে দিতে। আর আমি এরকম ভুল করলাম। মনটা খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটা দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে থাকবে আমার ভুলে!

অফিসে মন বসাতেই পারছি না। দুপুরে বাসায় ফোন করলাম।

– টুকটুকি এসেছে?

– হ্যা, খেয়েদেয়ে ঘুমাচ্ছে।

– খুব ক্ষিদে পেয়েছিল, তাই না?

– নাহ্। ও টিফিন খেয়েছিল। ওর ক্লাসের একটা মেয়ে ওর সাথে শেয়ার করেছে।

– ওহ্। কি নাম মোয়েটির?

– পরী

খবরটা শুনে খুব ভাল লাগল। পরী মেয়েটা কাজেও পরী। মেয়েটার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা এসে গেল।ঠিক করলাম একদিন পরী আর তার বাবা-মার সাথে দেখা করে ধন্যবাদ দেব, মেয়েকে এত সুন্দর শিক্ষা দেয়ার জন্য।

পরদিন। মেয়েকে স্কুলে দিয়ে বের হচ্ছি। দেখলাম এক মা তার বাচ্চাকে শাসন করছে-

– শোন, কালকে তুমি টিফিন অর্ধেক খেয়ে অন্যকে খাইয়েছ, এরপর যেন এমন না হয়।

– এইজন্য তো তুমি কাল সারাদিন বকেছ।

– বেশ করেছি, পরী। যার বাবা-মা তাকে টিফিন দিতে ভুলে যায় তাকে তুমি কেন খাওয়াবে? এরপর এরকম করলে পুরো বেত ভাঙব তোমার পিঠে।

স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। কি শিখাচ্ছি আমরা বাচ্চাদের? ভাল কাজের উৎসাহ বা দিয়ে আমরা ওদেরকে কি রকম মানুষ বানাচ্ছি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে